নব_প্রেমের_সূচনা #Sumaiya_Akter_Bristy #পর্ব_৪৩

0
318

#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_৪৩

“তুমি একদম চিন্তা করো না। সমুদ্র যেনো কোনো ঝামেলা না বাধায় সেদিকে আমরা খেয়াল রাখবো।” নোমান আহমেদ আরভীকে আশ্বস্ত করে বললেন।

“ধন্যবাদ। আজ তবে আসি।” বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো আরভী।

“কিন্তু এভাবে বাড়িতে এসে কিছু মুখে না দিয়েই চলে যাবে?” ইয়াসমিন বললেন।

“সময় নেই আন্টি। সময় হলে অবশ্যই আসবো আপনার হাতের রান্না খেতে।” বলে সবার থেকে বিদায় নিয়ে সমুদ্রদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় আরভী। এখন আবার সমাবেশে যেতে হবে। অলরেডি অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে।

সমাবেশে যাওয়ার পথে ফায়াজ কিছুটা দ্বিধা নিয়ে আরভীকে জিজ্ঞেস করলো,”আপু, আমার মনে হচ্ছে না সমুদ্র কারো কথা শুনবে।”

“সমুদ্রের এই দিকটাই আমার মনে ধরেছে ফায়াজ। ছেলেটা বড্ড জেদি। এতোটাই জেদি যে আরভী রায়হানের জেদকে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করেছে বহুবার। এবার দেখা যাক সামনে কি হয়। আমি অপেক্ষায় আছি সমুদ্রের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য।”

সমুদ্র ঘুম থেকে উঠে খাবার টেবিলে গিয়ে বসলে ইয়াসমিন ও নোমান আহমেদ কেমন আড় চোখে তাকাতে থাকে সমুদ্রের দিকে। সমুদ্রের মনে হচ্ছে উনারা সমুদ্রকে কিছু বলতে চাইছেন কিন্তু বলতে পারছেন না। তাই সমুদ্র খাবার মুখে পুড়ে দিয়ে বললো,”এভাবে দেখছো কেন আমাকে? যা বলতে চাও বলে ফেলো।”

“আগে কথা দে তুই আমাদের কথার অমান্য করবি না।”

সমুদ্র এবার মাথা তুলে তাকালো নোমান আহমেদ ও ইয়াসমিনের দিকে। উনাদের দেখে বেশ সিরিয়াস মনে হচ্ছে।

“কিছু হয়েছে? তোমাদের এরকম অস্হির দেখাচ্ছে কেন?”

“বাবু শুন, তুই আমাকে ছুয়ে বল আমরা এখন যা বলবো তুই তাই করবি।” অস্হির হয়ে বললেন ইয়াসমিন।

“আগে পুরো ঘটনা বলো পরে ভেবে দেখবো।”

“বাবু তুই গাজীপুর চলে যা। আগের জবে আবার জয়েন কর।”

“না মা, আমি আর গাজীপুর যাবো না। এখানেই বাবার বিজনেস সামলাবো।”

সমুদ্রের এ কথায় নোমান আহমেদ ও ইয়াসমিনের চোখে-মুখে সামান্য ভয় ফুটে উঠে। ছেলেটা সত্যি জানলে কি করবে তা ভেবে বড় ঢোক গিললেন ইয়াসমিন। নোমান আহমেদের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলেন সমুদ্রকে বুঝাতে।

নোমান আহমেদ উপর-নিচে মাথা নাড়িয়ে ইয়াসমিনকে আশ্বস্ত করলেন উনি দেখছেন ব্যাপারটা। তারপর নিজের চেয়ার থেকে উঠে সমুদ্রের পাশের চেয়ারে বসে বললেন,”তোর সাথে কিছু কথা আছে।”

সমুদ্র মুখে আবারো খাবার পুড়ে দিয়ে বললো,”হুম বলো।”

“দেখ সমুদ্র ভালোবাসা কখনো জোর করে পাওয়া যায় না। তোর জায়গা থেকে যেমন তুই ঠিক তেমন ভাবেই আরভীর জায়গা থেকে আরভী ঠিক। তুই আর ওর আশায় পথ চেয়ে বসে থাকিস না বাবা।”

সমুদ্র আবার খাবার মুখে দিতে যাচ্ছিলো কিন্তু নোমান আহমেদের উক্ত কথায় খাওয়া থামিয়ে দেয়। নোমান আহমেদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধায়,”হঠাৎ এসব বলছো কেন তোমরা? আরভী কিছু বলেছে তোমাদের?”

