#অতিরিক্ত_চাই_তোকে
#মারিয়াম_আক্তার_সাদিয়া
#পার্ট:১৭ (নিউ টুইস্ট -০২)
একটা পাতলা কম্বল জরীয়ে তীব্রের বুকে শুয়ে আছে তুরনা।মুখে প্রশান্তির হাসি ওর।তুরনা তীব্র কে জিজ্ঞেস করে,,,,
-“একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
–বলো।
–তুমি আর্দ্রের ক্ষতি করতে চাও কেনো?ও তোমার সাথে কি করেছে?
তুরনার প্রশ্নটা শোনার পর আর্দ্রের চোখগুলো লালবর্ণ ধারন করে। তীব্র কিছুটা রাগ মিশ্রিত কন্ঠে তুরনাকে বলে,,,
–আমার জীবন কেড়ে নিয়েছে ও!
তুরনা অবাক হয়ে বলে,,
–মানে?
তীব্র কিছু না বলে পাশ থেকে নিজের শার্ট নিয়ে বেড়িয়ে যায়।
_______________
আয়ানের সামনে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে জান্নাতের বাবা মা।আর আয়ান অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে, রুমে আপাতত কেও নেই কারন জান্নাতের বাবা মা আয়ানের সাথে একান্ত ভাবে কথা বলতে চেয়েছেন।
আয়ান জান্নাতের বাবা মার উদ্দেশ্যে বলে,,,
–আংকেল আন্টি আপনারা কি কিছু বলতে চান?
জান্নাতের বাবা বলে,,,
-“বাবা আমার মেয়ে যা করেছে তার জন্য অত্যান্ত দুঃখিত, আমরা কোনোদিন ও ভাবিনি যে জান্নাত এমন কিছু করতে পারে।
জান্নাতের মা আকুতি স্বরে বলে,,,
–হ্যা বাবা প্লিজ জান্নাত কে মাফ করে দাও ও বুঝতে পারেনি। ওকে আমরা বোঝাবো।
আয়ান বিরক্ত নিয়ে বলে,,,
–বুঝলাম কিন্তু, আপনারা এতো টেন্সড কেনো?আর এতোবার মাফ চাওয়ার কিছু নেই।আর কিছু বলার না থাকলে আপনারা আসতে পারেন।
আয়ানের কথা শুনে জান্নাতের বাবা আমতা আমতা করে বলে,,,,
–বাবা আমাদের আরেকটা কথা বলার ছিলো।
-“জ্বি বলুন।
-“যদি তুমি রাজি থাকো তাহলে আমরা তোমার সাথে জান্নাতের সাথে বিয়ে দিতে চাই, কারন আমরা জানি জান্নাত তোমার কাছেই প্রকৃত সুখি হবে।
আয়ান ওনাদের কথা শুনে বেশ অবাক হয়।আয়ান চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভেবে জান্নাতের বাবা মার উদ্দেশ্যে বলে,,
-“সরি আন্টি আংকেল বাট আমি জান্নাত কে বিয়ে করতে পারবো না কারন জান্নাতের ওপর আর বিশ্বাস নেই কে জানে শেষে দেখা যাবে বিয়ের দিনই আমাকে মেরে ফেলে।”
আয়ানের কথা শুনে জান্নাতের বাবা মা মাথা নিচু করে ফেলে।আয়ান আবার বলে,,,
–মাথা নিচু করবেন না আংকেল আন্টি, এটা আপনাদের মানায় না! কারন এখানে তো আর আপনাদের দোষ নেই, দোষ আপনার মেয়ের! আর তাছাড়া আপনার মেয়ে বিগড়ে গেছে এতে তো আর আপনাদের দোষ নেই কারন কোনো বাবা মা ই চায় না তার সন্তান খারাপ শিক্ষা গ্রহণ করুক এন্ড আপনারা ও হয়তো এটা চাননি।
আয়ানের কথা শুনে জান্নাতের বাবা মার চোখে পানি এসে পড়ে।জান্নাতের মা যাওয়ার আগে আয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,,
–তোমার চিন্তাধারা অনেক ভালো বাবা!দোয়া করি অনেক বড় হও জীবনে, আর আরেকবার আমার মেয়েটার কথা একটু ভেবে দেখো।আসি!
