মৃগতৃষ্ণিকা #পর্বঃ১৬

0
169

#মৃগতৃষ্ণিকা
#পর্বঃ১৬

মতি হকচকিয়ে গেলো বললো সেটাই তো তারে জিজ্ঞেস করতাছি ম্যাডাম। জোছনার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মতি বলল – তোমারে না বাপের বাড়ি পাঠাইলাম তা তু তুমি এই বাড়িতে চইলা আইলা যে?

জোছনা মৃদুস্বরে বলল- হ। ঐ বাড়িতে আমার দম বন্ধ হইয়া আসে তাই চইলা আইলাম।

হেমন্তি ভাবতে থাকে পরিবানুর কথা জোছনার গলার স্বর শুনতেই ভয়ে কুঁকড়ে গেছে তবে কি জোছানার শরীরে বেগম জুলেখার বাস আর সে জোছনার শরীর দখল করেই একের পর এক বাচ্চার কলিজা ভক্ষণ করে চলেছে আর আর গ্রামে যে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভেই মা-রা যাচ্ছে বাচ্চারা তাও কি ঘটাচ্ছেন বেগম জুলেখা!! না না আর ভাবতে পারছি না আমি।
কিন্তু এটা কি সত্যি নাকি আমার মনের ভুল?
নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে হেমন্তি।

জোছনার সাথে একান্তে কথা বলার আর্জি জানায় হেমন্তি মতি চাইছিলো না একা কথা বলতে দিতে তবে সে আইনের লোক দাবি করায় বাধ্য হলো কথা বলতে দিতে।

পরিবানু এখনও চৌকির তলায় লুকিয়ে আছে হেমন্তি মতিকে ইশারা করে পরিবানুকে শান্ত করতে এদিকে জোছনাকে নিয়ে সে তাদের ঘরে প্রবেশ করলে একটা ফুলের সুবাস পায় যেটা সে এর আগেও পেয়েছে। এই সুবাস রাজবাড়ী তেও ছড়ায়। কোনো এক ভ্রমে আছে বলে হেমন্তির মনে হয়।

– মিসেস জোছনা আপনি তো গর্ভবতী তাই না?

– জ্বি। কেন?

– দেখে মনে হলো তাই।আচ্ছা বলুন তো পরিবানুর সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন?

– কেমন আবার কি, ভালোই।

– তবে যে উনি আপনাকে দেখে ভয় কুঁকড়ে যায় সেটা কেনো?

এবার জোছনা কে চিন্তিত দেখায় সে বলে – উনি আমারে শাসন করতো খুব কিন্তু কি যানি কি হইলো এখন আমারেই ভয় পায়। আবার তেড়েমেরে মারতেও আসে মনে হয় কি যানি করছি আমি ওনারে।

বিশ্বাস করেন আমি কিচ্ছু করিনাই।কিচ্ছু না।[হেমন্তির হাতজোড়া মুষ্টিবদ্ধ করে বলল]

হেমন্তি জোছনার কাঁধে ভরসার হাত রেখে বলল- আমায় বলতে পারো সবটা দেখবে হালকা লাগবে। আমায় একবার বিশ্বাস করে দেখো কথা দিচ্ছি তুমি আর তোমার পরিবার, কারো কোনো ক্ষতি হতে দিবো না এমনকি তোমার অনাগত সন্তানেরও না।
জোছনা হেমন্তির কথা শুনে তাৎক্ষণিক তার পেটে হাত দিলো চোখমুখে একটা ভয়ের ছাপ দেখা দিচ্ছে। তবে জোছনা তেমন কিছুই বললো না শুধু বলল আমার সন্তান। আমার জীবন দিয়ে হইলেও আমি রক্ষা করমু।

-আমি শুনেছি আপনাকে ফকির দেখানো হয়েছে। মঙ্গলবার আপনাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। তাইনা?

