প্রেম_আমার♥ #পার্ট-৩৯ #Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥ . 🌺

0
408

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৩৯
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
—- ঘোমটাটা একটু তুলো দেখি মা!
.
ছেলের মায়ের মুখে ঘোমটা তুলার কথা শুনে একরাশ বিরক্তি এসে হানা দিলো আমার চোখেমুখে! তখনই আব্বুর হঠাৎ জরুরী ফোন আসায় বসা থেকে উঠে সাইডে গিয়ে কথা বলতে লাগলো আব্বু।
আমি এখনও ঘোমটা না সরানোয় আবারও ছেলের মা বলে উঠলেন,
.
—- এতো লজ্জার কি আছে মা? আমরা তো কয়েকদিন পর তোমার আপনজনই হবো। একটু মুখখানা দেখি! নিহামের বাবার কাছে শুনেছি, তুমি নাকি ভারী লক্ষ্মী মেয়ে।
.
আবারও গা জ্বলে উঠলো আমার। আরে মেয়ে দেখতে এসেছে উনারা নাকি তুলে নিয়ে যেতে এসেছে? না দেখেই বলে দিলো কয়েকদিন পর আপনজন হয়ে যাবে?
ভদ্র মহিলার কথায় আমি চরম বিরক্ত হলেও পাশে বসা রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়ার যেনো ভীষণ মজা পাচ্ছে। তা বেশ বুঝতে পারছি আমি কারণ ঘোমটার আড়ালেও দেখতে পারছি রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া মাথা হেলে স্থির দৃষ্টি মেঝেতে রেখে একটুপর পর কেঁপে কেঁপে উঠছে। তারা যে হাসি কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে তা বুঝতে আর বাকি নেই আমার।
.
আম্মু আমার মাথা থেকে ঘোমটাটা তুলে দিয়ে মুখটা বের করে দিলো। আমার ইচ্ছে হচ্ছেনা সামনের দিকে তাকানোর। তাই মাথা নিচু করে আগের মতোই বসে রইলাম আমি।
কিচেন থেকে রুনা খালার (সার্ভেন্ট) ডাক আসায় আম্মু উনাদের আমার সাথে কথা বলতে বলে উঠে চলে গেলো।
.
এবার ভদ্র মহিলার আবারও আমার মুখ তুলে তাকাতে বলার আগেই আমি একরাশ বিরক্তি নিয়ে মুখ তুলে তাকালাম। ভদ্র মহিলা আমায় দেখে “মাশাল্লাহ!”৷ বলে উনার হাজবেন্ডকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
.
—- তোমার চয়েজ আছে বলতে হবে। এত্তো মিষ্টি একটা মেয়ে পছন্দ করেছো! এই নিহাম তুই চোখ নামিয়ে রেখেছিস কেনো? হবু বউকে দেখ!
.
ভদ্র মহিলার কথায় ছেলেটা লজ্জা লজ্জা ভাব করে আমার মুখ পানে একবার তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার আগেই যেনো আটকে গেলো। মুখটা পুরো “হা” শেইপ করে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো আমার দিকে।

আমি সরাসরি ছেলের দিকে না তাকিয়েও চোখের সীমানা যতদূর যায় তা থেকে এটা বেশ বুঝতে পারছি যে ছেলে হা করে আমার দিকে চেয়ে আছে।
কে এই ক্যাবলাকান্ত দেখার জন্য আমিও একবার ছেলের দিকে আড়চোখে তাকালাম। ছেলে সাদা পাঞ্জাবি পড়েছে, গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। পুরো ক্লিন সেইভ করায় মুখটা পুরো ছিলা মুলোর মতো লাগছে। চুলগুলো কোকড়া নাকি সিল্কি তা বোঝার অবকাশ নেই। কারণ ছেলে মনে হয় স্কুলে পড়াকালীন স্যারদের বলা সেই কঠিন নিষেধাজ্ঞা মেনে চুল কেটে এসেছে। নিষেধাজ্ঞা টা ছিলো কিছুটা এরকম, ” চুলের মাঝে আঙুল চালালে যদি চুল অাঙুল ভেদ করে উপরে উঠেছে তো তোদের ঠ্যাং একেবারে ভেঙে ফেলবো!”
.
