মৃগতৃষ্ণিকা #বোনাস_পর্ব- ০৬

0
211

#মৃগতৃষ্ণিকা

#বোনাস_পর্ব- ০৬

সিরাজ ভাবনায় পরে যায়, কোনদিকে যাবে সে বুঝতে পারছেনা একদিকে বিশ কোটি টাকা আরেকদিকে হেমন্তির বারণ। যদি বিশ কোটি টাকার মালিক হই তবে বেকারত্বের সমস্যা সহ আরও নানা ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এমনকি হেমন্তির বাবা মাও রাজি হয়ে যাবে আমার হাতে হেমন্তিকে তুলে দিতে অন্যদিকে হেমন্তি নিজেই বারন করছে ডকুমেন্টারি পাবলিশ করতে তাহলে নাকি ও নিজেই আমাকে বিয়ে করবে না।
আমার আসলে কি করা উচিৎ??

এদিকে হেমন্তি বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছে যদি কোনোভাবে এই ডকুমেন্টারি পাবলিশ হয়ে যায় তবে অনেক বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। যেখানে সুলায়মান ও জুলেখার জীবন কাহিনির ডকুমেন্টারির দাম বিশ কোটি টাকা হবে সেখানে রাজবাড়ীর দাম কতো বেশি হতে পারে!! আর মূল্যবান জিনিসের প্রতি মানুষের আলাদা ঝোঁক থাকে রূপার জীবন নিয়ে না টানাটানি লেগে যায়।রূপা কে আমি কোনোমতেই বিপদে পরতে দিবো না আমার শেষ রক্তবিন্দু অবধি আমি রূপাকে
আগলে রাখবো তাতে আমার যা হয় হবে।কিন্তু সিরাজ যদি না শোনে আমার কথা? না না এ আমি কি ভাবছি সিরাজ কখনোই আমার স্বীদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাবে না।কিন্তু বিশ কোটি টাকা!! টাকার পরিমাণটা অনেক বেশি যা একজন মানুষের সারাজীবন এর স্বপ্ন থাকে কোটিপতি হওয়ার।

রূপা আদুরে গলায় হেমন্তিকে বললো মা, মা দেখো আমি না রাজবাড়ী এঁকেছি, সুন্দর হয়েছে না?

রূপার হাত থেকে খাতাটা নিয়ে দেখতে লাগলো হেমন্তি কাঁচা হাতেও বেশ সুন্দর এঁকেছে মেয়েটা। হেমন্তি রপাকে কাছে টেনে নিয়ে একটা চুমু দিয়ে বললো অনেএএএক সুন্দর হয়েছে মামনি।

রূপা খুব খুশি হলো হেমন্তির প্রশংসায়।রূপা আবার খাতা নিয়ে বসলো আঁকতে হেমন্তি চেয়ে আছে খাতার দিকে কিছুই বুঝতে পারছেনা কি আঁকার চেষ্টা করছে মেয়েটা।
অনেকটা সময় পার হওয়ার পর বোঝা গেলো সে বর- বউ আঁকতে চেষ্টা করছে।
হেমন্তি জিজ্ঞেস করলো রূপা তুমি কি আঁকছ মা?
রূপা লজ্জা লজ্জা মুখ করে বললো মা আর বাবাকে আঁকছি। হেমন্তি মা আর সিরাজ বাবার তো সামনেই বিয়ে তাই বর বউ আঁকছি।
কিন্তু দেখোনা মা একটুও সুন্দর হচ্ছে না। ধ্যাত!!! আর আঁকবোই না। না না আঁকবো আমার রাজপুত্র কে আঁকবো।
হেমন্তি মৃদু হেসে বললো যাও আঁকো। আঁকতে আঁকতেই দেখবে সুন্দর হবে।একবার না পারিলে দেখ শতবার।

