মৃগতৃষ্ণিকা #পর্বঃ১৭

0
296

#মৃগতৃষ্ণিকা
#পর্বঃ১৭

হাসনাহেনার তীব্র সুবাস যেন মুগ্ধ করতে পারছেনা হেমন্তি কে। সে জোরপূর্বক দুচোখের পাতা বন্ধ করে নেয় কিছু মুহুর্ত পার হতেই টের পায় কারো উপস্থিতি আচমকাই চোখ জোড়া খুলে যায় তার, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার কি করবে বুঝতে পারছেনা পেছন দিকে ফিরতেও পারছে না চোখর মণি এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে কিন্তু কিছু আঁচ করতে পারছেনা। ঠোঁট দুটো যেনো শুকিয়ে একাকার জিভ দিয়ে ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে নিয়ে মৃদুস্বরে বলল- কে? কে ওখানে?
সাহস করে পেছন ফিরতেই দেখে কেউ নেই তবে যে মনে হচ্ছিল কেউ পেছন পেছন আসছিলো।তবে কি এগুলো আমার মনের ভ্রম? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে বসলো।
কুকুরের ডাক যেনো আরও বাড়তে লাগলো তীব্র শব্দে যেনো কান ফেটে যাওয়ার উপক্রম।
হেমন্তি সব ভয় অতিক্রম করে সামনে এগোতে থাকলো আজ অন্দরমহলে প্রবেশ করেই ছাড়বে সে এটাও দেখবে সত্যিই কি বেগম জুলেখা ফিরে এসেছে কি না।
হেমন্তি যত এগোতে থাকে তার মনে হয় সে ততই পিছিয়ে যাচ্ছে তবুও সে হাল ছাড়ে না এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে চোখের সামনে দিয়ে কোনো একটা আবছা অবয়ব যেনো বাতাসের তীব্র গতিতে ছুটে গেলো কিন্তু এটা কি হতে পারে সেটাই বোধগম্য হয়না হেমন্তির।
অন্দরমহলের সামনেই ঘুরপাক খেতে থাকে হেমন্তি এমন করতে করতে সময় প্রায় শেষ রাতে এসে ঠেকেছে, এবার মনে তার প্রচন্ড জেদ চেপে বসে উত্তেজিত হয়ে বলে – কে এখানে? কে আছো? সাহস থাকে তো সামনে এসে দাড়াও? আমার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াওওওওও…
চিৎকার করে কথাগুলো বলে যেনো হাঁপিয়ে উঠেছে হেমন্তি।
অন্দরমহলের চারপাশে যেনো ঝড় উঠেছে হুট করেই তীব্র বাতাস বইছে চারদিকে।একটু আগেও সব ঠিক ছিলো হুট করেই যেনো শুরু হলো এ ঝড় হাওয়া। এবার যেন সব অস্বাভাবিক লাগছে হেমন্তির কাছে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সে চোখকে যেনো বিশ্বাস করার উপায় নেই।
আচমকাই গম্ভীর কণ্ঠে কেউ বলে উঠল – আমার সাহস নিয়ে প্রশ্ন করার স্পর্ধা তোর হয় কি করে? তুই জানিস আমি কে?

অদৃশ্য কন্ঠস্বরে বুকের মধ্যে ধুপধাপ আওয়াজ তুলেছে হেমন্তির ভেতরের ভয় ভেতরেই রেখে বলে উঠল – স্পর্ধা আছে বৈ কি। আমি হেমন্তি, লুকিয়ে চুপিয়ে আমি কোনো কাজ করি না সাহস থাকে তো আমার সামনে এসোওও

মুহুর্তেই একটা অবয়ব যেনো হেমন্তির চোখের সামনে উদীয়মান হলো ঠিক আব্দুলের বর্ণনা মতো কালো বোরকা পরিহিতা একটা অবয়ব।একের পর এক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে চলেছে রাজবাড়ী তে আসার পর থেকে অন্দরমহল ঘিরেই যেন সব রহস্য ঘুরপাক খাচ্ছে।হেমন্তি কিছু বলতে যাবে তার আগেই চোখ যায় অবয়বটার পায়ের দিকে সেটা মাটি থেকে অনেকটা উঁচুতে ভাসমান। হেমন্তির জিভ আটকে আসে জিহ্বা যেন অসার হয়ে পড়েছে কিছুতেই সে কথা বলতে পারছেনা। মস্তিষ্কে সেদিন রাতের ঘটনাটা ঘুরপাক খায় তবে সে যা কিছু দেখছে সবটা সত্যি। ভূমি স্পর্শ না করে সেখানে ভর না দিয়ে কোনো মানুষের পক্ষে চলাচল করা সম্ভব নয়।
অবয়ব টার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হেমন্তি পা থেকে মাথা পর্যন্ত পুরোটাই ঢাকা পড়ে আছে মানুষ নাকি অশরীরী বোঝা মুশকিল মনে হচ্ছে যেন তার কাছেই অন্ধকারেরা ভীড় জমিয়েছে।

রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠল – কিহ্ আমাকে স্পর্ধা দেখাস!! এত বড় সাহস তোর নে এবার দেখ আমায় আমি তোর সামনাসামনি দাড়িয়ে এখন।দেখি কি করতে পারিস।

হেমন্তির মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হয়না চুপচাপ অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে সে পুরো শরীরে ঘামে ভিজে একাকার।চারদিকে তীব্র ঠান্ডা বাতাস বইছে তবুও হেমন্তির ঘাম যেন থামছেই না ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যাওয়া মেয়েটার মুখ থেকে কেবল মাত্র দুটো শব্দ বের হয়- ভ্রম নাকি সত্যি??

অবয়ব টা হাসছে কেবল হেসেই যাচ্ছে বড্ড কানে বাজে তার হাসির শব্দ এমন বিকট শব্দের মাঝেও হেমন্তির মনে পড়ে তার ছোটবেলার কাহিনী দাদু গল্প শোনানোর সময় বলেছিলেন হাতে চিমটি কেটে দেখলে নাকি বোঝা যায় সে সামনে যা দেখছে তা সত্যি নাকি তার ভ্রম। ডান হাত দিয়ে বা হাতে চিমটি কেটে বসলো অনেক জোরে মনের অজান্তেই আহ্ করে শব্দ করে উঠলো সে। এরমানে সে ব্যথা অনুভব করছে যার মানে হলো সে যা দেখছে সেটা তার ভ্রম নয় সত্যি। সে এবার নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারে না আরেকটা চিমটি কেটে বসে যদি ব্যথা না পায় তবে এগুলো সব তার ভ্রম।কিন্তু না এবারেও সে অনেক ব্যথা অনুভব করে।
হেমন্তি পেছাতে লাগলো মৃদু পায় অবয়বটা যেনো হেমন্তির দিকে অগ্রসর হতে লাগলো হাত বাড়িয়ে রেখেছে ঠিক হেমন্তির বুকের ভেতরের কলিজা বরাবর যেনো কাছে আসলেই ভেদ করে নিয়ে যাবে তার কলিজা।হেমন্তি যত পিছিয়ে যাচ্ছে অবয়বটা তত এগিয়ে আসছে।
হেমন্তির কাছাকাছি অবয়বটা চলে আসতেই ওর মস্তিষ্কে বিভ্রম তৈরী করে বসে। আশেপাশের সবকিছু যেনো ওর কাছে ধোয়াসা মনে হতে থাকে এই বুঝি তার কলিজা খানা ছিনিয়ে নিয়ে গেলো বলে মনে হতে থাকে।এক মুহুর্তের জন্য হেমন্তির জায়গায় নিজেকে অনুভব করা যাক তবে, কালো বোরকা পরা অশরীরীর ছায়া আমার ওপর পরেছে এই অন্দরমহলে সে আর আমি ছাড়া কেউ নেই অন্ধকারে আচ্ছাদিত অন্দরমহলে মশালের নিভু নিভু আগুন এ ক্রমশ অবয়ব টা আমার দিকে এগোতে লাগলো তবে সে পায়ে ভর দিয়ে এগোচ্ছে না বরং বাতাসের তোড়ে এগোচ্ছে। চারপাশের সবকিছু মুহুর্তেই যেন ধুলোবালিতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে সাথে আমিও মিশে যাবো অচীরেই। অশরীরী তার হাত বাড়াতে ঠিক আমার কলিজা খানা বরাবর বুকের ভেতর এ থাকা ছোট্ট হৃদয়খানা বাচার জন্য আকুপাকু করছে ভয়ে সারা শরীরে কম্পনের সৃষ্টি হলো থরথর করে কাপছে সারা গা মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না শুধু মনে হচ্ছে এই বুঝি আমার জীবিত শরীরে থাবা বসাবে কেড়ে নেবে আমার কলিজা খানা। হয়তো সে এতক্ষণে আমার কলিজা শরীর থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে মুষ্টিযুদ্ধ হয়ে আছে র*ক্তাক্ত জীবিত কলিজা, আমি বেঁচে আছি না মারা গেছি বুঝতে পারছিনা তবে এটা ঠিক বুঝতে পারছি বেগম জুলেখা এখন আরাম করে বসবেন আকাঙ্খাময় চোখজোড়া দিয়ে চাইবেন সেথায় টপ টপ করে র*ক্ত গড়িয়ে পরছে আর সে তার জিভ বের করে সেটা স্পর্শ করার চেষ্টা চালাচ্ছে তার চোখে মুখে যেন আনন্দের বন্যা বইছে।আমার চোখে কেবল ভাসছে বেগম জুলেখার র*ক্তমাখা মুখ জীবিত কলিজা দেখে সে আর লোভ সামলাতে পারছে না অস্থির হয়ে হাপুস হুপুস করে খেতে শুরু করেছে সে। না না আর ভাবতে পারছি না এবার থামার পালা হেমন্তির চোখের পাতা নিমিষেই বন্ধ হতে শুরু করে চোখের সামনে যেনো ভাসতে থাকে সহস্রাধিক বাচ্চার লাশ পাশেই বসে আছে বেগম জুলেখা মনের আনন্দে সে জীবিত মানুষের কাঁচা কলিজা চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। কি বিভৎস দৃশ্য কি ভয়ংকর রূপ এই সুনয়নার। হেমন্তি শরীরের সমস্ত ভার ছেড়ে দেয় শূন্যে ভাসতে থাকে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে বেশিক্ষণ সময়ের প্রয়োজন নেই মুহুর্তেই সে লুটিয়ে পড়ছে কিন্তু না কেউ একজন শক্ত করে ধরেছে পেছন থেকে। শরীর আকড়ে ধরে যেন বলছে ভয় নেই আমি আছি তো কিন্তু কে সে দেখার আগেই জ্ঞান হারায় হেমন্তি। চারদিকে তখন ফজরের আজান শোনা যাচ্ছিলো।

