#দৃষ্টির_আলাপন
#পর্বঃ২৯
#আদওয়া_ইবশার
জেলা জজ আদালতে আজ দশটায় রক্তিমের
কেস উঠবে। কাকতলীয় ভাবে আজকেই দৃষ্টির এডমিশন এক্সাম। কি করবে দৃষ্টি? পরীক্ষা দিতে যাবে! না কি আদালতে কি রাই ঘোষণা হয় তা শুনতে যাবে? স্রোতের টানে দৃষ্টি যেন খেয় হারিয়ে মাঝ সাগরে ডুবতে যাচ্ছে। সারাটা রাত ছটফট করেছে একই ভাবনায়। আদালতে কি হচ্ছে না হচ্ছে এসব চিন্তায় না পারবে ভালো করে পরীক্ষা দিতে আর না পারবে পরীক্ষা না দিয়ে স্ব-শরীরে আদালতে উপস্থিত থাকতে। এই এক এডমিশন এক্সামকে কেন্দ্র করে এখন শুধু মা-বাবার স্বপ্ন পুরণ না। সাথে যুক্ত স্বামীর প্রথম চাওয়া। দৃষ্টি কিভাবে পারবে তার প্রিয় মানুষের প্রথম চাওয়া টুকু অপূর্ণ রাখতে! হাজার দ্বিধা-দন্দ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত স্থির করে পরীক্ষা সে দিবে। আজীজ শিকদার তাকে আশ্বস্ত করেছে রক্তিম মুক্তি পাবেই। দেশে এমন কোনো আদালত এখনো তৈরি হয়নি যে রক্তিম শিকদারকে সাজা দিবে। দৃষ্টি জানে আজীজ শিকদার শুধুমাত্র তাকে আশ্বস্ত করার জন্যই মনগড়া কথা গুলো বলেছে। যেখানে বিপক্ষ দল রক্তিমের বিরুদ্ধে খুনের সমস্ত প্রমাণ ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে সেখানে কিভাবে রক্তিম নির্দোষ প্রমাণিত হবে? তাছাড়া রক্তিম নিজেও না কি কোনো ভনিতা ছাড়াই স্বীকারোক্তি দিয়েছে খুন দুটো সে করেছে। এর পরও কি আর কোনো আশা থাকে রক্তিম নির্দোষ প্রমাণ হবার?
বেদনায় পৃষ্ঠ মন, মস্তিষ্ক নিয়েই যথাসময়ে মেহেদীর সাথে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয় দৃষ্টি। মানসিক অশান্তিকে সঙ্গী করেই পা বাড়াই একটু ভালো কিছুর আশায়। এতো এতো অনিশ্চয়তার মাঝেও মন বলে কিছু একটা মিরাক্যাল হবে। অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতের পর নতুন সূর্য কিরণ ছড়াবে। একটা খারাপ দিনের পরই একটা ভালো দিনের সূচনা হয়। সেই ভালো দিনটা দৃষ্টির জীবনে খুব শিগ্রই আসবে। সৃষ্টিকর্তা একজন মানুষের ভাগ্যে সবসময় দুঃখ রাখেনা। বিভিন্ন অনুকূল পরিস্থিতির মাধ্যমে বান্দার ধৈর্যের পরীক্ষা নেই। সেই ধৈর্যের পরীক্ষায় দাঁত খিঁচিয়ে সফল হতে পারলেই সুখের দিনের সন্ধান পায় মানব জাতি। পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে গাড়ি থেকে নামতেই দৃষ্টি মেহেদীকে তাড়া দেয়,
“ভাইয়া! আপনি এবার কোর্টে চলে যান। বাকিটা আমি সামলে নিতে পারব।”
দৃষ্টিকে বোঝানোর সুরে মেহেদী বলে,
“তুমি এতো হাইপার হয়ে যেওনা। ওখানে বাবার সাথে রাকিব, জাবির, শান্ত সবাই আছে। বাবা যখন একবার বলেছে রাই আমাদের পক্ষেই আসবে তখন একদম নিশ্চিত থাকো তুমি। ভালো করে মন দিয়ে পরীক্ষাটা দাও বোন প্লিজ। মনে করো এটাই রক্তিমের মন জয় করার তোমার শেষ চান্স। ধরে নাও কেন্দ্র থেকে বের হয়েই শুনতে পারবে রক্তিম মুক্তি পেয়ে গেছে। মাথা থেকে সমস্ত বাজে চিন্তা ঝেড়ে ফেলো।”