_______________

মতি জোছনার শখ পূরণ করতে উঠে পরে লেগেছে যে করেই হোক পারি বানুর চোখ এড়িয়ে যেতে হবে রাজবাড়ী। যদি ঘুনাক্ষরে ও টের পায় তবে খবর করে ছাড়বে।
মতি জোছনা কে বেড়াতে নিয়ে যাবার আর্জি করলো পরিবানুর কাছে কিন্তু পরিবানু এমন পরিস্থিতিতে জোছনাকে বাড়ির বাইরে যেতে বারন করলো। চারদিকে পোয়াতিদের জন্য ঘোর বিপদ অপেক্ষা করছে কখন কার সর্বনাশ হয় বলা যায় না।
মতি ব্যর্থ হয় কিন্তু হাল ছাড়েনা যে করেই হোক জোছনার শখ সে পূরন করবেই।

পরেরদিন হঠাৎ করেই মতি বললো জোছনাকে নিয়ে কবিরাজের কাছে যেতে হবে। পরি বানু চমকালো জোছনার শরীর আবার খারাপ করেনি তো?
সে দুশ্চিন্তায় পরে যায় জোছনাকে ডাকতে লাগলো করুন গলায় নাথ বউ ও নাথ বউ কি হইছে তোর? ব্যাথা নাকি নাথবউ?
জোছনা অবাক হয় পরিবানুর কান্ড দেখে সে বুঝতে পারে না তাকে নিয়ে এতো দুশ্চিন্তা কেনো করছে অবলীলায় উত্তর দিল জোছনা তার কোনো ব্যথা নেই সে ভালো আছে।কেবলমাত্র বমি হয় আর তেমন কোনো সমস্যা নেই।
মতি থতমত খেয়ে যায় কড়া চোখে তাকিয়ে আছে পরি বানু, মতি কোনোমতে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দেয় জোছনার বমির জন্যই তাকে কবিরাজের কাছে নিয়ে যাবে।
– আমরা কি পোয়াতি হই নাই, এত আহ্লাদ ভালো না বুঝলি এমন সময় বমি একটু আধটু হইবই তা নিয়া এতো মাথা ঘামাইতে হয় না।

জোছনা মাথা নিচু করে রাখে তার মনে মনে কষ্ট হয় পরি বানুর রাগান্বিত ভাব দেখে।তার নাতি না হয় একটু কবিরাজই দেখাতে চেয়েছে তাই বলে এমন কর্কশভাবে বলবে।
মতি চোখ দিয়ে ইশারায় জোছনাকে শান্ত হতে বলে।
মতি অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু কোনোভাবেই সে সফল হতে পারেনি মনে মনে আরও অনেক ফন্দি আঁটে সে কিন্তু পরি বানু প্রত্যেকবারই বাঁধা দেয়।

প্রায় এক মাস কেটে যাওয়ার পরে একদিন খবর আসে পরি বানুর ভাই শয্যাশায়ী কবে ম*রে যায় তার কোনো ঠিক নেই।শেষ সময়ে তার বোনকে দেখার ইচ্ছে পোষণ করেছে সে পরি বানুর বুকের ভেতর টা মোচড় দিয়ে ওঠে সে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করেই বেরিয়ে পরলো সে মতিকে বললো জোছনার খেয়াল রাখতে।কালকের মধ্যেই ফিরে আসার চেষ্টা করবে সে।

মতি একদিক থেকে দুঃখ পেলেও অন্যদিকে সে খুশি হয় পরি বানু বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে আজ আর বাঁধা দেওয়ার কেউ নেই অতি সহজেই জোছনাকে রাজবাড়ী নিয়ে যাওয়া যাবে। মতি জোছনাকে বলে আর কোনো কাজ করতে হবে না এখন চল তোমাকে নিয়ে একটা জায়গায় যাবো।জোছনা বিস্ময় চোখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মুখ থেকে মৃদুস্বরে বেরিয়ে আসে এই পরন্ত বিকালে?কই নিয়া যাইবেন আমারে?

