প্রেম_আমার♥ #পার্ট-৩৪♥ #Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥ . 🍂

0
384

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৩৪♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🍂
.
রাত্রির বাসার ঠিক নিচে দাঁড়িয়ে আছে রুশো। উদ্দেশ্য একটিবারের জন্যে হলেও রাত্রিকে দেখা৷ তার যে মন মানছে না। যত দিন যাচ্ছে ততই যেনো আরোও গভীর মায়ায় জড়িয়ে পড়ছে সে রাত্রির।
.
পুরো একটা দিন তার কাছে পুরো একটা মাসের মতো লেগেছে রাত্রিকে দেখতে না পেয়ে।
অনন্যার কাছে যখন শুনেছে “আজ রাত্রি অসুস্থ তাই ভার্সিটিতে আসেনি!” তখনই বুকের বাম পাশে মোচড় দিয়ে উঠেছে তার। একে তো রাত্রিকে সারাদিকে এক ঝলক দেখতে না পারার কষ্ট তার ওপর রাত্রির অসুস্থতা। সব মিলিয়ে রুশোর বুকের ওপর এক বিশাল বড় পাথর চেপে বসেছে যেনো। যা রাত্রিকে এক ঝলক দেখলেই বোধহয় গলে যাবে খুব সহজেই।
.
অনন্যাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বেশ কৌশলেই রাত্রিদের বাড়ির ঠিকানা এরেঞ্জ করেছে রুশো। বাড়িটা খুব বেশি বড় না আবার খুব বেশি ছোটও না। ডুপ্লেক্স বাড়ির মেইন গেট বরাবর দাঁড়িয়ে আছে রুশো। তার আইডিয়া উপরের ছাদের পাশে লাগানো ঘরটাই রাত্রির হবে নিঃসন্দেহে। তার মতে মেয়েরা হাওয়া-বাতাস বেশি পছন্দ করে তাই এরকম একটা বাড়িতে ওই রুমটাই রাত্রির হওয়া উচিৎ। কিন্তু তার কাছে না আছে রাত্রির ফোন নম্বর আর না আছে মই। যেটা দিয়ে ছাদের উপরে উঠতে পারবে সে।

রুশো একবার হাতে থাকা হ্যান্ডওয়াচে চোখ বুলিয়ে নেয়। রাত ২ টো বেজে ১৪ মিনিট।
অনন্যাদের বাসা থেকে চুপিচুপি কাউকে না জানিয়েই দেড় টার পরপরই বেড়িয়েছে সে। হঠাৎ করেই গভীর রাতে তার মাথায় রাত্রিকে দেখার ভূত চেপে বসেছিল। তার ভাবখানা এমন ছিলো যেনো রাত্রিকে না দেখলে আজ রাত্রে ঘুমোই তার কাছে ধরা দেবে না।
এখানে পৌঁছতে ১০ মিনিটের মতো লেগেছে তার। দ্যট মিনস গত আধাঘন্টা যাবৎ এভাবে বোকার মতো রাত্রির বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে রুশো।
.
অনেক্ষণ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ রুশোর চোখ যায় ছাদের সাথে লাগানো পাইপের দিকে। তখনই কোনো এক ফিল্মে দেখা সিনের কথা মনে পড়ে যায় তার। সেখানে হিরো হিরোইনের বাসায় ঢোকার কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে পাইপ বেয়ে হিরোইনের বাসার ছাদে উঠে হিরোইনের ঘরে গিয়েছিলো।
হঠাৎ সেই সিন মনে পড়তেই নিজেকে সেই হিরোর মতো মনে হতে লাগলো রুশোর। বুক ফুলিয়ে এক শ্বাস টেনে বলে উঠলো সে,
.
— ওহ কাম অন রুশো। ইউ ক্যান ডু ইট। কোরিয়ার ওই চিকু ফাইভ হিরো গুলো পারলে তুই পারবি না তা কি করে হয়? হাহ! রুশো ক্যান ডু ইট এনিথিং ফর এটম বোম্ব!