জোছনা বিস্মিত হয় জিজ্ঞেস করে – আপনি জানলেন কি করে?
– আমি কিভাবে জেনেছি সেটা বড় কথা নয় আপনি বলুন সেদিন কি হয়েছিলো।
জোছনা চুপ করে আছে হেমন্তি রাগান্বিত ভাব নিয়ে আবার জিজ্ঞেস করে বলুন সেদিন কি হয়েছিলো। আরেকটু হলেই পরিবানু আমায় সবটা বলে দিতো আপনার কন্ঠস্বর শুনে সে ভয়ে লুকিয়ে আছে। বলুন বলছি।
– আ আমি গেছিলাম কিন্তু কি করছে আমার সাথে তা মনে করতে পারিনা।আমারে তার খুপরিতে নিয়া তিনকোনা একটা আকৃতির ওপর বসাইয়া কি যানি মন্ত্র পড়লো ব্যাস আমি আর কিছু মনে করবার পারতাছি না এরপর আমি নিজেরে পাইলাম এই আমগো ঘরে মাঝখানে কি হইছে কিছুই জানি না।

হেমন্তি বুঝলো জোছনার থেকে এরচেয়ে বেশি কথা নেওয়া যাবে না হিতে বিপরীত হতে পারে। হয়তো আরো সজাগ থাকবে।

হেমন্তি এবার বাইরে বেরিয়ে এলো তার চোখ মুখে তেমন কোনো ছাপ স্পষ্ট নয় সে কি ভাবছে তা কারোও বোধগম্য হয়না। হেমন্তি এবার মতির সাথে একা কথা বলতে চায় মতিও সম্মতি জানায় দুজনেই বাড়ির উঠোন এ বসেছে।
– মিস্টার মতি আমি জানতে চাইছি আপনার কাছে যে আপনি কেনো মিসেস জোছনাকে ফকির বাবার কাছে যেতে দিতে রাজি হলেন।আই মিন কেনো সেই মঙ্গলবার আপনি পরিবানুকে বললেন জোছনাকে নিয়ে যেতে?
কি এমন পরিবর্তন দেখেছিলেন তার কাছে যাতে আপনার মনে হলো তার মধ্যে অন্যকারো বাস?

-কি কি কইতাছেন কি আপনে?

– দেখুন আমার কাছে লুকিয়ে কোনো লাভ নেই। সবটা আমি জানি আপনাকে তো পরপুরুষ বলে সম্বোধন করতো আপনার স্ত্রী, তাইনা? তাই বলছি বলুন কি দেখেছিলেন?

– বিশ্বাস করেন তেমন কিছু না এইসব তো কুসংস্কার। মাইনসে কয় ভুতে ধরছে আসলে কি ভুত বলতে কিছু আছে?আপনেরা তো শিক্ষিত মানুষ ভালো কইরাই জানেন মূর্খ মাইনসের কথা এগুলা।

– আমাকে আপনি মূর্খ বানানোর চেষ্টা করছেন মিস্টার। এত ভনিতা না করে সত্যিটা বলুন। বলুন। নয়তো আমি আপনার নামে এবং আপনার পরিবারের নামে মামলা ঠুকতে বাধ্য হবো।এই গ্রামের বাচ্চা চুরি হওয়ার পেছনে আপনাদের হাত আছে বলে আমার মনে হচ্ছে।

মতি যেন আকাশ থেকে পড়লো ভ্রুজোড়া কুচকে বলল – এইসব কি কইতাছেন। আব্দুল চাচা কিছু কন ওনারে আমরা কেমন মানুষ তা তো আপনে ভালা কইরাই জানেন। আর দেখেন আপা আপনে এইসব কথা কইয়া আমগো ঝামেলা বারাইয়েন না।
আব্দুল জোর গলায় বলল তবে বল কি হইছিলো সেই মঙ্গলবার। উনি যা জানতে চান তা তারে খুইলা বল।
মতি এবার বললো – হ। বউ আমারে পরপুরুষ কইতো আর কেমন যানি আচরণ করতো মনে হইতো আমারে সে চিনে না আর তাই আমি বুড়ির সাথে ফকির বাবার কাছে যাইতে দিছি।আ আর সেইদিনের প পর থেকা তো আর কোনো অস্বাভাবিক আচরণ দেখিনাই জোছনার মধ্যে। ওর কুনজর লাগছিলো, ঝাড়-ফুক কইরা দিছে ব্যাস সাইরা গেছে।এখন একদম ঠিক আছে জোছনা কিন্তু এখন সমস্যা দেখা দিছে বুড়ির মধ্যে। বুড়ি উল্টাপাল্টা আচরণ করতাছে তারজন্যই যত চিন্তা।

