প্রেম_আমার♥ #পার্ট-৩৫,৩৬♥ #Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥ . 🌺 .

0
349

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৩৫,৩৬♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
আজ নিয়ে ১ সপ্তাহ হয়ে গেল সাদা বিলাই আমার সাথে কোনো কথা বলছেন না। কি হয়েছে উনার? আমি যতোবারই কিছু বলতে গিয়েছি ততবারই উনি আমায় পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছেন। যার জন্য ভীষণ বিরক্ত আমি।
উনি কি আমায় এতোটাই অপছন্দ করেন? আমি জানি এক্সিডেন্টলি আমাদের বিয়েটা হয়ে গিয়েছে তাই বলে কি একেবারেই দূরত্ব বাড়িয়ে দেবেন উনি? আমার ভাবীর ভাই হন উনি। আরেক দিক থেকে ভাইয়ের বেস্টফ্রেন্ড, টুকটাক কথাও তো বলতে পারেন! উনি কি বোঝেন না ভয় পেলেও উনার সাথে কথা না বললে আমার ভেতরটা কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগে?
.
আজ নিত্য আপু আর অগ্নি ভাইয়ার এনগেজমেন্ট আজকের দিনেও অন্তত একটু হলেও কথা বলা উচিত! নয় কি? কিন্তু না, উনি তো আমার আশেপাশেও আসছেন না। কেমন যেনো পালিয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়োচ্ছেন। আচ্ছা আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক? আমার থেকে পালাচ্ছেন কেনো উনি?
.
—- ছুটকি এখনোও রেডি হোস নি কেনো? তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। লোকজন আসতে শুরু করে দিয়েছে তো।
.
রুশো ভাইয়ার ডাকে ভ্রম কাটলো আমার। সেই ১ ঘন্টা আগে রেডি হতে পাঠিয়েছে আম্মু। আর আমি এখনো বিছানায় বসে সাদা বিলাই কে নিয়ে ভেবে যাচ্ছি! উফফফ….! কতো বলদ আমি।
কিন্তু রাত্রি এখনো এলো না কেনো? ও না আসলে আমি একা একা রেডি হবো কি করে? আম্মুও তো ব্যস্ত। ধ্যাত! তার মধ্যে এই শাড়ি আর জুয়েলারি হাতে ধরিয়ে দিয়েছে আম্মু। তার একটাই কথা, আজ যেনো টপস, স্কার্ট, টি-শার্ট এসব না পরি। কিন্তু একা একা তো পড়তেও পারবো না শাড়িটা৷
তাই অসহায়ের মতো ঠোঁট উল্টালাম আমি। রুশো ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম,
.
—- ভাইয়া, রাত্রি তো আসেনি এখনোও আমি তো একা একা শাড়ি পড়তে পারবো না।
.
আমার উত্তরে নিমিষেই হাসিমাখা মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো রুশো ভাইয়ার।
—- এটম বোম্ব হয়তো আসবে না রে ছুটকি।
.
রুশো ভাইয়ার কথায় কপাল কুঁচকে এলো আমার। এটা কেমন কথা? ভাইয়ার এনগেজমেন্টে আসবে না মানে কি?
—- তুমি কি করে জানলে যে আসবে না?
.
রুশো ভাইয়া বোধহয় কিছুটা ভরকে গেলো। আমতাআমতা করে বলে উঠলো,
—- এতোক্ষণেও যখন আসেনি। তাই আর কি আইডিয়া করে বললাম।
.
আসলেই এতোক্ষণে চলে আসা উচিত ছিলো রাত্রির। সাজুগুজু করলেও কোনো অকেশনে এতো লেট করার মেয়ে ও না।
ব্যাপারটা শিওর হওয়ার জন্য ফোনটা হাতে নিয়ে রাত্রির নম্বরে ডায়াল করলাম। কিন্তু আমায় হতাশ করে দিয়ে সেই চিরচেনা বিরক্তিকর নারী কন্ঠ ভেসে আসতে লাগলো ওপাশ থেকে।
” দুঃখীত! আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বরে এই মুহূর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর ডায়াল করুন। Sorry, the number you dial is currently unreachable!”
নিমিষেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো আমার। মানেটা কি? ফোন বন্ধ কেনো ওর?
রেগেমেগে ফোন ছুড়ে মারলাম আমি। আসবে কখন রাত্রি আর আমি রেডি হবোই বা কখন!
.
রুশো ভাইয়া আমার অবস্থা বুঝতে পেরে কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো,
—- হেই ডোন্ট টেক টেনশন। ইউ নো হোয়াট ছুটকি, টেনশন লেনে কা নেহি টেনশন দেনে কা হ্যায়!
.
বলেই রুশো ভাইয়া একপ্রকার ছুট লাগালো বাইরে। আর আমি হ্যাবলার মতো চেয়ে থাকলাম শুধু! হা? কি করতে যাচ্ছে ভাইয়া?
.
🌹
.
প্রায় ৭ মিনিটের মাথায় ঘরে প্রবেশ করলো ১ জোড়া পা। এই পায়ের অধিকারী কে তা দেখতে চোখ উপরে ওঠাতেই চোখজোড়া বড়বড় হয়ে এলো আমার।
সাদা বিলাই ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে আসছেন। উনার চোখ-মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি চরম বিরক্ত। কেউ জোড় করে উনাকে এখানে পাঠিয়েছে এমন টাইপ। উনি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বিরক্তিমাখা কন্ঠে বলে উঠলেন,
.
—- কি?
.
—- কোথায় কি?
.
—- সেটাই তো বলছি কি হয়েছে টা কি?
.
—- কোথায় কি হবে? আপনি এসেছেন কেনো?
.
নীবিড় ভাইয়ার বোধহয় আমার পাল্টা প্রশ্ন করাটা ঠিক পছন্দ হলো না। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলেন উনি,

—- তুমি একটা ১৮+ মেয়ে কে বলবে? জাস্ট থিংক কতোটা স্টুপিড তুমি! একটা শাড়ি পর্যন্ত পড়তে পারো না।
.
