#অতিরিক্ত_চাই_তোকে
#পার্ট:০৪
খাবার শেষ করার পর বড় বড় পা ফেলে নিজের রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে বুকে হাত দিয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম।কেনো জানি আমি আর্দ্র ভাইয়াকে দেখলে আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়, তারজন্যই তো সবসময় তার থেকে দূরে দূরে থাকি।
কিন্তু মাঝে মাঝে দূর্ভাগ্যবসত তার সামনা সামনি হয়ে যাই যেমনটা আজকে।যদিও বেশিরভাগ সময় আর্দ্র ভাইয়ার ডাকার কারনে তার সামনে যেতে হয়।
আমি বেডে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম।হাত পা প্রচন্ড কাপছে, জানিনা কেনো আর্দ্র ভাইয়ার কারনে নাকি ঠান্ডার কারনে জানা নেই আমার তবে এখন আমার একটা ঘুম দরকার, গভীর ঘুম।
_______________
সকালবেলা,,,, ❤️
সকাল সকাল বেশ হৈচৈ তে ঘুম ভেঙে গেল।রুম থেকে বাহিরে গিয়ে দেখি আমাদের বাড়িটাকে বেশ সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হচ্ছে। বাবা মা, বড় চাচা, বড় চাচি সহ সবাই ব্যাস্ত কিন্তু এতো কিসের ব্যাস্ততা তাদের, আর আজকেই বা কি যে বাড়ি ডেকোরেশন করা হচ্ছে।
তখনি দেখলাম আমার মেঝো চাচুর ছেলে সাদাফ ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে ফুল নিয়ে যাচ্ছে, আমি তাকে ডেকে বললাম,,,,
-“ভাইয়া আজকে কি বাসায় কোনো ফাংশন?”
আমার কথা শুনে তিনি এমন একটা রিয়েকশন দিলেন যেনো আমি কোনো বড় পাপ করে ফেলেছি।আমি তাকে বললাম,,,
-“কি হলো ভাইয়া?”
-“তুই সত্যিই জানিস না?”
-“আরে নাহ! প্লিজ বলোনা আজ কি?”
-“আদ্রিতার এংগেইজমেইন্ট আজকে, ভুলে গেছিস নাকি আপু যে চাকরি পেয়েছে ”
আমি মাথা চাপড়িয়ে অপরাধমূলক হাসি হেসে বললাম,,,
-“হে হে, একদম মাথা থেকে বেড়িয়ে গেছে। ”
-“তোর মাথায় থাকে কি? যা ফ্রেশ হয়ে নিজে ব্রেকফাস্ট করতে আয় জলদি ”
-“আসছি যাও তুমি! ”
সাদাফ ভাই আমাদের সবার বড় মানে আদ্রিতা আপু আর সে এক সমান।কিন্তু সে বিবাহিত। আদ্রিতা আপু বিয়ে করেনি কারন তিনি নিজ পায়ে না দাড়ানো পর্যন্ত বিয়ে করবেনা বলে জীদ করেছিলেন।আর আমাদের পরিবারের কেওই তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেইনি।কাল আপু বেশ ভালো একটা চাকরি পেয়েছে তাই হয়তো আজ এংগেইজমেন্ট করা হচ্ছে। পাত্র আগে থেকেই ঠিক করা।পাত্রের নাম “রওশন” বেশ ভালো একজন লোক উনি।আপুকে বেশ ভালোবাসে তিনি তাই তো এতোদিন বিয়ের জন্য চাপ না দিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করেছে।
___________________❤️
আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দেখলাম, অলরেডি সবাই খেতে বসে গেছে। সব চেয়ার পরিপূর্ণ শুধু একটা চেয়ারই খালি আর সেটা হচ্ছে আর্দ্র ভাইয়ার পাশের সিট।
আমাকে দেখে সাদিয়া ভাবি বলল,,,
-“কি হলো মায়রা?আর্দ্রর পাশে গিয়ে বসো! ”
আমি ভাবির দিকে দিকে অসহায় ভাবে তাকালাম।কিন্তু কোনো কাজ হলো না শেষে আর্দ্র ভাইয়ার পাশেই বসতে হলো।
সাদিয়া ভাবি হচ্ছে সাদাফ ভাইয়ার একমাত্র প্রেয়সি মানে বউ আর কি।বেশ ভালোবাসে তারা একে অপরকে।
খাবার টেবিলে বসামাত্র আমি বড় আম্মুকে বললাম,,,
-“বড় আম্মু আমাকে খাইয়ে দাও জলদি! ”
বড় আম্মু মুচকি হেসে বললেন,,
-“দিচ্ছি বস! ”
এটা আমার প্রতেকদিনের রুটিন।বড় আম্মুর হাতে খাওয়া।শুধু আমার না মাইশার ও একই অভ্যাস।
কিছুক্ষণ পরই মাইশা আসলো।ওর মুখটা বেশ মলিন দেখাচ্ছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে মনে হচ্ছে কত রাত যেনো ঘুমায়নি।
মাইশা এসে চুপচাপ বসে নিজের প্লেট নিয়ে বলল,,,
-“আম্মু খেতে দাও!”
