মৃগতৃষ্ণা #সূচনা পর্ব #লেখা: মুন্নি ইসলাম

0
1139

গত এক মাসে প্রতিদিন রাতেই একটা করে শিশুর ক*লিজা খে*তে দিতে হয় জুলেখা কে।
কোনোদিন যদি বাচ্চার ক*লিজা না পাওয়া যায় তবে জুলেখার তান্ডব শুরু হয় রাজবাড়ীতে। রাজবাড়ির বড় ছেলে সুলায়মানের স্ত্রী জুলেখা।
জুলেখার এমন বাচ্চাদের কলিজা খাওয়ার কথা কেবল মাত্র রাজবাড়ীর চার দেয়ালেই সীমাবদ্ধ। বাইরের কেউ তা জানে না।আজ সুলায়মান সারাদিন খুজেও কোনো বাচ্চার সন্ধিহান পেলো না।বাড়িতে গিয়ে জুলেখাকে সে কি জবাব দেবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় মগ্ন সে।
এমন একশত-দুইশত বাচ্চার কলিজা মূহুর্তের মধ্যেই জোগান দেওয়ার ক্ষমতা রাখে রাজবংশীয় সুলায়মান। তবে স্ত্রীর আবদার তার এই কলিজা খা*ওয়ার কথা যেন ঘুনাক্ষরে গ্রামের কেউ জানতে না পারে। তবে সবাই তাকে ডাইনি আখ্যা দিবে।যাকে সবাই রূপবতী সুনয়না বলে চেনে তাকে ডাইনি বলে আখ্যা দিলে সে জীবিত থেকেও মরে যাবে। সত্যি বলতে এ আখ্যা শোনার মতো সাহস সুলায়মানেরও নেই। সে যে তার স্ত্রীকে পারলে আকাশের চাঁদটাও এনে দেয়।
তাই সুলাইমান বাদ্ধ হয়ে ছদ্মবেশে একেক গ্রামে গিয়ে শিশু বাচ্চাদের ধরে নিয়ে আসে তার প্রানপ্রিয় স্ত্রীর জন্য। নিজেদের গ্রামের কোনো বাচ্চা হারানো গেলে সেটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হতে পারে।তাই গ্রাম থেকে কোনো বাচ্চা চুরি করা যাবেনা।
কিন্তু আজ অনেক খুজেও পাচ্ছে না। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে আর রাত হলেই শিশুর কলিজা কেটে খেতে দিতে হবে জুলেখাকে।অন্ধকারের সাথে সাথে সুলাইমানের ভয়ও বাড়ছে তবে সুলাইমান আজ ঠিক করলো নিজেদের গ্রামের কোনো বাচ্চাকেই সে চুরি করবে। এই মনোভাব নিয়ে সে চলতে শুরু করল তন্মধ্যেই কোত্থেকে যেন একটা ছোট্ট মেয়ে দৌড়ে চলে আসলো। সুলাইমান মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলো এই পিচ্চি কোথায় যাও সন্ধ্যা যে শেষ হতে চললো। বাড়ি যাও!!
পিচ্চি মেয়েটা আলতো আলতো পায়ে সুলায়মানের কাছে এগিয়ে এসে বলল আ -আমি না বাড়িতে যাবো, আ- আমায় নিয়া যাইবা।
সুলাইমানের ওষ্ঠাধর জুড়ে হাসি ফুটে উঠলো। বুঝতে বাকি রইলো না যে এই বাচ্চাটা হারিয়ে গেছে। যাক আজকের মতো সামলে নেওয়া যাবে। বাচ্চা মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলো সুলায়মান কি যে মিষ্টি মেয়েটা।এর আগে হয়তো কোনো বাচ্চার জন্য তার এতো মায়া হয়নি আসলে কখনো এভাবে কোনো বাচ্চাকে দেখার সুযোগই হয়নি তার।সুলায়মানের অনেক মায়া হলো কিন্তু তার এছাড়া কোনো উপায় নেই আর। সুলাইমান তার পুটলি থেকে একটা কাচের জার বের করে মেয়েটার নাকের সামনে নিলো।তাৎক্ষণাত মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গেলো। ঢলে পড়লো কোমল শিশুটি।
এবার সুলায়মান রাজবাড়ীতে রাতের অন্ধকারে পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো। জুলেখা পায়ের শব্দ পেয়েই দৌড়ে এলো সুলায়মানের কাছে।
আগে যখন সুলায়মান গৃহে প্রবেশ করতো তখন জুলেখা ওনাকে সালাম করে জিজ্ঞেস করতো আপনার সারাদিন কেমন কাটলো জুলেখা বিনে??

আর এখন জিজ্ঞেস করে কলিজা পেয়েছেন??

