চন্দ্রকলা #লামিয়া_ইসলাম #পর্ব_১৪ (শেষাংশ)

0
321

#চন্দ্রকলা
#লামিয়া_ইসলাম
#পর্ব_১৪ (শেষাংশ)

সারাদিন পর কেবল মাত্র রিমা একটু বিশ্রামের সুযোগ পেলো। সারাদিন ধরে সে বাড়িতে কাজই করে গেছে। লোকমান মিয়ার বড় দুই বউ তাকে কাজের লোকের মত খাটিয়েছে। এত পরিশ্রমের পর ও দুপুরে সে খেতে পেয়েছে সকালের বাসি খাবার। আজকের মত এত কষ্ট সে তার ১৯ বছরের জীবনে পায়নি।

আজ অনেকদিন পর সাহিল বাগানে এসে বসেছে। সেদিনের ঘটনার পর থেকে আমেনা বেগম তাকে আর বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি। চার দেয়ালে বদ্ধ হয়ে সে যেন হাপিয়ে যাচ্ছে। তাইতো আজ বিকালে একটু বাগানে এসে বসেছে। বাগানে এইদিক ঐদিক তাকাতেই হঠাৎ তার নজর একটি ঝোপের আড়ালে গেলো। সে দেখলো সেখানে কিছু নড়ছে। আসলে জিনিসটা কি টা দেখতে সে ঝোপের কাছে গেলো। ঝোপের কাছে গিয়ে সে যা দেখতে পেলো তা দেখে তো তার চক্ষু চরকগাছ। সে দেখতে পেলো অনিমা ঝোপের আড়ালে বসে আছে।

-এই মেয়ে তুমি এই ঝোপের আড়ালে এভাবে বসে আছো কেনো?

-আমি বাগানে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। হঠাৎই দেখি আপনি এসেছেন তাই এখানে লুকিয়ে পড়েছি।

-আমাকে দেখে লুকিয়ে পড়েছো মানে? আমি কি বাঘ না ভাল্লুক।

-আমি কি করব আমার আপনাকে দেখলে ভয় লাগে?

-ভয় লাগে মানে। তুমি আমাকে নতুন দেখছো।

-না না আগে যখন দেখেছি তখন আপনি তো আমার স্বামী ছিলেন না। কিন্তু এখন আপনি আমার স্বামী। তাই এখন আপনাকে দেখলে ভয় লাগে।

-কেনো?

-আমার পাশের বাড়িতে আমার এক সই ছিল। এক বছর আগে ওর ও বিয়ে হয়েছিলো। ওর স্বামী ওকে প্রতিদিন রাতে অনেক মারতো। ও বাড়িতে এসে অনেক কান্না করতো শশুরবাড়ি না যাওয়ার জন্য। কিন্তু কাকা কাকিমা ওকে জোর করে পাঠিয়ে দিতো প্রতিবার। কিন্তু তারপর একদিন….

-হুম, বলো। তারপর একদিন কি হলো?

-তারপর একদিন ও ফিরে এলো। কিন্তু এবার ওর জায়গা ওদের ঘরে নয় বরং ওদের বাড়ির পাশের গোরস্থানে হলো। আশেপাশের সবাইকে বলাবলি করতে শুনেছিলাম যে ওকে ওর স্বামী মেরে ফেলেছে। তাই আমার ও ভয় লাগে আপনি তো আমার স্বামী আপনিও যদি আমাকে মেরে ফেলেন।

এই কথা বলেই অনিমা দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। সাহিল ওর অবস্থা দেখে বুঝতে পারলো যে অনিমা ওকে খুবই ভয় পায়। হয়তো স্বামী নামক জিনিসটা নিয়ে ও এক প্রকার মানসিক ট্রমায় আছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে তো অনিমা মানসিকভাবে অনেক চাপে থাকবে। তাই সে চিন্তা করলো সে এই বিষয়টা নিয়ে সামিরার সাথে আলাপ করবে।

সাব ইন্সপেক্টর আজকে ফরেন্সিক একপার্টের সাথে দেখা করতে এসেছে।

-হঠাৎ জরুরি তলব।

– জি জরুরি দেখেই ডেকে পাঠিয়েছি। যে দুইটা খুন হয়েছে তার থেকে কিছু কমন ক্লু খুঁজে পেয়েছি।

-কি?