.
বলে নিজেই নিজের মাথায় একটা চাটি মেরে দিলো রুশো। এই ভেবে যে এটম বোম্বের থেকে মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ছুটে আর সেখানে সে কিনা যেচে প্রাণ বাজি রেখে এটম বোম্বের কাছে যাচ্ছে!
অতঃপর মাথা থেকে এসব উল্টো পাল্টা চিন্তা ঝেড়ে এগিয়ে যেতে থাকে সে পাইপের দিকে।
.
🍁
.
কাথা মুড়ি দিয়ে নিশ্চিতে ঘুমোচ্ছে অনন্যা! তার বেডের ঠিক পাশে গালে হাত দিয়ে অনন্যার ঘুমন্ত রূপ দেখতে ব্যস্ত নীবিড়! বিয়ের রীতিনীতি অনুযায়ী তাদের আজ বাসর রাত হবার কথা ছিলো। কিন্তু নিয়তি যে এক অদ্ভুত খেলায় নেমেছে। যার স্বীকার নীবিড় ও অনন্যা দুজনেই।
.
তখন আকাশের বুক চিরে ঝুম বৃষ্টি নামায় থেকে যেতে হয়েছে নীবিড়দের। বৃষ্টিও বোধহয় ১১ টার আগে ছাড়বে না বলে পণ করেছিলো। যার কারণে নিত্য-নীবিড় আজও অনন্যাদের বাসায়।
রাতে ঘুম না আসায় এপাশ-ওপাশ করতে করতে একসময় উঠে পড়ে নীবিড়। অগ্নির রুমের পাশেই অনন্যার রুম। নীবিড় অগ্নিকে মরার মতো ঘুমোতে দেখে আনমনেই “ঘুমারু একটা” বলেই বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে। তবে অদ্ভুত ভাবেই অনন্যার ঘরের দরজা শুধু চাপানো দেখে থমকে দাঁড়ায়। ভেবেছিলো ছাদে গিয়ে কিছুক্ষণ থেকে চলে আসবে তার আগেই অনন্যার ঘরের দরজা খোলা পেয়ে অগত্যা প্লান ক্যান্সেল করে ফেলে সে।
.
নিজেই নিজের মনকে বারবার এক কথাই বুঝাতে থাকে যে, “নো নীবিড়! এটা ঠিক নয়। জাস্ট কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ ড্যাম ইট!” কিন্তু মন কি আর ব্রেইনের কথা শুনে? তাই শেষমেশ নিজের ব্রেইনের কাছে পরাজিত হয়ে মনের দেখানো পথেই পা বাড়ায় সে।
নিঃশব্দে দরজা ঠেলে অনন্যার ঘরে ঢুকে পড়ে নীবিড়।
বেড সাইডের টেবিল ল্যাম্পের হাল্কা আলোয় আলোকিত হয়ে রয়েছে অনন্যার মুখখানা। কাথা মুড়ি দিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে সে। তার ঘুমন্ত মুখটা দেখেই নীবিড়ের বুকের বাম পাশটায় কেমন যেনো চিনচিন করে উঠে। এলোমেলো হয়ে থাকা চুল গুলো তার কপালজুড়ে বিরাজ করছে। শুয়ে থাকায় মাথার হেয়ার ব্যান্ডটা লুজ হয়ে গিয়েছে। ওকে দেখেই নীবিড় মুচকি হেসে আনমনেই বলে উঠে “পিচ্চি একটা”।
তারপরই ঘরে থাকা চেয়ার টেনে বেডের পাশে বসে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে অনন্যার মায়াভরা মুখখানা।
.
অনেকক্ষণ যাবৎ এক ভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ অনন্যার ঠোঁট নড়তে দেখে ভয় পেয়ে গেলো নীবিড়। চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবে তখনই বুঝতে পারে অনন্যা ঘুমের ঘোড়েই স্বপ্নে কিছু একটা বিড়বিড় করে বলছে।
নীবিড় সরু দৃষ্টিতে অনন্যার দিকে তাকিয়ে, কাছে এসে হেলে নিজের কানটা তার ঠোঁটের কাছে নিয়ে আসলো। কথা গুলো আধো আধো হলেও অনেকটাই বুঝা যাচ্ছে। অনন্যার কথাগুলো এরকম,
.