এবার বুঝলাম আসল কাহিনী। তার মানে রুশো ভাইয়া “টেনশন লেনে কা নেহি, টেনশন দেনে কা” বলতে আই সাদা বিলাইকে হেল্প কর‍তে পাঠানোর জন্য ভেবেছিলো? হায় আল্লাহ। কিন্তু রুশো ভাইয়া কি জানে, যে সে আমার টেনশন আগের থেকেও আরোও বাড়িয়ে দিয়েছে?
আমি চুপ করে এসব ভেবে যাচ্ছি তখন আবারও উনি ধমকে উঠলেন,
.
—- এই নাও এই ব্লাউজ এন্ড এটার নাম যেনো কি…? হোয়াট এভার, পড়ে আসো কুইক!
.
আমি অবাকের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে চোখদুটো আরোও বড়বড় করে ফেললাম! উনি চোখ রাঙিয়ে আবারও ধমকানোর পূর্বেই দিলাম এক দৌড়।
ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম যেনো।
কি অদ্ভুত! আমিই চাচ্ছিলাম উনার সাথে কথা বলতে আবার যখন উনি এলেন তো ভয়ে কু্ঁকরে পালিয়ে এলাম। তবুও ভেতরে কেমন যেনো এক প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছি আমি।
ব্লাক কালারের ব্লাউজ-পেটিকোট পড়ে নিলাম তাড়াতাড়ি করে কিন্তু বিপত্তি ঘটলো এখানে, আমি শাড়িটা ফেলেই চলে এসেছি। পেট-পিঠ দুটোই বের হয়ে আছে আমার। এই সামান্য জড়জেটের পাতলা ওড়না দিয়ে কতটুকুই আর কভার করা যাবে? তাও কোনোমতে পেঁচায় পুঁচায় ওড়নাটা গায়ের সাথে জড়িয়ে নিলাম।
.
বের হতেই দেখি মি. সাদা বিলাই উল্টো দিকে মুখ ঘুড়িয়ে রেখেছেন। ভালোই হলো অবশ্য। এই ফাঁকে আমি ফট করে শাড়িটা গায়ের সাথে পেঁচিয়ে নিলাম। নিজেকে ঠিকঠাক ভাবে ঢেকে নেওয়া হয়ে গেলে একটা শুকনো কাশি দিয়ে বসলাম অামি,

—- আহহহুউউউউম! আহহুউউউউউম! আপনি এবার ঘুরতে পারেন।
.
আমার কথায় উনি চোখ বন্ধ রেখেই ঘুরে দাঁড়ালেন। যা দেখে আমার মনে হচ্ছে লজ্জা নামক জিনিসটি বোধহয় আমার মধ্যেই নেই আর উনার মধ্যে লজ্জার খনি রয়েছে।
.
—- চোখ বন্ধ রাখার কিছুই নেই৷ চোখ খুলতে পারেন। আর চোখ বন্ধ থাকলে শাড়িটা পড়িয়ে দেবেন কিভাবে?
.
আমার কথা শুনে উনি “শাট আপ!” বলে চেঁচিয়েই পিটপিট করে চোখ খুলতে শুরু করলেন।
পুরোপুরি চোখ খুলে হুট করে আমায় একটান মেরে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে শাড়ির আঁচলটা কাঁধে ঠিক মতো পিন দিয়ে আটকিয়ে নিলেন। আর আমি শুধু রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছি। হাহ! করুক আজকে যা করার। আমি কিচ্ছু করবো না৷ আমি তো স্টুপিড! কিচ্ছু পারিনা। ওকে উনি পুরো শাড়ি একা একা কিভাবে পড়ান আমিও দেখতে চাই।
নীবিড় ভাইয়া হঠাৎ কিছু একটা ভাবতে শুরু করলেন৷ যা দেখে আমি জিজ্ঞেস করে উঠলাম,
.
—- কি? থামলেন কেনো। পড়ান।
.
উনি শাড়ির ডানদিকের পাড় হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকে বোকার মতো বলে উঠলেন,
—- এটা, ডান দিকে গুঁজাবো না বাম দিকে! ইটস সো কনফিউজিং!
.
এবার আমার ভীষণ রাগ উঠতে লাগলো। আরে আমাকে শাড়ি পড়তে না পারার জন্য বকে নিজে এমন ভাবটা নিলেন যেনো উনি শাড়ি পড়ানোতে পিএইচডি লাভ করে এসেছেন। আর এখনই হাওয়া ফুউউউসসসস…..!
.
আমি মুখ খুলে কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি “ওয়েট আ মিনিট!” বলে আমায় থামিয়ে দিয়ে ফোনে মুখ গুঁজে দিলেন। বুঝলাম উনি পারবেন না একা একা যার জন্যে ইউটিউব মামার হেল্প নিতে শুরু করে দিয়েছেন। হুহ! যত্তসব।
.
🍁
.
রাত্রিদের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রুশো। কলিংবেল বাজাবে কি বাজাবেনা এই নিয়ে চরম কনফিউজড সে। আগের বার নাহয় রাতে চুপিচুপি এসেছিলো বলে সবাই তাকে চোর ভেবেছিলো কিন্তু এবার তো সে লুকিয়ে লুকিয়ে নয় বরং সদর দরজা দিয়ে ঢুকে ভদ্র ভাবে রাত্রিকে নিয়ে যেতে এসেছে। তাও কেনো যেনো সাহস কুলিয়ে উঠছে না তার। বারবার রাত্রির হাতে ঝাড়ু থাকার সিন টা ভেসে আসছে চোখের সামনে।
.
শেষমেশ অনেক ভাবার পর বুক ফুলিয়ে একটা দীর্ঘঃশ্বাস টেনে কলিং বেলে চাপ দিলো রুশো। জাস্ট ৫ সেকেন্ডের মধ্যেই খট করে দরজা খুলে যাওয়ায় খানিকটা অবাক হলো সে।
ভেতর থেকে বেড়িয়ে এলো এক হাস্যজ্বল মুখ।
.
—- জ্বি বলুন! কাকে চাই?
.
— ইয়া মানে আপু, রাত্রি বাসায় আছে?
.
