#অতিরিক্ত_চাই_তোকে
#পার্ট:০৬
দুপুর ২ঃ৩০ মিনিট,,,
ছাদে দাড়িয়ে আছি প্রায় ১ ঘন্টা হলো।কিছুই ভালো লাগছে না, বারবার ঐ মূহুর্তের কথা মনে পড়তেই অনুশোচনা কাজ করছে।
কিন্তু এখন আর অনুশোচনা করে কোনো লাভ নেই, শুধু শুধু নিজের সময় নষ্ট করা।
ছাদ থেকে নেমে ২য় ফ্লোর এ এসে দেখি বাসা পুরোপুরি ডেকোরেট করা হয়ে গেছে। সন্ধার পরই আপুর এংগেইজমেন্ট হবে, তাই সবাই বেশ ব্যাস্ত, একমাত্র আমি ছাড়া। রেলিং ধরে নিচে তাকিয়ে দেখলাম আর্দ্র ভাইয়া কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে কথা বলছে আর ডেকোরেট করতে আসা লোক গুলোকে কাজ দেখাচ্ছে।
কাজে ভুল হলে ধমক না দিয়ে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। আমি তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
এত শীতের মধ্যেও আর্দ্র ভাইয়ার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে। বড় বড় ঘন চুলগুলো কপালে এসে জমা হয়েছে।
আর্দ্র ভাইয়া দেখতে বেশ ফর্সা।শুধু তিনিই না আমাদের ফ্যামিলির সবাই বেশ ফর্সা, কিন্তু তিনি একটুই বেশিই ফর্সা, আর্দ্র ভাইয়ার ডান গালে একটা তিল আছে যেটা আমার উইকনেস।মাঝে মাঝে মনে হয় টুপ করে তার তিলে একটা চুমু দেই।
এসব ভাবতে ভাবতেই দেখলাম তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন।আমার তার চোখাচোখি হওয়া মাত্রই একটা চোখ টিপ দিলেন তিনি।আমি এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলাম।
মনে মনে বললাম,,,
-“এই লোকটা এতো খারাপ কেনো?সবসময় আমাকে লজ্জায় ফেলে দেয়! ”
________________💙
আর্দ্র দাড়িয়ে দাড়িয়ে মুচকি হাসছিলো তখনি পেছন থেকে সাদাফ এসে ওর পিঠে চাপর দিয়ে বলে,,,,
-“বাহ! আজকাল দেখি একা একা হাসা হচ্ছে, তা কই আমি যখন বলি একটু হাসতে তখন তো হাসিস না? ব্যাপার কি? ”
আর্দ্র নিজের মাথা চুলকিয়ে বলে,,,,
-“নাথিং! ”
সাদাফ দুষ্ট হেসে বলে,,,
-“প্রেমে পড়েছিস নাকি? ”
সাদাফের কথা শুনে আর্দ্র একটা কাশি দেয়।তারপর বলে,,,
-“কি আবোল তাবোল বলছিস ভাই? প্রেমে পড়বো তাও আমি? ইমপসিবল!! ”
-“তুই যে প্রেমে পড়েছিস তা আমি জানি এবং কার প্রেমে পড়েছিস তাও জানি! ”
আর্দ্র অবাক হয়ে বলে,,,,
-“কার? ”
-“আমার পিচ্চি বোন মায়রার! ”
আর্দ্র চমকিত।
_______________💙
মেঘের কথা শুনে মাইশার চোখে পানি এসে গেছে। ও বলে,,,
-“তারমানে তুমি আমাকে ভালোবাসো না? ”
মেঘ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,,,,
-“তোকে ভালোবাসবো আমার মাথা খারাপ নাকি? ”
-“তাহলে এতোদিন, এসব কি ছিলো? ”
-“টাইমপাস! ”
মেঘের কথা শুনে মাইশা রেগে ওর গালে একটা থাপ্পড় দেয়।
মাইশা মেঘকে বলে,,,,
-“ছিহ! আমার ঘৃনা হচ্ছে আমি তোমার মতো একটা লোককে ভালো বেসেছি! এতোটা নিচ তুৃমি, আমার বাচ্চা কে মেরে ফেলতে চাও! ”
মেঘ বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,,,
-“তোর বাচ্চা কে না মারলে, আমার পথের কাটা কিভাবে দূর করবো জান! ”