হেমন্তি বলল আচ্ছা তাহলে সেই ফকির বাবার কাছে পরিবানুকে নিয়ে যান তাহলেই তো সে আপনার বউকে যেভাবে সারিয়ে তুলেছে ঠিক সেভাবেই আপনার নানিকেও সারিয়ে তুলবে।

এবার মতির যেনো হাসফাস লাগছে সে কি বলবে বুঝতে পারছেনা। ঘাবড়ানো চেহারা নিয়ে বলল – আ আ আমি তো সেই ফকির বাবারে চিনি না। তার কাছে তো বুড়িই যাইতো।

– তবে ডাকুন আপনার স্ত্রী কে সে এসে আমাদের নিয়ে যাক ফকির বাবার কাছে আর পরিবানুও সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক।

মতি মাথা নিচু করে আছে হেমন্তির কথামতো জোছনাকে ডাকতে শুরু করে অমনি শোনা যায় গোঙানির শব্দ ভেতর থেকে আওয়াজে আসছে দৌড়ে ঘরের ভেতর প্রবেশ করলো মতি পেছন পেছন আব্দুল চাচা আর হেমন্তিও।
জোছনা বিছানায় পড়ে আছে এলোমেলো ভাবে মুখ দিয়ে ফেনা তুলেছে অবস্থা বেশ শোচনীয় মনে হচ্ছে। মতি বউ ও বউ বলে ডাকতে লাগল কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না নিশ্চুপ হয়ে গেছে জোছনা।মতি আর দেরি না করে ছুট লাগালো কবিরাজ মশাইকে আনতে।
যাওয়ার আগে হেমন্তিকে অনুনয় করে বলল- আপা আমার বউটারে একটু দেখেন আমি এক্ষুনি কবিরাজ আনতে যাইতেছি।
হেমন্তি আশ্বাস দেয় নিশ্চিন্তে যেতে বলে। মতি গেলে হেমন্তি আব্দুলের সাহায্যে জোছনার মাথায় পানি ঢালা শুরু করে আস্তে আস্তে জোছনার চোখ খুলতে শুরু করে। হাত পা সরিষার তেল দিয়ে ডলতে শুরু করে হেমন্তি, মাথার তালুতে কিছুটা তেল দিয়ে দেয় সে।এরপর তার মাথায় বুলিয়ে দিতে থাকে অনেকটা সময় পর কিছুটা স্বাভাবিক হয় জোছনা।

মতির আসতে আসতে বেশ অনেকখানি সময় কেটে যায় কবিরাজ মশাই বাড়ি ছিলেন না অন্যত্র চিকিৎসা দিতে গিয়েছিলেন। ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে যায় তবুও মতি হাল ছাড়েনা সে খোঁজ নিতে নিতে পৌঁছে যায় সেখানে আর বাড়িতে নিয়ে আসে কবিরাজকে। মতি বেশ চিন্তিত ছিলো আসহায়ের মতো চাহুনি তার তবে বেশ অস্থির হয়ে পড়েছে তার আচরণ বদলে গেছে বাড়িতে এসেই হন্তদন্ত হয়ে বউ বউ বলে ডাকতে থাকে যেন তার দুনিয়া একদিকে আর তার বউ আরেক দিকে।পাগলপ্রায় হয়ে আছে সে, কবিরাজ মশাই ভেতরে ঢুকলেন জোছনাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন কিছু বড়িও দিলেন সাথে আর নাড়ি চেপে ধরে বললেন এখন মোটামুটি সবটা নিয়ন্ত্রণে তবে সাবধানে থাকতে হবে নয়তো বা বিপদ হতে পারে। মাথার চুল ভেজা দেখে কবিরাজ বুঝলেন কেউ মাথায় পানি ঢেলেছে এতে তিনি বেশ সন্তুষ্ট হলেন এবং বললেন সঠিক সময়ে সঠিক পথ্য পেয়েছে মেয়েটা নয়তো কি যানি কি হয়ে যেতো। এমন প্রাথমিক চিকিৎসা সকলের জানা উচিৎ।
হেমন্তি বলল আমি আমার মায়ের থেকে শিখেছি কবিরাজ মশাই।
কবিরাজ মশাই হেমন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমার ভালো করবে। এভাবেই মানুষকে সাহায্য করো কেমন।
হেমন্তিও মাথা নাড়াল।