তখন আনুমানিক সকাল ১১টা হবে এমন সময় হেমন্তির জ্ঞান ফেরে জ্ঞান ফেরার পর সে নিজেকে আবিষ্কার করে তার কক্ষের বিছানায়। সে শুয়ে
আছে কিছু সময়ের জন্য সে সবটা ভুলে যায় নিজের নাম পরিচয় রাতের অন্ধকারে ঘটনাও সে ভুলে যায় অবলীলায়। একপ্রকার হুড়োহুড়ি করেই বিছানা থেকে শরীরকে আলাদা করতে চাইলে দপ করে মাথাটা ধরে যায় তীব্র যন্ত্রণায় কপালের দুই পাশের পীতরঙা চিকন রগগুলো তখন বেশ ফুলেফেঁপে উঠে চাইলেই মাথাটা সোজাসুজি করে রাখতে পারছিলো না হেমন্তি দুলন্ত মাথায় দুহাত দিয়ে চেপে রাখলো হুট করেই মনে পড়লো -সে হেমন্তি, রাজবাড়ীতে অবস্থান করছে সে। কাল রাতের ভয়ংকর স্মৃতি তার মাথার তীব্র যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে দিলো।
চিৎকার করে উঠলো সে তার চিৎকারে ছুটে এসেছে একজন যুবক যার ছোয়া তার ভীষণ পরিচিত হেমন্তির চিৎকারে তার মাঝে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল – কি কি হয়েছে? এইতো আমি হেমন্তি এইতো। পরম যত্নে কথাগুলো বললেও হেমন্তি বেশ অবাক হয় সে কি কল্পনা করছে নাকি বাস্তব বুঝতে পারছে না।অবশ্য এখন এই মানুষটাকে বড্ড প্রয়োজন তবে চাইলেই কি আর সব পাওয়া যায়।

কাল রাতের ভয়ংকর স্বপ্ন হয়তো মস্তিষ্ক কিছুটা বিভ্রান্তর সৃষ্টি করেছে যা সে অন্তরের অন্তস্তল থেকে চাইছে তাই সে চোখের সামনে দেখছে কিন্তু না হেমন্তি কে আরও অবাক করে দিয়ে পুরুষালি ভরাট কন্ঠে কেউ বলে উঠল- একা একা রাজবাড়ী তে অবস্থান করার মতো সাহসও হয়ে গেছে বুঝি আপনার! বাড়িতে মিথ্যা বলে এসেছেন নিশ্চয়ই??

হেমন্তি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে কান্নাভরা কন্ঠে মৃদুস্বরে বলে উঠলো-সিরাজ!

