অতিরিক্ত_চাই_তোকে #লেখিকা: মারিয়াম আক্তার সাদিয়া #পার্ট:০৯

0
669

#অতিরিক্ত_চাই_তোকে
#লেখিকা: মারিয়াম আক্তার সাদিয়া
#পার্ট:০৯

পুরো বাড়ি থমথমে হয়ে আছে।বাড়ির সবাই বেশ রেগে আছে। আম্মু তো এখনো কান্না থামায়নি।বাড়ির সব গেস্টরা চলে গেছে। আর রাহুল, সেতো আধমরা হয়ে পড়ে আছে।কিছুক্ষণ আগেই আর্দ্র ভাইয়া আর সাদাফ ভাইয়া মিলে বেশ মার দিয়েছে রাহুলকে।আর্দ্র ভাইয়া তো মেরেই ফেলতো, তাকে অনেক কষ্টে আটকিয়েছে সাদাফ ভাইয়া।

রওশন ভাইয়া মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।জানা নেই কেনো? হয়তো এই ঘটনার জন্য তিনি নিজেকে দায়ী করছেন, রওশন ভাইয়া বললেন,,,

-“সব কিছুর জন্য আমি দায়ী। আজ যদি আমি রাহুলকে ইনভাইট না করতাম তাহলে এমন পরস্থিতি আসতো না!”

রওশন ভাইয়ার কথা শুনে বাবা বলে,,,

-“নাহ রওশন, এখানে তোমার কোনো দোষ নেই! তুমি কি আর জানতে যে রাহুল এমনটা করবে?”

-“হ্যা। ”

রওশন ভাইয়ার “হ্যা” শুনে সবাই যেনো আকাশ থেকে পড়লো। আর্দ্র ভাইয়া বেশ রেগে জিজ্ঞেস করলেন,,,,

-“মানে কি? ”

রওশন ভাইয়া আহত কন্ঠে বললেন,,,,

-“আসলে রাহুল আগে থেকেই এমন ছিলো, এর আগেও তিন চারটা মেয়েকে রেপ করেছে ও। কিন্তু ও বেশ ভালো ঘরের ছেলে হওয়াতে ছাড়া পেয়ে গেছে। ওর এমন আচরণে আমি ওর সাথে মেশা বন্ধ করে দিয়েছি কিন্তু কাল হটাৎ ও আমার পা ধরে মাফ চেয়ে বলে ও নাকি ভালো হয়ে গেছে, আগের মতো নেই। রাহুল আমার ছোটো কালের ফ্রেন্ড ছিলো তাই ওকে ফিরিয়ে দিতে পারিনি। কিন্তু আমি কখনো ভাবিনি যে, ও মায়রার সাথে এমনটা করবে!”

রওশন ভাইয়া কথা গুলো বলার সময় চোখ থেকে তার পানি গড়িয়ে পড়ে।

আর্দ্র ভাইয়া রেগে রওশন ভাইয়ের কলার চেপে বলে,,,

-“আপনার আরেকটু খেয়াল রাখা উচিত ছিলো। জানেন আজকে মায়রার সাথে কি হতে পারতো? ”

আর্দ্র ভাইয়ার এমন আচরণে সবাই কিছুটা অবাক হলেও আমি স্বাভাবিক ভাবেই তার দিকে তাকিয়ে আছি।

বড় আব্বু রেগে আর্দ্র ভাইয়াকে ধমক দেন।তিনি বলেন,,,

-“আর্দ্র কি করছো? এখানে রওশনের কোনো দোষ নেই, সব সমস্যার মূলে রাহুল।আর ওর ব্যাবস্থা আমি,,,”

বড় আব্বুর কথা শেষ না করতে দিয়েই আর্দ্র ভাইয়া বলে,,,,

-“খবরদার, রাহুলের যা করার আমি করবো! কেও ওকে টার্চ করবে না।”

আর্দ্র ভাইয়ার এমন রাগমিশ্রিত কন্ঠ শুনে বাড়ির সবাই কিছুটা ভয় পেলো।কারন তারা জানে আর্দ্র ভাইয়ার রাগ চরম পর্যায়ে গেলে কি হয়?

