#চন্দ্রকলা
#লামিয়া_ইসলাম
#পর্ব_১৩ (প্রথমাংশ)
সাহিলকে কিডন্যাপ করা সেই মহিলাটা আজকে আবার জঙ্গলে বেরিয়েছে। আজকেও তার মুখ ঘোমটা দিয়ে ঢাকা তবে আজ সে আকাশি রঙের শাড়ী পড়েছে। জঙ্গলের মাঝে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতেই একটা লোক মাথায় চাদর মুরি দিয়ে এলো। সে লোকটা বর্তমানে জমিদার বাড়ির ড্রাইভার। সে এসেই ব্যস্ততার সাথে বললো,
-হঠাৎ আমাকে এখানে ডাকলেন কেনো?
-দরকার আছে বলেই ডেকেছি।
-যা বলার তাড়াতাড়ি বলো। আমি আজকেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছি। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আপনার সাথে এখানে দেখা করতে এসেছি। জমিদার সাহেব অলরেডি সতর্ক হয়ে গেছে।
-আমাকে জমিদার বাড়ির ভিতরে নিয়ে যেতে হবে তোমার।
-আমি কিভাবে আপনাকে নিয়ে যাবো?
-জানি না কিভাবে নিবে? কিন্তু জমিদার বাড়ির ভিতরে ঢোকার রাস্তা তুমিই আমাকে খুঁজে দেবে।
-কিন্তু বিশ বছর আগে আপনিই তো প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আপনি কখনো ওই বাড়িতে পা রাখবেন না। তাহলে হঠাৎ আজ এ সিদ্ধান্ত কেনো?
– কারণ এখন সময় আর পরিস্থিতি দুটোই বদলে গেছে। আমার জীবনের শেষ সম্বল এখন ওই বাড়িতে আছে। আর তা রক্ষা করার জন্যই আমার ওই বাড়িতে যেতে হবে।
-ঠিক আছে। আমি কিছুর ব্যবস্থা করতে পারলে আপনাকে জানাবো।
চন্দ্রের জন্য তৈরী করা মুরগির খামার আর বাগানের কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু এইসব দেখাশুনার জন্য চন্দ্রর একজন লোক লাগবে। তাই সাফোয়ান সবাইকে বিকালে খবর দিয়েছিলো একজন মহিলা জোগাড় করে দেয়ার জন্য। এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর পাবে না ড্রাইভার । তাই সে সাফোয়ানের সাথে দেখা করতে বিকালে জমিদার বাড়িতে গেলো। তাকে ড্রয়িং রুমে ঢুকতে দেখে সাফোয়ান তাকে বললো,
-আরেহ আপনি এখানে। আপনাকে তোহ ছুটি দেয়া হয়েছে।
– না না স্যার আমি আপনার সাথে আমার কোনো কাজের ব্যাপারে আসে নি। শুনেছি মালকিনের একজন সহযোগী লাগবে। আমি তার খবর দিতেই আসলাম। আমার মাছে একজন বয়স্কা মহিলা আছে। সম্পর্কে আমার ধর্ম বোন হয়। খুবই কম বয়সে স্বামী সন্তান হারিয়ে এখন খুবই কষ্টে দিনানিপাত করছে। তাই ওনাকে যদি এখানে কাজে রাখতেন। তাহলে উনি একটু থাকার জায়গা পেতো।
ড্রাইভারের বলা মহিলাটির ব্যাপারে শুনে সাফোয়ানের ভালো লাগলো। তাই সে ড্রাইভারকে বললো,
-আচ্ছা তুমি কালকে নিয়ে এসো তাকে। তার সাথে কথা বলে ভালো লাগলে তাকেই রেখে দিবো।
– আচ্ছা আমি কালই তাকে নিয়ে আসবো।
সাহিল আজ একাই রুমে বসে আছে। আয় সময় সে সামনের বারান্দায় অনিমাকে দেখতে পেলো। বিয়ের পর তার আর অনিমার সাথে কথা হয়নি। তাই সে অনিমাকে ডাক দিলো। অনিমা জড়োসড় হয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালো। সাহিল গলা খাকারী দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-তুমি এবার কোন ক্লাসে পড়ছো?
– ক্লাস টেনে।
-পড়ালেখা কেমন লাগে?
-অনেক ভালো।
– ভবিষ্যত কি হওয়ার ইচ্ছা আছে?