এর থেকে আর বেশি আর কিছু দেখলাম না। জাস্ট ১ সেকেন্ডের দেখায় যেটুকু বুঝলাম ছেলে মায়ের আদরের দুলাল। কিছুটা মায়ের আঁচল ধরে ঘুরে বেড়ানো টাইপ। যেমন ধরা যায়, তার মা তাকে এখানে কান ধরে উঠবস করতে বললে এক কথায় রাজি হয়ে উঠবস করতে শুরু করতেও দুবার ভাববে না। এসব ছেলেরা সকলের কাছে ভালো, শিক্ষিত, নম্র-ভদ্র হলেও তাদের বউদের কাছে ভীষণ বিরক্তির এক একটা ডিব্বা হয়।
প্রতিটা কাজেই মায়ের পারমিশন গ্রহন করতে করতে একসময় বউ কিস করতে বললেও যেনো মায়ের কাছে পারমিশন নিতে যাবে এমন টাইপ। যার দরুন তারা তাদের বউদের কাছে মাত্রাতিরিক্ত প্যারাময় হয়ে থাকে।
.
ছেলের মা হঠাৎ আমায় মাথা থেকে কাপড় সরিয়ে চুল খুলে দিতে বলায় আমি কিছুটা আনইজি ফিল করতে লাগলাম। এভাবে কারো কথায় বাঁধা চুল খোলা যায় নাকি? আমি ভ্রু কুঁচকে নিত্য আপুর দিকে তাকাতেই কানে ভেসে আসতে লাগলো সেই চিরচেনা প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়া কন্ঠ।
নীবিড় ভাইয়া কানে হেড ফোন গুঁজে ফোনের দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থেকেই ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন,
.
—- কেন বে? তুই তোর বউকে দিয়ে হেয়ার ওয়েলের এডভারটাইসমেন্ট করাবি নাকি?
.
উনি যেভাবে ফোনের দিকে চেয়ে কথাগুলো বললেন তাতে সেটা স্পষ্ট উনি ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলেছেন। কিন্তু এতোটা কাকতালীয় কি করে হতে পারে?
নীবিড় ভাইয়ার এমন কথা শুনে ভদ্র মহিলার সাথে তার হাজবেন্ড আর ছেলে দুজনেই ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলো।
এদিকে রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়ার তো কাশিই উঠে গেলো! কিন্তু নিত্য আপু ভাবলেশহীন! আপুকে এতোটা স্বাভাবিক দেখে মনে হচ্ছে আপু যেনো আগে থেকেই জানতো এমন কিছু একটা হবে।
.
পেট মোটা আংকেলটা গলা খাঁকারি দিয়ে উঠায় ভদ্র মহিলা ততক্ষণাত প্রসঙ্গ পাল্টে আবারও বলে উঠলেন,
—- আচ্ছা মা, তুমি রান্না করতে পারো?
.
ভদ্র মহিলার এই কথার জবাবে আমার ঠিক কি বলা উচিত এই মুহূর্তে তা একেবারেই বুঝে উঠতে পারছিনা আমি। এভাবে কি সত্যিটা মুখের ওপর বলে দেবো যে “আমি চা পর্যন্ত বানাতে পারিনা?”
আমি মুখফুটে কিছু বলবো তার আগেই আবারও নীবিড় ভাইয়া ফোনের ওপাশের ব্যক্তির সাথে কথা বলতে বলতে বলে উঠলেন,
.
—- ওহ বুঝেছি, তুই তোর বউকে মাস্টার শেফ ইন্ডিয়ায় পার্টিসিপেট করানোর জন্য রান্না শিখাচ্ছিস!
কত্তো সেয়ানা তুই বাপরে…!
.
এবার আমি ভাইয়াদের সাথে নিজেও কাশতে শুরু করে দিলাম। টেবিলে থাকা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে কয়েক ঢোক খেয়ে নিয়ে গলাটাকে ভিজিয়ে নিলাম।
ভদ্র মহিলা এবার ভীষণ বাজেভাবে ভরকে গেছেন।
হঠাৎ উনার পাশে বসে থাকা উনার ছেলে মায়ের গা ঘেষে বসে নরম গলায় বলে উঠলো,
.
—- ওহ মা! বাসায় তো রান্না করার লোক রয়েছে। ওকে রান্না করতে হবে না তো!
.
ভদ্র মহিলা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলেন “হ্যা তো বাবা! রান্না বান্না করার কোনো দরকার নেই বৌ মার!”