অপর প্রান্ত থেকে উত্তর এলো হ্যা আমি সিরাজ।
আমি জানি আপনি ভুত দেখার মতোই চমকেছেন কিন্তু সেটা বড় কথা না আমিই তো ভোররাতে আপনাকে রাজবাড়ী তে দেখে ভুত দেখার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলাম।আরেকটু হলেই আমি জ্ঞান হারাতাম। কিন্তু হলো তার উল্টো আপনি নিজেই জ্ঞান হারিয়েছেন আমি শক্ত করে আকড়ে ধরেছিলাম নয়তো মাটিতে লুটিয়ে পড়তেন।
হেমন্তি মাথানিচু করে সবকথা গুলো শুনছে সে কোনো জবাব দিলো না শুধু বললো- আপনি করে বলছো যে?

– আপনিও তো আমায় তুমি করে বলছেন তাই না?
আমাদের সম্পর্ক এখন আর আগের মতো নেই তাই যার যেটা ইচ্ছে সে সেটাই সম্বোধন করতে পারে বলে আমি মনে করি।

– হুম। রাজবাড়ী তে এসেছো যে?

– উমমম আ আমি এসেছি খবরের কাগজ দেখে। দেখলাম প্রতিদিন একটি করে শিশু উধাও হয়ে যাচ্ছে যাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেই স্মৃতি গুলো আবারও আমাকে তাড়া করলো মনে প্রশ্ন জাগলো বেগম জুলেখা কে তো জনাব সুলায়মান জীবিত সমাধি দিয়েছেন তবে এই মৃত্যু খেলা আবার শুরু করলো কে?
রাজবাড়ী তেই পাওয়া যাবে এই প্রশ্নের উত্তর তাই এখানে আসা।

-আমিও সেজন্যই এসেছি।
– বাড়িতে মিথ্যা বলে আসার দরকার ছিলো কি?

– আ আ আমি যে মিথ্যা বলে এসেছি তা তুমি কি করে জানলে?

– রূপাকে দেখতে গিয়েছিলাম আপনার সাথে সম্পর্কের ইতি টেনেছি মেয়েটাকে তো পর করিনি শত হলেও সে আমায় বাবা বলে সম্বোধন করে।

-রূপার কাছে গিয়েছিলে! কেমন আছে ও? আমার কথা কিছু বলেছে?

– হুম বলেছে।বড্ড মনে পড়ে আপনাকে কিন্তু ও প্রকাশ করে না। রূপার স্বভাব তো জানেন ও ওর অনুভূতি তেমন একটা প্রকাশ করেনা।

– আমি আসলে অনেক বড় রহস্য উন্মোচন করতে চলেছি কিন্তু অজানা অচেনা অদৃশ্য এক শত্রুর সঙ্গে লড়ছি যাকে না চিনতে পারছি না ধরতে পারছি।সবটা বলতে হবে তোমায় নয়তো আরো কত মায়ের বুক খালি হবে জানা নেই …..

– শান্ত হোন আগে খাওয়া দাওয়া করে বিশ্রাম নিন তারপর সবটা শুনবো।

– আ আমি দেখেছি বেগম বেগম জুলেখার অবয়ব, কালো বোরকা পরিহিতা মহিলা আমি নিশ্চিত এ আর কেউ না এই জুলেখা…….

হেমন্তি আরও কিছু বলতে গেলে সিরাজ তাকে থামিয়ে দেয় আব্দুল কে ডেকে সকালের নাস্তার ব্যবস্থা করে এরপর জোর করে হেমন্তি কে খাইয়ে আবার বিছানায় শুইয়ে দেয়।ঘুমোনোর জন্য চেষ্টা করতে বলে আব্দুল চাচার সাথে বেরিয়ে পড়ে গ্রামে। এদিকে হেমন্তি কিছুতেই বিছানায় গা দিয়ে থাকতে পারছেনা তার দম বন্ধ হয়ে আসছে রাজবাড়ী তে।দুচোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে ক্রমশ বাড়ছে মনের ভয়।রূপাকে নিয়ে সে রাজবাড়ী তে শেষ যে রাত কাটিয়েছিলো সে রাতের কথা মনে পড়ে বেগম জুলেখা বলেছিলো সে ফিরবে রূপার কলিজা ভক্ষণ না করে সে কিছুতেই শান্ত হবে না। রূপাকে বাঁচা তে সে সব করতে রাজি একটা আচঁরও রূপার গায়ে লাগতে দিবে না বলে প্রতিজ্ঞা করে বসে হেমন্তি।

সিরাজ এর প্রতিটা কথায় যেনো তীরের ন্যায় আঘাত করেছে হেমন্তির হৃদয়ে। সমস্ত অনুভূতি গুলো যেনো ঝড় তুলেছে কিন্তু সিরাজ কেমন অবলীলায় বলল সম্পর্কহীনতার কথা।নিজের দোষেই তো এমন মানুষ কে হারাতে হলো তাকে সে তো জীবন থেকে সিরাজকে বাদই দিয়েছে তবে এখন এত মায়া কিসের??