– খুন দুইটা কোনো মহিলা করেছে। আর একজনই করেছে। কারণ দুইজায়গা থেকে পাওয়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচ করেছে। আর খুনের কারণ ও সেইম মনে হচ্ছে। প্রতিশোধ হতে পারে দুইটা খুনেই ভিক্টিমকে অনেক টর্চার করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় খুনটা অন্য কোথাও হয়েছে।

– এটা কিভাবে সম্ভব। বডিটা তো আমরা ঐখান থেকেই পেয়েছি।

-খুনের পর বডি হয়তো ঐখানে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু খুনটা অন্য কোথাও হয়েছে এটা আমি নিশ্চিত।

-মানে?

-এই মহিলার পরনের শাড়িতে আমরা মাটি জাতীয় পদার্থ পেয়েছি। কিন্তু জমিদার বাড়ির দোতলা ছিল সম্পূর্ণ পরিষ্কার। আর ওনাকেও মারার আগে অনেক নির্যাতন করা হয়েছে। এই দেখুন বডিতে অনেক দাগ পাওয়া গেছে।

-আপনার কথা অনুযায়ী অন্য কোথাও বসে খুন করে জমিদার বাড়ির দোতলায় রাখা হয়েছে। খুনটা অন্য কোথাও না ও হতে পারে। তবে নির্যাতন অন্য কোথাও বসে করা হয়েছে এটা নিশ্চিত।

-আর আজকে সকালে ছাই পাঠিয়েছিলাম ঐটা পরীক্ষা করেছেন।

-জি করেছি। আগুন টা কেমিক্যাল দিয়ে লাগানো হয়েছে। এটা এমন এক ধরনের কেমিক্যাল যে পানির সংস্পর্শে গেলে আগুন লাগতে পারে।

-তার মানে তার জন্যই কালকে আগুন নেভাতে এত সময় লেগেছে।

-জি।

-বুঝতে পেরেছি। আপনি আরো কিছু জানতে পারলে আমাকে কল করবেন।

-জি অবশ্যই।
সারাদিনের কাজের ঝামেলায় আরিফ আংটি টার কথা ভুলেই গিয়েছিলো। তাই সে জমিদার বাড়িতে ঢুকে শিরিন বেগমের কাছে গেলো।

-মালকিন ভিতরে আসবো।

-জি জি আসুন। তা আপনি হঠাৎ এই সময়।

-আপনি উপরের ঘরে একটা আংটি পেয়েছি। হয়তো বাড়ির কারোর হবে।

আংটিটাকে দেখেই শিরিন বেগমের পুরানো কিছু কথা মনে পরে গেলো। তারপর ও সে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

-আরেহ এটা তো আমারই। ধন্যবাদ।

আরিফ আংটিটা দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যেতেই শিরিন বেগমের কপালে দুশ্চিন্তার চাপ দেখা গেলো। সে আংটি টাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো। আর কিছু পুরোনো স্মৃতি মনে করতে লাগলো।

রাত গভীর। চারদিকে ঝিঁঝি পোকার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। আর দূর থেকে ভেসে আসছে হাসনাহেনা ফুলের মন মাতানো সৌরভ। চন্দ্র আজও সাফোয়ান এর বুকে ঘুমিয়ে ছিল। সাফোয়ান তাকে তার বাহুতে আবদ্ধ করে রেখেছে। চন্দ্র এতক্ষন ঘুমের ভান ধরে ছিল। ধীরে ধীরে সে সাফোয়ান এর বাহু থেকে বের হয়ে এলো। আরেকবার ভালো করে দেখে নিলো সাফোয়ান ঘুমিয়ে আছে কিনা যদিও আজ সে সাফোয়ানের দুধের সাথে ঘুমের ঔষুধ মিশিয়েছিল। তারপর সে ধীরে ধীরে নিঃশব্দে গায়ে মাথায় চাদর পেঁচিয়ে জমিদার বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গ্রামের লাস্ট প্রান্তের অবস্থিত পুরোনো পরিত্যক্ত এক বাড়ির দিকে চলতে লাগলো।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here