মহিলার বয়স আর চেহারা দেখে রুশোর মনে হলো উনি বোধহয় রাত্রির বড় বোন! তাই সে আপু বলেই সম্মোধন করলো মহিলাটিকে। কিন্তু রুশোকে পুরোপুরি ভুল প্রমাণ করে দিয়ে মহিলাটি বলে উঠলেন,
.
—- হ্যাঁ রাত্রি বাসায়ই আছে, আর আমি ওর মা! কিন্তু তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না। কে তুমি বাবা?
.
রুশো কিছুটা ভরকে গিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে উঠলো। আমতাআমতা করে বলে উঠলো,
—- ইয়ে মানে সরি আন্টি। আসলে আপনাকে ইয়াং মনে হচ্ছে তাই রাত্রির বড় বোন ভেবে নিয়েছিলাম।
আমি রুশো। অনন্যার কাজিন, আজকে তো অগ্নি ব্রোর এনগেজমেন্ট জানেন নিশ্চয়। রাত্রি এখনোও যায় নি তাই ওকে নিতে আসলাম!
.
রুশোর মুখ থেকে নিজের প্রশংসা শুনে যেনো গর্বে বুক ফুলে উঠলো ভদ্রমহিলার। উনি এক গাল হেসে হঠাৎ চমকে উঠে বলে উঠলেন,
—- কি বললে? অগ্নির এনগেজমেন্ট? কই আমরা তো কিছু জানি না।
.
রুশো কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো,
—- রাত্রিকে তো ইনভাইটেশন কার্ড দিয়েছিলো অনন্যা! হয়তো ও বলে নি আপনাদের।
.
শায়লা বেগম (রাত্রির মা) কিছুক্ষণ চুপ থেকে পর মুহূর্তে মুখে হাসি ফুটিয়ে রুশোকে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে যেতে লাগলো।

—- এসো এসো বাবা ভেতরে এসো। আমি এক্ষুনি রাত্রিকে রেডি করিয়ে আনছি।
.
শায়লা বেগম রুশোকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে উপরে চলে গেলেন।
.
🌸
.
—- রাত্রিইইই….! আজ অগ্নির এনগেজমেন্ট আর তুই আমাদের জানাস নি! দেখ তো অনামিকা ভাবী কি ভাববেন আমাদের। আর অনন্যাটাই কি বলবে তোকে বল? এখন তো আর আমাদের যাওয়া সম্ভবও নয়। তোর বাবা অফিসে। তুই চট করে রেডি হয়ে নে।
.
রাত্রি হঠাৎ মায়ের কথা হকচকিয়ে যায়। সে বুঝে উঠতে পারছে না এই খবরটা তার মা কে কে দিলো।কতো সুন্দরভাবে লুকিয়ে যাচ্ছিলো সে অথচ শেষ মুহূর্তে এসে ধরা খেয়ে গেলো!
.
—- এমা! আমি তো একদম ভুলেই গিয়েছিলাম। আর এতোক্ষণে নিশ্চয় এনগেজমেন্ট হয়েও গিয়েছে। আর গিয়ে লাভ কি? আমি পরে অনন্যাকে মানিয়ে নেবো তুমি টেনশন করো না।
.
—- আজ্ঞে না৷ কিচ্ছু শেষ হয় নি। তুই জাস্ট ৫ মিনিটে রেডি হ। অনন্যার বাড়ি থেকে লোক এসেছে তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
.
বলেই শায়লা বেগম বেড়িয়ে গেলেন ঘর থেকে। আর এদিকে রাত্রি পড়লো মহাবিপদে। সে চাচ্ছিলো না এনগেজমেন্টে যেতে। কিন্তু মায়ের ওপরে কথা বলার সাহস নেই তার। তাই অগত্যা মুখ কালো করে একটা গাউন পড়ে রেডি হয়ে নিলো সে।
তবে আজ অন্য দিনের মতো কোনো সাজগোজ করলো না রাত্রি। কিভাবেই বা করবে? নিজের ভালোবাসায় মানুষটার অন্য মানুষের হাতে রিং পড়িয়ে দেওয়ার দিনে কি করে সাজবে সে?
.
নিচে নেমে আসতেই রুশোকে দেখে চোখ বড়বড় ক্ক্রে ফেললো রাত্রি!
—- আপনিইইইইই…..???
.
রুশো রাত্রির চিৎকারে হকচকিয়ে উঠে এক লাফ দিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো।
—- উফফফ…! বাচ্চেকা জান লোগে কেয়া? এমনিতেই ভয়ে ভয়ে আছি তারওপর এভাবে চিৎকার দিলে নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করে মরে যাবো আমি।
.
রুশোর মুখ থেকে মরে যাওয়ার কথা শুনেই রাত্রির ভেতরটা কেঁপে উঠলো। রেগে গিয়ে বলে উঠলো সে,
—- কিসব আজে বাজে কথা বলেন? আর আপনি এসেছেন কেনো?
.
—- কেনো আবার তোমাকে নিতে! ছুটকির স্যাড ফেইস এই রুশো দেখতে পারে না জানো না? সো চলো এখন।
.
রুশো ভালো করে খেয়াল করে দেখলো রাত্রির মুখে কোনো সাজগোজ নেই। ক্রিম টাও দিয়েছে কিনা সন্দেহ।
কানেও কোনো দুল না পড়ায় কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। তা দেখে রুশো শায়লা বেগমকে ডেক দিয়ে বসলো,
.
—- আন্টি, রাত্রি এভাবে যাবে? ওখানে কতো গেস্ট আসবে। ওকে একটু ফাস্ট জাস্ট সিম্পলি রেডি করিয়ে দিন প্লিজ।
.
রুশোর কথায় শায়লা বেগমের রাত্রিকে এক ঝলক দেখেই কপাল কুঁচকে যায়। কড়া হুকুমে রাত্রিকে ভালো মতো রেডি হতে বলায় রাত্রি ২ মিনিটেই ঘোড়ার বেগে রেডি হয়ে এসে উপস্থিত হয়। আর এদিকে রুশো রাত্রির ভয়ে ভয়ে রেডি হওয়া দেখে মুচকি মুচকি হেসে যাচ্ছে।
আর মনে মনে বলছে সে, “রাত্রি, তোমাকে স্ট্রং হতে হবে!পালিয়ে পালিয়ে আর কতো দিন! আমি তোমার পাশে আছি তুমি ঠিকই সব ভুলে নিজের লাইফে ফোকাস করতে পারবে!”