– আরে কথা বাড়ায়ও না তো চলো।

– আচ্ছা দাঁড়ান। আমি তৈরি হইয়া আসি।

কিছুক্ষণ পর জোছনা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো পড়নে লাল টুকটুকে শাড়ি হাতেও লাল রঙের কাচের চুরি পড়েছে। বড্ড সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে মতি হা হয়ে তাকিয়ে আছে, জোছনা লজ্জায় মিইয়ে যায় মতি জোছনার থুতনিতে হাত দিয়ে উঁচু করে বললো বউ তোমারে আমি যত দেখি ততই মুগ্ধ হই।
জোছনা আরো বড় করে ঘোমটা টানে মতির থেকে নিজেকে আড়াল করে লজ্জায় লাল হয়ে যায় সে।
মতি বলে আর দেরি করা ঠিক হবে না একটু পরেই সন্ধ্যা নেমে আসবে। দুজনে পা চালাতে লাগলো রাজবাড়ীর সামনে আসতেই জোছনা আৎকে ওঠে মনে পরে পরি বানুর কথা সে জানতে পারলে রক্ষা নেই তার।
জোছনা আতঙ্কিত হয়ে ভেজা ঢোক গিলে বললো চলেন বাড়ি ফিরা যাই।
মতি চোখ বড় বড় করে তাকায় বলে আরে কি হইছে ভয় পাইতাছো কেন বুড়ি তো বাড়ি নাই।
আইজ তোমার শখ পূরণের দিন তোমার তো কতদিনের আশা ছিলো রাজবাড়ী দেখনের। পালকির ফাঁকা দিয়া একটু খানি ঝলক দেখছো আইজ পুরা রাজবাড়ী ঘুরায় দেখামু। বউ পদ্মপুকুরে এখন পদ্মও ফুটছে তয় তুমি সামনে যাইয়ো না মাইনসে কয় পদ্মপুকুর অভিশপ্ত।

-কেন, অভিশপ্ত কেন কয়?

– জনাব সুলায়মান এর চাচার লাশ ভেসে উঠেছিলো আবার শহর থেকে আসা এক যুবকের লাশও ভাইসা উঠছিলো কিন্তু আমার এগুলা বিশ্বাস হয় না।তুমি আবার ভয় পাইয়ো না চলো ভেতরে চলো।