– ডাক্তার।
সাহিল খেয়াল করলো তার সাথে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে অনিমা তার টেবিলে রাখা একটি কলমের দিকে বার বার তাকাচ্ছে। সাহিল এইটা বুঝতে পেরেছে যে হয়তো অনিমার কলমটি পছন্দ হয়েছে। তাই অনিমার সাথে কথা বলা শেষ হতেই সাহিল কলমটি তাকে দিয়ে দিলো আর মন দিয়ে পড়াশোনা করতে বললো। অনিমা প্রফুল্লচিত্তে স্বামীর দেয়া প্রথম উপহার নিয়ে খুশিতে তার ঘর থেকে বের হয়ে এলো।
আজ রাতে সাফোয়ান বেশ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলো। রাতের খাওয়া শেষ হতেই সাফোয়ান খেয়াল করলো চন্দ্র রুমে চলে গেছে। চন্দ্র সচরাচর এত তাড়াতাড়ি রুমে যায় না। তাই সাফোয়ান কিছুটা অবাক হলো। ভাইয়েদের সাথে গল্প শেষ করে সাফোয়ান রুমে গিয়ে দেখলো রুম অন্ধকার। লাইট অন করতেই সে ছোট খাটো একটা ধাক্কা খেলো। কারণ চন্দ্র একটা স্লীভলেস নাইটি পরে জড়োসড় হয়ে বসে আছে। চন্দ্রকে এই নাইটি টা শাহানাজ কিনে দিয়েছিলো। বলেছিলো স্বামীকে খুশি করতে এটা পড়তে। তারপর আজ তার নানী শাশুড়ির বলা কথা গুলো শুনে চন্দ্র সিদ্ধান্ত নেয় আজ সে সাফোয়ানের সামনে এইটা পড়বে। সে আজ সাফোয়ানকে তার প্রাপ্য অধিকার দিতে চায়। তাই তো সে এই বেশভুষা নিয়েছে।
-চন্দ্র তুমি আজকে এইসব কি পড়েছো?
-কেনো জমিদার সাহেব? আপনার পছন্দ হয় নি। আমি সম্পূর্ণ তৈরী আপনাকে আপনার অধিকার দেয়ার জন্য।
-চন্দ্র আমি আগেই বলেছি যে আমি ভালোবাসা ছাড়া কোনো মিলন চাই না। স্ত্রী কোনো রোবট না যে তার মন না বুজেই তাকে দিয়ে যা তা করাবো। এইসব পাগলামি তুমি কেনো করছো?
-আমাদের বাড়ির পাশের মহিলারা বলতো যে স্বামী এইসব না পেলে নাকি অন্য মেয়ের কাছে যায়। আর আজকে নানীও বলেছে সব কিছুর ভীত নাকি এইটাই।
-আহা চন্দ্র। এই যুগেও এসে তুমি এইসব কেনো বলছো। আমি তোমাকে এভাবেই অনেক ভালোবাসি। যেদিন কোনো জড়তা ছাড়াই আমার সামনে এই পোশাকটা পরে আসতে পারবে সেদিনই আমার প্রাপ্য অধিকার বুঝে নিবো। অনেক রাত হয়েছে। এই পোশাক বদলে এসে ঘুমাও।
সাব ইন্সপেক্টর আরিফ গত দুইদিন যাবৎ এই বাড়িতে আছে। কিন্তু সে কোনো ক্লুই খুঁজে পাচ্ছে না। তাই সে নিজে নিজেই বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। আজও ঠিক একই ভাবে সে জানালায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলো। হঠাৎ সে খেয়াল করে একটা পুরুষ মানবের ছায়া বাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো ঠিক তার কিছুক্ষন পরেই আরেকজন নারীমূর্তি ও বের হয়ে গেলো। ব্যাপারটি কি হচ্ছে দেখার জন্য আরিফ ও তড়িঘড়ি করে তার পিছু নিলো সে তাঁদের পিছু নিয়ে যেতে থাকলেও হঠাৎই করেই তারা দুইজন এ তার সামনে থেকে উধাও হয়ে গেলো।
– তুমি আসার সময় খেয়াল করনি যে ওই পুলিশ অফিসার তোমার পিছু করেছে। তুমি আসলেই একটা গাধা।
-এই নিজের হবু জামাইকে কেউ গাধা বলে? তারাতাড়ি বলো হঠাৎই এখানে ডেকেছো কেনো? এক মিনিট তুমি এই নিরীহ জমিদারের ছেলের মান সম্মান লুট করতে এখানে এত রাতে ডাকো নি তো।
– উফফ সাহেদ। ফাজলামি বন্ধ করো। না হলে আমি এখন চলে যাবো।
-আচ্ছা আর করবো না। বলো এবার কি ব্যাপারে এত জরুরি তলব?
-তুমি সেদিন বড়ো ভাইয়াকে কেনো বলেছো তুমি কাউকে ভালোবাসো?
-বলেছি বেশ করেছি। এরপর তোমার নাম ও বলে দেবো। আমি ডাক্তার সামিরাকে ভালোবাসি।
-একদম চুপ। এটা গ্রাম আর তুমি জমিদার বংশধর। তাই শুধু শুধু দিবা স্বপ্ন দেখো না আমাকে নিয়ে।
– দিবা স্বপ্ন নাকি সত্যিই হবে একদিন সেটা তো শুধু বিধাতাই জানে।
চলবে…
(প্রিয় পাঠকগণ। পর্ব বড়ো হওয়ার কারণে এই পর্বের প্রথমাংশ প্রকাশ করা হলো। পরের অংশ ও খুবই দ্রুত প্রকাশ করা হবে। ধন্যবাদ )