” আপনি এমন কেনো সাদা বিলাই! শুধু বকা দেন। হুহ! আপনার সাথে আমার আড়ি! যান ভাগেন, বলবো না কথা আর আপনার সাথে!”
.
অনন্যার ঠোঁটেরর কাছ থেকে সরে আসে নীবিড় মুখে হাত দিয়ে কাশতে লাগলো। তার চোখ যেনো বেড়িয়ে আসার উপক্রম।
— আরে করে কি এই মেয়ে! স্বপ্নেও আমাকে দেখছে! তাও আবার সেখানেও ” সাদা বিলাই” “সাদা বিলাই” শুরু করে দিয়েছে?উফফফ…! এটাকে নিয়ে আমি কোথায় যাবো? হে আল্লাহ! প্লিজ হেল্প মিহ!
.
কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে নীবিড় বেড়িয়ে গেলো অনন্যার ঘর থেকে। গিয়ে আবারও অগত্যাই অগ্নির পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। অগ্নি এখনোও মরার মতো ঘুমোচ্ছে। যা দেখে নীবিড় মনে মনে বলে উঠলো,
.
— যদি বাসর রাত না হয়ে বাসর দিন হতো তাহলে হয়তো বোনটার কপাল ভালো হতো আমার! এই শালা তো ঘুম ছাড়া কিছুই বোঝে না! উফফফ….! দুটো ভাই-বোনই দু দুটো প্যারার বস্তা!
.
🌸
.
এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো নিজের কোমড়টা ভাঙলো রুশো। অনেক চেষ্টা করেও পাইপ বেয়ে উপরে উঠতে পারছে না সে। যতবারই একটু উপরে উঠতে গিয়েছে ঠিক ততবারই অর্ধেক গন্তব্য থেকে ধপাস করে পড়ে গিয়েছে।
শেষমেশ বিরক্ত হয়ে বলতে শুরু করলো সে,

— এটা পাইপ না আস্ত তেল দেওয়া কলার গাছ? এতো স্লিপারি কেনো! বিডিতে থাকতে আমগাছ, জাম গাছ, পেয়ারা গাছ প্রায় সবকটা তেই উঠেছিলাম। কেনো যে কলার গাছে উঠি নি। ধ্যাত!
এটাই লাস্ট ট্রাই! এরপরও না পারলে আমি ভাঙা কোমড় নিয়েই হোম ব্যাক করবো।
.
বলেই আবারও উঠতে শুরু করলো রুশো। কিন্তু এবারও ভাগ্য সহায় হলো না তার। একটু উপড়ে উঠতেই পা স্লিপ করে বিকট একটা আওয়াজ করে ধপাস করে পড়ে গেলো সে। এবারের আওয়াজটা ভীষণ জোড়ে হওয়ার রাত্রি ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। মূলত রুশোর আইডিয়াই ঠিক ছিলো। ছাদের পাশের রুমটাই রাত্রির। জানালা খুলেই ঘুমোনোর অভ্যেস তার যার কারণে আওয়াজটা বাড়ির অন্য সদস্যরা না পেলেও রাত্রি ঠিকই পেয়েছে।
.
দ্রুত পায়ে আওয়াজের উৎস খুঁজতে দরজা খুলে ছাদে গিয়ে পৌঁছোলো রাত্রি। ততক্ষণে রুশো কোমড় ধরে উঠে মাথা হেলিয়ে প্যান্টে লেগে থাকা ধুলো ঝাড়তে ব্যস্ত। রাত্রি ঘুমুঘুমু চোখে নিচে তাকিয়ে কাউকে মাথা হেলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোর ভেবে এক চিৎকার দিয়ে উঠলো,
.