ম্লান হাসে দৃষ্টি। তাকে সবাই কেমন বাচ্চাদের মতো ট্রিট করছে! ছোট বাচ্চাদের যেমন খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখে, তেমন করেই প্রতিটা মানুষ তাকে শান্তনার বাণী শুনিয়ে ভুলিয়ে রাখছে। পরিস্থিতি যে এতোটাও ভালো না সেটা বোঝার মতো বয়স দৃষ্টির হয়েছে। এটা হয়তো সবাই ভুলে গেছে। তবুও দৃষ্টি মনের ছটফটানি মুখে প্রকাশ করে মানুষ গুলোকে হতাশ করেনা। চুপচাপ শুধু শুনে যায় এক একটা শান্তনার বাণী। পা বাড়াই হলের ভিতর। অস্থির মনে বাইরে অপেক্ষমাণ মেহেদী। আদালতে কি হচ্ছে সেই চিন্তায় স্থির থাকতে পারেনা। দৃষ্টিকে বুঝিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে চলে যায় জেলা আদালতের দিকে। ভাবে দৃষ্টির পরীক্ষা শেষ হবার আগে পরিস্থিতি বিবেচনা করে আবারও চলে আসবে। মেয়েটা এই মিথ্যেটুকুই জানোক, মেহেদী তার জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
*****
দুই পক্ষের উকিলের একের পর এক যুক্তিপূর্ণ বয়ান, সাক্ষীদের সত্য-মিথ্যা সাক্ষ প্রমাণের ভিত্তিতে তর্ক-বিতর্কে আদালত ভবনে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিরোধী দলের উকিল সবশেষে প্রধান সাক্ষী হিসেবে খুনের প্রত্যক্ষদর্শী আজীজ শিকদারকে জেরা করার অনুমতি চায় বিচারকের কাছে। অনুমতি প্রধান করা হলে আজীজ শিকদারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। বিপরীত পাশের কাঠগড়ায় রক্তিম নির্বাক মাথা তুলে এক ধ্যানে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলের দিকে এক নজর তাকিয়ে আজীজ শিকার ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে পবিত্র কোরআন ছুঁয়ে সত্য শপথ করেন। সাথে সাথে বিপক্ষ দলের উকিল একের পর এক যুক্তি দেখিয়ে আজীজ শিকদারের মুখ থেকে, খুন দুটো রক্তিম করেছে কথাটা বের করার প্রয়াস চালাই। মাথা উঁচিয়ে আজীজ শিকদার বুক টানটান করে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাসী স্বরে বলে ওঠে,
“রক্তিম শিকদার খুন করেনি।”
“তবে খুন গুলো কে করেছে? একজন এমপি হয়ে নিজের ছেলের দোষ ঢাকার জন্য এভাবে জনসম্মুখে মিথ্যে বলতে একবারও আপনার ভয়ে বুক কাঁপছেনা? তাছাড়া খুনি রক্তিম শিকদার যেমন আপনার ছেলে, তেমনই তো সে যাদের খুন করেছে তাদের মধ্যে একজন সংগ্রাম শিকদার সেও আপনার ছেলে। এক ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে আরেক ছেলের হত্যাকারীকে প্রশ্রয় দিয়ে ফেলছেন না! বাবা হয়ে কিভাবে পারছেন নিজের ছেলের খুনিকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য মিথ্যা বয়ান পেশ করতে? আজ না হয় ভরা আদালতে মিথ্যা বলে ছেলেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু এরপর!বিবেকের ধ্বংসনে বাঁচতে পারবেন তো?”