বড় আব্বু বললেন,,,

-“আচ্ছা তোমার যা করার করো, আমরা কেও কিছু বলবো না!”♥♥♥এই গল্পের সকল পাঠ পেতে পেজে লাইক দিয়ে পেজের সাথে থাকুন ♥♥

আর্দ্র ভাইয়া তার গার্ডদের ডেকে বললেন,,,

-“একে নিয়ে যাও। ”

গার্ডরা রাহুলকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যায়।রাহুল টু শব্দ করলো না কারন সে সেন্সে নেই।

আমার খুব খারাপ লাগছিলো তাই আম্মুকে বললাম,,,

-“আম্মু আমার ভালো লাগছেনা, আমি রুমে যাবো। ”

আম্মু বললো,,,

-“আচ্ছা চলো। ”

-“তোমার আসা লাগবে না তুমি এখানে থাকো, আমি একটু একা থাকতে চাই। ”

আম্মু আমার কথা শুনে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন,,,

-“আচ্ছা যাও।”

আমি উঠে রুমের দিকে যাবো তার আগেই পায়ের ব্যাথার কারনে, পা ধরে নিচে বসে পড়লেন।পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বেশ বড় একটা কাচ ঢুকে গেছে।

আম্মু, আব্বু সবাই এগিয়ে আসলেন আমার দিকে।আব্বু বললো,,,

-“কি হয়েছে আম্মু?”

-“বাবা পায়ে কাচ ঢুকে গেছে। ”

আমার কথা শুনে বড় আম্মু রেগে গিয়ে সার্ভেন্টদের ডেকে বললেন,,,

-“কি কাজ করো তোমরা?ঠিকাভাবে বাসাটা পরিস্কার করতে পারোনা,? ”

সার্ভেন্টদের মধ্যে একজন রেগে বললেন,,

-“ম্যাম আমরা পুরো বাড়ি ফুল ক্লিন করেছি, কিন্তু কিভাবে যে কাচের টুকরো টা আসলো? ”

-“চুপ করো আর দেখো এখানে আরো কোনো কাঁচের টুকরো আছে কিনা?”

সার্ভেন্টরা জায়গা পরিস্কার করতে লাগলো।

আর্দ্র ভাইয়া এসে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।আমি তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই আর্দ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

আর্দ্র ভাইয়া ভ্রু কুচকে বললেন,,,

-“এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো সবাই? ”

আদ্রিতা আপু বললো,,,,

-“তুই ওকে কোলে নিলি কেনো? ”

-“আমি ওকে রুমে নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিবো, এমনিতে ও তো এখন আর উপরে যেতে পারবে না। ”

বড় আম্মু আর্দ্র ভাইয়াকে বললেন,,

-“হ্যা সেটাই ভালো।তুই মায়রাকে ব্যান্ডেজ করে দিস। আর হ্যা খেয়াল রাখিস যেনো ও ব্যাথা না পায়।”

-“হুম।”

বড় আম্মুর উদ্দেশ্যে কথাটি বলে আর্দ্র ভাইয়া আমাকে কোলে করে উপরে নিয়ে যান।আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি। হাত পা প্রচন্ড কাপছে। এই প্রথম আর্দ্র ভাইয়ার কোলে উঠলাম তাও বাড়ির সবার সামনে।

-“ইশশ।কেনো যে পায়ে কাচ ঢুকতে গেলো তাহলে হয়তো এতোটা লজ্জার সম্মুখিন হতে হতো না। ”

আর্দ্র ভাইয়া আমাকে রুমে এনে সোফায় বসিয়ে দিলেন। তারপর ফাস্ট এইড বক্স এনে আমার হাতের দিকে হাত বাড়াবেন, তার আগেই আমি তার হাত ধরে বলে,,,

-“আমি হাতের রক্ত ক্লিন করতে পারবো। ”