এবার যেন জোছনার মনে ভয়ের সৃষ্টি হতে থাকে গুটি গুটি পায়ে ভেতরে প্রবেশ করলো তারা তবে জোছনার ভয় এক মুহূর্তেই উধাও হয়ে যায় রাজবাড়ীর সৌন্দর্য দেখে। জোছনা মৃদুস্বরে বলে ইস! আমগো যদি এমন একখান রাজ প্রাসাদ থাকতো কতই না ভালো হইতো তাই না?
মতি হাসলো বললো বউ আমরা হইলাম গরীব এমন রাজ প্রাসাদে আমগো মানায় না দূর থেকেই শোভা পায়।
জোছনা বিস্ময় চোখে চারদিকে চোখ বুলাতে লাগলো সে আজ মুগ্ধ এই সৌন্দর্যে রাজবাড়ী ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা নেমে এসেছে খেয়ালই করেনি ওরা। হুট করেই চোখ যায় পদ্মপুকুরের দিকে কি অপরূপ সৌন্দর্যে নিমজ্জিত হয়ে আছে চারদিক। জোছনার মাথা থেকে একমুহূর্তেই সমস্ত অভিশপ্তের কথা মুছে গেলো সে দৌড়ে পদ্মপুকুরের সামনে চলে এলো।
অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মতির ধাক্কায় তার হুশ ফিরে মতি বলে এইখানে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হইবো না বউ চলো অন্যদিকটা ঘুইরা দেখাই তোমারে।
জোছনা আমতা আমতা করলো কিন্তু মতির কথা ফেলতে পারলো না। তারা অন্যদিকে ঘুরছে।
হঠাৎ করেই জোছনা জিজ্ঞেস করল আচ্ছা আপনে কি আমারে অনেএএক ভালোবাসেন?
মতি কিছুটা লজ্জা পেলো সে মিইয়ে গলায় বললো বউ আমি তোমারে পাগলের মতো ভালোবাসি।
– আমি শুনছি জনাব সুলায়মানও নাকি তার বেগমকে অনেক ভালোবাসতো কিন্তু শেষ পরিনতি হইলো জীবন্ত সমাধি।এতো ভালোবাসার পরেও কেন জীবন্ত কবর দিলো?
– এইডা আমি কেন কেউই জানেনা।
কথা বলতে বলতে মতি আর জোছনা চলে গেলো জুলেখার জীবন্ত সমাধির কাছে দুজনের দৃষ্টি সমাধির ওপর আটকে গেলো।
কারো স্পর্শে আঁতকে ওঠে মতি মনে হয় যেন জীবন্ত সমাধি থেকে বেগম জুলেখা উঠে এসে তাকে ধরেছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে দৃষ্টি ওঠানামা করছে মতি আস্তে আস্তে ঘাড় ঘুরাতে লাগলো কিন্তু ভয়ে তাও পারছেনা।
হুট করেই পুরুষালী ভরাট কন্ঠে কে যেন বলে উঠল – এমন ভর সন্ধ্যার সময় এইহানে কি করস মতি?
মতি ও জোছনা দুজনেই চমকায় তবে মতি পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে কিছুটা স্বস্তি পায় ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে কেয়ার টেকার আব্দুলকে।
মতি হকচকিয়ে যায় আব্দুল আবারও বলে ওঠে এমন সময় রাজবাড়ী আইসোছ নতুন বউরে নিয়া যদি কোনো আপদ বিপদে পায়? তুই কি জানোস না চারদিকে কি হইতাছে কেন আইছোস পরি বানু জানে?
মতি ও জোছনা দুজনেই ভয় পেয়ে যায় মতি থতমত খেয়ে বলে আমরা এহনই চইলা যাইতাছি আপনে নানিরে কিছু কইয়েন না কিন্তু। তড়িঘড়ি করে আর কথা না বাড়িয়ে জোছনাকে নিয়ে রওনা দিলো মতি।
বাড়িতে এসেই জোছনা কান্না জুড়ে দিলো যদি সত্যি সত্যিই কোনো বিপদ আসে তবে!!
মতি আস্বস্ত করলো কিছুই হবে না।কিন্তু জোছনার মন মানছে না তাকে ভয় গ্রাস করে ফেলে।

রাতে ঘুমের ঘোরে হঠাৎ করেই মতি জোছনার গোঙানির শব্দ শুনতে পায় ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে জোছনা পেটে হাত দিয়ে চেপে রেখেছে মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না শুধু গোঙাচ্ছে।
মতির গলা শুকিয়ে যায় অনবরত জোছনাকে ধাক্কাতে থাকে কিন্তু কোনো লাভ হয় না বরং গোঙানির শব্দ আরও প্রখর হয়।
মতি দিশেহারা হয়ে পরে কি করবে বুঝতে পারে না চৌকির পাশেই পরিবানু হ্যারিকেন জালিয়ে রাখতে বলেছে জোছনা পোয়াতি হওয়ার পর হারিকেন এর আলোতে জোছনার গোঙানি বিভৎস রূপ নিয়েছে মতি আর সহ্য করতে পারেনা সে ভাবে যে করেই হোক ওর ঘুম ভাঙাতে হবে। চৌকির পাশেই রাখা ছিলো কলস, মাটির কলসির সমস্ত পানি ঢেলে দেয় জোছনার গায়ের ওপর ওমনি মুখ থেকে শব্দ বেরিয়ে আসে জোছনার- আআআআআআআআ