— মা-বাবা! রিমিইইইই চোর……..! চোর এসেছে চোর……!
.
রাত্রির এমন গলাফাটানো চিৎকারে রুশো ভরকে গিয়ে উপরে তাকালো। রাত্রি মুখ ঘুড়িয়ে বাড়ির সবাইকে এক নাগারে ডেকে চলেছে। রুশো ভেবে পাচ্ছেনা এখানে চোর আসলো কোথায় থেকে! হঠাৎ রাত্রি রুশোকে উদ্দেশ্য করে ছাদ থেকেই বলে উঠে,
.
— এই চোর একদম পালাবার চেষ্টা করবি না। ওখানেই থাক।
.
বলেই নিচে নামা শুরু করে দিলো রাত্রি। রুশো এবার বুঝতে পারলো একচুয়ালি রাত্রি তাকেই চোর বলে ভেবেছে। রুশো দিশকুল না পেয়ে কোমড় ধরেই ধীর পায়ে দৌড়ে বাইকের কাছে এসে থামলো। তখনই রাত্রিদের বাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে আসলো তাদের বাড়ির সবাই। রাত্রির মা-বাবার হাতে লাঠি! রাত্রির ৫ বছরের ছোট বোন রিমির হাতে খুন্তি! আর রাত্রির হাতে ঝাড়ু!
রুশোকে চোর ভেবেই তারা এগিয়ে আসতে শুরু করলেই রুশো তাড়াহুড়ো করে বাইকে উঠে স্টার্ট দিয়ে ফুল স্পিডে ছুট লাগালো। ভাগ্য ভালো রাতের অন্ধকারে রুশোর মুখ দেখতে পারলো না কেউই।
রুশোকে সেকেন্ডের মধ্যে হাওয়া হয়ে যেতে দেখে রাত্রি বাবা-মা রাত্রিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
.
— এ আবার কেমন ধারা চোর? চোরের আবার বাইক আছে!
.
— এই আপুউউ ওটা মেবি কোনো চোর নয়। হয়তো ডাকাত ছিলো।(রিমি)
.
ওমনি রাত্রির মা ধমক দিয়ে বলে উঠেন,
— ওরে গাধাগুলো, ডাকাতি কি কেউ একা করতে আসে?
.
রিমি ঠোঁট উল্টে “ওমা! সেটাইতো” বলে আবারও মাথা চুলকে বলে উঠলো,
— তাহলে হয়তো বড়লোক চোর।
.
রাত্রি রিমির এমন বোকার মতো কথায় ঠাস করে চাটি মেরে দিলো তার মাথায়।
সে এখনোও ভেবে পাচ্ছেনা হঠাৎ এমন করোর আসার কারণ কি! একজন প্রফেশনাল চোর এতোক্ষণে ধরা পড়লে পাগাড় পার করে ফেলতো। তাহলে কি লোকটা চোর নয়। অন্য কেউ?
তবে কে সে?
.
🌹
.
মাঝরাতে ঘুমটা আচমকাই ভেঙে গেলো আমার। ঘুমু ঘুমু চোখে পাশ ফিরে ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলাম রাত ৩ টে প্রায় বেজেই গিয়েছে।
পানি খেতে হবে, গলাটা শুকিয়ে গিয়েছে। তাই আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলাম। কিন্তু আমার অদ্ভুৎ এক অনুভূতি হচ্ছে। ঘরের কোথাউ কিছু না কিছুর সমস্যা তো রয়েইছে। নাকে এক চিরচেনা ঘ্রাণ ভেসে আসছে। এরকম সুবাস টা তো মেবি সাদা বিলাইয়ের আশেপাশে থাকলেই পাই আমি। কিন্তু তা কি করে হয়? উনি তো আমার রুমে নেই।
.