মেঘ মাইশার এগিয়ে যাবে, তখনি মাইশা মেঘকে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা মেরে হোটেল রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
মাইশা বেড়িয়ে যাওয়ার পর মেঘ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। মেঘ বলে,,,
-“ভালোবাসি প্রেয়সি, অনেক ভালোবাসি তোকে! আমি #অতিরিক্ত_চাই_তোকে, কিন্তু তুই আমার ভাগ্যে নেই প্রেয়সী। আমি যে তোর জীবনে ক্ষনিকের! চাইলেও তোকে নিজের কাছে রাখতে পারবো না, তুই আয়ানের কাছেই ভালো থাকবি প্রেয়সী! ”
কাঁদতে কাঁদতেই মেঘের মুখ থেকে গলগল করে রক্ত পড়তে থাকে কিন্তু তাও ও মাইশার নাম নিয়ে কান্না করে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর হোটেল ম্যানেজার এসে মেঘকে হসপিটালে ভর্তি করায়।
_______________
মাইশা কাঁদতে কাঁদতে রোডে এসে পড়েছে।তখনি হটাৎ করে মাইশা মাথা ঘুরে একটা গাড়ির সামনে পড়ে যায়।
দূর্ভাগ্যবশত গাড়িটা আয়ানের ছিলো। ও মাত্রই হসপিটাল থেকে একটা সার্জারি শেষ করে বাড়ি যাচ্ছিলো। আয়ান পেশায় একজন হার্ট সার্জানিষ্ট।
আয়ান গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটাকে দেখে এক সেকেন্ডই চিনে যায়।আয়ান মাইশাকে এভাবে দেখে ওর বুকে মোচড় দিয়ে উঠে।
আয়ান জলদি করে মাইশার কাছে গিয়ে ওকে কোলে করে গাড়িতে বসিয়ে জ্ঞান আনার চেষ্টা করে কিন্তু মাইশা কোনো রেসপন্স করেনা।কারন মাইশার শরীর বেশ দূর্বল ছিলো।
আয়ান মাইশাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
_________________
রুমে বসে বসে ড্রেস চুজ করছিলাম কিন্তু একটা ড্রেস ও পছন্দ হচ্ছিলো না। আর এদিকে একটু পরই ফাংশন শুরু হবে।
-“ধ্যাত একটা ড্রেসও মন মতো পাচ্ছি না কি যে করি? ”
তখনি দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম।পিছে ঘুরে দেখি আর্দ্র ভাইয়া দাড়িয়ে। হাতে কিছু ব্যাগ আছে তার।
আমি আর্দ্র ভাইয়া কে দেখে বেশ অবাক হলাম কারন তিনি কখনোই আমার রুমে কখনোই আসেন না।ভুল করেও না।আজই হয়তো প্রথম আসলো। আরেকবার যখন এসেছিলো বিয়ের জন্য রেডি হচ্ছিলাম ঐটা আপুর রুম ছিলো।
আমি আর্দ্র ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম,,,
-“আপনি এখানে? কোনো কিছু লাগবে? ”
তিনি বললেন,,,,
-“উহুম! ”
-“তাহলে? ”
-“কিছু দিতে এসেছি। ”
আমি চোখ ছোট ছোট করে বললেন,,,
-“কি? ”
আর্দ্র ভাইয়া আমার সামনে এসে আমার সামনে আসা ছোট ছোট চুলগুলোকে কানের পিঠে গুজে দিলেন।
আমি আবেশে আর লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিলাম।
তিনি আমার হাতে তার আনা ব্যাগ গুলো ধরিয়ে দিয়ে বললেন,,,
-“এখানে কিছু ড্রেস আছে, আজকের ফাংশনে এটাই পড়বি! ”
আমি ছোট করে জবাব দিলাম,,,
-“আচ্ছা। ”
তিনি আমার গাল দুটো ধরে কপালে একটা চুমু দিয়ে গটগট করে বেড়িয়ে গেলেন।
আমি এখনো চোখ বন্ধ করে আছি।তিনি যাওয়ার পরই চোখ খুলে একটা প্রশান্তির শ্বাস নিলাম।আর্দ্র ভাইয়া সামনে থাকলে কেনো যেনো আমার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে।জানা নেই কেনো?
