#মৃগতৃষ্ণিকা – ০৫
সিরাজ ভেতর ভেতর ভয় পাচ্ছে ভীষণ কিন্তু সে তোয়াক্কা করছে না যে করেই হোক পাতালঘরটা তাকে পর্যবেক্ষণ করতেই হবে।পাতালঘর জুড়ে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে, মৃদু পায় সে পাতালঘরের এদিক ওদিক যেতে থাকে দিনের আলোতে দেখতে পেলে হয়তো কাজে দিতো রাতের অন্ধকারে তেমন ভালে করে সবটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। তবুও সিরাজ অন্দরমহলের মশালের মৃদু আলোয় কিছুটা রপ্ত করে নেয়। এই বর্ণনা দিয়েই সে সাজিয়ে লিখতে পারবে, এবার সিরাজ ভাবে যে সে চলে যাবে।
এক দৌড়ে সিঁড়ির কাছে চলে যায় হন্তদন্ত হয়ে পাতালঘরের দরজায় এসে পৌছালো কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পাতাল পথ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। সিরাজ চিৎকার করতে থাকে তার চিৎকার কেবল এই পাতালঘরই শুনছে বাইরে চিৎকারের আওয়াজ পৌঁছালেও কেউ শুনবে না কারণ এই রাজবাড়ীর আশেপাশে কেউ নেই এসময়।থাকলেও তারা সাহস করবে না ভেতরে আসার।
সিরাজ নিজেই নিজের কপাল চাপড়াতে লাগলো সে কি করে এই ফাঁদে পা দিলো ভাবতে থাকে। অন্ধকারে সে ভালোভাবে কিছু দেখতে পারছে না এতক্ষণ তাও কিছুটা আলো ভেতরে প্রবেশ করেছিলো এখন তাও নেই। সিরাজ ভাবতে থাকে সে হয়তো ফেঁসে গেছে কোনো অতৃপ্ত আত্মার পাতা ফাঁদে। ভয়ে এবার হাত পা কাঁপতে থাকে থরথর করে, খিচ মেরে সে দাড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ, তার মনে হতে থাকে এই বুঝি বেগম জুলেখা তার সামনে এসে হাজির হতে চললো, প্রচন্ড ভয় জন্মায় তার মনে।
অন্ধকারের মধ্যেই এক টুকরো আলোর ঝলকানি দেখতে পায় সিরাজ নাক মুখ কুঁচকে তাকায় সেদিকে দেখতে দেখতে তার চোখ ছানাবড়া হঠাৎ করেই কালো বোরকা পরিহিতা মহিলা এগিয়ে আসতে শুরু করলো আর সিরাজ পেছোতে থাকলো ভয়ে তার হৃদপিণ্ড পর্যন্ত কেঁপে উঠলো তার মুখ থেকে কেবল বেরিয়ে এলো
– কে! কে! কে আপনি?
নিকাবটা সরাতেই সিরাজ থমকে যায় এ কাকে দেখছে সে এতো বেগম জুলেখা। তবে কি সত্যি সত্যিই সে ফিরে এসেছে। জীবন্ত সমাধি দিয়েও তাকে দমানো যায়নি বরং আরও শক্তিশালী রূপে সে ফিরে এসেছে।
বেগম জুলেখা এবার বিকট শব্দে হাসতে থাকে সিরাজের কান ফেটে যাওয়ার উপক্রম প্রায় সিরাজ এবার তার দুহাত দ্বারা কান চেপে ধরে রাখে আর বলে – হাসি থামান।।।।
জুলেখার হাসির মাত্রা আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। সিরাজ লক্ষ্য করে আস্তে আস্তে সবচেয়ে সুন্দরী নারীর চেহারা ভয়ানক ও নিকৃষ্ট রূপ নিচ্ছে।তার মুখে র*ক্ত লেগে আছে হাতে আছে একটা সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া বাচ্চার ক*লিজা। জুলেখা তৃপ্তি নিয়ে সেই ক্ষুদ্র ক*লিজা খানা খে*য়ে যাচ্ছে সিরাজ এ দৃশ্য সহ্য করতে পারছেনা চিৎকার করে যাচ্ছে অনবরত। নিজের চিৎকারের আওয়াজেই যেন তার কান ফেটে যাওয়ার উপক্রম প্রায়।
সিরাজ জুলেখা কে উদ্দেশ্য করে বলছে- বেগম জুলেখা বন্ধ করুন এই নৃশংসতার তান্ডব। আমায় কেন এখানে এনেছেন?