এবার উনি আবারও আমার দিকে চেয়ে আহ্লাদী কন্ঠে প্রশ্ন করে উঠলেন,
.
—- আচ্ছা মা তুমি গান গাইতে পারো?
.
মহিলার প্রশ্ন শুনে কপাল কুঁচকে এলো আমার সাথে জমা হলো আরোও এক রাশ বিরক্তি!
গান গাইতে পারি কিনা সেটাও মেয়ে দেখতে এসে কেউ জিজ্ঞেস করে?
আমার ভাই এতো ভালো গান গায়। স্টেজ প্রোগ্রাম ও করে মাঝেমাঝে তার বোন হয়ে আমি গাইতে পারবো না এমনটাও তো না তাই দাঁতে দাঁত চেপে কেবল “হ্যাঁ” বলতে যাবো তার আগেই নীবিড় ভাইয়া আবারও হাসতে হাসতে ফোনের ওপাশের ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
.
—- ওহোহো! আচ্ছা আচ্ছা বুঝলাম। তুই তোর বউকে সারেগামাপায় অডিশন দেওয়াতে চাস! বাহ বউয়ের ট্যালেন্ট কে সোর্স বানিয়ে তো ভালোই ইনকাম করবি তাহলে!
.
ভদ্র মহিলা এবার পড়লেন মহাবিপদে! তার করা প্রতিটা প্রশ্নের সাথে নীবিড় ভাইয়ার ফোনের ভিডিও কলে কথা বলা ব্যক্তির কথার সাথে এতোটা মিলে যাচ্ছে কিভাবে! আর কি বাজে ভাবেই না উনাকে অপমানিত হতে হচ্ছে তা ভেবেই চরম বিরক্ত উনি।
.
তাই সিন্ধান্ত বদলে উনি চুপ করে রইলেন। এর মাঝে পেট মোটা আংকেল আমায় প্রশ্ন করলেন,
—- তুমি তো এবার রাজশাহী ভার্সিটিতে কেমেস্ট্রিতে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছো তাইনা?
.
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই আবারও নীবিড় ভাইয়া গলা ছেড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে ওপাশের ব্যক্তিকে বলে উঠলেন,
—- উফফ….! তুইও না আস্ত একটা বলদ! সব জেনে শুনে আবার কুয়েশ্চন করিস! ডাফার!
.
এবার পেট মোটা ভূরি ওয়ালা গোপ বিশিষ্ট আংকেল ও পুরো ঘেটে গেলেন। বলার মতো আর কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন না যেনো। রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া তো হাসি কন্ট্রোলে রাখার সব উপায়ই এপ্লাই করে ফেলেছে তবুও শেষমেশ হাসির কাছে পরাজিত হয়ে দুজনেই উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। অগ্নি ভাইয়া ঠোঁট চেপে ধরে বলে উঠলো,
“আংকেল আন্টি আপনারা কথা বলুন, আমরা একটু আসছি!”
বলেই এক ছুটে বেড়িয়ে গেলো দুজনে।
বুঝতে পারছি এখন ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে হাসির বন্যা বইয়ে দেবে দুটোয় মিলে।
.
আব্বু ফোনে কথা বলা হয়ে গেলে সোফায় এসে বসতে বসতে বলে উঠলো,
—- একি, আপনারা এখনো কিচ্ছু মুখে দেন নি কেনো? খান।
.
ছেলের মা বাবা সৌজন্যের হাসি দিয়ে মিষ্টি মুখে নিয়ে খেতে লাগলেন। এদিকে ছেলে শুধু আমার দিকেই চেয়ে আছে যেটা বড্ড বিরক্ত করছে আমায়। আজব! এভাবে কেউ ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকলে অস্বস্তি তো হবেই তা কি এই মাথা মোটা মেডিকেল পাশ ডাক্তার জানে না? ইচ্ছে তো করছে ব্যাটার মাথায় বারি মেরে দুভাগ করে ফেলি।
.
আম্মু আরোও কিছু নাস্তা এনে টেবিলে রেখে বসতে বসতে কিছু মনে পরায় বলে উঠলো,
—- এই রে জুসের গ্লাস গুলো তো আনাই হলো না।
.
নিত্য আপু আম্মুকে বসতে বলে “আমি নিয়ে আসছি মামনি, তুমি বোসো!” বলেই মুচকি হেসে কিচেনের দিকে পা বাড়ালো।
.