একটু ভালো করে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলাম, দরজা লাগানো নেই শুধু চাপানো আছে! ইশশ কত্তো বোকা আমি। রাতে দরজাটা লাগিয়ে ঘুমোবো তাও ভুলে গিয়েছি। আচ্ছা উনি আবার আমার ঘরে আসেন নি তো? উহু তা কি করে হয়! এখন তো সবার ঘুমোনোর কথা। হয়তো বা আমার মনে ভুল। উনার গায়ের পারফিউম টা মেবি আমার নাকের সাথে চিপকে গিয়েছে।
ভেবে নিজেই নিজের মাথায় একটা চাটি মেরে দিলাম।
.
টেবিলের ওপর খালি জগ দেখে মুখটা নিমিষেই ফ্যাকাশে হয়ে গেলো আমার। রাতে আম্মু বলেছিলো পানি ভরিয়ে নিয়ে যেতে কেনো যে পরে পরে বলে কাটিয়ে দিয়েছি! এখন বুঝো ঠ্যালা!
.
ঘুম ঘুম চোখে হাই তুলতে তুলতে কিচেনে এসে জগটা ভরিয়ে নিলাম আমি। তখনই একটা আওয়াজ কানে ভেসে আসতে লাগলো। আমি যদি ভুল না হই তবে আওয়াজটা আসছে সদর দরজা থেকে। এতো রাতে দরজা থেকে কিসের আওয়াজ আসছে? কোনো চোর-ডাকাত নয় তো?
ভেবেই কিচেন থেকে কুকিং প্যান আর একটা কাপড় হাতে নিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম। অন্ধকার হলেও আড়াল থেকে কাউকে পা টিপেটিপে বাসায় ঢুকতে দেখা যাচ্ছে! ওরে চুর মাম্মা! খাড়া দেখাচ্ছি তোরে মজা।
বলেই লুকিয়ে লুকিয়ে একটা পিলারের পেছনে গিয়ে দাড়ালাম আমি। চোরটা দরজা আটকিয়ে এদিক ওদিক উঁকি-ঝুঁকি মারতে মারতে ধীর পায়ে ড্রইংরুমে প্রবেশ করছে। আমিও কম কি? আস্তে আস্তে চোরটার পেছনে এসেই হাতে থাকা কাপড়টা চোরের মাথায় ফেলে পুরো ঢেকে ফেললাম ব্যাটাকে। ফেলেই হাতে থাকা প্যান দিয়ে বারি মেরে দিলাম চোরটার মাথায়। সাথেসাথেই এক প্রকান্ড চিৎকার দিয়ে চোরটা দুম করে পড়ে গেলো। আর এদিকে আমি বাসার সবাইকে চেঁচিয়ে ডাকতে শুরু করলাম।
.
— আম্মুউউ…! আব্ববুউউউউউ……..! ভাইয়ায়ায়ায়ায়া……….! কোথায় তোমরা? দেখো চোর ধরেছি আমি!
.
চিৎকার টা এতোজোড়েই দিলাম যে সাথেসাথে সবাই হুড়মুড় করে ঘুম থেকে উঠে ছুট লাগালো ড্রইংরুমের দিকে। শুধু আমার গুনোধর ঘুমকাতুরে ভাই আর রুশো ভাইয়ার বদলে। নীবিড় ভাইয়া আর আব্বুউউ দৌড়ে এসে চোরকে ধরে ফেললো। তবে চোরটা বিন্দুমাত্র নড়াচড়া করছে না।
.
— বাপী আই থিংক হি ইজ সেন্সলেস।
.
নিত্য আপু লাইট জ্বালাতেই আব্বু আর নীবিড় ভাইয়া মিলে চোরটাকে টেনে সোফায় বসালো। ওদিকে অগ্নি ভাইয়া দুলতে দুলতে হাই তুলে কেবল নিচে নামছে।
নিত্য আপু গিয়ে ফট করে চোরের মুখ থেকে কাপড়টা সরানো মাত্রই মুখে দু হাত চেপে চোখ বড়বড় করে ফেললো। এদিকে আমার তো চোখ খুলে হাতে চলে আসার মতো অবস্থা!
আমি সহ বাকি সবাই চমকে উঠে এক স্বরে বলে উঠলো,
.
—- রুশোওওওও…………..!😱
.