মনে মনে কথাগুলো বলে একটুপরই শায়লা বেগমের সাথে কুশল বিনিময় করে রাত্রিকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে রুশো।
.
🍁
.
প্রায় ১৫ মিনিট ধরে টিউটোরিয়াল দেখে ড্যাশিং মুড নিয়ে ফোন রেখে আমায় শাড়ি পড়াতে লেগে পড়েন সাদা বিলাই। আগের বাড় তো শুধু কুঁচিই করে দিয়েছিলেন তাতেও হয়তো ভেবে নিয়েছিলেন শাড়ি পড়ানো ভীষণ সহজ। এখন দেখ কেমন লাগে! যত্তসব ঢং।
.
কুঁচি করা হয়ে গেলে আমার হাতে কুঁচি গুলো ধরিয়ে দেওয়ার আগেই আমি হাত সরিয়ে ফেললাম।
—- কি হলো ধরো?
.
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ডান হাতের নখ দেখতে দেখতে বললাম,
—- এতোক্ষণ ধরে টিউটোরিয়াল দেখে করলেন টা কি? আমি তো স্টুপিড। আপনি তো ইন্টেলিজেন্ট। সো ফার্স্ট টু লাস্ট। সবকিছুই আপনিয়ে করিয়ে দেবেন, আমি কিছু করছি না ব্যস।
.
আমার কথায় যেনো উনি আরোও খুশিই হলেন। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে এক হাত দিয়ে আমার কোমড় চেপে ধরে টেনে আনলেন নিজের কাছে। উনার আচমকা এমন করায় পুরো শরীরে এজ অজানা শিহরণ বয়ে গেলো আমার। সাথেসাথেই চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম আমি।
উনি আমার কোমড় আগের থেকেও আরোও শক্ত করে চেপে ধরে শাড়ির কুচিগুলো আমার কোমড়ের সামনের দিকে গুঁজে দিলেন। উনার হাত আমার উন্মুক্ত পেটে স্পর্শ করা মাত্রই শিউরে উঠলাম আমি। আচমকাই উনার শার্টে কলার শক্ত করে খাঁমচে ধরলাম। উনি এবার দুহাত দিয়ে আমার কোমড় ধরে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন। এতোটাই কাছে নিয়ে গেলেন নিজের যে সেখানে ১ সে.মি এর মতোও গ্যাপ আছে কিনা সন্দেহ হতে লাগলো আমার।
উনি আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে শীতল কন্ঠে বলে উঠলেন,
.
—- কি? এখন কেনো ভয় পাচ্ছো? আমায় পাগল করার আগে এই ভয় কোথায় ছিলো হুম?
.
বলেই আমার কানের লতিতে ঠোঁট ছোঁয়ালেন উনি। এতে যেনো ৪৪০ ভোল্ট ঝাটকায় কেঁপে উঠলাম আমি। থরথর করে কাঁপতে শুরু করে দিয়েছি আমি ইতিমধ্যেই। উনি হঠাৎ এক হাত আমার কোমড় থেকে সরিয়ে সেই হাতে আমার পেটের ওপর থেকে আস্তে আস্তে শাড়ি সরাতে লাগলেন।
এতে আমি আরোও জমে গয়ে খপ করে উনার হাত চেপে ধরলাম।
.
.
.
চলবে………………..💕
#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৩৬♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
—- এ…এ…এ…কি করছেন? শাড়ি সরাচ্ছেন কেনো?
.
আমার প্রশ্নে আদৌ কোনো ভাবাবেগ হলো না নীবিড় ভাইয়ার। উনি আমার হাত নিজের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবারও আমার পেট থেকে শাড়ি সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
কিন্তু আমি আর পারছিনা, উনার স্পর্শ গুলোয় খুন হয়ে যাচ্ছি আমি। দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে আমার। উনি আমার পেট থেকে শাড়ি সরিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে পেটে আলতো করে হাত রাখলেন। উনার হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলাম আমি। ইতিমধ্যে ঘামতেও শুরু করে দিয়েছি। ভয়ে চোখ বন্ধ করে উনার শার্ট আরোও শক্ত করে খাঁমচে ধরলাম আমি।
.
—- প..প..পি..প্লিজ আ..আমায় ছেড়ে দিন। খু..খু..ব ভয় করছে আমার।
.
উনি হঠাৎ আমায় এক ঝটকায় ছেড়ে দিলেন। যার দরুন আমি খাটের ওপর গিয়ে পড়ে গেলাম। উনি গটগট করে বড়বড় পায়ে হেটে যেতে যেতে বলে উঠলেন,
—- রেডি হয়ে নিচে এসো ফাস্ট!
.
বলেই দৃষ্টির অগোচরে চলে গেলেন উনি। আমি এখনো শকড হয়ে একই ভাবে বিছানায় পড়ে রয়েছি। কি হচ্ছিলো এতোক্ষণ? এটা কি কোনো স্বপ্ন ছিলো?
ভেবেই নিজের হাতে নিজেই একটা চিমটি কেটে বসলাম। চিমটি কাটার সাথেসাথেই “আউউউ” করে উঠেই বুঝতে পারলাম এটা আদৌ কোনো স্বপ্ন ছিলো না বরং ছিলো এক কঠিনতম বাস্তব। যা আমি মেনে নিতে পারছিনা কোনোমতেই।
হঠাৎ বাইরে থেকে আম্মুর গলা পেয়ে হকচকিয়ে উঠে বসলাম আমি।
.
—- অনন্যা…! হলো তোর? জলদি আয় মা৷ সব গেস্ট চলেই এসেছে প্রায়।
.
কাঁপাকাঁপা গলায় ক্ষীণ আওয়াজে উত্তর দিলাম,
—- এ..এ..এইতো আম্মু হয়েই গিয়েছে প্রায়। আসছি!
.