একটু পরই আপু জুসের গ্লাসগুলো ট্রে তে এনে রাখলো। সাথে রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়াও এসে হাজির হলো।
দুজনের মুখের লাল টকটকে ভাব। ভাবা যায় কতোটা হেসেছে বলে লাল হয়ে গেছে! উফফফ….! এরা পারেও! শুধু মাঝখান থেকে চিপায় পড়লাম আমি। সং সেজে এই বিরক্তিকর পরিবেশে বসে রয়েছি। একটু নড়বারও বিন্দু মাত্র অবকাশ নেই আমার। ওদিকে নীবিড় ভাইয়া তো মনের সুখে গেমস খেলায় আবারও ডুব দিয়েছেন। উনার মাথায় ঠিক কি চলছে তা উনার ভাব ভঙ্গি দেখে বোঝা বড় দায়।
.
🍂
.
এই পর্যন্ত আম্মু ছেলেকে নিয়ে যা যা প্রশ্ন করেছে তার প্রত্যেকটার জবাব ছেলের মা দিয়েছে। ছেলে একদম চুপচাপ, লজ্জায় লাল হয়ে বসে আছে। কতটা ইরিটেটিং ভাবলেই গা জ্বলে যাচ্ছে আমার। উনাদের খাওয়া শেষে নিত্য আপু একে একে সবার হাতে জুসের গ্লাস তুলে দেওয়ায় সময় ছেলে লজ্জামাখা কন্ঠে বলে উঠলো,
.
—- উনাকেও দেন আপু!
.
ছেলে উনাকে বলতে যে আমায় বুঝিয়েছে সেটা তো স্পষ্ট কিন্তু এখন কথা হচ্ছে আমার জুস খেতে না জুসের ট্যাংকিতে এই হ্যাবলাকান্ত টাকে চুবাতে ইচ্ছে করছে। নিত্য আপু মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো।
ছেলের হাবভাব দেখে রুশো ভাইয়া আমায় আস্তে করে খোঁচা মেরে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
.
—- হেই ছুটকি, দেখ আমাদের উডবি কান্টুস দুলাভাই কত্তো কেয়ারিং। দুলাভাইয়ের গালগুলো দেখ, লজ্জায় পুরো আলুর মতো হয়ে গিয়েছে।
.
আমি চোখ ছোট ছোট করে বিরক্তিমাখা কন্ঠে বলে উঠলাম,
—- রুশো ভাইয়া, কেউ লজ্জা পেলে তার গাল আলুর মতো হয় না। টমেটোর মতো লাল হয়।
.
রুশো ভাইয়া মাথা চুলকে ধীর কন্ঠে বলে উঠলো,
—- ওহ তাই বুঝি! তবে মিষ্টি আলু তো দেখতে লাল! দেন দুলাভাইয়ের নতুন নাম “মিষ্টি আলু দুলাভাই!”

রুশো ভাইয়ার দেওয়া এমন অদ্ভুত নাম শুনে আমি সবার আড়ালে ফিক করে হেসে দিলাম।
অগ্নি ভাইয়া মুখ চেপে “আরে ভাই আর হাসাস না প্লিজ!”
বলে আবারও মুখ টিপে হেসে উঠলো।
.
🍁
.
—- মা! আমার না ইয়ে পেয়েছে! কি করবো?
.
ছেলের কথা শুনে ভদ্র মহিলা আম্মুর দিকে তাকিয়ে জোড়পূর্বক হেসে একটু ইতস্তত বোধ করে বলে উঠলেন,
—- বলছিলাম বেয়াইন, ওয়াশরুমটা কোনদিকে?
.
আম্মু কিছুটা অবাক হয়ে মুখে স্বাভাবিকতা ফুটিয়ে তুলেই হাতের ইশারায় দেখিয়ে বললো “ওইযে ওদিকটায়।”
ভদ্র মহিলা ছেলেকে সাথে নিয়ে উঠতে যাবে তার আগেই রুশো ভাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো,
.
—- আরে আন্টি আপনি চাপ নেবেন না, আমি দুলা ব্রো কে নিয়ে যাচ্ছি! উপপস সরি দুলা ভাইকে নিয়ে যাচ্ছে।
.
বলেই ছেলের হাত ধরে বিভিন্ন কথায় ভুলিয়ে ভালিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো রুশো ভাইয়া।
.