এই কথাটা সুলায়মানকে বেশ কষ্ট দেয়। তবুও দাতে দাত চেপে সে কষ্ট সহ্য করে প্রতিদিনের ন্যায় আজও উত্তর দিলো
-হ্যা বেগম পেয়েছি আপনার কলিজা।।।

জুলেখার চোখেমুখে জলজল করছে খুশির আভা। সে বলল যান তবে আর দেরি না করে আমার খাওয়ার ব্যবস্থা করুন জনাব।
সুলায়মানের মুখে আজ হাসি নেই অন্যদিনের মতো।তবুও জুলেখার সামনে তিনি তা প্রকাশ করলেন না। পুটলি থেকে মেয়েটাকে বের করার পর বুকের মধ্যে কেমন যেন মুচড়িয়ে ব্যাথা অনুভূব হয় সুলায়মানের। তবুও তাকে তুলে দিতে হবে জল্লাদের হাতে। জল্লাদের কাছে প্রতিদিনের ন্যায় আজও তাই করা হলো তবে এতক্ষণে বাচ্চাটার জ্ঞান ফিরে এলো। চুখ খুলেই সুলায়মানের দিকে চেয়ে আছে আর বলছে আ-আমায় বাড়িতে এনেছো গো তুমি??
জল্লাদও থমকে যায়।গত এক মাসে কখনোই কোনো বাচ্চাকে মারার আগে জ্ঞান ফেরেনি। তবে এই মেয়েটার মধ্যে কি আছে ওর বেলায় যত বিপত্তি। পাতালঘরের পরিবেশটা এমনিতেই স্তব্ধ তার ওপর এই বাচ্চার ওপর মায়া কাজ করছে সুলায়মানের। সুলায়মানের মায়া একবার যায় ওপর পড়ে যায় তাকে সে যে করেই হোক বাচায়। যেমন তার স্ত্রী জুলেখা।
কিন্তু এই বাচ্চাটাকে মারতে জল্লাদেরও হাত কাঁপছে, জল্লাদ বলে উঠল বাবু ওরে অজ্ঞান করেন নয়তো আমি পারমু নাহ।
সুলায়মান তার পুটলি থেকে আবার সেই কাচের জারটা বের করলো।এরপর মেয়েরার নাকের সামনে নিয়ে যেতেই মেয়েটা জ্ঞান হারালো।কি যেন বলতে যাবে কিন্তু বলতে পারলো না তার আগেই জ্ঞান হারালো।

এদিকে জুলেখা তাড়া দিচ্ছিলো খাবার খাওয়ার জনয়।ওদিকে বাচ্চা মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছিলো সুায়মানের।

অত:পর জুলেখার জন্য প্লেট সাজিয়ে নিজে হাতে নিয়ে আসে সুলায়মান। আগে জুলেখাকে সুলায়মান নিজে হাতে করেই খাইয়ে দিতো কিন্তু এখন সে নিজের হাতেই খায় নয়তো বা তার খাওয়া হলেও পেট ভরে না। জুলেখা সুলায়মানের হাতে থাকা প্লেট টা টেনে তার হাতে নিল জিহ্বা দিয়ে দুই ঠোট ভিঝিয়ে নিলো সে।
এরপর খাওয়া শুরু হলো তার তবে আজ অন্যদিনের মতো তৃপ্তি পাচ্ছে না সে। সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে তাকালো সুলায়মানের দিকে, সুলায়মান তার চোখ নামিয়ে নিলো নিচে। তবে জুলেখা কোনো প্রশ্ন করেনা তাকে।

খাওয়া শেষে যে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে সে তা আজ হলোনা, মনেই হলো না যে সে খেয়েছে।জুলেখা কিছু একটা বলতে যাবে সুলায়মানকে ঠিক তখনই তার চোখ বুজে আসছিল, মুখটা হা করেই ঘুমের অতলে তলীয় গেলো সে।
কেটে গেলো রাত।পরের দিন জুলেখা আর বিছানা থেকে উঠতে পারছেনা শরীর ব্যথায় টনটন করছে। এমন হওয়ার কথা না তবুও কেন যে এমন যন্ত্রণা হচ্ছে তা বোধগম্য নয় জুলেখার।
জুলেখার কষ্ট সুলায়মান সহ্য করতে পারছেনা তার চোখ দিয়েও অঝোরে অশ্রু ঝরছে।
জুলেখা অপলক তাকিয়ে আছে সুলায়মানের মুখপানে।

কবিরাজকে ডাকা হলো রাজবাড়ীতে। কবিরাজ মশাই সুলায়মানকে জিজ্ঞেস করছিল গতকাল রাতে কি ওনাকে কলিজা খাওয়ানো হয়নি??
সুলায়মান ডোক গিলে বলল হ্যা কবিরাজ মশাই খেয়েছেতো ও।
কবিরাজ আবার প্রশ্ন করতে উদ্বত হলে সুলায়মান ইশারা করে তাকে থামতে।
জুলেখার অবস্হা শোচনীয় হচ্ছে ধীরে ধীরে……

চলবে,,,,,
#মৃগতৃষ্ণা

#সূচনা পর্ব

#লেখা: মুন্নি ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here