লাফ দিয়ে বসে পরে চৌকিটা একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে হুশ ফিরে জোছনার হয়তো সে দুঃস্বপ্ন দেখেছিলো কিন্তু কি দেখেছে তা সে বলতে পারে না।অনেক চেষ্টা করে কেবল এতটুকুই মনে করতে পেরেছে কেউ তার পেট থেকে সাত রাজার ধনকে ছিনিয়ে নিতে এসেছিলো কিন্তু অবাক করা কান্ড হলো মতি যখন এসব শুনে জোছনার পেট দেখতে যায় তখন দেখে একটা কালো ছাপ বসে গেছে পেটের ওপর কারো থাবার ইঙ্গিত দিচ্ছে। দুজনেই আৎকে ওঠে পরানে যেনো পানি নেই জোছনা চোখ বড় বড় করে তাকায় পেটে হাত দেয় দাগটা সত্যি সত্যিই আছে। স্বপ্নে দেখা জিনিস বাস্তবেও হয় নাকি দুজনের মনেই প্রশ্ন জাগে।
দুশ্চিন্তায় কোনোরকমে রাতটুকু পার করে দুজনে। সারাদিন কেবল ভেবেই চলেছে এই দাগ টা কি করে হলো জোছনা গা ডলে ডলে গোসল সারলো কিন্তু কোনো লাভ হয় না দাগটা থেকেই গেলো।

বিকেলে পরি বানু বাড়ি এসেছে তিনি যাওয়ার পর পরই নাকি তার ভাই শেষ নিশ্বাসটুকু ত্যাগ করেছে সবাই বলাবলি করছিলো পরি বানুকে দেখার জন্যই নাকি আত্মাটা ছটফট করছিলো।
তবে বাড়িতে এসে পরি বানু লক্ষ্য করে যেই প্রানবন্ত দুইজনকে রেখে গেছিলো তাদের মাঝে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। পরি বানু জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে, দুজনেই উত্তর দেয় কিছইু হয়নি। তবে পরি বানুর মনে সন্দেহ জাগে।

আজ রাতেও জোছনা আতরা কাতরা করছে ঘুমের ঘোরে মতি আজও লাফ দিয়ে উঠে পরে জোছনা কে জাগানোর চেষ্টা করে কিন্তু ও জাগে না তাই সে আগের দিনের আবারও কলসিতে থাকা পানি ঢেলে দিলো জোছনার গায়ে, জোছনা চিৎকার করে উঠলো পরি বানু দৌড়ে মতির ঘরে প্রবেশ করলো মতি হকচকিয়ে গেছে পরি বানুর চোখ এড়ায়নি জোছনার পেটের কালো ছাপ। বড় বড় চোখ করে তাকায় তিনি ধীরে ধীরে জোছনার পেটের দিকে হাত বাড়ায় জোছনার ভয় আরও দ্বিগুণ হয় সে কাঁপতে থাকে, চোখ মুখে ভয়ের ছাপ বিদ্যমান।
পরি বানু দোয়া পরে ফু দিয়ে দিলেন বললেন কাপড়টা পাল্টে নিতে।রাতে আর তিনি কোনো কথা বাড়াননি যা জিজ্ঞেস করার কাল সকালেই করবেন।