বিরোধী দলের উকিলের যুক্তিপূর্ণ কথায় একটুও টলেনি আজীজ শিকদার। বরং আগের চেয়েও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ স্বরে বলে,
“যদি মিথ্যে বলতাম তবে অবশ্যই বুক কাঁপতো। মিথ্যে বলিনি দেখেই বুক কাঁপেনি। আর না কখনো বিবেকের ধ্বংসনের স্বীকার হব।”
“আপনি যে মিথ্যে বলছেন না তার কি প্রমাণ? আসামি নিজেও তো স্বীকার করছে সে খুন করেছে। তবে!”
“সবসময় আমাদের জানা আর দেখা সঠিক হয়না। চোখের দেখাও অনেক সময় মিথ্যে হয়। আর মনের বিশ্বাস ও।”
“এতোক্ষনে একটা সত্য কথা বলেছেন। আসলেই অনেক সময় চোখের, দেখা-মনের দৃঢ় বিশ্বাসও মিথ্যে হয়। যেমন আপনি এই মুহুর্তে নিজের চোখে দেখেছেন আপনার ছেলে খুন করেছে তবুও বলছেন সে খুন করেনি। সেটাও আবার অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে জোর গলায় বলছেন। কিন্তু শেষ পযর্ন্ত কি হবে? সেই আপনার প্রখর আত্মবিশ্বাস মিথ্যে প্রমাণিত হয়ে রক্তিম শিকদারের ফাঁসি না হয় যাবৎজীবন কারাদণ্ড হবে।”
“আর যদি উল্টো রক্তিম শিকদার নির্দোষ প্রমাণিত হয়?”
ঠাট্টার ছলে হাসে বিরোধী দলের উকিল। রগড় করে বলে,
“চোরের মায়ের বড় গলা, কথাটা আবারও সত্য প্রমাণিত করতে চাইছেন এমপি সাহেব। কি লাভ শুধু শুধু কোর্টের মূল্যবান সময় নষ্ট করে? সত্যিটা বলে দিন। অযথা আর সময় নষ্ট করবেন না।”
উকিলের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আবারও এক নজর নির্বাক রক্তিমের দিকে তাকায় আজীজ শিকদার। পরমুহূর্তে বিচারকের দিচ্ছে তাকিয়ে জোর গলায় বলে ওঠে,
“মহামান্য আদালত! আমার ছেলে রক্তিম শিকদারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। আমার ছেলে কাওকে খুন করেনি। আমার ছোট ছেলে সংগ্রাম শিকদার এবং বড় ছেলের স্ত্রী জেরিন দুজনের কেউ খুন হয়নি। ওরা দুজনেই বেঁচে আছে।”
ভরা আদালতে হুট করেই যেন বড়সড় এক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে আজীজ শিকদার। কথাটা শোনা মাত্রই রক্তিম চমকে বাবার মুখের দিকে তাকায়। উপস্থিত প্রতিটা মানুষের দৃষ্টি অবিশ্বাস্য। এমন একটা মনগড়া কথার কি আদও কোনো ভিত্তি আছে? কিসব পাগলের প্রলাপ বকছে আজীজ শিকদার! উপস্থিত প্রতিটা মানুষকে আশ্চর্যের চরম শিকড়ে পৌঁছে দিয়ে আজীজ শিকদার আবারও বলে ওঠে,
“মানুষের কাজেই হলো তিলকে তাল বানিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়া। যেমনটা ঘটেছে আমার পরিবারের সাথে। আমার বড় ছেলের স্ত্রী জেরিন আর আমার ছোট ছেলে সংগ্রাম শিকদারের মাঝে দেবর-ভাবির সম্পর্ক ছাপিয়ে এক সময় অবৈধ সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। রক্তিম তখন সামরিক বাহিনীতে যুক্ত ছিল। তার বছরে হাতে গুণা কয়েকটা দিন সুযোগ হতো নিজের পরিবারের সাথে কাটানোর। বাকী পুরোটা বছর কাটাতে হতো সামরিক বাহিনীর ঘাটিতে। এমন অবস্থায় রক্তিমের স্ত্রী জেরিন রক্তিমের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে সংগ্রামের দিকে ঝুকে যায়। দুজনেই দুজনের সম্মতিতে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে। নিজের আপন ভাইয়ের সাথে স্ত্রী অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত। কথাটা জেনেও