আমার জবাবে আম্মু রুমের দরজা পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। নিজেকে কেমন যেনো রোবট রোবট লাগছে আমার।
বেডের ওপর রাখা জুয়েলারি বক্সটা ওপেন করে একবার চোখ বুলিয়ে আবারও ফিলিংলেস রোবটের মতো বসে রইলাম অামি।
.
—- ছুটকি….!
.
পেছন থেকে রুশো ভাইয়ার গলা পেয়ে ভ্রম কাটলো আমার। রুশো ভাইয়া রুমের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
—- ছুটকি তোর জন্য একটা গিফট নিয়ে এসেছি।
.
রুশো ভাইয়ার মুখে গিফটের নাম শুনেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো আমার। আসলে রুশো ভাইয়ার গিফট মানেই দারুণ কিছু। আমি উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে প্রশ্ন করে বসলাম “কি ভাইয়া?” ওমনি ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো,
.
—- তোর জন্য বোম্ব নিয়ে এসেছি! তাও আবার যেই সেই বোম্ব না, একেবারে এটম বোম্ব।
.
রুশো ভাইয়ার মুখে “এটম বোম্ব” নামটা শুনায় নিমিষেই মনটা ভালো হয়ে গেলো আমার। এক লাফ মেরে বসা থেকে উঠে পড়লাম আমি। ততক্ষণে রাত্রি মুখ ফুলিয়ে রুশো ভাইয়ার দিকে কটমট করে তাকিয়ে যেনো চোখ দিয়েই গিলে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে ভাইয়াকে।
যা দেখে আমি ফিক করে হেসে ফেললাম।
রুশো ভাইয়া এক নজর রাত্রির দিকে চেয়েই একটা শুকনো ঢোক গিয়ে বলে উঠলো,
.
—- সো আমার কাজ শেষ তোরা ফট করে রেডি হয়ে ফুট করে নিয়ে চলে আয়। আমি বাবা বোম্ব ব্লাস্ট হওয়ার আগেই মানে মানে কেটে পড়ি।
.
বলেই এক ছুটে হাওয়া হয়ে গেলো রুশো ভাইয়া। যা দেখে আমি উচ্চস্বরে হেসে উঠলাম সাথে রাত্রিও।
রাত্রি আমার কাছে এসে আমায় জড়িয়ে ধরতে যাবে তার আগেই এক লাফ মেরে ৩ ফুট দূরে সরে আসলাম আমি।
.
—- দূরে যা। একদম ছুবি না আমায়। শয়তানি, পেত্নি, ডাইনি, কুটনি, পিশাচিনী…..!
এখন এসেছিস কেনো? যা কার ঘাড় মটকাতে ব্যস্ত ছিলিস তার ঘাড়ই গিয়ে মটকা।
.
রাত্রি নিমিষেই মুখটা ছোট করে বলে উঠলো,
—- প্লিজ অনু শনু! আমায় ভুল বুঝিস না। আমার শরীরটা না একদম ভালো লাগছিলো না। আর ফোনটারও চার্য শেষ হয়ে যাওয়ায় তোকে জানাতে পারিনি। আমি আসতামই না হয়তো যদি না রুশো ভাইয়া আমায় নিয়ে আসতেন।
.
রাত্রির কথায় অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসলাম আমি। সাথেসাথেই ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো আমার।
আমি আমার ডান হাত রাত্রির কপালে, গালে, গলায় এক এক করে ঠেঁকিয়ে বলে উঠলাম,
.
—- কই, টেম্পারেচার তো নরমালই আছে! শরীর তো খারাপ হওয়ার কথা না। মিথ্যে বলছিস তুই রাত্রি!
.
—- উফফফ….নীবিড় ভাইয়া ঠিকই বলে তুই আসলেই একটা স্টুপিড। আরে শুধু জ্বর আসলেই বুঝি শরীর খারাপ হয়? বুদ্ধু! এখন প্লিজ আর রাগ করে থাকিস না। আমি তো এসেছি বল। আয় বোস তোকে সাজিয়ে দেই।
.
বলেই রাত্রি আমায় টেনে আয়নার সামনে গিয়ে বসিয়ে দিলো।
রাত্রি কেবল হাসিহাসি মুখে মেকআপ বক্সটা খুলতে যাবে তার আগেই আমি লাফ মেরে উঠে পড়লাম।
.
—- দূরে রাখ ওগুলো। শখ করে কিনিই জাস্ট আমি বাট ইউজ করি না জানিস তো। আমি ওসব আটা-ময়দা দিবো নায়ায়ায়া…….!
.
রাত্রি চোখ মুখ কুঁচকে দাঁত কটমট করে বলে উঠলো,
—- সামান্য ক্রিম আর ফেইস পাউডার তো লাগাবি! মেকআপ করা লাগবে না তোকে যা।
.
—- ঠিক আছে ঠিক আছে।

বলেই মুখ ফুলিয়ে আবারও বসে পড়লাম।
শেষমেশ রাত্রির জোড়াজুড়িতে হাল্কা কাজল সাথে ঠোঁটে হাল্কা ভায়োলেট কালারের লিপস্টিক লাগিয়ে নিলাম। আম্মুর দেওয়া জুয়েলারি সেট টা পরে নিয়ে আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখে নিলাম।
.
—- ইশশ! অনু রে…! এত্তোগুলো মাশাআল্লাহ লাগছে। ভায়োলেট শাড়ির সাথে নেকলেস আর ইয়ার রিং টাও একদম পারফেক্টলি ম্যাচ করেছে।
আজ একজন তো পুরোই পাগল হয়ে যাবে।
.
আমি কপাল কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠলাম,
—- এই একজন টা আবার কে?
.
রাত্রি আমার প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়েই ড্যাংড্যাং করে হেটে চলে যেতে লাগলো ওমনি দরজার সামনে গিয়ে কারো সাথে ধাক্কা খেলো।
.
—- আউউউচ্চ! দিনে দুপুরে বোম্ব না ফেললে হয় না এটম বোম্ব?
.
বলেই রুশো ভাইয়া আবারও নিজের মাথা দিয়ে রাত্রির মাথায় টুস করে বারি দিয়ে “সেফটি ফার্স্ট, এখন আর সিং গজাবে না!” বলেই আমার কাছে এসে বলে উঠলো,
—- ওহ মাই গড ছুটকি! ইউ আর লুকিং সো স্টানিং। কাম কাম! মনি ডাকছে।
.
