অতিরিক্ত_চাই_তোকে #পার্ট:১১

0
656

#অতিরিক্ত_চাই_তোকে
#পার্ট:১১

আমার ম্যাসেজটা দেখে বেশ ভয় হচ্ছিলো, মেসেজটা ছিলো তুরনার। তুরনা সম্পর্কে আমার ফুফাতো বোন হয়।৷ আব্বুরা মোট তিন ভাই এক বোন তার মধ্যে তুরনার আম্মু মানে আমার ফুফি সে হচ্ছে সবার ছোটো।

তুরনা মেসেজটা পাঠিয়েছে,,,

-“মায়ু আমরা আগামি মাসেই বিডিতে ব্যাক করছি। তাই তৈরি থাকিস, বিডিতে আসা মাত্রই আমার আর্দ্রের বিয়ে হবে।”

বিয়ের কথাটা শুনে একটুও চমকালাম না কারন তুরনা আর আর্দ্র ভাইয়ার বিয়ে আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে, যদিও আর্দ্র ভাইয়া এ বিয়ে সম্পর্কে কিছুই জানে না। আমার মনে মাঝে মাঝে একটা প্রশ্ন উদয় হয়।সেটা হচ্ছে,,,

-“যদি তুরনার সাথে আর্দ্র ভাইয়ার ব্যাপারটা আর্দ্র ভাইয়া জানতে পারে তাহলে কি ভাইয়া আমাকে ভুলে যাবে? ”

এই প্রশ্নটা যখনি মাথায় আসে আমার তখনই বুকে এক প্রকার চাপ অনুভব হয়। জানিনা কেনো? হয়তো তার প্রতি মায়া জন্মে গেছে। এসব ভাবার সময় কখন যে চোখটা ভিজে এসেছে খেয়ালই নেই।

কিছুক্ষণ আয়ান ভাইয়া এসে আমার হাত পায়ের ব্যান্ডেজ খুলে আবার নতুন করে কিছু মেডিসিন লাগিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলেন।

আয়ান ভাইয়া আর্দ্র ভাইয়া কে জিজ্ঞেস করলেন,,,,

-“কি হলো আর্দ্র বল? কিভাবে মায়রার এমন অবস্থা হলো! ”

আর্দ্র ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত হাসলেন।এই হাসির অর্থ জানা নেই আমার। আর্দ্র ভাইয়া বললেন,,,

-“জানিসনা তোর বোন কতোটা কেয়ারলেস, তেমন ভাবেই কেয়ারলেস ভাবে চলতে গিয়ে এটা করিয়েছে! ”

আর্দ্র ভাইয়ার কথা শুনে ভাইয়া আমার দিকে চোখ গরম করে তাকালেন। আমার প্রচুর রাগ লাগছে আর্দ্র ভাইয়ার প্রতি, তিনি কেনো এটা বললেন অন্য কিছু তো বলতে পারতেন।এখন ভাইয়া আমাকে তার মহা মূল্যবান ডাক্তারি লেকচার শোনাবে।আমি আর্দ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি মুখ টিপে হাসছে।

আয়ান ভাইয়া বেশ কিছুক্ষন তার লেকচার দিয়ে আমাদের যেতে বললেন। আর্দ্র ভাইয়া আমাকে কোলে করে গাড়িতে নিয়ে বসালেন। গাড়িতে বসানো মাত্রই আমি তার কলার টেনে বলে,,,

-“আপনার দরকার কি ছিলো ভাইয়াকে এটা বলার? অন্য কিছু তো বলতে পারতেন?”

-“মাই উইশ। নান অফ ইউর বিজন্যাস, গট ইট! ”

কথাটি বলে আমার হাত থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে নিয়ে ড্রাইভিং এ মন দিলেন।প্রচুর রাগ লাগছে আমার কিন্তু কিছু তো আর করার নেই।
________________

১ সপ্তাহ পর,,,,

হাত পায়ের ক্ষত ঠিক হয়ে গেছে। এখন আমি একা একাই চলাফেরা করতে পারি। এই কয়েকদিনে আর্দ্র ভাইয়া একদম পাল্টে গেছে। আগের থেকেও বেশ গম্ভীর হয়ে গেছে, কেও ওনার সামনে গেলেই ধমক দেয় কোনো কারন ছাড়াই। আর্দ্র ভাইয়ার এমন আচরণে বাড়িস সবাই অনেক চিন্তিত তাকে নিয়ে। সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে আর্দ্র ভাইয়া এখন আর আমার সাথে দেখা করেনা, বিষয়টা বেশ অবাক করেছে আমাকে, যেই আর্দ্র ভাইয়া কিনা আমাকে দেখছাড়া এক মূর্হতও টিকতে পারতো না সে কিনা পুরো এক সপ্তাহ আমাকে না দেখে কাটিয়েছে। তাহলে তিনি কি আমাকে ভুলে গেছেন?
_________________

ক্লাবের মধ্যে মাতাল হয়ে পড়ে আছে আর্দ্র। রোহিত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, কারন আর্দ্র কখনো মদ তো দূর একটা সিগারেট পর্যন্ত টার্চ করেনি।

আর্দ্র একটার পর একটা মদের বোতল শেষ করছিলো তখন রোহিত আর্দ্রের কাছে এসে বলে,,,,

-“আর্দ্র কি করছিস এসব?এতো ড্রিংক করলে তোর হেল্থ এ প্রবলেম হবে।কি হয়েছে তোর একটু বলবি? এমন আচরণ করছিস কেনো?”