সকালের আলো চারদিকে ফুটতেই পরি বানু কোথায় যেন চলে গেলেন বেলা গড়াতেই তিনি বাড়ি ফিরলেন মতি ও জোছনা কে দাড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলেন তার অনুপস্থিতি তে ওরা কি বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলো কিনা?
দুজনেই চুপ করে আছে।ভয়ে কেউ স্বীকার করলো না কোথায় গিয়েছিলো।
পরি বানু রেগে গেলেন প্রচন্ড বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার হুমকি দিলেন মতি এবার ভয়ে স্বীকার করে নিলো সে জোছনা কে নিয়ে রাজবাড়ী গিয়েছিলো।
পরি বানুর ক্রোধ গিয়ে পরলো জোছনার ওপর জোছনা কে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল গালে।বেচারি আরও ভীত হয়ে যায় মতি উৎকন্ঠা থাকে পরি বানুকে শান্ত হতে বলে আর এও বলে সেই জোর করে জোছনাকে নিয়ে গিয়েছিলো।
পরি বানু দুশ্চিন্তায় পরে যায় চারদিকে কেবল পেটে বা*চ্চারা মারা যাচ্ছে এমন সময় এই কান্ড করে বসলো ওরা দুজন।কপাল চাপড়াতে থাকে পরিবানু আর বলতে লাগলো কেনো আমি বাড়ি থেকে বেরোলাম ভাই তো এমনিতেও মৃত্যুশয্যায় ছিলো, বিলাপ করে সারাদিন।
আজ সন্ধ্যা থেকে হঠাৎ করেই পেটে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করে জোছনা এক পর্যায়ে সহ্যের ক্ষমতা হারায় সে আর সহ্য করা যাচ্ছে না সে ব্যথায় চিৎকার করতে থাকে পরি বানু মতিকে দিয়ে কবিরাজকে খবর পাঠায়, কবিরাজ আসতে আসতে জোছনা জ্ঞান হারায়।
কবিরাজ মশাইকে বড্ড চিন্তিত দেখাচ্ছে সে জানায় বাচ্চার অবস্থা এখন সে বলতে পারছে না কিন্তু পেটের কালো ছাপটা দৃষ্টি কটু আমি আগেই বলেছিলাম এ গায়ে মহামারি লেগেছে এমন সময় কোথাও বেরোতে না।এখন সব আল্লাহর হাতে তবুও আমি কিছু বরি দিয়ে যাচ্ছি সেগুলো সময় মতো সেবন করালে আশা করছি সুস্থ হয়ে যাবে।

_________________

সিরাজ হেমন্তির বারণ শোনে সে ডকুমেন্টারি টা প্রকাশিত করে না কিন্তু প্রকাশক উঠে পরে লেগেছে বেগম জুলেখার কাহিনি প্রকাশ করার জন্য সে আরও টাকা বাড়িয়ে দিতে চায় এমনকি দিগন্ত ও অনেকবার বোঝায় সিরাজকে এই ডকুমেন্টারি পাবলিশ করলে তো কোনো ক্ষতি হবে না বরং আরাম আয়েশ করে জীবনটা কাটাতে পারবে।কিন্তু সিরাজ বলে এতে রূপার জীবনের ঝুঁকি আছে এখনই রাজবাড়ী যা মূল্যবান এই ডকুমেন্টারি পাবলিশ হওয়ার পর আরও কয়েকগুন মূল্যবান হয়ে উঠবে তখন অনেকেই চাইবে এই রাজবাড়ীর দখল নিতে এতে করে তারা রূপার ক্ষতি করতে একবারও ভাববে না।

সিরাজ নিজের সিদ্ধান্তে স্তম্ভিত হয়ে গেছে হেমন্তিকে সে যে কোনো কিছুর মূল্যেই নিজের করে পাবে।

হেমন্তি সিরাজের সিদ্ধান্ত বদলে খুশি হয় সে ভুল মানুষকে ভালোবাসেনি হেমন্তি সিরাজকে কথা দেয় সে তারই হবে যতদিন অপেক্ষা করতে হয় সে করবে।এমনকি সে তার পাশেই থাকবে, প্রতিজ্ঞা করিয়ে সিরাজ যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সে আবারও চেষ্টা করতে থাকে একটা ভালো চাকুরির।

তিন মাসের মাথায় সিরাজের একটা চাকরি জোগাড় হয় বেশ ভালো বেতনের চাকরি সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পরে হেমন্তিকে পাওয়ার আনন্দে বিভোর হয়ে যায়।হেমন্তির বাবা মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে এ মাসের বেতন পেলেই মাথা উঁচু করে হেমন্তির বাবা মায়ের সামনে দাঁড়াবে।

