#চন্দ্রকলা
#লামিয়া_ইসলাম
#পর্ব_১৩ (শেষাংশ )
আজ সকাল সকাল ড্রাইভার তার বলা মহিলাটিকে নিয়ে জমিদার বাড়িতে হাজির হলো। সাফোয়ান তাকে তার নাম জিজ্ঞেস করে জানলো আসমানী বেগম।যেহেতু কাজটা চন্দ্রর আর একজন পুরুষ হয়ে একজন মহিলার সাথে এভাবে কথা বলে সে তার অস্বস্তি বাড়াতে চাইলো না। তাই সে যা বলার চন্দ্রকে বলতে বললো। চন্দ্র মহিলাটিকে নিয়ে অন্দরমহলে চলে গেলো।
-আপনি কি আগেও কোথাও কাজ করেছেন?
-না মালকিন এটাই আমার প্রথম কাজ।
-আপনাকে কিন্তু এখানে থেকেই কাজ করতে হবে। খাওয়া থাকা বাদে মাসে আপনি ৫০০০ টাকা পাবেন। আপনি রাজি তো?
-জি জি আমি রাজি।
-ঠিক আছে কাল থেকে আপনার কাজ শুরু হবে। আজকে আপনি বিশ্রাম নিন। আর ও হচ্ছে ফুলি। ও আপনাকে আপনার থাকার ঘর দেখিয়ে দেবে।
-ঠিক আছে।
-দাঁড়ান, আপনি তো গ্রামের তাহলে আপনি এত সুন্দর করে শুদ্ধ করে কিভাবে কথা বলেন?
-মালকিন আমার মিয়া ছিল শহরের। ঐখান থেকেই আমি একটু শুদ্ধ ভাষা শিখেছি।
-ও আচ্ছা। তাহলে আপনি ফুলির সাথে গিয়ে আপনার রুম চিনে নিন।
চন্দ্রর অনুমতি পেতেই মহিলাটি ফুলির সাথে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
দুপুরের খাবারের পরে চন্দ্র জানালার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎই করেই সাফোয়ান এসে চন্দ্র কে জড়িয়ে ধরলো।
-আর কতদিন আমাকে অপেক্ষা করাবে সোনা?
-আর বেশিক্ষণ না। আর মাত্ৰ কয়েক ঘন্টা পরেই আপনার অপেক্ষার অবসান হবে জমিদার সাহেব। আমি আপনাকে আমার জীবনের সবচেয়ে সম্মানের জিনিস উপহার দিবো।
-তার মানে…..
-হ্যা জমিদার সাহেব আজই আমি পুরোপুরি আপনার হবো।
-আজ রাত তাহলে আমার জীবনের সবচেয়ে মধুময় রাত হবে।
রিমাকে বিকালের পরই মহাজনের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। মহাজনের বড়ো বউ রিমাকে বরণ করে ঘরে তুললো। সে দেখলো মহাজনের বড়ো দুই বৌয়ের গায়ে সোনার গহনায় ভর্তি। সেই হিসেবে নতুন বউ হিসেবে তার গায়ে কোনো গহনা নেই। কিন্তু তার থেকেও আশ্চর্য বিষয় যে মহাজনের এত বড়ো অট্টালিকা রেখে রিমাকে রাতের বেলায় থাকতে দেয়া হলো তাঁরই পার্শবর্তী এক ছনের ঘরে। রিমা তাঁদের এরকম ব্যবহার দেখে কিছুই বুঝতে পারছিলো না। সব কিছুর বোঝাপড়া করার জন্য রিমা তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
আজ চন্দ্র খুবই সুন্দর করে সেজেছে। পরনে তার সিঁদুরে লাল রঙের শাড়ি। মাথায় বেলি ফুলের গাজরা। গলার মতির সীতাহার। হাতে স্বর্ণের গোলাপবালা। দেখতে তাকে স্বর্গের উর্বশির মত লাগছে। যেকোনো পুরুষকে আকর্ষণ করার মত মোহনীয় আজ তাকে লাগছে। রাতে ঘড়ির কাঁটা যখন যখন ১২ টায় পৌছালো তখনি তার ঘরে সাফোয়ানের আগমন হলো। তাকে এই রূপে দেখে সাফোয়ান ও অনেক অবাক হয়ে গেলো। ধীরে ধীরে সাফোয়ান চন্দ্রের দিয়েক এগোতে লাগলো। সে তার উষ্ণ হাত দিয়ে চন্দ্রের পিঠ স্পর্শ করলো। সাফোয়ান চন্দ্রের পিঠ স্পর্শ করতেই যেন চন্দ্রর পুরো শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো। সে ঘুরেই সাফোয়ান কে ঝাপ্টে ধরলো। সাফোয়ান তাকে বিছানায় শুয়িয়ে তার কপালে তার ওষ্ঠ স্পর্শ করালো। চন্দ্র ও তার সাথে সমানভাবে তাল মেলাতে লাগলো। আর ধীরে ধীরে কক্ষটিও অন্ধকার হয়ে গেলো। আর পুরো কক্ষ জুড়ে বিচরণ করতে লাগলো তাঁদের প্রশান্তির নিঃশ্বাস।
রাতের প্রথম প্রহর শেষ হলো। সাফোয়ান তৃপ্ত হয়ে আজ তার প্রেয়সীকে নিয়ে শান্তির ঘুম দিয়েছে। কিন্তু চন্দ্রের চোখে ঘুম নেই। ধীরে দূরে সে সাফোয়ানের বহু থেকে মুক্ত হয়ে বিছানা থেকে নামলো। রাতের পড়া শাড়িটা মেঝে থেকে উঠিয়ে আবার পরে নিলো। চুলের ফুলগুলো এখনো সম্পূর্ণ ঝরে যাই নি। ধীরে ধীরে সে আলমারির কাছে গেলো। ধীরে ধীরে আলমারির ভেতর থেকে একটা পুরোনো আমলের বাক্স বের করলো। বাক্সটি তালাবদ্ধ। বাক্সটির তালা খুলে তার ভিতর থেকে কারুকার্য করা একটি ছুরি বের করে আনলো। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ছুরিটিকে সে দেখতে লাগলো। আর ভাবতে লাগলো কিভাবে সে এই ছুরি দিয়ে এই জমিদার বাড়ির পুরানো ড্রাইভার আর কাজের লোককে খুন করেছে। তারা যখন ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছিলো তখন তার কি পৈচাশিক আনন্দ লেগেছিলো। আর আজ এই ছুরিতে খুন হবে জমিদার সাফোয়ান চৌধুরী।সে ধীরে ধীরে সাফোয়ানের দিকে ছুরিটি নিয়ে এগোতে লাগলো।
চলবে……
দ্রুত গ্ৰুপে জয়েন করুন।
গ্রুপ লিংক :
https://facebook.com/groups/3532259070436906/