আর্দ্র নেশাক্ত কন্ঠে বলে,,,

-“রোহিত ওরা ও,,রা আমার মায়া (মায়রা) কে নি,,য়ে যা,,বে? ”

রোহিত অবাক হয়ে বলে,,,

-“কারা নিয়ে যাবে মায়রাকে? কি বলছিস তুই? ”

-“ও,র বা,,বা মা, ! ”

-“কিন্তু, কিভাবে? আমরা তো সব ঠিক করে দিয়েছি? আর তাছাড়া ওদের কাছে তো লিগ্যালি নোটিশ ও নেই? ”

-“আছে! ”

-“মানে কি! কিভাবে? ”

আর্দ্র আর কিছু বলার আগেই রোহিতের কাধে ঢলল পড়ে। রোহিত আর্দ্র কে ধরে দেখে ও সেন্সে নেই। রোহিত দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,,,,

-“বেশি ড্রিংক করার ফল! ”
_________________

জানালার ধারে বসে শূন্য আকাশ পানে চেয়ে আছে মাইশা। চোখে পানি।

মাইশা এখন হোস্টেলে থাকে। যতদিন পর্যন্ত না বেবি হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এখানে থাকতে বলেছে আয়ান ওকে।বাড়ির সবাইকে ম্যানেজ করা শেষ।

মাইশা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,,,

-“মেঘ আমি জানি তুমি আমাকেই ভালোবাসো। কিন্তু কেনো তুমি মিথ্যা বললে? আর কই চলে গেছো তুমি? একবার ফিরে এসো প্লিজ। তোমাকে ছাড়া আমাদের বাচ্চা কে কিভাবে বড় করবো! “(কান্না করে)
__________________

রাতেরবেলা,,,,

বই নিয়ে হালকা ঘাটাঘাটি করছি কালকে থেকে ক্লাস শুরু হবে। কিন্ত পড়ায় একটু মন বসছে না।বারবার আর্দ্র ভাইয়ার কথা মনে পড়ছে। নিজের মনকে যতো কন্ট্রোল করার চেষ্টা করি তত বারই আর্দ্র ভাইয়ার কথা মনে পড়ে।

কিছুক্ষণ পর বাসার কলিংবেল বেজে উঠে। আমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেই।

দরজা খোলার পর দেখি আর্দ্র ভাইয়া একটা রোহিত ভাইয়ার কাঁধে ভর দিয়ে আছে।আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।

রোহিত ভাইয়া বললো,,,,

-” ভয় পাওয়ার কিছু নেই! আর্দ্র ঠিক আছে, ড্রিংক করার ফলে জ্ঞান হারিয়েছে। ”

আমি অবাক হয়ে বললাম,,,

-“ড্রিংক! কিন্তু ভাইয়া তো এসব,,,, ”

আমার কথা শেষ হওয়ার আগে রোহিত ভাইয়া বললো,,,

-“হুম জানি আর্দ্র এসব খায়না। আসলে আজকে যে ওর কি হয়েছে, আমরা কেওই জানিনা, ”

আমি এখনো আর্দ্র ভাইয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।রোহিত ভাইয়া বলে,,,

-“একটু হেল্প করো, ওকে ওর রুমে দিয়ে আসি! ”

আমি আর্দ্র ভাইয়ার এক হাত নিজের কাধে তুলে নিয়ে তার রুমের দিকে নিয়ে গেলাম।
_______________

টেবিলের ওপর পা দিয়ে বসে আছে আদনান মাহমুদ। কিছুক্ষণ পর পর আবার সিগারেট ও টান দিচ্ছে।

তখনি একটা ছেলে এসে বললো,,,

-“স্যার খবর আছে, ”

-“বল।”

-“স্যার মেয়েটার খবর পেয়েছি। ”

আদনান মাহমুদ টেবিল থেকে লাফ দিয়ে নেমে এসে বলে,,,,

-“কই থাকে? ”

-“স্যার বিডির ডিএম এ পড়ে। ”

আদনান মাহমুদ বাঁকা হাসি দেয়।
_______________

আর্দ্র ভাইয়াকে বেডে শুইয়ে দেয়ার পর রোহিত ভাই চলে যায়। আমি আর্দ্র ভাইয়ার পাশে বসে তার মাথায় হাত দিলাম।

আর্দ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে।কতটা বদলে গেছে আর্দ্র ভাইয়া। চেহারার সেই উজ্জ্বলতা নেই, আগের থেকে বেশ শুকিয়ে গেছে তিনি,চোখের নিচেও কালি পড়ে গেছে।

হটাৎ আর্দ্র ভাইয়া চোখ খুলে আমাকে দেখে লাফ দিয়ে উঠে বসে।আমি ভয় পেয়ে কিছুটা দূরে সরে যাই।

কিন্তু আর্দ্র ভাইয়া আমার হাত ধরে কাছে টেনে এনে আমার গাল দুটো ধরে বলে,,,

-“ভালোবাসি মায়াপরি, প্লিজ ছেড়ে যাস না আমায়, মারা যাবো আমি!”

-“আর্দ্র কি বলছেন এসব?”

-“অনেক ভালোবাসি তোকে, এক আকাশ ভালোবাসি, কেনো বুঝিস না, আমার ভালোবাসা! ”

আমি কিছু বললাম না।

তিনি আবার বললেন,,,,

-“কেনো বুঝিস না মায়রা #অতিরিক্ত_চাই_তোকে, তোকে ছাড়া আমি অসমাপ্ত। মারা যাবো আমি তোকে ছাড়া।”

আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,,,

-“ভালোবাসি। ”

-“কি বললি? আরেকবার বল প্লিজ! ”

-“ভা,,লোবাসি। খুব ভালোবাসি! ”

আর্দ্র ভাইয়া হাসলেন।মনোমুগ্ধকর তার হাসি। তিনি হেসে আমার সারামুখে শব্দ করে চুমু খেলেন।

#চলবে?

(মুড ভালো না তাই গুছিয়ে লিখতে পারিনি 🥴🥴)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here