সিরাজ আব্দুল চাচা কে এতদিনের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে যা জানে সবটা খুলে বললো গতকাল রাতের কথা জিজ্ঞেস করতেই আব্দুল বলল- সত্যি কথা কইতে আমি কাল রাইতে এইসবের কিছুই টের পাইনাই বাজান ভয়ে জড়সড় হইয়া এই যে ঘুম দিছি আর জাগিনাই।তুমি না আইলে তো মাইয়াডা ওইখানেই পইড়া থাকতো আমি সকালে উইঠা দেখলে দেখতাম।আর সব কথার এক কথা একলা পাইয়া ওই অশরীরী যদি কোনো ক্ষতি করতো। এমনিতেই হেমন্তি মা বেশ পেরেসানিতে আছে ফকিরের খোঁজ পাওনের লেগা।
সিরাজের প্রচন্ড রাগ হয় হেমন্তি একা রাজবাড়ী তে অবস্থান করছে বলে রাগে তার চেহারা লালবর্ণ ধারণ করেছে কিন্তু কিছুই প্রকাশ করেনা নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, তার প্রতি অধিকার ফলানোর মতো আমার কোনো অধিকার নেই ।

আব্দুল সিরাজ এর কথার মর্ম বুঝতে পারেনা তবে এটুকু বুঝেছে দুজনের মধ্যে মান অভিমান চলছে।আব্দুল বললো- হেমন্তি মাইয়াডার মনটা বড্ড ভালো জানো বাবা একেবারে স্বচ্ছ আয়না।

– হ চাচা জানি তারে আমার চেয়ে ভালো হয়তো আর কেউ জানেনা। সে স্নিগ্ধ পবিত্র আর আমি….
থাক সেসব কথা আমরা বরং রাজবাড়ীর দিকে যাই আপনার আয়নার মতো স্বচ্ছ মাইয়ারে দুশ্চিন্তা মুক্ত করি চলেন।

– কি কও বাবা তুমি এর মধ্যে সব বুইঝা ফালাইলা।হেমন্তি তো ফকির বাবার সন্ধানে পাওনের লেগা অস্থির সেই সন্ধান কি তুমি দিতে পারবা?

দেখি সন্ধান দিতে পারি কিনা।চলেন,,,,

গ্রাম ঘুরে রাজবাড়ী ফিরে এসে দেখে হেমন্তি বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে কি যেন আনমনে ভেবে চলেছে। ভাবনার মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে চাইনি মিস তবে দাঁড়াতে হচ্ছে শুনুন আমি আপনার দুশ্চিন্তার অবসান ঘটানোর উপায় পেয়েছি।

ধড়ফড় করে বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বললো- আমার দুশ্চিন্তার অবসান করবে মানে?

-ফকির বাবাকে খুঁজে বের করার উপায় হয়তো আমি পেয়েছি।

আমি তো এসব তোমায় বলিনি তবে কি করে জানলে?

– আব্দুল চাচার কাছে আমি প্রায় সবটা শুনেছি এবার আপনার থেকে শুনবো ব্যাস তবেই সবটা পরিষ্কার। তার আগে বলুন কি কি ক্লু পেয়েছেন?

– তেমন কোনো ক্লু আমি পাইনি শুধু নিজে নিজে আন্দাজ করেছে সন্দেহের তালিকায় রয়েছে একজন।আমার সব প্রশ্নের উত্তর কেবলমাত্র ফকির বাবার কাছে আছে তাকে পেলেই হয়তো সবটা পরিষ্কার জলের মতো হয়ে যেতো কিন্তু এখন তো তার খোঁজ পাওয়ার কোনো উপায় দেখছি না…

হেমন্তি কে থামিয়ে সিরাজ বলে উঠল – মঙ্গলবার।
মঙ্গলবারই আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর পাবো।

মঙ্গলবার!!
বিস্ময়কর চোখে উচ্চারণ করলো হেমন্তি।

চলবে,,,,,
#লেখা:মুন্নি ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here