জুলেখা আরও জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে আর বলে – রূপার ওই নাদুস নুদুস কলিজা না খা ও য়া অব্দি যে আমার এ তান্ডবলীলা থামবে না সিরাজ। আর তুমি কি চাও আমি তোমাকে তাই দেবো শুধু একটিবার রূপাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। তারপর আমি তোমাকে দেবো এই পৃথিবীর সবচেয়ে দামী উপহার। হেমন্তিকে পেতে চাও না?
সিরাজের ক্ষুদ্র দুচোখ যেন বৃহত্তর বৃত্তাকার ধারণ করেছে সে মাথা নাড়িয়ে বললো আমি হেমন্তি কে পেতে চাই কিন্তু রূপাকে আপনার হাতে তুলে দেওয়া যে সম্ভব নয় বেগম জুলেখা।
– রূপাকে পেলেই আমি তোমাকে সব দেবো।নাম যশ খ্যাতি সব পাবে তুমি সিরাজ, কি পেতে চাও না?
সিরাজ একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে আমি রূপাকে দিতে পারবো না এতে যা হবার হোক।
জুলেখা এবার তার হাতে থাকা ক লি জা পুরোটা এক কামড়ে শেষ করে এগোতে থাকে সিরাজের দিকে।হাত বাড়ায় সিরাজের বুকের বরাবর যেন হাত দিয়ে টেনে বের করে নিবে সিরাজের কলিজা খানা। জুলেখার চাহনি দেখে সিরাজ ভয় পেতে থাকে সে আচমকাই চিৎকার করে ওঠে কিন্তু সে চিৎকার মুখের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকে মুখ থেকে বের হয় না।
সিরাজের বুক চিরে জুলেখা কলিজা টেনে বের করতে থাকে তার নখগুলো যেনো একেকটা অস্ত্রের চেয়েও ধারালো মনে হচ্ছে। সিরাজের বুকে বিঁধে আছে নখগুলো সিরাজ আর সহ্য করতে পারছেনা, সে কাতরাতে থাকে আর বলে – আ মা য় ছেড়ে দিন বেগম জুলেখা। আমায় যেতে দিইইন।
জুলেখা কেবল হাসতেই থাকে আর সিরাজ হাত জোর করে মাফ চাইতে থাকে।
সিরাজের সবুজ রঙের ফতুয়া তে র*ক্তের লাল রঙ মিশ্রিত হয়ে কেমন যেন একটা কুৎসিত বর্ণ ধারন করেছে।
এক পর্যায়ে সিরাজের কলিজা টা ঠিক বের করে নিবে তখনই সিরাজ বলে উঠল – আমি রূপাকে এনে দিবো আপনার কাছে আপনি ছে ড়ে দিন আমায়। দয়া করুন।
জুলেখা থমকে যায় সিরাজের কথায় তার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে বলল – যাও তোমায় মুক্তি দিলাম কিন্তু মনে রেখো যদি তুমি তোমার কথার বরখেলাপ করো তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই কলিজায় পচন ধরবে। আমার হাতের ছোঁয়াই কেনল এই কলিজা কে রক্ষা করতে পারবে।এবার তুমি ভেবে নাও কোনোরকম চালাকি আমার সাথে করা যাবে না। তুমি রাজি???
সিরাজ মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো। অতঃপর একটা দমকা হাওয়া এসে সবকিছু এলোমেলো করে দিলো।সিরাজ জ্ঞান হারিয়ে পাতালঘরের মেঝেতে ধপ করে পড়ে রইলো বুকে হাত দিয়ে।
অন্ধকার কাটিয়ে সূর্যের তেজস্বী ছড়িয়ে পড়েছে ধরনীতে সিরাজের জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে আবিষ্কার করলো অন্দরমহলে। সে উঠে বসে এরপর মাথায় হাত দেয় কেমন যেন ভার ভার মনে হচ্ছে মাথাটা।
সিরাজ ভাবতে থাকে সে এখানে কেনো, আচমকাই তার মনে পরে গতকাল রাতের কথা।সে অন্দরমহলে এলো কি করে সে তো পাতালঘরে ছিলো পাতালঘরে তার সাথে হয়ে যাওয়া সমস্ত ঘটনা তার একে একে মনে পড়তে থাকে।সিরাজ তার দৃষ্টি ধীরে ধীরে নিচে নামাতে থাকে তার ফতুয়া তে ভয়ে ভয়ে হাত লাগায় আশ্চর্যের বিষয় হলো তার ফতুয়া তে কোনো ধরনের রক্তের দাগ নেই। এমনকি তার ফতুয়া টা অক্ষত সে তড়িঘড়ি করে ফতুয়া টা টেনে খুলে তার বুকে হাত বুলাতে থাকে দেখে সেখানে কোনো আঘাতের চিহ্ন ই নেই। সে এবার শুকনো ঢোক গিলে মেঝে থেকে দ্রুত উঠে পাতালঘরে যাবার রাস্তায় পা রাখে অনেক চেষ্টা করেও খুলতে পারে না সে। চাবি ছাড়া রাতে সে কি করে ঢুকলো? মনে প্রশ্ন জাগে তার।
সিরাজের পাতালঘরের বর্ণনা পুরোপুরি মনে আছে সে তার ডায়েরি তে সেগুলো লিপিবদ্ধ করতে থাকে।তাকে ভীষণ অস্থির দেখাচ্ছে আব্দুল এসে তাকে আবার জিজ্ঞেস করে রাতে কিছু হয়েছে কি না?