জোছনার টিপটিপানি চাহুনি দেখে মতি তার মাথার কাছে বসে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। তার চোখে কোনে পানি জমে আছে টলমল করছে দুচোখ সে কোনো কথা বলছে না তবুও তার দৃষ্টি কথা বলছে যেন বলছে আমি আছি তো তুমি কোনো চিন্তা করো না ভয় পেয়ো না। এ যেন আশ্বাসের দৃষ্টি ভরসার দৃষ্টি হেমন্তি মুগ্ধ হয়ে দেখছে ভালোবাসা আসলেই স্নিগ্ধ পবিত্র।

মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে একপর্যায়ে জোছনার ঘুম চলে আসে সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।

ধরনীতে রাতও নেমে গেছে আর সময় ব্যয় করা উচিৎ হবে না মনে হচ্ছে আব্দুল এর তাই হেমন্তি কে ইশারা করে রওনা হওয়ার জন্য। হেমন্তিও মতির কাছ থেকে বিদায় নিলো আর বললো জোছনা ও পরি বানু দুজনের দিকেই খেয়াল রাখতে। মতি বললো- আপা আপনের সাথে আমি কেমন খারাপ ব্যবহার করলাম আর আপনে কতো ভালো মানুষ চেনা নাই জানা নাই কত বড় উপকার করলেন।আমার বউডারে বাঁচাইলেন।আমি চির ঋণী হইয়া রইলাম আপনের কাছে।
আরে আরে এত ঋণ টিন আমি বুঝি না আমি বুঝি মানুষ! আমরা মানুষ একে অপরকে ভালোবাসবো এটাই তো স্বাভাবিক। তাইনা? তবে একটা কথা মিস্টার মতি আমি কিন্তু বেশ মুগ্ধ হয়েছি আপনার ভালোবাসা দেখে এমন খাঁটি ভালোবাসা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

মতিও সুরে সুরে বলল- হ আপা আমি আমার বউরে মেলা ভালোবাসি। যারে আমরা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি তারেই হারাইতে হয় আর আমি চাইনা আমার বউরে হারাইতে সব হারাইয়া আমি আবার সব পাইতে যাইতাছি।আমার সব হইবো আপা কেমনে পারি হারাইতে দিতে!!
ভালোবাসার মানুষরে হারাইতে দিয়েন না যে কোনো মূল্যে রাইখা দেন নয়তো আফসোস করতে হইবো তখন আর কিছু করার থাকবো না।

হেমন্তি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল আমি হারিয়েছে চাইলেই তাকে আমার সাথে বাঁধতে পারতাম তবে রাখিনি।
❝ হারিয়েছি তাকে, যাকে ভালোবেসেছিলাম অনন্ত কালের বিবর্তনে।❞

হেমন্তির কথা মতির মাথায় ঢোকে না তবে সে কোনো প্রশ্নও করেনা হয়তো বুঝেছিলো- সকলেই হারায় কেউ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, কেউবা খেয়ালে -বেখেয়ালে।

যাওয়ার সময় হেমন্তি পরিবানুর ঘরে গেলো এখনো বেচারি চৌকির তলায় তবে সে ঘুমে বিভোর হয়ে আছে চৌকির পায়ার সাথে হেলান দিয়ে বিভোর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে বাড়িতে এত হট্টগোল তার কান পর্যন্ত পৌছাইনি। তাকে আর না ডেকেই হেমন্তি বিদায় নিলো রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে।

