অতিরিক্ত_চাই_তোকে #পার্ট:০২

0
930

#অতিরিক্ত_চাই_তোকে
#পার্ট:০২

নিচে নেমে দেখলাম আর্দ্র ভাইয়া সোফায় বসে ফোন টিপছে আর বাড়ির সবাই চিন্তিত মুখ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।আমার মা আড়ালে দাড়িয়ে শাড়ির আঁচলে মুখ গুজে কাঁদছে।

এই পরিস্থিতি দেখে সামনে যাওয়ার সাহস হলো না।আমি ফিরে চলে যাচ্ছিলাম তখনি দাদুমনি আমাকে গম্ভীর স্বরে ডাক দিয়ে বলে,,,

-“মায়রা ঐদিকে কই যাচ্ছো?এখানে এসো আমরা তোমারই অপেক্ষা করছিলাম!”

দাদুর কথা শুনে এক ঢোক গিললাম।আমাদের বাড়িতে সবাই দাদুমনিকে খুব ভয় পায়, অনেক স্ট্রেট মহিলা হচ্ছে আমাদের দাদুমনি।

আমি গুটি গুটি পায়ে দাদুমনির কাছে গিয়ে বললাম,,,

-“দাদুমনি কিছু বলবে? ”

-“হুম আমার পাশে বসো। ”

আমি দাদু মনির পাশে বসতে যাবো তখনি খেয়াল করলাম আমি যদি এখন দাদু মনির পাশে বসি তাহলে নিশ্চিত আর্দ্র ভাইয়ার সাথে আমার ছোয়া লাগবে আর সেই কাঁপা কাঁপি তখন দাদু মনি যে কি বলবে জানিনা?

আমি অসহায় চোখে আর্দ্র ভাইয়ার দিকে তাকালাম।আমার দৃষ্টি হয়তো তিনি বুঝতে পারলেন তাই তিনি বললেন,,,

-“দাদি আমি বাহিরে যাচ্ছি, কাজ আছে। ”

দাদুমনি গম্ভীর স্বরে বললেন,,,

-“না আর্দ্র, তুমি আমাদের ফ্যামিলির বড় ছেলের মধ্যে একজন তোমার দায়িত্ব এখানে বেশি, তাই তোমার ও কথাগুলো শোনা উচিত”

আর্দ্র ভাইয়া দাদুমনির কথা শুনে বসে রইলেন।আমার আর কি করার ওখানেই বসতে হলো।

আমার বসার পর দাদুমনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

-“দেখো মায়রা, এই নিয়ে মোট দুইবার তোমার বিয়ে ভেঙে গেল,এখন এটা নয় যে আমরা তোমাকে দোষারোপ করছি,আমি জানি আমার নাতনি কোনো খারাপ কাজ করেনি, তাই এখন বলছি এসব বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে পড়াশোনা করো মন দিয়ে,আমাদেরই দোষ তোমাকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের চাপ দেওয়া উচিত হয়নি!”

দাদু মনির কথা আমিসহ বাড়ির সবাই থ।যতদূর জানি আমি ভেবেছিলাম এখন হয়তো দাদুমনি আমাকে বকা দিবে বাট দাদুমনি তো আমাকে শান্তনা দিচ্ছে। হাউ?

আর্দ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার ঠোঁটে রহস্যময়ী হাসি।আচ্ছা বাই এনি চান্স এটাতে আর্দ্র ভাইয়ার কোনো কারসাজি নেই তো?

আমার ভাবনার মাঝেই আর্দ্র ভাইয়া সবার আড়ালে আমার কানে ফিসফিস করে বলে,,,,

-“রাতে ছাদে আসবি, দেরি হলে কিন্তু আমি তোর রুম থেকে কোলে করে তুলে আনবো। ”

আর্দ্র ভাইয়ার কথা শুনে তার দিকে অবাক হয়ে তাকালাম, তাকে বললাম,,

-“আমার পক্ষে আসা সম্ভব না,যদি কেও দেখে তাহলে কি ভাববে?”