সিরাজ উত্তর দেয় – না তেমন কিছুই হয় নি।আমি একটু অসুস্থ বোধ করছি, আজকের মধ্যেই আমাকে চলে যেতে হবে অনেকটা সময় পার করে ফেলেছি এখানে।
আব্দুল আবারও জিজ্ঞেস করলো – বাবু আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো কিছু নিয়ে ভয়ে আছেন। আপনার লেখা শেষ?
– হুম আমার লেখা শেষ পর্যায়ে যতটুকু বাকি আছে সেটুকু আমি পথেই শেষ করতে পারবো।
সিরাজ দেয়ালো পিঠ ঠেকিয়ে রেখেছে তার মাথা দেয়ালে ঠুকছে আর ভাবছে কালকে রাতের ঘটনা টা কি সত্যি নাকি তার মনের ভ্রম। যদি সত্যি হয় তবে তার বুকে নখের কোনো আঁচড় এর দাগ নেই কেনো এক রাতের মধ্যেই কি করে সব ক্ষত সেরে গেলো।
আমার তার মনে হতে থাকে যদি স্বপ্নই হয়ে থাকে তবে যখন কলিজা টে নে বের করতে নিয়েছিলো তখন এত কষ্ট সে কি করে অনুভব করলো আর রূপাকে দেওয়ার কথা শুনে ছেড়েই বা দিলো কেনো?
উফ! আর ভাবতে পারছিনা।
সিরাজ তার মাথা ঝাড়া দিয়ে ব্যাগ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পরে আর এক মুহূর্তও এ রাজবাড়ী তে অবস্থান করা যাবে না।
সিরাজ আব্দুল কে বলে যায় সাবধানে থাকতে।
___________
মতির বউ কয়েকদিন যাবৎ কেবল বমি করছে কিছু খেতে পারছে না মেয়েটা। আজ মাথা ঘুরে পরেই গেলো মতি অস্থির হয়ে পড়েছে বউ বউ বলে পাগলপ্রায়।বউয়ের কয়েকদিন ধরে শরীর ভালো নেই তাই আজ কবিরাজের কাছে নিয়ে যাবে ভেবেছিলো কিন্তু মাথা ঘুরিয়ে পরে গেলো।
মতির বাবা মা কেউ নেই সে তার নানির কাছে মানুষ – মতির নানি তার কাপড়ের আচল দিয়ে মুখ ঢেকে মুচকি হাসতে লাগলো আর বললো – আরে মতি ওতো চিন্তা করতাছোস কেন তোর বউ তো পোয়াতি তাই এমন ঘন ঘন বমি করতাছে আর মাথা ঘুরায় পইরা গেছে। ওরে ঘরে নিয়া চল, চৌকিতে শোয়া।
মতি পাঁজা কোলে তুলে নিলো তার বউকে চৌকিতে খুব যত্ন করে শুইয়ে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো জোছনা চোখ খুলে দেখলো তার মাথার পাশে মতি। মতি জোছনাকে চোখ খুলতে দেখেই বলে উঠল – বউ ও বউ তোমার কি হইছে? নানি কইলো তুমি বলে পোয়াতি হইছো? এইডা আবার কি রোগ?