আমার হাত থেকে ঠাস করে প্যানটা পড়ে গেলো! হায় আল্লাহ এ আমি কি করলাম!
সবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এবার পড়লো আমার ওপর। আমি তো রীতিমতো কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছি। ওদিকে নিত্য আপু ছুট লাগিয়েছে পানি আনতে।
.
— অনন্যায়ায়ায়া…….! এসব কি??? চোর ভেবে ছেলেটার মাথায় এভাবে বাড়ি মেরে দিলি? (আম্মু),
.
অগ্নি ভাইয়া দৌড়ে এসে রুশো ভাইয়াকে ঝাঁকাতে শুরু করে দিলো।
— রুশো…! কি হয়েছে তোর? উঠ! এই ড্রিমার উঠ না!
.
সবাই রুশো ভাইয়াকে নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিয়েছে। এদিকে আমি তো পারিনা পুরো বাসা কান্না করে ভাসিয়ে দেই।
নিত্য আপু গ্লাসে করে পানি এনে কয়েকবার রুশো ভাইয়ার মুখে ছিটা দিতেই ভাইয়া জ্ঞান ফিরে পেয়ে পিটপিট করে চোখ মেলতে শুরু করলো। তা দেখে যেনো আমার জানে জান ফিরে আসলো।
রুশো ভাইয়ার জ্ঞান ফেরায় সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম যেনো। রুশো ভাইয়া মাথা ধরে “আউউউচ্চ!” করে উঠে আস্তে আস্তে বসে পড়লো।
.
— রুশো…! ঠিক আছিস তুই বাবা? (আব্বু)
.
— দেখি কোথায় চোট পেয়েছিস!
.
বলেই আম্মু ভাইয়ার মাথায় হাত দিতে লাগা মাত্রই রুশো ভাইয়া এক হাত দিয়ে আম্মুকে আটকিয়ে বলে উঠে,
— হু আর ইউ? এন্ড হু ইজ রুশো….? হোয়াট আর ইউ গাইস সেয়িং?
.
রুশো ভাইয়ার কথা শুনে সবাই যেনো সাত আসমান থেকে পড়ে গেলাম। আল্লাহ! রুশো ভাইয়ার মাথায় চোট লাগায় কি মেমোরি লস হয়ে গেলো? নাহ……! এ হতে পারে না। কিছুতেই না। আমার জন্য ভাইয়ার এতো বড় ক্ষতি হয়ে গেলো? না আমি মানি না।
.
সবাই যখন আঁতকে উঠে মূর্তির মতো চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তখনই আমি কান্না করা শুরু করে দিলাম। যাকে বলে একদম গলা ফাটানো কান্না।
রুশো ভাইয়া আমাকে কান্না করতে দেখে বসা থেকে চট করে উঠে আমার দু গালে হাত রেখে বলে উঠলো,
.
— হেই ডোন্ট ক্রাই ছুটকি! আমার কিচ্ছু হয়নি। আমি তো জাস্ট ফান করছিলাম।
.
রুশো ভাইয়ার কথায় কান্না থামার বদলে আরোও বেড়েই গেলো আমার। সবাই এবার এসে আমাকে সামলানো শুরু করে দিলো। কিন্তু আমার কান্না থামছে না। বারবার এটাই মনে হচ্ছে আমি এই দুহাতে রুশো ভাইয়াকে আঘাত করেছি। সবাই অনেক বলছে যাতে আর না কান্না করি আমি। কিন্তু কান্নার বেগ বেজায় বেড়েই যাচ্ছে। এদিকে রুশো ভাইয়াকে সবাই বকছে এরকম মেমোরি লসের ড্রামা করার জন্য।
.
নীবিড় ভাইয়া নিত্য আপুকে কি যেনো ইশারা করলো যা দেখে নিত্য আপু আমায় নিয়ে রুমের দিকে যেতে লাগলো। আমায় খাটে বসিয়ে দিয়ে নিত্য আপু ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে ছুট লাগালো নিচে। আমি এখনো চাপা স্বরে কেঁদেই চলেছি।
.