ওর কথায় সবাই বেশ অবাক হলো কারন ও আর আমি কখনো নিজ হাতে খাইনি সবসময় বড় আম্মুই আমাদের খাইয়ে দেয়।
সাদিয়া ভাবি মাইশাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,
-“কি হলো মাইশা আজ আম্মুর কাছে খাবেনা,প্রতিদিন তো এর জন্য মায়রার সাথে ঝগড়া লাগিয়ে দিতে আজ কি হলো? ”
মাইশা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,,,
-“ভাবি আমি এখন বড় হয়েছি তাই নিজের হাতেই খেতে পারি!”
মাইশার এমন অদ্ভুত আচরনে সবাই হতভম্ব।
আমরা ওতোটা মাথা ঘামালাম না কারন মাইশা মাঝে মাঝেই এমন করে পরে আবার নিঝ থেকে ঠিক হয়ে যায়।
খাওয়ার সময় আমি মাইশাকে জিজ্ঞেস করলাম,,,,
-“মাইশা আমাদের তো ড্রেস কেনা লাগবে, তুই যাবি আমার সাথে শপিংয়ে? ”
-“না তুই যা ভাইয়ার সাথে আমার ভালো লাগছে না আর আমার জন্য তুই ড্রেস চুজ করে আনিস!”
মাইশা কথাটা বলে খাবার শেষ করে চলে গেল।
আমি এক ঢোক গিললাম কারন এটা ভেবে যে,আমাকে আর্দ্র ভাইয়ার সাথে একা যেতে হবে।আমি বড় আম্মুকে বললাম,,,,
-“বড় আম্মু তুমি চলো না আমার সাথে প্লিজ!”
-“না রে আমাকে আজকে একটু বাহিরে যেতে হবে তোর চাচুর দরকার আছে! ”
আমি সবাইকে জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু তারা সবাই না করে দিলো! কি আর করার শেষে আর্দ্র ভাইয়ার সাথেই যেতে হচ্ছে।
আমি রেডি হয়ে নিচে নেমে দেখি আর্দ্র ভাইয়া ফোনে কথা বলছে।তাকে ডিস্টাব করলাম না।তিনি ফোনে কথা শেষ করে আমাকে বললেন,,,,
-“রেডি হয়েছিস?”
-“হুম”
-“আচ্ছা চল!”
তারপর বেড়িয়ে গেলাম আমরা।গাড়িতে বসামাত্র আমার ঘুম চলে আসে কিন্তু আজ আর ঘুম আসেনি আর্দ্র ভাইয়ার কারনে।
শপিংয় মলে এ পৌঁছে তিনি আমার হাত ধরলেন।আমি ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকালাম,,
-“কি হলো? ”
তিনি কিছু না বলে আমার হাত ধরে সামনে নিয়ে যেতে লাগলেন।তারপর একটা দোকানের ভিতর ঢুকে বললেন,,,
-“ড্রেস দেখান, ”
তার কথাটা শেষ না হওয়া মাত্র দোকানের সকল স্টাফরা পুরো মার্কেট এর অর্ধেক জামা এনে আমার সামনে রাখলো।
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম। তিনি পায়ের ওপর পা তুলে বললেন,,,
-“চুজ কর জলদি!”
আমি নিজের মন মতো কয়েকটা ড্রেস নিলাম।তারপর তাকে বললাম,,,
-“হয়ে গেছে! ”
তিনি আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বললেন,,,
-“মাত্র ৪ টা?”
-“হুম আর লাগবেনা!”
আর্দ্র ভাইয়া আমার কথা শুনে পিছন গিয়ে প্রায় ২০ বা ২৫ টার মতো ড্রেস এনে দোকানের মালিক কে বললেন,,,
-“সব প্যাক করে দিন!”
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।
_________________❤️
শপিং মল থেকে বেড়োনোর পর আমার চোখ পড়লো ফুচকার দিকে।আমি আর্দ্র ভাইয়ার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে বললাম,,,
-“আমি ফুচকা খাবো! ”
তিনি নাক শিটকিয়ে বললেন,,
-“রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে দিবো। এখানকার ফুচকা ভালো না পেট খারাপ হবে! ”
কিন্তু আমি তো জেদ ধরে বসেছি যে আমি এখানকার ফুচকাই খাবো অবশেষে তিনি রাজি হলেন।
ফুচকার দোকানে গিয়ে আমার মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এলো।আমি আর্দ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলাম।
তিনি ভ্রু কুচকালেন।
আমি মনে মনে বললাম,,
-“এবার বুঝবেন আমাকে জ্বালানোর মজা!”
#চলবে?