৫ মিনিড় পার হওয়ার পরও ছেলে ওয়াশরুম থেকে বের না হওয়ায় ভদ্র মহিলা আর তার হাজবেন্ড তাদের চোদ্দগুষ্টির গল্প জুড়ে দিয়ে সময় কাটাতে উঠে পড়ে লাগলেন।
আর আমি এদিকে ভাবছি ছেলের প্রেস্টিজ বলে কিছু আছে না নেই! মেয়ে দেখতে এসে টয়লেটে ঢুকে বসে আছে! তবে যাই হোক আমার বেশ হাসি লাগছে এসব কান্ড কারখানায় তবুও অভাগা আমি হাসার বিন্দুমাত্রও সুযোগ পাচ্ছিনা।
.
🌸
.
১৫ মিনিট পাড় হয়ে গিয়েছে। রুশো ভাইয়া দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে এসে সোফায় বসে পড়লো। অগ্নি ভাইয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই রুশো ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
.
—- মিষ্টি আলুর পেটে মেইবি “ভুটুর-ভাটুর” প্রসেস অন হয়ে গিয়েছে!
.
রুশো ভাইয়া আমার পাশেই বসে থাকায় কথাটা আমার কানের এসে পৌঁছোতে খুব একটা বেগ পেতে হলো না। তবে তার কোনো অর্থ বুঝতে না পারায় আমি সরু চোখে তাকাতেই রুশো ভাইয়া গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলো,
.
—- ইয়ে মানে নিউ হুলাভাই থুক্কু দুলাভাইয়ের মেইবি লিকুইড পটি হচ্ছে!😅
.
রুশো ভাইয়ার কথা শেষ হতেই অগ্নি ভাইয়া ঠোঁট চেপে উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো। এদিকে আমি দাঁত দিয়ে ঠোঁট যথাসম্ভব চেপে ধরে হাসিটাকে নিয়ন্ত্রণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শেষমেশ ব্যর্থ হয়ে মাথা থেকে শাড়ির আঁচলটা মুখের সামনে টেনে বড় করে ঘোমটা দিয়ে নিলাম। “লিকুইড পটি!” শব্দটা বারবার কানে বাজছে আমার। রুশো ভাইয়ার মুখে কি কিছুই আটকায় না? উফফফ……! মন খুলে হাসতে না পেরে কখন যে পেটে আটকে রাখা হাসির বোম্ব ফেটে যাবে ঠিক নেই।
.
পুরো ২০ মিনিট পর ছেলে পা টিপেটিপে এসে নিজের মায়ের পাশে টুপ করে বসে পড়লো। আমি একবার আড়চোখে নীবিড় ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি বাম সাইডের ভ্রু উঁচু করে ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে রেখে ল্যাপটপে কি যেনো করছেন! এর মধ্যে ফোন ছেড়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছেন উনি!
এদিকে যে এতো কান্ড হয়ে যাচ্ছে তাতে কোনো মাথা ব্যথাই যেনো নেই উনার।
নিহাম এসে মুখটা বাংলার পাচের মতো করে তার মায়ের কানে কিছু একটা বলতেই ভ্রু কুঁচকে এলো উনার। উনি নিহাম কে চুপ করে থাকতে বলে আম্মু আব্বুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
.
—- আচ্ছা বলছিলাম বেইয়াইন মেয়ে তো আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। আপনাদের নিহামকে পছন্দ তো?
.
বিনিময়ে আম্মুকের কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আব্বু হেসে বলে উঠলো,
—- ছেলে তো মাশাল্লাহ নম্র-ভদ্র, শিক্ষিত! আমাদের বেশ পছন্দ হয়েছে ওকে।
.
—- আচ্ছা তাহলে ছেলেমেয়েকে একসাথে একটু আলাদা কথা বলতে পাঠালে ভালো হতো! উনার অফিসের কাজ ও আছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে আমাদের। (জোড়পূর্বক হেসে)
.
আব্বু আমায় নিহামকে নিয়ে আমার ঘরে যেতে বলবে তার আগেই নিহাম চট করে দাঁড়িয়ে চোখ মুখ খিঁচে “আমি একটু আসছি!” বলেই ছুট লাগালো ওয়াশরুমের দিকে। আমরা সবাই ছেলের এভাবে দৌড়ে টয়লেটে যাওয়া দেখে কিছুক্ষণ আহাম্মক বনে রইলাম। নিহামের বাবা-মা তো ছেলের কান্ডে চরম লজ্জিত। কি বলবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না।
.