জোছনা এক লাফে উঠে পড়লো তার মাথায় বড় করে ঘোমটা টেনে বললো ছি! ছি! এগুলা আপনে কি কন? পোয়াতি রোগ হইতে যাইবো কেন আমরা তো বাবা- মা হইতে যাইতাছি।
মতির চোখ মুখে হাসির ঝলক দেখা দিলো সে যেন অবাক বিস্ময়ে বৃহৎ খুশি হলো। খুশিতে আত্মহারা হয়ে বউকে জড়িয়ে ধরলো মতির নানি ঘরে ঢুকতে যাবেই ঠিক তখনই দেখে মতি তার বউকে আদর করছে। সে যেন লজ্জায় মরে যাচ্ছে , একটা কাশি দিয়ে বললো ছি ছি ছি কোন দিন আইলো রে দিনে দুপুরে বউরে সোহাগ করতাছে।
জোছনা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রাখলো মতির কোনো বালাই নেই সে এসব লজ্জার তোয়াক্কা করে না দৌড়ে গিয়ে নানিকে জাপ্টে ধরে ঘুরপাক খেতে লাগলো আর বললো বুড়ি ইইইই আমি আইজ অনেএএক খুশি, আমরা নাকি বাবা হমু! আচ্ছা বুড়ি আর কতদিন মেহমান আইবো কও না।
নানি এবার হেসে বললো যাহ্ ছেমরা তোর যে কথা আরও মেলা সময় বাকি আছে বুঝলি।
যা বাজার থেকা মিষ্টি নিয়া আয়।
মতি আর দেরি না করে বাজার থেকে খুশিমনে মিষ্টি নিয়ে বাড়ি ফিরতে লাগলো মাঝপথেই শুনতে পেলো আজও নাকি একটা সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া বাচ্চা মা*রা গেছে, মায়ের অবস্থাও বেশ করুন।
কবিরাজ মশাই নাকি জানিয়েছেন এ গায়ে মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত বাচ্চারা হয় পেটে নয় সদ্য ভূমিষ্ঠ ম*রে যাচ্ছে।
কবিরাজ মশাইকে মতি জানায় তার স্ত্রী ও পোয়াতি হয়েছে। কবিরাজ মশাই মতিকে বলে তার স্ত্রী কে সাবধানে রাখে।যে কোনো মুহুর্তেই বিপদ আসন্ন হতে পারে।বাড়ি থেকে যেনো না বেরোয়।
মতি মাথা নাড়িয়ে বাধ্য ছেলের মতো স্থান ত্যাগ করে চেহারায় মলিনতা আর চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। মতির নানি পরি বানু বলে উঠলো- কি রে মতি এতো খুশি মনে বাড়ি থেকা বাইর হইলি এখন মুখটারে ওমন বাঁকা কইরা রাখছোস কেন?
মতি মাথা নিচু করে মিইয়ে গলায় বললো – বুড়ি আসার পথে দেখলাম একটা সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া বাচ্চা মা*রা গেছে। বা*চ্চা টা নাকি পেটেই ম*ইরা গেছে, এই গায়ে নাকি মহামারী লাগছে। তোমার মনে আছে বুড়ি আমার বাপ মায় কিন্তু মহামারী তেই ম*ইরা গেছিলো, কলেরায় কেবল আমিই বা*ইচ্চা গেছিলাম।
আমগো নতুন মেহমানের আগমনের আগেও এমন মহামারী আমি মোটেই আশা করিনাই।মনের মধ্যে কেমন যেন একটা মোচড় দিয়া উঠছে।
আড়াল থেকে জোছনা সবটা শুনলো তার মধ্যেও ভয় জন্মায় সে কুঁকড়ে যায়।
মতিকে পরিবানু সান্ত্বনা দিতে থাকে এরপর মতির হাত থেকে মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে সবাইকে মিষ্টি মুখ করায়।
মতির চোখের কোণে জল জমে আছে জোছনা চোখে তা এড়ায় না জোছনা জিজ্ঞেস করে কি হইছে আপনের?
মতি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে বললো বাপ মায়ের কথা মনে পড়তাছে বউ।
জোছনা মতির হাতটা টেনে নিয়ে তার পেটের ওপর রাখলো আর বললো – এই যে আপনের বাপ-মা।
মতি মুখে হাসি নিয়ে পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বললো – সাবধানে থাকিস রে বাছা। আমার কিন্তু একটা মা লাগবো কইয়া দিলাম।
পরিবানুর কান পর্যন্ত কথাটা পৌঁছাতেই ছ্যাৎ করে উঠলো সে আর বললো – কি কছ না কছ, প্রথম পোলা হইবো হেরপর যদি মাইয়া হয় তাইলে হইবো।
মতি বাঁকা মুখ করে বললো তোমার কথায় হইবো বুড়ি? আমার মা চাই, মা!