উনি রাগি কন্ঠে বললেন,,,

-“কে কি ভাববে তাতে আমার কিছু যায় আসে না, তোকে আসতে বলেছি আসবি নাহলে,,”

তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,,,

-“আসবো আমি। ”

আমার উত্তর পেয়ে তিনি উঠে দাড়ালেন।তারপর বড় মা মানে আর্দ্র ভাইয়ার মা কে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,,

-“আম্মু আমি পুলিশ স্টেশনে যাচ্ছি। আসতে রাত হবে অনেক কাজ জমে আছে, তিনদিন যায়নি।তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো না,”

তারপর তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,

-“মায়রা তো আছেই ও তো বেশ রাত পর্যন্ত পরে, ওর থেকে চেয়ে নিবো কিছু লাগলে তুমি ঘুমিয়ে পড়িও”

আমি অসহায় চোখে আর্দ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম,,,

-“এই লোকটা কেনো আমাকে অতিরিক্ত জালায় কেনো?আমি এর থেকে দূরে থাকতে চাই আর ইনি আরো কাছে আসতে চায়, অসয্যকর লোক একটা!! ”

আর্দ্র ভাইয়ার কথা শুনে বড় মা বললেন,,,

-“এখন কিছু খেয়ে যা, সকালে তো কিছু খাসনি! ”

-“সমস্যা নেই, স্টেশনে গিয়ে খেয়ে নিবো ”

বলেই বেড়িয়ে যায় আর্দ্র ভাইয়া।আগে থেকেই পুলিশের ইউনিফর্ম পড়ে রেডি ছিলো।

আর্দ্র ভাইয়া পেশায় একজন পুলিশ অফিসার যদিও এখন এসপি।কিন্তু আমাদের বাড়ির কেও চাইনি ভাইয়া পুলিশ অফিসার হোক।আর্দ্র ভাইয়ার বাবা আর আমার বাবা একজন বিজন্যাসম্যান। দেশে বিদেশে বেশ খ্যাতি আছে তাদের। সবাই চেয়েছিলো আর্দ্র ভাইয়াও একজন সফল বিজন্যাসম্যান হোক কিন্তু এই খারুশের কি হয়েছে কে জানে সে পুলিশ হবেই বলে জিদ ধরেছিলো তাই তার জীদের কাছে সবার হার মানতে হলো।
_______________

দশ বারো জন গার্ড মিলে একটা ছেলেকে ধরে নিয়ে এসে একটা লোকের পায়ের কাছে ছুড়ে মারলো।

লোকটি ছেলেটির চুলের মুঠো ধরে উচু করে বলে,,,,

-“সাহস কিভাবে হয় তোর ঐ মেয়েটাকে গুলি করতে চাস? ”

ছেলেটি ব্যাথায় ডুকরিয়ে উঠে।ছেলেটি বলে,,,,

-“বিশ্বাস করেন স্যার, আমার কোনো দোষ নাই আমারে একজন কইছিলো মাইডারে মারতে! ”

লোকটি রেগে জিজ্ঞেস করে,,,,

-“কে?”

-“আদনান মাহমুদ! ”

ছেলেটির বলা নাম শুনে লোকটি হিংস্র রুপ ধারন করে।এতোটাই হিংস্র যে তাকে দেখলে যেকোনো দূর্বল হার্টের মানুষ সাথে সাথে হার্ট অ্যাটাক করতে এক সেকেন্ড ও লাগবে না।

লোকটি পাশে থাকা রিভলবার দিয়ে ছেলেটির বুকে পরাপর দশটা গুলি করে।তারপর সেই ক্ষত স্থানে মরিচের গুড়ো দিয়ে পাগলের মতো হাসতে থাকে।

গার্ডগুলো ভয়ে থরথর করে কাপছে।
_________________

বিকেলবেলা,,,,,❤️

মেডিকেলের বইগুলো নিয়ে হালকা পাতলা নাড়াচাড়া করছি আমি।কালই ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়ে এসেছিলাম।ক্লাস শুরু হবে আরো এক সপ্তাহ পর।

আমি পড়ছিলাম তখনি দরজায় নক পড়ে।তাকিয়ে দেখি আর্দ্রিতা আপু দুটো চায়ের কাপ নিয়ে মিষ্টি হেসে দাড়িয়ে আছে।

আমি হালকা হেসে বললাম,,,

-“বাহ, আজ দেখি বিদ্যাসাগর নিজ থেকেই আমার রুমে আসলো! ”