বলেই রুশো ভাইয়া আমায় নিয়ে যেতে লাগলো। এদিকে রাত্রি রেগেমেগে বোম্ব হয়ে মুখ ফুলিয়ে আগেই বেড়িয়ে গেছে।
.
🌸
.
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই আমি পুরো শকড! অগ্নি ভাইয়া আর নিত্য আপুকে একসাথে বসানো হয়েছে। এই প্রথম বোধহয় ভাইয়া এমন একটা গেট-আপ নিয়েছে যেখানে ব্লাক এর ছিঁটেফোটাও নেই। গোল্ডেন আর হোয়াইট এর কম্বিনেশনে ড্রেস পরেছে দুজনেই। ভাইয়া হোয়াইট শার্টের ওপরে গোল্ডেন সুট, হোয়াইট প্যান্ট আর পায়ে গোল্ডেন সুজ পড়েছে। আজকে চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করে নিয়েছে ভাইয়া। সাথে হাতে গোল্ডেন কালারের ব্রান্ডেড ওয়াচ।
নিত্য আপু হোয়াইট আর গোল্ডেনের কম্বিনেশনে গর্জিয়াস একটা লেহেঙ্গা পড়েছে। হাত ভর্তি চুড়ি৷ গলায় ভারী নেকলেস। কানে ইয়া বড় বড় দুল! যেটা দেখেই আমার মাথা ঘুরানো শুরু হয়ে গিয়েছে অলরেডি। ইয়া আল্লাহ! এতো বড় দুল পড়লে আমার কান ছিঁড়েই পড়তো নির্ঘাত এমনিতেই যে নরম আমার কানের লতি!
তবে যাই হোক নিত্য আপু কে একদম মাশাল্লাহ পরীর মতো লাগছে। আর ভাইয়া কে তো জাস্ট অসাম লাগছে। আহ! ভাই আমার! কত্তো সুন্দর মাশাল্লাহ! গর্বে নিজের বুকটাই ফুলে যাচ্ছে। নিত্য আপু আর অগ্নি ভাইয়াকে একদম মেড ফর ইচ আদার লাগছে। আসলেই উপর থেকেই দুজনের সেটিং করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
.
আমার বুকে আবারও সেই চিনচিনে অনুভূতিটা হতে লাগলো যখন আমি আমার যম মি. সাদা বিলাই থুক্কু মি. সাদমান শাহরিয়ার নীবিড়কে দেখলাম। আয় হায় মরে যাবো আমি, খুন হয়ে যাবো! উনি ভায়োলেট কালারের ব্লেজার পড়েছেন সাথে ব্লাক প্যান্ট। হাতে ব্লাক ব্রান্ডেড ওয়াচ। সিল্কি ঘন কালো চুলগুলো চিকচিক করছে উনার। তার খানিকটা কপালের ওপর এসে পড়ছে বারংবার। উনি হেসে হেসে গেস্টদের সাথে কথা বলে যাচ্ছেন। উনার দাঁত গুলোও এদকম শেইপ মতো, মুক্তোর মতো ঝকমক করছে! সাথে উনার ডার্করেড লিপ্স! উফফফফ…..! কি ভয়ংকর সুন্দর! উনার এই কিলার লুকটাই আমায় খুন করার জন্য যথেষ্ট।
তবে একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে যে, উনি ড্রেস চেঞ্জ করলেন কখন? এতো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে গেলেন? সিরিয়াসলি ভেরী ইম্প্রেসিভ!
.
—- তোরই তো বর! পরেও দেখতে পারবি। একটু তো চোখ নামা…! (কাঁধে হাল্কা করে ধাক্কা মেরে বললো রাত্রি)
.
রাত্রির কথায় আমি লজ্জায় পড়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। ইশশস! আসলেও তো আমি কেমন হ্যাংলার মতো তাকিয়ে ছিলাম উনার দিকে। ছিঃ ছিঃ কি ভাবলো সবাই! আমার এই বেহায়া চোখ দুটোকে নিয়ে আর পারিনা আমি। সবসময় চারিদিকে শুধু সাদা বিলাই কেই খুঁজে বেড়োয়। দূরে থাকলে হ্যাংলার মতো চেয়ে থাকে আবার কাছে গেকে ভয়ে বন্ধ হয়ে যায়। অদ্ভুত সব কারবার!
কিন্তু রাত্রিকে বুঝতে দিলে চলবে না যে আমি আসলে উনাকেই দেখছিলাম। তাই টেকনিক খাটিয়ে সুন্দর করে মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠলাম,
.
—- আরে ধুর ওই বিলাইরে আবার কে দেখে? আমি তো উনার ব্লেজারটা দেখছিলাম। কোন যেনো অনলাইন শপে দেখেছিলাম তাই দেখে মনে করবার চেষ্টা করছিলাম।
.
রাত্রিও বিনিময়ে মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠলো,
— থাক। আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না।
.
বলেই সাইডে চলে গেলো৷ আর এদিকে আমি মুখে বিরক্তির রেশ ফুটিয়ে আনমনেই বলে উঠলাম ফাজিল একটা”।
.
🍂
.
এবার আংটি বদলানোর সময় ঘনিয়ে এলো। অনামিকা আহমেদ (অনন্যার মা) অগ্নি আর নিত্যর সামনে ২ টো আংটি নিয়ে গেলেন। প্রথমে ছেলে মেয়েকে পড়িয়ে দেবে এরকমটাই কথা।
এতো খুশির মাঝে সবার মুখেই হাসিহাসি ভাব শুধুমাত্র একজন বাদে।
রাত্রি সবার থেকেই কিছুটা দূরে গিয়ে আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। সে পারছেনা এমন কঠিন সময়ে স্বাভাবিক থাকতে। চোখ টলমল করছে তার, যেন এখনই গড়িয়ে পড়বে নোনাজল গুলো।
রাত্রি তার চোখের জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বার আগেই কিছুটা ঝুঁকে পড়ে, যাতে জলগুলো পড়লেও ফ্লোরে পড়ে। গাল বেয়ে পড়লে নিশ্চয় কেউ দেখে ফেলতো।
.