আব্দুল হাঁটতে হাঁটতে বলল – যা শুনবা যা দেখবা সবকিছু বিশ্বাস করবা না। সব দেখাশুনা সত্যি হয় না আবার অদেখা জিনিসও মিথ্যা না।
আব্দুল এর কথাগুলো হেমন্তির মনে বেশ দাগ কাটলো সত্যিই তো সব দেখা তো সত্য নয় আবার সব অদেখাকে মিথ্যাও বলা যায় না। অনেকক্ষণ পার হওয়ার পর হেমন্তি উত্তর দিলো -আপনার কথায় যুক্তি আছে চাচা।আমি মাথায় রাখবো কথাগুলো।

আব্দুল ধীর স্বরে বললো – কথাগুলা শুইনা আমারে জ্ঞানী মানুষ ভাবার দরকার নাই এগুলো আমার কথা না আমার দাদার কথা সে নাকি আমার বাপেরে বলছে সেইকথা আবার আমার বাপে আমারে স্মরণ করায় দিছে।
– আরে চাচা গুরুজনের কথা মেনে চলাও জ্ঞানী মানুষের কাজ। আচ্ছা চাচা আমরা কি আদও ফকির বাবার সন্ধান পাবো? পরিবানুও ঠিক নেই এদিকে জোছনাও অসুস্থ, কি করে সন্ধান পাবো তার?

– সেটাই ভাববার বিষয় তবে কোনো চিন্তা কইরো না মা উদ্দেশ্য সৎ থাকলে দেখবা পথ সুগম হইবো।

কথা বলতে বলতেই দুজনে পৌঁছে গেলো রাজবাড়ী।বাড়ীতে হেমন্তি কে পৌঁছে দিয়ে আব্দুল আবার রওনা দিলো তার নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে তার গিন্নি রাতের খাবার বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে বলেছে সেটা আনতেই যাচ্ছে সে তবে তার মনে ভয় হয় এটা ভেবে আজ তাকে রাজবাড়ীতে রাত্রিযাপন করতে হবে তবুও নিজেকে সে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। সে রাতের খাওয়া সেরে নিয়ে হেমন্তির জন্য খাবার নিয়ে আবার রাজবাড়ী তে যাত্রা করলো পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেকটা সময় পার হয়ে যায়।

এতবড় ভুতের মতো বাড়িতে তোমার একলা থাকতে ডর করে না মাইয়া??

হেমন্তি তার কক্ষেই ছিলো কিছু একটা নিয়ে গভীর ভাবনার সাগরে ডুব দিয়েছিলো তন্মধ্যেই আব্দুল এর বলা বাক্যটা তার কানে বাজে। ভাবনা থেকে ছিটকে যায় সে তবে ভীত নড়েনি। – না না চাচা, কেন ভয় করবে?

– আমার কিন্তু মা খুব ভয় করে জীবনেও থাকতাম না এই বাড়িতে তয় তুমি আছো তাই থাকতাছি। আর আরেকটা কথা মা আমি কিন্তু কাঁথা মুড়ি দিয়ে এই যে ঘুমামু আর রাতে উঠমু না। তুমিও খাইয়া দাইয়া শুইয়া পরো মা।রাতে কোনো শব্দ পাইলে ওঠবার দরকার নাই বুঝলা।

হেমন্তি মাথা ঝাঁকালো। সে যেন অন্য কিছুতে মগ্ন আব্দুল এর কথাগুলো তার এক কান দিয়ে ঢুকছে অন্য কান দিয়ে বের হচ্ছে।

– নাও মা খাইয়া নাও তোমার চাচি খাবার পাঠাইছে। তার হাতের কচুর তরকারিটা বেশ স্বাদের। আঙুল চেটেপুটে খাইবা। হা হা হা
আচ্ছা মা আমগো গরীব গো খাওন কি তুমি খাইতে পারবা??