হয়তো কোনো পুরুষ পারবেনা সহজে মেনে নিতে। যেমনটা পারেনি রক্তিম শিকদার। রাগে হিতাহিত জ্ঞান ভুলে আক্রমণাত্মক হয়ে আঘাত করেছিল স্ত্রী এবং ভাইয়ের উপর। তবে সেই আঘাতে দুই-একদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকা ছাড়া তেমন কোনো ক্ষতিই হয়নি। রক্তিম হয়তো দ্বিতীয়বার প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওদের উপর আক্রমণ করতে পারে। এটা ভেবেই আমি পরবর্তীতে তাদের দুজনকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেই। এদিকে সবাই জানে সংগ্রাম শিকদার এবং জেরিন দুজনেই মৃত। এটা ছাড়া আমার কিছুই করার ছিলনা মহামান্য আদালত। নিজের ছেলেদের বাচানোর জন্য আর পরিবারের সম্মান রক্ষার জন্য আমি নিরুপায় হয়ে মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছিলাম। তবে মিথ্যে যে খুব বেশিদিন গোপন থাকেনা তা আজ আবারও প্রমাণ পেলাম। যে ছেলেদের বিপদের ভয়ে এতো বড় একটা সত্যকে মিথ্যে দিয়ে ঢেকেছিলাম। আজ সেই ছেলের বিপদের জন্যই সত্যটাকে সকলের সামনে তুলে ধরতে হয়েছে। আমার এই মিথ্যের জন্য আজ যদি আমার কোনো শাস্তি হয় সেটাও আমি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত। নির্দ্বিধায় আমি আমার ভুল স্বীকার করছি। সাথে এও জানাচ্ছি পরিবারের প্রতিটা সদস্যকে বিপদ মুক্ত রাখার জন্যই আমি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছি। আমার ছেলে রক্তিম শিকদার নির্দোষ। দোষী যদি কেউ হয়ে থাকে তবে সেটা আমি। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আমি দোষী। আমার দোষ আমি মাথা পেতে নিচ্ছি।”
কথা গুলো শেষ করেই দলের একজন ছেলেকে ইশারায় কিছু একটা বলেন আজীজ শিকার। কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে আদালতে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয় সংগ্রাম শিকদার এবং রক্তিমের প্রথম স্ত্রী জেরিন। উপস্থিত প্রতিটা মানুষ বাকহারা। এতোদিনের ভুল ধারণাটা হঠাৎ সবার সামনে মিথ্যে বলে প্রমাণ হওয়াই স্তব্ধ প্রত্যেকে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। এতোক্ষনের কোলাহলপূর্ণ ভবন এক লহমায় নিস্তব্ধ। রক্তিম পলকহীন তাকিয়ে আছে আজীজ শিকদারের দিকে। মস্তিষ্ক অসাঢ় হয়ে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আদালতে উপস্থিত প্রতিটা মানুষ সংগ্রাম, জেরিনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও সে তাকায়নি একবারের জন্যও। ছেলের এমন শীতল দৃষ্টির কাছে আজীজ শিকদার নতজানু। কিছুতেই পারছেনা আজ ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে। না পারছে মাথা তুলতে।
এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে মিনিট পাঁচেক পার হবার পর আবারও আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। যাদের খুনের দায়ে আসামিকে দোষী সাভ্যস্ত করা হচ্ছিলো সেই তাদের স্বীকারোক্তিতেই রক্তিম নির্দোষ প্রমাণিত হয়। সংগ্রাম, জেরিন দুজনেই নত মস্তকে স্বীকার করে নেয় তাদের ভুল। জানিয়ে দেয় রক্তিম নির্দোষ। জেরিন অকপটে স্বীকার করে, রক্তিমের সাথে তার ভালোবেসে বিয়ে হলেও বিয়ের পর এক সময় উপলব্ধি করে