নোমান আহমেদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সমুদ্রের সামনে আরভীর বিয়ের কার্ড ধরলেন। সমুদ্র একবার নাহিদ চৌধুরী এবং ইয়াসমিনের দিকে তাকিয়ে উনাদের মুখের ভাবভঙ্গি দেখে নিলো। তারপর হাত বাড়িয়ে কার্ডটি নিয়ে উল্টেপাল্টে ভালোভাবে দেখে নিলো কার্ডটি। কালোর উপর সুনিপুণ ভাবে গোল্ডের জরি কাজ করা কার্ডটিতে। কিছু কিছু জায়গায় আবার সাদা পাথর বসানো।

সমুদ্র কার্ডটির ভেতরে না দেখেই ইয়াসমিনকে জিজ্ঞেস করলো,”মা, কার বিয়ের কার্ড এটা?”

ইয়াসমিন কিছু বললেন না। চুপ করে সমুদ্রের মুখপানে তাকিয়ে রইলেন।
ইয়াসমিনের হয়ে নোমান আহমেদ সমুদ্রের প্রতিত্তোর করলেন। বললেন,”নিজেই দেখে নে।”

নোমান আহমেদের কথায় সমুদ্র এবার কার্ডটি খুলে কার্ডের ভেতরে পাত্র-পাত্রীর নামের উপর চোখ বুলালো। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে পাত্রীর নামের জায়গায় আরভী রায়হান ও পাত্রের নামের জায়গায় পিয়াস হাসান লেখা আছে।

সমুদ্র কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে রইলো কার্ডটির দিকে। তারপর কাউকে কিছু না বলেই হাত ধুয়ে উঠে পড়লো। কার্ডটি নিয়ে বাড়ির সদর দরজার দিকে যেতে লাগলো। তা দেখে ইয়াসমিন চিন্তিত স্বরে শুধালেন,”বাবু কোথায় যাচ্ছিস তুই?”

আর নোমান আহমেদ বললেন,”তুই যদি কোনো ঝামেলা বাধিয়েছিস তবে আর কখনো এ বাড়িতে পা ফেলবি না তুই। মনে করবি তোর কেউ নেই।”

সমুদ্র দাঁড়িয়ে যায় নোমান আহমেদের এ কথা শুনে। নোমান আহমেদের দিকে না ফিরেই বলে,”মানলাম তোমার কথা। ঝামেলা বাঁধাবো না। তবে মনে রেখো, সমুদ্রের জীবনে আরভী ব্যাতীত অন্য কোনো নারী কোনোকালেই প্রবেশ করতে পারবে না।”

সমাবেশে মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে চলেছে আরভী। আরভীর বলা শেষ হলে সাংবাদিকেরা আরভীকে প্রশ্ন করতে শুরু করে। তন্মধ্যে একজন প্রশ্ন করেন,”নাহিদ চৌধুরীর গ্রেফতার হওয়া নিয়ে আপনি কি বলবেন? নাহিদ চৌধুরী যে জেল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন তা কি আপনি জানতেন?”

“নাহিদ চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে স্ট্রং এভিডেন্সের জন্য। নয়লে উনার মতো একজনকে গ্রেফতার করা মুখের কথা নয়। আমি সামান্য কিছু প্রমাণ জোগাড় করে র‍্যাবদের হাতে দিয়েছি তবে সেটা উনি গ্রেফতার হওয়ার পরে। এর আগে আমারই একজন শুভাকাঙ্ক্ষী উনার বিরুদ্ধে বেশ কিছু প্রমাণ জোগাড় করেছে। এছাড়া অফিসার তন্ময়ও প্রমাণের জন্য পরিশ্রম করেছেন। আর আগের বার যখন আমার গাড়িতে বোম্ব ব্লাস্ট করা হয়েছিলো আমি তখন বলেছিলাম অপরাধীর কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করবো। নাহিদ চৌধুরী’ই ছিলেন সেই লোক যে আমার গাড়িতে বোম্ব সেট করিয়েছিলেন। এখন অপরাধী কি শাস্তি পেয়েছে তা আপনারা সবাই জানেন। তাই বলা যায়, আমি আমার কথা রেখেছি। এন্ড হ্যাঁ, আমি কোনো এক ভাবে জানতে পেরেছিলাম উনি জেল থেকে পালিয়েছেন।”