একটু পরই রুমে কেউ ঢুকায় কান্নার বেগ কমে এলো আমার। নীবিড় ভাইয়া আমার কাছে এসেই আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন। আমার মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে ধীর কন্ঠে বলতে লাগলেন,
.
— হুশশশস! অনেক কান্না করেছো। চুপপ…!
আর কাঁদতে হবে না। রুশো ইজ কমপ্লিটলি ফাইন।
.
অদ্ভুত ভাবে উনার বুকে মাথা দেওয়া মাত্রই আমার কান্না থেমে গেলো। উনার শীতল কন্ঠের স্রোত বয়ে গেলো আমার পুরো শিরা-উপশিরায়! আমায় চুপ হতে দেখে উনি আমায় ছেড়ে উঠে বসলেন।
.
— নিচে এসো ফাস্ট।
.
বলেই গটগট করে চলে গেলেন নিচে। আর আমি এদিকে বোকার মতো চেয়ে রইলাম উনার যাওয়ার দিকে।
.
🌺
.
সোফায় বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি সবাই রুশো ভাইয়ার দিকে। এর মাঝে অগ্নি ভাইয়া বলে উঠলো,
— কোথায় গিয়েছিলিস এতো রাতে?
.
রুশো ভাইয়া গলা খাঁকারি দিয়ে আবারও শান্ত হয়ে বলে উঠলো,
— রিচার্জ করতে ব্রো।
.
আমরা সবাই আবারও অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসলাম।
—- এতো রাতে দোকান খোলা থাকে না রুশো তোর সেটা জানা উচিৎ। নয় কি? (অগ্নি)
.
—- কারেক্ট! এবার বলো চোরের মতো কথায় থেকে ফিরলে তুমি রুশো ভাইয়া?
.
রুশো ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো,
—- হেই! তোমরা এমন ডিটেকটিভ দের মতো কোয়েশ্চেন করছো কেনো? আম ফিলিং সো নার্ভাস!
দেখো উইএসে তো সারা রাতই শপ খোলা থাকে। এন্ড আমি ভেবেছি হয়তো পেয়ে যাবো তাই বেড়িয়েছিলাম। বাট ট্রাস্ট মি আমি কারো বাসায় যাই নি।
.
— আরে আমরা এটা কখন বললাম যে তুমি কারো বাসায় গিয়েছো? (ভ্রু নাচিয়ে বললো নীবিড়)
.
— ইয়েস! ব্যাপারটা কিছুটা এমন হয়ে গেলো না? যে ঠাকুর ঘরে কে? আমি তো কলা খাইনি! এই টাইপ? (আমি)
.
আমরা আবারও কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো তার আগেই আম্মু এসে তাড়া দিলো ঘুমোনোর জন্য। নিত্য আপুও আম্মুর কথায় সায় দিয়ে বলে উঠলো,
.
—- থাক না সেসব কথা। ওর রেস্টের দরকার। আমি ঔষধ খাইয়ে দিয়েছি প্লাস স্প্রেও করে দিয়েছি। ঘুমোলে বেটার ফিল করবে।
.
নিত্য আপুর কথায় মাথা নাড়িয়ে অগ্নি ভাইয়া রুশো ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
—- তোকে তো আমি পড়ে দেখে নিচ্ছি বাচ্চা!
.
বলেই ভাইয়া রুশো ভাইয়াকে ধরে ঘরে নিয়ে গেলো। আমরাও আর কথা বাড়ালাম না। চলে গেলাম নিজ নিজ ঘরে। যাওয়ার আগে একবার নীবিড় ভাইয়ার দিকে তাকিয়েছিলাম কিন্তু উনি যেনো আমাকে দেখেও দেখছেন না। উনার সময়ে সময়ে পাল্টি খাওয়া গুলো আমি যে ঠিক হজম করতে পারছি না। সেটা কি উনি জানেন না?
.
.
.
চলবে………………..💕

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here