জান্নাতের বাবা মা চলে যায়।আয়ান তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা চাপা শ্বাস ফেলে।আজকে ও যেই কাজটা করেছে সেটা সঠিক কিনা ভুল তা জানা নেই ওর।
জান্নাতের বাবা মা যেতেই আয়ানের মা আয়ানের কাছে এসে বলে,,,
–কি বললো তারা?
আয়ান বেডে হেলান দিয়ে চোখ বুজে বলে,,,
–মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো!
আয়ানের মা উৎসাহ নিয়ে বলে,,
–তুই কি বললি?
–না করে দিয়েছি।
–না করলি কেনো?মেয়েটা দেখতে শুনতে তো খারাপ না আর যথেষ্ট বড় ঘরের মেয়ে।
–আমার পছন্দ হয়নি তাই।
আয়ানের আম্মুর কেনো যেনো আয়ানের কথাটা বিশ্বাস হলোনা।তারপরও তিনি ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,
–তোর পছন্দ না হলে কি করার রেস্ট নে তাহলে।
আয়ান ছোট করে জবাব দেয় “হুম”
____________
ডাইনিং রুমে বসেছিলো আর্দ্রের বাবা মা আর তুরনার মা।তারা আর্দ্র আর তুরনার বিয়ে কথা বলছিলো।তখনি মায়রা আর আর্দ্র বাসায় প্রবেশ করে। আর্দ্র কে দেখে আর্দ্রর আম্মু মুচকি হেসে বলে,,,
–আয় তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম!কিছু কথা বলার আছে তোকে।
আর্দ্র নিজের শার্টের হাতা গুটিয়ে বলে,,,
–আগে আমার কিছু বলার আছে।
-“আচ্ছা বল।
আর্দ্র মায়রার দিকে তাকায়।মায়রা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে আদ্রিতার পাশে দাড়িয়ে আছে। মায়রার চোখ মুখ ফুলে বেহাল দশা।
আর্দ্র বলে,,,
–আমি বিয়ে করেছি।
কথাটা শোনা মাত্র পুরো বাড়িতে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করে।সবাই অবাক হয়ে আর্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।আর্দ্রের বাবা বলে,,,
–কাকে বিয়ে করেছিস তুই?
আর্দ্র মায়রার কাছে গিয়ে মায়রার হাত ধরে সবার সামনে এনে বলে,,
–মায়রাকে।
এই কথাটা শোনার পর আরেকদফা শক খায় সবাই।সিড়ি দিয়ে আয়ান ফোনে কথা বলতে বলতে নামছিলো এই কথাটা শুনে ওর হাত থেকে ফোন পড়ে যায়।বলতে গেলে সবার অবস্থা বেশ খারাপ এই কথাটা শুনে,
আর্দ্রর আম্মু বলে,,,
— বুঝলাম তুই মায়রাকে বিয়ে করেছিস কিন্তু এভাবে আমাদের সবাইকে না জানিয়ে বিয়ে করলি কেনো?আমরা কি না করতাম নাকি!
আর্দ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,,,
–আমার ইচ্ছা।এখন তোমরা আমাদের এক্সেপ্ট করবে নয়তো আমি মায়রাকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।
আর্দ্রর কথাশুনে আর্দ্রর বাবা বলে,,,
–বাড়ি ছাড়ার কোনো দরকার নেই, আমরা তোমাদের মেনে নিয়েছি। কি বলো আর্দ্রের মা?