হুট করেই একদিন প্রকাশক আবারও সিরাজের কাছে এলো সে ডকুমেন্টারি প্রকাশিত করার হুমকি দিলো যদি সে এটা প্রকাশ না করে তবে বিপদের মুখোমুখি হতে হবে বলে জানায়।সিরাজ রেগে যায় তার লেখা সে ইচ্ছে হলে ছাপাবে নয়তো ছাপাবে না এতে কারও হস্তক্ষেপ মোটেও দৃষ্টিনন্দন নয়। এর পরে যদি আর কোনোদিন এ নিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয় বা হুমকি দেওয়া হয় তবে থানায় জানানো হবে বলে জানায় সিরাজ।
লোকটি রাগান্বিত হয়ে চলে যায় তবে যাবার সময় বলে আমি তো পড়েছিলাম ডকুমেন্টারি এবার সেটা আমার নামেই চালিয়ে দিবো আমি তখন ভালো লাগবে তো?

সিরাজ তাছিল্যের হাসি হেসে বললো কখনোই পারবেন না এর জন্য প্রয়োজন আপনার উপস্থিতি ও প্রমাণ যেখানে আপনি সুলায়মান ও জুলেখার জীবদ্দশায় কোনোদিন সেখানে যানই নি তখন কি করে আপনি এর লেখক হবেন শুনি এটা তখন কেবল কাল্পনিক গল্প বলে বিবেচিত হবে মি.।

আজ রাতে সিরাজ তার বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে এতটা ব্যথা যা একজন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয় তবুও সহ্য করতে হচ্ছে তাকে।যেন মনে হচ্ছে তার বুক চিরে কেউ ক*লিজা বের করে নিচ্ছে একটা চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠে নিজেকে আবিষ্কার করলো বিছানায় সে এতক্ষণ ঘুমাচ্ছিলো। ঘুমের ঘোরে সে এতটা কষ্ট অনুভব করেছে বিশ্বাস করতে নিজেরই কষ্ট হয় কিন্তু হঠাৎ করেই তার মনে পরে রাজবাড়ীতে কাটানো শেষ রাতের কথ ওইদিন বেগম জুলেখা বলেছিলো আগামী ছয় মাস পরে বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হবে কিন্তু সেই রাতের দেখা ঘটনাগুলো কি আদও বাস্তব নাকি মনের ভুল। যদি সত্যি সত্যিই সে রাতের ঘটনাটি সত্যি হতো তবে তো এই ব্যথা শুরু হওয়ার কথা ছয় মাস পর থেকে এখনও আরও তিন মাস বাকি আছে। সিরাজ দুচিন্তায় পরে যায় আর এসব তার সাথে কি হচ্ছে কিছুতেই উত্তর মেলাতে পারে না সে। আবার ভাবে যে হয়তো এসব নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারনে এমন উদ্ভট স্বপ্ন সে দেখেছে কিন্তু কিছুতেই ব্যাথা অনুভবের কারণ বোধগম্য হয় না। সিরাজ তার দৃষ্টি বুকের দিকে তাক করে দেখে সেখানে কোনো ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে কি না?

চলবে……….

#লেখা: মুন্নি ইসলাম

[ প্রথমেই আমি দুঃখিত সকলকে এত অপেক্ষা করানোর জন্য, ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি নিজেও জানি এত দেরি করে পর্ব দিলে পড়ার আগ্রহ থাকেনা তবে আমার ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার জন্য এইটুকু অপেক্ষা করতে হবে আপনাদের।প্রথমে ভেবেছিলাম এক সপ্তাহ পর পর পর্ব দিবো কিন্তু এখন ভাবছি একবারে পরীক্ষার পরেই দেওয়া শুরু করবো নিয়মিত। ততদিন সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ। সাথে থাকার অনুরোধ রইলো এবং সকলেই দোয়া করবেন যাতে ভালোভাবে এক্সাম দিয়ে আপনাদের মাঝে ফিরে আসতে পারি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here