রক্তিম আসলে তার ভালোবাসা ছিলনা। স্রেফ মোহ ছিল। মামার সংসারে বোঝা হয়ে থাকাই শেষ পযর্ন্ত কোনো কূল না পেয়ে রক্তিমকেই ভালোবাসা ভেবে বিয়ে করে নেয়। কিন্তু বিয়ের পর ধীরে ধীরে বুঝতে পারে রক্তিম আসলে তার ভালোবাসা না। তার মোহ। আর সংগ্রাম হলো তার সত্যিকারের ভালোবাসা। যে ভালোবাসার জেড় ধরেই সমাজের প্রতিটা মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে আজও তারা একসাথে ভিনদেশে সংসার পেতে ভালো আছে।
আদালতে পুরোটা সময় রক্তিম একমাত্র আজীজ শিকদারের দিকেই তাকিয়ে ছিল। কান দুটো তার খোলা থাকলেও আকস্মিক এমন একটা ধাক্কায় অসাঢ় মস্তিষ্ক হয়তো জেরিন বা সংগ্রাম কারো কথায় ধরতে পারেনি। আর না পেরেছে নিশ্চল মস্তিষ্ক শরীরে কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি করতে। বিচারকের মুখে রক্তিম নির্দোষ কথাটা শোনার পরও কারো মুখে এক বিন্দু হাসি ফুটেনি। সকলের মস্তিষ্কে একটাই ভাবনা, এরপর কি হবে? রক্তিম আর কতক্ষণ এমন নির্বাক থাকবে? আবার কোনো বিপদ আসতে চলেছে সামনে?
বিচার কার্য শেষ হতেই একে একে সকলেই বিদায় নেয়। আজীজ শিকদারের আদেশে যে লোক জেরিন, সংগ্রামকে কোর্টে হাজির করেছিল সেই লোকের সাথেই তারা আবারও চলে যায়। যাবার সময় দুজনেই এক পলক শুধু তাকিয়ে দেখে যায় নির্বাক রক্তিমকে। রক্তিম একই ভাবে নিশ্চল কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে। ইন্সপেক্টর এসে তাড়া দেয় কেস নিষ্পত্তির কিছু ফর্মালিটিস পূরণ করার জন্য।রক্তিমের কোনো হেলদুল হয়না।মেহেদী চিন্তিত মুখেই বসা থেকে ওঠে এগিয়ে যায় রক্তিমের দিকে। ভয় জড়ানো মনেই শুকনো ঢোক গিলে রক্তিমের হাত ধরে বাইরে নিয়ে যায়। রক্তিম যেন এক কলের পুতুল। মেহেদী তাকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে সে প্রাণহীন এক পুতুলের মতোই সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। তার এমন অস্বভাবিক নির্লিপ্ততায় ভয় হয় উপস্থিত প্রতিটা মানুষের। এভাবে আর কতক্ষণ থাকবে ছেলেটা?এক বিপদ শেষ হবার সাথে সাথেই আবার না কোনো অঘটন ঘটে যায়।
কোর্টের সমস্ত কার্যক্রম সমাপন করে আজীজ শিকদারকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় মেহেদী। জানায় রক্তিমকে নিয়ে কিছুক্ষণ অন্য কোথাও থেকে স্বাভাবিক করার প্রয়াস চালিয়ে তবেই বাড়ি ফিরবে তারা। আজীজ শিকদার অপরাধী চোখে ছেলের দিকে একপলক তাকিয়ে প্রলম্বিত একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বিদায় নেয় আদালত প্রাঙ্গন থেকে। মেহেদী রক্তিমের হাত ধরে এগিয়ে যায় অন্য একটা গাড়ির দিকে। গাড়ির কাছাকাছি যেতেই হুট করে শরীরের শক্তি হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে রক্তিমের বলিষ্ঠ দেহটা। তৎক্ষণাৎ অজানা এক ভয়ে, আতঙ্কে নীল হয়ে ওঠে মেহেদীর মুখ। জাবির, শান্ত, রাকিব দৌড়ে এসে মাটিতে লুটিয়ে থাকা রক্তিমের দেহটা আগলে নেয়। জড়বুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেহেদীকে তাড়া দিয়ে বলে,
“দ্রুত গাড়িতে ওঠেন। ভাইকে এক্ষুণি হাসপাতালে নিতে হবে। দেরী হলে সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে।”
চলবে….