আমি তার দেওয়া ব্যাগ গুলো খুলে দেখতে লাগলাম।
ব্যাগের ভেতরে ড্রেসগুলো দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছে। আর্দ্র ভাইয়ার চয়েজ এতোটা ভালো জানা ছিলো আমার।
ব্যাগের ভিতরে একটা ডার্ক নীল কালারের গাউন ছিলো।পুরো গাউনে নীল আর সাদা কালারের স্টোন বসানো। বেশ সুন্দর দেখতে গাউনটা।
_______________
আদ্রিতা রুমে বসে বসে অস্থির ভাবে পাইচারি করছে। বেশ অস্থির এবং নার্ভাস ফিল হচ্ছে ওর।কারনটা যে একমাএ “রওশন ” তা ও জানে।
এতোদিন পর রওশন এর সামনা সামনি হবে ভাবতেই লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে ও। আদ্রিতা আর রওশন এর বিয়ে পারিবারিক ভাবে ঠিক হলেও রওশন ওকে পাগলের মতো ভালোবাসে, রওশনের আদ্রিতার সাথে করা আচরণ গুলো দেখলে মনে হবে, ওরা আগে থেকেই পরিচিত।
আদ্রিতা যে রওশন কে পছন্দ করে না এমনটা না, আদ্রিতা ও রওশন ভালোবাসে ফেলেছে ওর পাগলামো গুলো দেখে।
এতোদিন রওশনের সাথে যোগাযোগ হয়নি এর কারনটাও আদ্রিতা।আদ্রিতাই চেয়েছিলো যে বিয়ের আগে এবং যতদিন পর্যন্ত ওর চাকরি হবে না ততদিন পর্যন্ত কথা বলা যাবে না।রওশন ও সাদরে গ্রহন করেছিলো আদ্রিতার সিদ্ধান্ত।
আজ প্রায় ৪ বছর আবার পুনরায় দেখা হতে যাচ্ছে ওদের।
______________
সন্ধ্যায়,,,,,,
আমি রেডি হয়ে নিচে নামতেই আর্দ্র ভাইয়াকে দেখে কিছুটা টাশকি খেলাম।কারন আর্দ্র ভাইয়ার ড্রেস আর আমার ড্রেসের কালার একদম ম্যাচ।
আর স্পেশালি আর্দ্র ভাইয়াকে বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে।
________________
মায়রাকে দেখে আর্দ্র হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে তখনি পিছন থেকে ওর ফ্রেন্ড রাহুল ওকে ধাক্কা দিয়ে বলে,,,
-“এভাবে দেখিস না, ভাবির নজর লেগে যাবে! ”
বলেই বাকিসব সহ ওরা হেসে দেয়।আর্দ্র রাহুলের দিকে চোখ গরম করে তাকায়।
এদিকে,,,,
মায়রার দিকে একজন লোভাতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে, কিন্তু মায়রা সেই লোকটিকে লক্ষ করেনি।
লোকটি শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,,,
-“আজ রাতে একে আমার চাই! (মায়রাকে উদ্দেশ্য করে বলে)
#চলবে?
(গল্পে কোনো ভুল থাকলে জানানোর অনুরোধে জানাচ্ছি! আসসালামু আলাইকুম 🙃)