– কি যে বলেন না চাচা। চাচির এই উপকারের কথা আমি কখনোই ভুলবো না সে খাবার না পাঠালে হয়তো রান্না করতে হতো নয়তো না খেয়ে থাকতে হতো। মা অবশ্য আমাকে অনেক ধরনের শুকনো খাবার দিয়ে দিয়েছেন।

হেমন্তি রাতের খাবার সেরে নিয়ে বিছানায় হেলান দিলো এদিকে আব্দুল কাথা মুড়ি দিয়ে তার কক্ষে শুয়ে আছে এতক্ষণে হয়তো তার চোখে ঘুমও ধরে গিয়েছে কিন্তু হেমন্তির চোখে ঘুম নেই রাজ্যের যত চিন্তা সব তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ফকির বাবার কাছে গেলেই তার সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে কি করে পাবে সে ফকির বাবার সন্ধান?
এসব চিন্তা করতে করতেই রাতের অর্ধেকটা কেটে গেছে। মধ্যরাতে হঠাৎ বাইরে কুকুরের চিৎকার শোনা যাচ্ছে। খুব জোরে জোরে ডাকছে- ঘেউঘেউ ঘেউ ঘেউউউউ……
হেমন্তি ভয় পাওয়ার বদলে নিজেকে প্রশ্ন করে কুকুর গুলো কি তবে অশরীরীর কোনো উপস্থিতি অনুভব করেছে যে এমন করে ডাকছে।ছোটবেলায় যখন দাদু ভুতের গল্প বলতো তখন বলতো কুকুর বেড়াল নাকি এগুলোর উপস্থিতি অনুভব করতে পারে তখন তারা উত্তেজিত হয়ে পরে ডাকতে থাকে অনবরত।

আব্দুল চাচাকে একবার ডাকবো? না না উনি এমনিতেই ভয়ে আছেন তারওপর এখন মধ্যরাত থাক ওনাকে বিরক্ত না করি আমিই বরং বের হই দেখি তো আমার মন যা বলছে তা ঠিক কি না। রাজবাড়ী তে কি সত্যিই বেগম জুলেখার অস্তিত্ব ফিরে এসেছে কি না দেখি তো।
হেমন্তি টিপে টিপে পা ফেলে অন্দরমহলের দিকে যেতে লাগলো কারো একটা উপস্থিতি সে অনুভব করছে যেনো মনে হচ্ছে কেউ তার পিছু নিয়েছে কিন্তু সে পেছনে ফিরতেই দেখে নাহ্ কেউ নেই এই মধ্যরাতে রাজবাড়ী তে প্রবেশ করার মতো গ্রামে কারো সাহস নেই বললেই চলে। আবারও সে চলতে শুরু করে আজ একটা না একটা বিহিত করবেই। অন্দরমহলে পা রাখতেই সেই চিরচেনা সুবাস যে সুবাসে সুভাসিত হয়ে আছে পুরো অন্দরমহল।ঘ্রাণটা যেনো নাকে এসে লাগছে আজ সে ধরতে পেরেছে এটা কিসের সুবাস মস্তিষ্কে ধক করে লেগেছে ঘ্রাণটা। হাসনাহেনা ফুলের সুবাস তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো রাজবাড়ীতে শত শত ফুলের গাছ থাকলেও হাসনাহেনা ফুলের গাছ নেই।এই সুবাস নাকি জনাব সুলায়মান এর পছন্দের ছিলো না তাই এই গাছও নেই রাজবাড়ী তে। তবে এত রাতে কোথা থেকে আসছে এই সুবাস। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলেও এটা সত্যি যে পরিবানুদের বাড়িতে হাসনাহেনা গাছ রয়েছে আর সেদিন সে এই ফুলেরই সুবাস পেয়েছিলো।সেদিন মনে করতে না পারলেও আজ যেন সবটা চোখে ভাসছে জোছনার ঘরের পাশেই হাসনাহেনা গাছটা অনেক মাকড়সার জালে জড়িয়ে আছে গাছটা। জোছনাকে নিয়ে ব্যস্ত হওয়ায় আর সেদিকে খেয়াল দিতে পারেনি তখন……

চলবে……

#লেখা:মুন্নি ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here