আর্দ্রর আম্মু মাথা নেড়ে হ্যা বলে।আর্দ্রর আম্মু অনেক আগে থেকেই চাইতেন মায়রাকে আর্দ্রের বউ হিসেবে,এতোদিন বলেনি ফ্যামিলির সম্পর্ক নষ্ট হবে বলে।
আর্দ্রের আম্মু মায়রার কাছে গিয়ে মায়রার গাল ধরে উঁচু করে কপালে একটা চুমু দেয়।তিনি বলেন,,,
-“আমি অনেক খুশি তুই আমার আর্দ্রের বউ হলি তাই।”
আয়ান মায়রার কাছে গিয়ে বলে,,,
–মায়রা,,,
মায়রা ভাইকে জরীয়ে ধরে কান্না করে দেয়।মায়রা বলে,,,
–ভাইয়া সরি।
আয়ান মায়রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে হালকা হেসে বলে,,,
–কাঁদছিস কেনো?আমি রাগ করিনি তো।
বাসার সবাই কথা বলছে তার ফাকে মায়রা নিজের রুমে চলে যায়।
_______________
রাতেরবেলা,,,,
তুরনা নিজের রুমে জিনিসপত্র ভাঙচুর করছে।রাগে গা কাপছে ওর।যখন থেকে তুরনা শুনতে পেরেছে যে আর্দ্রের সাথে মায়রার বিয়ে হয়ে গেছে তখন থেকেই ওর অবস্থা খারাপ। তুরনা এখন ভেবে পাচ্ছেনা তীব্র কে কি জবাব দেবে।তখনি তুরনার ফোনে তীব্রের কল আসে।তুরনা ফোন রিসিভ করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠ বলে,,,
-“তীব্র আর্দ্রর,,, ”
–বিয়ে হয়ে গেছে তাইনা?
তুরনা অবাক হয়ে তীব্র কে জিজ্ঞেস করে,,,
–তুমি কিভাবে জানলে?
–কাম অন তুরনা, আমার জানার অনেক মাধ্যম আছে।
–তীব্র আ’ম সরি।এখন কি করবো?
–সরি বলার কিছু নেই ইভেন আমাদের কাজটা আরো সহজ হয়ে গেছে মায়রা আর আর্দ্রের বিয়ের কারনে!
তুরনা তীব্রের কথার মানে বুঝতে পারেনা।ও ভ্রু কুচকে বলে,,,
–মানে?
–জাষ্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ!
কথাটা বলে তীব্র ফোন কেটে বাঁকা হাসে।
–এবার বুঝবি তীব্র কাছের কেও দূরে সরে গেলে কেমন ফিল হয়!
কয়েকমাস পর,,,,,
রুমের এক কোনে দাড়িয়ে ভয়ে কাপছে মায়রা।মায়রার প্রচুর ভয় হচ্ছে যে প্রতিদিনকার মতো আজকেও যদি মায়রাকে মারে আর্দ্র।
এই কয়েকমাসে অনেক কিছু বদলে গেছে, মায়রা আর আর্দ্রের লাইফ পুরো নরকে পরিনত হয়েছে।স্পেশালি মায়রার লাইফ। মায়রার শরীরে আর্দ্রের মারা দাগগুলো কালসিটে হয়ে রক্ত জমে আছে।আর্দ্র প্রতেক রাতে ড্রিংক করে এসে মায়রাকে অমানুষের মতো মারধর করে যার কারন জানা নেই মায়রার।
কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর মায়রা দরজা খোলার শব্দ পায়।মায়রা আস্তে করে মাথা উঠিয়ে দেখে আর্দ্র দাড়িয়ে, ওর এক হাতে ড্রিংকের বোতল আর আরেক হাতে একটা লাঠি যেটা দিয়ে প্রতেকদিন আর্দ্র মায়রাকে মারে।
মায়রা ডুকরে কেঁদে উঠে। কিছুক্ষনের মাঝে মায়রার আর্তনাদে আশেপাশের পরিবেশ থমথমে হয়ে যায়।
#চলবে?
(নতুন রহস্য! কেমন লাগলো?🤟😇🙆♀️)