রাত্রির চোখ থেকে দুফোঁটা জল টপ করে নিচে পড়ার মুহূর্তেই তা ফ্লোরে পড়তে না দিয়ে ধরে ফেলে একজোড়া হাত। সেই হাতের অধিকারী কে তা দেখতে রাত্রি মাথা তুলে পাশ ফিরে তাকায়।
রুশো খুব সাবধানে তার চোখ থেকে নিঃসৃত জলের দুফোঁটা তার নিজের হাতে আঁকড়ে ধরে রেখেছে।
রাত্রি রুশোকে এমন অবস্থায় দেখে চমকে উঠে। পর মুহূর্তে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে উঠে,
.
—- আপনি?
.
রুশো মুচকি হেসে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠে,
—- হুম কেনো? ভূত ভেবেছিলে? আর এখানে লুকিয়ে লুকিয়ে কি করছো? যাও ছুটকির পাশে গিয়ে দাঁড়াও।
.
রুশোকে এমন স্বাভাবিক গলায় কথা বলতে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো রাত্রির। রাত্রির কথা মতে রুশো তো সবটা জানে তাও এভাবে বলছে কেনো ওকে?
রাত্রির ভাবনার মাঝে আবারও রুশো বলে উঠলো,

—- কি হলো? যাচ্ছো না যে?
দেখবেনা তোমার ভালোবাসার মানুষটার হাসিমাখা মুখ? তুমি তো অগ্নি ব্রো কে লাভ করো, তার এমন সুসময়ে খুশি না হয়ে কাঁদছো? দ্যটস নট ফেয়ার।
ওয়েট তোমায় একটা আইডিয়া দেই। আমি যেটা মনে করি আরকি, ইফ উই লাভ সামওয়ান এন্ড দ্য পারসোন ইজ হ্যাপি উইথ এনাদার ওয়ান, দেন উই শুড বি হ্যাপি ঠু… কজ আওয়ার লাভ ইজ হ্যাপি!
তাই তোমারও হ্যাপি থাকা উচিৎ, হাসা উচিৎ ইন্সটেড অফ ক্রায়িং। গো…! নিজেকে স্ট্রং ভাবো, ইউ ক্যান ফেইস দিস সিচুয়েশন। এন্ড অলওয়েজ রিমেমবার ওয়ান থিংক দ্যট ইউ আর নট এলোন।
.

রুশোর কথায় রাত্রি বুক ফুলিয়ে একটা শ্বাস নিয়ে চোখের কোণে জমা জলগুলো হাত দিয়ে মুখে ফেলে। পর মুহূর্তে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে ততক্ষণাৎ আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে অনন্যার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
.
🌸
.
অগ্নি ভাইয়া আর নিত্য আপুর এনগেজমেন্ট খুব সুন্দর ভাবেই হয়ে গেলো।
তাদের খুশি যেনো আর ধরে না।
এদিকে নীবিড় ভাইয়ার চোখ চিক চিক করছে। আচ্ছা উনি কি কাঁদছেন? কি জানি, তবে অবশ্য খারাপ লাগারই কথা, আজ এনগেজমেন্ট কাল তো বিয়েও হয়ে যাবে। বোনকে শশুড় বাড়ি আসতে হবে। নিজের একমাত্র বোনকে নিজের থেকে দূরে পাঠাতে হবে। ব্যাপারটা নিতান্তই কষ্টদায়ক। এককথায় ভীষণ কষ্টদায়ক।
.
এদিকে রুশো ভাইয়া ফটো শুট করতে করতে বোধহয় শহীদই হয়ে যাবে। একের পর এক ছবি তুলেই যাচ্ছে। অবশ্য রুশো ভাইয়া অনেক ভালো ফটোশুট করতে পারে। মাঝে মাঝে আমার সন্দেহ হয় যে ভাইয়া প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার কি না।
আর এইযে আমার বেস্টু রাত্রি, সেই কখন থেকে সাদা বিলাই আর আমার ড্রেসের কালার ম্যাচ হওয়া নিয়ে টিটকারি মেরেই যাচ্ছে। ব্যাপারটা যে কাকতালীয় তা আমি হাজার চেষ্টা করেও এই মাথা মোটাকে বোঝাতেই পারছিনা। তার একটাই কথা “নীবিড় ভাইয়া আমার জন্য গেট-আপ চেঞ্জ করে ফেলেছে, আহা! কত্তো লাভ!”
হাহ! আর লাভ! উনি একটা আস্ত গিরগিটি। সেকেন্ডে সেকেন্ডে পাল্টি খান উনি।
.
🍁
.
পরেরদিন…………….
ভার্সিটির সেই চিরচেনা বটগাছটার নিচে বিরিক্তি মাখা ফেইস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর রাত্রি। অবশ্য এমনি এমনি বিরক্ত নই মোটেই, বিরক্ত হবার যথা সম্ভব যুক্তিযুক্ত কারণও রয়েছে। আর কারণ টা হলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু সিনিয়র আপুরা। তারা একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে আর রাত্রি রেগেমেগে দাঁত কটমট করতে করতে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। যদিও প্রশ্ন গুলো আমাকে নিয়েই তবুও উত্তর রাত্রিকেই দিতে হচ্ছে। কারণ আমি উত্তর দিতে কোনোভাবেই বাধ্য নই। নীবিড় ভাইয়া যদি আমার জাস্ট ভাইয়ের বেস্টফ্রেন্ড হতেন তবে হয়তো জবাব দিতাম তবে উনি আমার না চাইতেও অনেক বেশি কিছু যা এদের বলে অহেতুক মাথা খারাপ করানোর কোনো মানে দেখছি না আমি। কজ কথায় কথা বাড়ে।
.
—– এই মেয়ে তুমি কেনো প্রত্যেকটা কথার জবাব দিচ্ছো? প্রশ্ন গুলো তো আমি ওকে করছি, চুপ করে আছে কেনো ও!
(আমার দিকে আঙুল তুলে) হেই ইউ তোমার সাহস তো কম নয়, তুমি রিনাকে এভোয়েড করো! দেখো মেয়ে তুমি নীবিড়ের যাই লাগো না কেন, জাস্ট দূরে থাকো ওর থেকে। হি ইজ মাই লাভ।
.