“কে সেই শুভাকাঙ্ক্ষী? তা কি আমরা জানতে পারি ম্যাম?” আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন।

“দুঃখিত, আমি আমার ব্যাক্তিগত জীবনের তথ্য সবার মাঝে তুলে ধরতে পছন্দ করি না। সে যাই হোক, আমি সবার উদ্দেশ্যে আজ কিছু কথা বলতে চাই। আগামী সপ্তাহে আমার বিয়ে। আপনাদের সবার নিমন্ত্রণ রইলো। বিয়েতে এসে আমাদের দোয়া করে যাবেন সবাই। আপনারা আমার বিয়েতে না আসলে কে আসবে বলুন তো? আপনাদের জন্যই তো আরভী রায়হান আজ এখানে দাঁড়িয়ে। আপনাদের জন্যই তো আমি আরভী রায়হান আজ হৃদয়পুরের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি।”

আরভীর কথায় সমাবেশের সবার মাঝে এক আনন্দের জোয়ার বইতে দেখা গেলো। কমবেশি সবাই চিৎকার করে জানালো তারা যাবে আরভীর বিয়েতে আরভীকে দোয়া দিতে।

স্টেজ থেকে নেমে আরভী গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। তবে এবার আরভীর সাথে পাঁচ থেকে ছয়জন বডিগার্ড আছে। গাড়ির ওখানেও দুজন দাঁড়িয়ে। একজন সামনে আরেকজন পেছনে। আরভী গাড়িতে উঠে ফায়াজকে বললো,”গার্ড আরো বাড়িয়ে দাও ফায়াজ। সমুদ্র ভয়ংকর ছেলে। এই ক’জনের চোখ ফাকি দেওয়া ওর বা’হাতের খেল।”

সমুদ্র অনেকক্ষণ ধরে নগর ভবনের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরভীর সাথে একটু দেখা করার জন্য। কিন্তু সিকিউরিটি ও গার্ডরা কিছুতেই সমুদ্রকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
এদিকে বাহিরে শোরগোল পেয়ে আরভী খানিকটা অনুমান করেছে এই শোরগোল হওয়ার পেছনের কারন। তবু নিশ্চিত হতে ফায়াজকে ডেকে বললো,”বাহিরে কি হয়েছে?”

“আপু সমুদ্র এসেছে। আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে।”

“তুমি গিয়ে হ্যান্ডেল করো। আর স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দাও আমার সাথে আপাতত দেখা করা যাবে না। আমি ইচ্ছুক নই।”

“আচ্ছা আপু।” বলে ফায়াজ বেড়িয়ে যায় আরভীর ক্যাবিন থেকে।
ফায়াজ বেড়িয়ে যেতেই আরভী সামান্য হাসে। হেসে বলে,”কেন অযথা নিজেকে পুড়াতে চাইছেন সমুদ্র! আপনি যতো চেষ্টা করবেন আমার সাথে দেখা করতে আমি ততো আপনাকে পুড়াবো।”

ফায়াজ নিচে গিয়ে সিকিউরিটি ও গার্ডদের ইশারা করে এখান থেকে চলে যেতে।
সবাই ফায়াজের ইশারা বুঝে চলে গেলেই ফায়াজ সমুদ্রকে বলে,”আপু আপনাকে এখান থেকে চলে যেতে বলেছেন। উনি আপনার সাথে দেখা করতে ইচ্ছুক নন।”

সমুদ্রের মেজাজ এমনিতেই সকাল থেকে চোটে আছে। তারউপর যখন শুনলো আরভী চলে যেতে বলেছে তখন রাগ যেনো আরেকটু বাড়লো। তবু কোনোরকমে নিজেকে ধাতস্থ করে খানিকটা সময় নিয়ে বললো,”তা হঠাৎ করে গার্ড বাড়িয়ে দেওয়ার কারন কি? তোমার আপু কি ভয় পাচ্ছে আমাকে? আমার ভয়েই কি এই গার্ড বাড়িয়েছে? মেয়র আরভী রায়হান সাধারণ একটা ছেলের ভয়ে গার্ড বাড়িয়েছে? কথাটা হাস্যকর নয় ফায়াজ? তবে তোমার আপুকে জানিয়ে দিয়ো, এসব গার্ডে কোনো কাজ হবে না। এখন হয়তো আমি উনার সাথে দেখা করতে পারি নি। কিন্তু পরেরবার দেখা না করে যাবো না।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here