এই ফাঁকে রুশো ভাইয়া আবারও ফিসফিসিয়ে আমায় বলে উঠলো,
—- ওহ নো! এর তো দেখি স্ক্রু বল্টু সব ঢিলা!
.
পরিপ্রেক্ষিতে অগ্নি ভাইয়া ঠোঁট চেপে বলে উঠলো,
—- ঠিকই বলেছিস রুশো! ব্যাটার লিকুইড পটিই হয়েছে!
.
আমি বিনিময়ে কিছু বললাম না রুশো ভাইয়ার হাতে একটা চিমটি কেটে চুপ করতে বললাম শুধু।
একটু পরই নিহাম ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এলো তাও হাঁপাতে হাঁপাতে! এসেই মায়ের আঁচল ধরে ইশারা করলো তাড়াতাড়ি বাড়ি যাওয়ার জন্য। কিন্তু মহিলা তো নাছড়-বান্ধা! উনি আজই সব ফাইনাল করে তবেই যাবেন। এদিকে আম্মু-আব্বু নিজেদের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে শুধু!
মাঝখান থেকে যে চুপ থেকেই সবথেকে বেশি মজা নিচ্ছে সে হলো নিত্য আপু। হাসি চাপিয়ে রাখার অসম্ভব ধরণের ক্ষমতা আছে আপুর।
আপু পরিস্থিতি বুঝে রিয়াক্ট করতে পারে যেটা আমরা তিন ভাই বোন আজন্মেও পারবোনা!
.
মহিলার জোড়াজুড়িতে না চাইতেও মুখ কাচুমাচু করে নিহাম উঠে দাঁড়ালো। আম্মুর কাছে নিহামের হাবভাব স্বাভাবিক না ঠেকায় প্রশ্ন করে বসলো,
—- নিহাম বাবা, তুমি ঠিক আছো? কোনো সমস্যা হলে আমাদের বলতে পারো।
.
নিহাম জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো,
—- না আন্টি ঠিক আছি আমি! (আমার দিকে তাকিয়ে) জ্বি একটু তাড়াতাড়ি চলুন প্লিজ!
.
মুহূর্তেই আমার মেজাজ আগের থেকে আরো বেশি বিগড়ে গেলো। শুধু মাত্র ভদ্রতার খাতিরে আমি চুপ করে আছি। তা নাহলে এতোক্ষণে ব্যাটার মেইন পয়েন্টে হিট করে দিয়ে উল্টে ফেলে দিতাম। শালা বিয়ে করার খুব শখ তাইনা? আমার এতো সুন্দর সুইট কিউট এক্সিডেন্টলি বর থাকতে আবার বিয়ে করবো নাকি?অবশ্য তোকে টাইড দেওয়ার সুযোগ যখন পেয়েছি তখন আর হাতছাড়া করা যাবে না। চল একবার ঘরে, নারীশক্তি কাকে বলে দেখাচ্ছি!
কথাগুলো মনে মনে ভেবেই উঠে দাঁড়ালাম।
তবে বেশি দূর যেতে হলো না। সিঁড়ির কাছে পৌঁছোতেই ছেলের আবারও লিকুইড পটি পেয়ে গেলো। আমাকে একলা রেখে কিছু না বলেই এক দৌড়ে টয়লেটে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো নিহাম! আমার মনে মনে আফসোস হতে লাগলো এই ভেবে যে ইশশ…লাথিটা মারতে পারলাম না।
সবাই এবার রীতিমতো অবাক হয়ে গেলো! নিহাম কে তৃতীয়বার টয়লেট যেতে দেখে সবাই বিস্ময়ে একসাথে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
.
—- ছেলের আমার কি হলো হঠাৎ? এই নিহামের বাবা গিয়ে দেখো না!
.
ভদ্র মহিলার কথায় নাহিন আংকেল এগিয়ে এসে বাথরুমের দরজায় নক করতে লাগলেন।
—- নিহাম, তুই ঠিক আছিস? কি হয়েছে? এতো ঘন ঘন বাথরুমে যাচ্ছিস কেনো?
.
রুশো ভাইয়া ঠোঁট উল্টে বললো,
—- আরে আংকেল এটা আবার বলা লাগে? লিকুইড পটি হচ্ছে! পেট খারাপ হয়েছে উডবি দুলাভাইয়ের!