জোছনা হো হো করে হেসে উঠল।
রাতে শুয়ে শুয়ে মতি জোছনাকে বললো বউ তোমার কি কোনো সাধ আল্লাদ কিছু নাই সেই যে আইছো আমগো বাড়িতে এই পর্যন্ত কোনোদিন মুখ ফুইট্টা কও নাই তোমার কি খাইতে মনে চায়, কি পরতে মন চায় কিছুই কও না।
জোছনা মুচকি হেসে বললো আপনে যে কি কন না আমি তো কেবল সেইদিনই আসলাম।টুকটুকে লাল রঙের শাড়ি পইরা আর চৌদালায়(পালকি) বসার ইচ্ছে ছিলো সেই ইচ্ছা তো পূরন হইছে আপনের সাথে বিয়া হইয়া। আপনে আমারে কত কিছু যে কিন্না দেন আবার আমার পছন্দের আচারও তো চুপিচুপি আইনা দেন। আমার আর কিসের শখ থাকবো কিন্তু একটা শখ আছিলো রাজবাড়ী দেহনের।
চৌদোলার ফাঁকা দিয়া দেখছিলাম আসার সময় কি যে সুন্দর লাগতাছিলো গো!!
মতি বিস্ময় স্বরে বললো রাজবাড়ী দেখবা!!!!
জোছনা কথাগুলো বলেই জিহ্বায় কামড় বসায় আর বলে না না আমি দেখবার চাই না। নানি যে বারণ করেছিলো আমারে ওই নাম মুখেও না আনতে।
মতি কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলল আমি তোমার এই শখটা যে করেই হোক পূরণ করমু তয় নানিরে কওন যাইবো না। লুকাইয়া যাইতে হইবো রে বউ।
____________
সিরাজ ডকুমেন্টারি তৈরি করে ফেলেছে এবার দিগন্তকে সাথে নিয়ে এক প্রকাশকের কাছে গেলে তিনি ডকুমেন্টারি টা পড়ে বেশ অবাক হলেন এবং খুশিও হলেন বললেন যদি এই ডকুমেন্টারি টা প্রকাশ করা যায় তবে কোটি কোটি টাকা আয় করা যাবে। মি. সিরাজ আপনি তো এ দেশের ধনীদের একজন হতে চলেছেন।
-অভিনন্দন মি.সিরাজ।আমাকে এই ডকুমেন্টারি টা দিন আমি আপনাকে দশ কোটি টাকা দেবো।
দিগন্ত বললো যে না এতো কমে আমরা এই ডকুমেন্টারি পাবলিশ করতে চাই না। সিরাজ চল উঠি।
লোকটা অস্থির হয়ে পড়েছে দুই কোটি করে বাড়াতে বাড়াতে বিশ কোটিতে নিয়ে এসেছে ডকুমেন্টারির দাম। এবার দিগন্ত রাজি হলেও সিরাজ এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত হেমন্তিকে ছাড়া নিতে চায় না। সিরাজ কয়েকটা দিন সময় চেয়ে নেয় প্রকাশকের কাছ থেকে।
সিরাজ হেমন্তির সাথে দেখা করে হেমন্তি কে ডকুমেন্টারি টা দেখায়, হেমন্তি পুরো ডকুমেন্টারি টা পড়ে নেয় এত গুছিয়ে সিরাজ লিখেছে কেন যেন বিশ্বাসই হয়না হেমন্তির। সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সিরাজের দিকে। সিরাজ সেটা বেশ বুঝতে পারছে, সিরাজ বলে উঠল আরে আমি নিজেও বিশ্বাস করতে পারছি না এটা আমার লেখা তোকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারি দেখলি তো!
হেমন্তি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো সিরাজ তোর লেখা টা দুর্দান্ত হয়েছে আমি সত্যিই অনেক খুশি হয়েছি কিন্তু এই চিরন্তন সত্যগুলো কখনোই বিশ্ববাসীকে জানাতে রাজি হয় না হেমন্তি।
হেমন্তি বলে অন্য কারো জীবনী নিয়ে লিখতে বলে সিরাজকে কিন্তু সিরাজ জেদ ধরে সে বেগম জুলেখাকে নিয়ে লেখা ডকুমেন্টারি পাবলিশ করবে।
– হেমন্তি তুই জানিস এই ডকুমেন্টারির দাম এখন বিশ কোটি টাকা! ধনী হয়ে যাবো আমরা তারপর দেখবি সবার সাথে লাইন ধরে দাড়িয়ে তোর বাবা মাও আমার কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে চাইবে।হা হা হা
প্লিজ তুই না করিস না।
হেমন্তি রাগ করে উঠে চলে যেতে থাকে আর বলে একশো কোটি হলেও আমি রাজি হবো না।আর শোন আমি নিজেই তোকে প্রত্যাখান করবো যদি এটা তুই পাবলিশ করিস, কোনোদিন আমায় তোর করে পাবি না বলে দিলাম। আমার কাছে সবার আগে রূপা!!!!!
চলবে,,,,,,,,,,,,
#লেখা: মুন্নি ইসলাম