এতোক্ষণ ধরে চুপ ছিলাম আমি কিন্তু এবার ধৈর্য্যর বাঁধ টা ভেঙে ফেললো এই অসভ্য সিনিয়র আপুটা। আমি আপুটার আঙুল আমার হাতের আঙুল দিয়ে আস্তে করে নিচে নামিয়ে বলে উঠলাম,

—- দেখুন আপু, আপনি রিনা খান হন বা জরিনা খালা হন তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমার লাইফে আমি কি করবো না করবো সেটা আমার ব্যাপার। এতোই যখন খারাপ লাগছে তো আপনার লাভকেই মানা করুন যাতে আমার কাছে না আসেন উনি।
.
বলেই রাত্রির হাত ধরে পাশ কাটিয়ে যেতে লাগবো তার আগেই আপুগুলো আবারও আমাদের ঘিরে ধরলো।
এদিকে আমার বিরক্তি ক্রমান্বয়ে বেড়ে আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে। এতোক্ষণে রুশো ভাইয়ার আমাকে নিতে আসার কথা। আমায় এখনোও না পেয়ে নিশ্চয় দুশ্চিন্তা করছে।
রেগেমেগে কিছু বলতে যাবো তার আগেই চিরচেনা সেই কন্ঠস্বর কানে ভেসে আসায় থেমে গেলাম আমি।
.
—– এক্সকিউজ মি! কি হচ্ছে এখানে?
.
নীবিড় ভাইয়ার হঠাৎ আগমনে চমকে ওঠে মেয়েগুলো। এদিকে রাত্রি যেনো এই সুযোগেরই অপেক্ষা করছিলো।
রিনা না জরিনা নামের আপুরটা ভয়ে ভয়ে ” কই কিছু না তো” বলতেই রাত্রি গড়গড় করে সব বলে দিলো। যে কিভাবে ওরা আমাদের একের পর এক বাজে বাজে কথা শুনাচ্ছিলো। তাদের মধ্যে একজন তো আমায় বলেই ফেলেছিলো আমি নাকি গায়ে পড়া টাইপ মেয়ে।
.
সবকিছু শুনে নীবিড় ভাইয়া চোখ বন্ধ করে জোড়ে একটা শ্বাস টানলেন। দুহাতের মুঠো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থরথর করে কাঁপছেন উনি। বুঝতে পারছি খুবই ভয়ানক কিছু হতে চলেছে।
এদিকে এতোক্ষণ ধরে তেজ দেখানো মেয়েগুলোরও ঘাম ছুটে যাচ্ছে।
.
নীবিড় ভাইয়া নিজের বন্ধ খুলতেই ভয়ে কেঁপে উঠলাম আমি সহ সবাই। উনার চোখদুটো রক্তিম আভা ধারণ করেছে, যেনো সব কিছু তছনছ করে দেবেন উনি তার চোখ নিসৃত আগুন দ্বারা।
উনি হুট করে আমার হাত চেপে ধরলেন। হাত ধরেই টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলেন একেবারে ক্যাম্পাসের মাঝখানে। আমাদের এভাবে হেটে যাওয়া দেখে সবাই মুভির শুটিং দেখার মতো ভান করে মাছির মতো ভন ভন করতে করতে এগিয়ে আসতে লাগলো।
.
উনি আমায় মাঠে একদম মিডিল পয়েন্টে নিয়ে এসে থামলেন। ওদিকে রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া আমাদের এভাবে দেখতে পেয়ে গেইটের দিক থেকে ছুটে আসছে এদিকেই।
আমার হৃদপিন্ডের অলিন্দ-নিলয় ইতিমধ্যে লাফালাফি করা শুরু করে দিয়েছে।
.
উনি আমার হাত ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। আমার চোখের দিকে এক পলক তাকিয়ে “সরি!” বলেই নিজের দুহাত দিয়ে আমার কোমড় চেপে ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসলেন উনি।
সাথেসাথেই কানে ভেসে আসতে লাগলো আমার একদফা কোলাহল।
উনি সেসবের কোনো তোয়াক্কা না করেই একটু ঝুঁকে আমার ঠোঁটের ভাজে নিজের ঠোঁটজোড়া ডুবিয়ে দিলেন। খুব গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিচ্ছেন উনি আমায়।
.
এদিকে রুশো আর অগ্নি এই সিন দেখে থেমে গিয়ে পুরো রসগোল্লার মতো চোখ বড়বড় করে মুখ “হা” করে ফেললো।
অগ্নি ওভাবে হা করে থেকেই নিজের বাম হাত রুশোর চোখের সামনে ঢেকে ধরলো।
চোখের সামনে অগ্নির হাত চলে আসায় রুশোও নিজের ডান হাত অগ্নির চোখের সামনে ধরে বলে উঠলো,
.
—- ইটস চিটিং ব্রো! ইউ শুড ক্লোজ ইউর আইস ঠু..!
.
প্রায় ২ মিনিটের পর উনি আমার ঠোঁটজোড়া ছেড়ে দিয়ে ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগলেন। আর আমি এখনোও ঘোড়ের মধ্যে রয়েছি। এতোক্ষণ কি হলো তা বোঝার চেষ্টা করেও পারছিনা যেনো।
.
অগ্নি রুশোর হাতের ফাঁক দিয়ে মাথা বের করে তাকিয়ে “ইটস ওভার” বলে নিজেও রুশোর চোখের সামনে থেকে হাত সরিয়ে ফেললো।
কিন্তু তাদের শুখ ২ সেকেন্ডও টিকলো না।
তাদের আবারও অবাক করে দিয়ে নীবিড় অনন্যার ঠোঁটে আবারও ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
.
—- ওহ নো! কিসিং স্টার্টস এগেইন! ব্রো হাত দাও! নাহলে ফুটো হয়ে যাবে আমার আইস!
.
—- তুইও ডাক আমার চোখ! নাহলে বেড়িয়ে আসবে এবার।
.
বলে আবারও দুজন দুজনের চোখ ঢেকে ফেললো!

চলবে…………….💕

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here