আমার কথা শুনে তিনি ধমকের স্বুরে বললেন,,,,

-“জানা আছে কি ক্লিন করবি, এখন আমাকে আমার কাজ করতে দে।”

তার ধমকে কেঁপে উঠলেও।আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল।তাকে দিয়ে আমার হাত স্পর্শ করাবো না এটাই ভেবে রেখেছি।কিন্তু তিনি আমার কথা শুনলেন না।

আমার হাত থেকে আস্তে আস্তে ব্লাড ক্লিন করতে লাগলেন।তার একেকটা স্পর্শ যেন আমার শ্বাস থমকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কেনো যে আর্দ্র ভাইয়ার স্পর্শে এতোটা অদ্ভুত ফিলিং’স আসে জানা নেই।কই? সাদাফ ভাইয়া যখন আমার হাত ধরে তখন তো এমন কোনো অদ্ভুত ফিলিং’স হয়না? তাহলে আর্দ্র ভাইয়ার টার্চে কেনো এমন হয়?

এসব ভাবতে ভাবতে আমার গাল দুটো লাল টমেটোর মতো লাল হয়ে ওঠে।

আর্দ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি মনোযোগ সহকারে ব্লাড ক্লিন করতে ব্যাস্ত।

হাতের ব্লাড ক্লিন করা হলে তিনি অতি যত্নসহকারে হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,,,

-“তোর এই টমেটোর মতো গাল দেখলে ইচ্ছে করে কামড়ে খেয়ে ফেলি।”

আর্দ্র ভাইয়ার কথা শুনে তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকি। পরে মাথা নিচু করে নেই।

-“লোকটা এতো বেহায়া কেনো? সবসময় কোনো না কোনো কথায় আমাকে লজ্জায় ফেলে দেয়।”(মনে মনে)

আমার ভাবনার মাঝে আর্দ্র ভাইয়া বলে,,,

-“আমি বেহায়া দেখেই তো তুই এতো ভদ্র। বেহায়া নাহলে তোর মতো নিরামিষ কে হ্যান্ডেল করতাম কি করে?”

তার থেকে কথা শুনে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।আমি তাকে বললাম,,,

-“আপনি আমার মনের কথা শুনলেন কি করে? ”

-“মনের কথা কেনো আমি তোর সব কথাই শুনতে পাই।তোর চোখের ভাষা, তোর ইশারা সব।ভালোবাসি যে তোকে, এতটুকু না বুঝতে পারলে কি করে হয়। ”

তার কথা শুনে কি উওর দিবো জানিনা।কিন্তু এতটুকু জানি তিনি আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।কিন্তু এই ভালোবাসার কোনো মানে নেই।এটা অসমাপ্ত ভালোবাসা। এটা কখনো পূর্ণতা পেতে পারবে না।

বেশ খারাপ লাগছে আমার। বুকে চাপ অনুভব করছি অনেক।কেনো যেনো এই কথাগুলো ভাবলেই খারাপ লাগা কাজ করে।

হটাৎ অনুভব করলাম কেও আমার পা স্পর্শ করছে।তাকিয়ে দেখি আর্দ্র ভাইয়া।জলদি করে পা সরিয়ে নিলাম আমি।

আমার পা সরানোর কারনে তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন,,,

-“কি হয়েছে? পা সরালি কেনো?”

-“আপনি আমার পা টার্চ করছেন কেনো? ”

-“পা না টার্চ করলে ঔষধ কি মুখ দিয়ে লাগাবো? “(কিছুটা রাগমিশ্রিত কন্ঠে)

তার এমন রাগ মিশ্রিত কন্ঠে কিছুটা অবাক হলাম।আমি তাকে বললাম,,,

-” আপনি তো আমার বড় তাহলে কিভাবে,,,, ”

আমার কথা অসমাপ্ত রেখেই আর্দ্র ভাইয়া বললেন,,,

-“বড় ছোট এসবে কিছু আসে যায় না, এখন জলদি পা দে নাহলে থাপ্পড় দিবো কিন্তু। ”

না চাইতেও পা এগিয়ে দিতে হলো আমার।

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here