.
রুশো ভাইয়ার কথায় আমি লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেললাম! বাড়ির বড়দের সামনেই এভাবে বললো ভাইয়া! ইশশশ…..! কে কি ভাবলো ভেবেই হাসির সাথে লজ্জার সংমিশ্রণ ঘটিত রিয়াকশন হচ্ছে আমার।
নিহাম ওয়াশরুমের দরজা খুলে এদিক ওদিক না তাকিয়েই সোজা তার মায়ের কাছে গিয়ে রেগেমেগে বললো,
.
—- মা….! দেখলে কি হলো? আজ আর তোমার কথা শুনবো না আমি! আমি গেলাম। তুমি থাকলে থাকো না থাকলে চলো। আমি বাসায় যাবো…..!
.
বলেই গটগট করে হেটে মেইন গেইট খুলে রাত্রিকে পাশ কাটিয়ে বেড়িয়ে গেলো নিহাম। নিহামের পেছন পেছন নাহিন আংকেলও ছুটলো! নিহামের মা আম্মুকে “প্লিজ কিছু মনে করবেন না! ছেলেটার হঠাৎ এমন হবে বুঝতে পারিনি আমরা! সো সরি!” বলেই দৌড় লাগালেন ছেলের পেছন পেছন! রাত্রি বাসায় ঢুকতে ঢুকতে অবাক হয়ে বলে উঠলো,
.
—– একি হলো? আমি আসতে না আসতেই পাত্রপক্ষ হুড়মুড় করে চলে গেলো কেনো?
.
রাত্রির কথার কেউই কোনো জবাব দিতে পারলাম না আমরা। কারণ এতোক্ষণ যা যা ঘটলো তার পরিপ্রেক্ষিতে কি রিয়াকশন দেওয়া উচিত তা জানা নেই আমাদের।
নীরবতা ভেঙে রুশো ভাইয়া বলে উঠলো,
.
—– আর বলো না এটম বোম্ব! এই কান্টুস উডবি হুলা ব্রোর পেট ভালো না। এতো ভালো ভালো খাবার খেয়ে কি না লিকুইড পটি শুরু হয়ে গেছে মিষ্টি আলুর! শেষমেশ আর সহ্য না করতে পেরে পালিয়ে গেলো বুঝলে!হুহ দ্যটস নট ফ্যায়ার!
আংকেল, মনি আমরা পেট পঁচা দুলাভাই নেবো না। নাহলে দেখা যাবে বিয়ের দিন একটু পোলাও মুখে দিতেই টয়লেটে গিয়ে বসে থাকবে। বিয়ে আর ২৪ ঘন্টায়ও হবে না।
.
রুশো ভাইয়ার কথা শেষ হতে না হতেই সাদা বিলাই ল্যাপটপটা আস্তে করে টেবিলের ওপর রেখে একটু নড়েচড়ে বসে হু হা করে ঘর কাঁপিয়ে হাসা শুরু করে দিলেন।
হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে পেট চেপে ধরে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাওয়া শুরু করে দিলেন উনি।
এবার নীরবতার পর্দা ভেদ করে হাসতে হাসতে সোফায় ধপ করে বসে পড়লো নিত্য আপু!
দেখা গেলো একে একে সবাই হাসা শুরু করে দিলো শুধু আমি আর আব্বু বাদে। এমনকি আম্মুও হাসতে হাসতে কান্না করে ফেলছে!
এদিকে রুশো ভাইয়া অগ্নি ভাইয়া তো হাসতে হাসতে একে ওপরের ওপর উল্টে পড়ছে! আর আমি শুধু বোকার মতো চেয়ে চেয়ে সবার উল্টা উল্টি দেখছি! কতো বড় আহাম্মক আমি! হাহ!
.
.
.
.
চলবে…………….💕

( ভীষণ প্যারা নিয়ে লিখতে হয়েছে, একে ফোন আমার অর্ধমৃত! ওয়াইফাই কাল থেকে ছিলো না। মাত্র আসলো। কারেন্ট ও লুকোচুরি খেলতে শুরু করে দিয়েছে। সারাদিন মিলে লিখে দিলাম!
পঁচা হয়েছে জানি তাও আপনাদের কেমন লাগছে জানাবেন অবশ্যই। হ্যাপি রিডিং 😇

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here