আর্দ্রিতা আপু বললো,,

-“তোর দেখা তো পেলাম না আর আমার রুমে তাই নিজ থেকেই আসলাম, তা কি করছিলি?”(সোফায় বসতে বসতে)

-“এইতো বই নিয়ে একটু গবেষণা! ”

আর্দ্রিতা আপু হচ্ছে আর্দ্র ভাইয়ার বড় বোন।আর্দ্র ভাইয়ারা তিন ভাই বোন, আর্দ্রিতা আপু,আর্দ্র ভাইয়া আর মাইশা।তারা হচ্ছে আমার বড় চাচুর সন্তান।

আমার বাবা হচ্ছে ছোটো।আমরা দুই ভাই বোন। আমি আর আয়ান ভাইয়া।

আর্দ্রিতা আপুর সাথে কথা বলার সময় আপু এক পর্যায়ে বলে,,,

-“আচ্ছা মায়রা জানিস তোর বিয়ে কিভাবে ভেঙেছে?”

আমি বললাম,,,

-“নাহ তো! ”

-“তোর বিয়ে ভেঙেছে না কেও ভাঙিয়েছে! ”

আমি অবাক হয়ে গেলাম আপুর কথায়।আচ্ছা আপু কি সব জানে?

আর্দ্রিতা আপু বলল,,,

-“তোর বিয়ে আর্দ্র ভেঙেছে রে মায়রা।ভাই আমার তোকে অনেক ভালোবাসে! ”

আমি আপুর কথায় টাকশি খেলাম। মনে মনে ভাবলাম,,

-“তার মানে আপু সব জানে? ”

আমি আপুকে জিজ্ঞেস করলাম,,

-“আপু তুমি? ”

-“আমি এসব অনেক আগে থেকেই জানি।”

-“কিন্তু কিভাবে? ”

আপু মুচকি হেসে বলে,,,

-“সেটা আপাতত বলা যাবে না!”

আপু চলে গেল।আর আমি তার যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।

-“এরা ভাইবোন দুটোই একরকম।রহস্যে ভরা!”

রাতেরবেলা,,,,,,

আমি আস্তে করে পা টিপেটিপে ছাদে যাচ্ছি। একটু আগেই ফোনে ম্যাসেজ দিয়েছিলো আর্দ্র ভাইয়া ছাদে আসতে।

একপ্রকার বিরক্ত লাগছে আমার।

-“এই লোকটার জন্য জীবনটা শেষ আমার,কবে যে মুক্তি পাবো আল্লাহ জানে।”

ছাদে এসে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি কেও নেই।আমি আস্তে করে ছাদের দরজা টা চাপিয়ে আর্দ্র ভাইয়ার নাম ধরে ডাক দেই।

তৎক্ষনাৎ কেও আমার মুখ চেপে ধরে পাশের দেয়ালে চেপে ধরে।আমি ভয়ে চোখমুখ খিচে বন্ধ করে ফেলি।

যখন কারো গরম নিঃশ্বাস আমার মুখে পড়ছিলো তখন খুব অসস্থি হচ্ছিল।

কিছুক্ষন পর আমার নাকে সেই চির পরিচিত স্মেল আসে।যতটুকু মনে পড়ে এই পারফিউম আর্দ্র ভাইয়া ইউজ করে।আমার পছন্দের পারফিউম এটা।

আমি ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখি আর্দ্র ভাইয়া চোখ গরম করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তার এমন তাকানোর মানে আমার বোধগম্য হলো না।

আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,,,

-“আর্দ্র ভাইয়া,,,,”

আর কিছু বলতে পারলাম না তার আগেই তিনি আমার ঠোঁট আকড়ে ধরে খুব রুডলি কিস করতে থাকে।তার এহেন কান্ডে আমি স্তব্ধ। হাত পা প্রচন্ড কাপছে।

কিছুক্ষণ পর তিনি নিজে থেকে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,,,,

-“নেক্সট টাইম ভাইয়া বলার আগে এটার কথা মনে করবি! ”

আমার ঠোঁটে স্লাইড করে কথাটি বললো আর্দ্র ভাইয়া।তারপর নিজের ঠোঁট মুছতে মুছতে ছাঁদের এক কর্নারে চলে গেলেন।

আমি এখনো স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছি।

#চলবে?

(ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ রইল। গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্লিজ।টাটা🥳🙋‍♀️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here