অতিরিক্ত_চাই_তোকে #লেখিকা: মারিয়াম আক্তার সাদিয়া #পার্ট:১০

0
677

#অতিরিক্ত_চাই_তোকে
#লেখিকা: মারিয়াম আক্তার সাদিয়া
#পার্ট:১০

আর্দ্র ভাইয়া আমার পায়ের ব্লাড ক্লিন করে ব্যান্ডেজ করে দেয়। আমার প্রচুর আনইজি ফিল হচ্ছে। খারাপ লাগছে বলা চলে কারন আর্দ্র ভাইয়াকে দিয়ে নিজের পা ছুতে দেওয়ার ইচ্ছা একেবারেই আমার ছিলো না।

হটাৎ আর্দ্র ভাইয়া আমাকে কোলে তুলে নিলেন।আমি চমকে তাকে জিজ্ঞেস করি,,,

-“আবার কোলে তুলছেন কেনো? ”

তিনি আমাকে কিছু না বলে বাহিরে নিয়ে যেতে থাকে।আমি তাকে বারবার জিজ্ঞেস করছি কই নিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু তিনি কোনো উওর দিলেন না।

নিচে এসে আমাদের আবার এভাবে দেখে আদ্রিতা আপু ভ্রু কুচকায়।আপু বলে,,,,

-“আর্দ্র ওকে আবার নিচে নিয়ে এসেছিস কেনো? রুমে রেস্ট করুক। ”

আর্দ্র ভাইয়া গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,

-“ওকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি! ”

আদ্রিতা আপু অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,,,

-“কেনো, মায়রার বেশি খারাপ লাগছে নাকি? ”

-“উহুম। পায়ে কাচ ঢুকেছে তাই একবার আয়ানের থেকে চেকাপ করিয়ে আসি, পরে যদি ইনফেকশন হয়। ”

আদ্রিতা আপু হেসে বলে,,,,

-“আরে গাধা এতটুকু কাচ ঢোকায় ইনফেকশন হয় না, তারপর ও তোর যদি ভয় থাকে তাহলে যা হসপিটালে নিয়ে।”

আমি তাদের কথার মাঝে ফোড়ন কেটে বলে,,,

-“আরে না আপু, এতটুকু কাচ ঢোকাতে হসপিটালে যাওয়ার কি আছে?আমি ঠিক আছি ইনফেকশন হবে না।”

আর্দ্র ভাইয়া আমাকে ধমক দিয়ে বলে,,,

-“বেশি বুঝিস তুই? তোকে কথা বলতে বলেছি নাকি চুপ থাক তুই! আমার জিনিসের কেয়ার আমি নিজেই রাখতে পারি!”

আর্দ্র ভাইয়ার কথা শুনে আদ্রিতা আপু মুখ টিপে হাসছে। হলরুমে কেও নেই শুধুমাত্র আদ্রিতা আপু ছাড়া।

আর্দ্র ভাইয়ার শেষের কথাটা শুনে আমি প্রচন্ড রকমের অবাক।

আর্দ্র ভাইয়া আমাকে কোলে রেখেই গাড়ি স্টাট দিলেন।আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,,,

-“আমি সিটে বসবো!”

তিনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,,,

-“কোনো দরকার নেই।চুপচাপ বসে থাক।”

বেশ বিরক্ত হলাম তার এরুপ আচরণে।
______________

মাইশা কান্না করতে করতে আয়ানকে বলে ,,,

-“মেঘের সাথে আমার রিলেশন কলেজ লাইফ থেকে, অনেক ভালোবাসি আমরা একে অপরকে।আমাদের রিলেশনের কথা মেঘের বড় বোন মেঘলা আপু ও জানতো। তার মধ্যে একদিন ভুল করে আমার আর মেঘের মধ্যে ফিজিকাল রিলেশন হয়ে যায়।যদিও ভুলটা সম্পূর্ন আমার। আমার প্রেগনেন্ট হওয়ার পর আমি ভয় পেলেও মেঘ আর মেঘের বড় বোন মেঘলা আপু বেশ খুশি ছিলেন।মেঘলা আপু আমাদের কাবিন ও করিয়ে রেখেছে আমার প্রেগনেন্ট হওয়ার পর।”

মাইশার কথার মাঝে আয়ান বলে,,,

-“তারমানে তুই মেঘের লিগ্যালি ওয়াইফ? ”

-“হুম। ”

-“তারপর? ”

-“তারপর বিয়ের পরই মেঘ কেমন অদ্ভুত আচরন করতে থাকে, আমাকে ইগনোর করে, অন্য মেয়েদের সাথে রিলেশন করে।আমাকে মেঘ বলে যে ওর নাকি আমাকে আর ভালো লাগে না।কিন্তু আয়ান ভাইয়া আমি সিয়র মেঘ মিথ্যা বলছে , ওর কোনো প্রবলেম হয়েছে।”

তারপর মাইশা কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা খুলে বলে।

সব শুনে আয়ান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। ও বুঝতে পারছে না ওর এখন কি করা উচিত। আয়ান মাইশাকে বলে,,,

-“তুই চিন্তা করিস না আমি দেখছি কি করা যায়!”

-“ভাইয়া বাসার সবাইকে কি বলবো? ”

-“আমি দেখছি।”

আয়ান নিজের এপ্রোন হাতে নিয়ে উঠে দাড়ালো তারপর মাইশার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলে,,,

-“রেস্ট কর।”

আয়ান বেড়োতে যাবে তখন একজন নার্স হন্তদন্ত হয়ে কেবিনে এসে আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,,,

-“স্যার, স্যার! ”

-“হ্যা বলো।”

-“স্যার আর্দ্র সার এসেছে মায়রা ম্যাম কে নিয়ে। ”

আর্দ্রের নাম শুনে মাইশার গলা শুকিয়ে আসছে। আয়ান একবার মাইশার দিকে তাকিয়ে, তারপর নার্স কে বলে,,,

-“হটাৎ! ”

-“স্যার মায়রা ম্যামের পায়ে বেশ ব্যাথা পেয়েছে।আর হাতেও ব্যান্ডেজ করা দেখলাম।”

-“হোয়াট! ”

মায়রার এই অবস্থা শুনে আয়ানের বুকে মোচড় দেয়। মায়রা অনেক আদরের আয়ানের কাছে।দুনিয়া একদিকে তো মায়রা একদিকে।নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভাললবাসে আয়ান তার বোনকে।ছোটো থেকেই বেশ আদরে বড় করেছে আয়ান মায়রাকে।

আয়ান কাঁপা কন্ঠে নার্স কে জিজ্ঞেস করে,,,,

-“ওরা এখন কই? ”

-“স্যার আপনার কেবিনে বসে আছে।”

আয়ান দৌড়ে বেড়িয়ে যায় মাইশার কেবিন থেকে।

এদিকে মাইশার ও বেশ টেনশন হচ্ছে মায়রার জন্য। অনেক আদরের বোন মায়রা।বলতে গেলে খান পরিবারের আত্তা হচ্ছে মায়রা।

মাইশা নার্স কে জিজ্ঞেস করে,,,

-“নার্স মায়রার অবস্থা কি বেশি খারাপ? ”

-“না ম্যাম ওতোটা না। আপনি অস্থির হবেন না ম্যাম রেস্ট করুন।”

এই হসপিটাল টা আয়ানের। তাই মোটামুটি সবাই আয়ানের ফ্যামিলিকে চিনে।
______________

মেঘের অবস্থা দিনদিন খারাপ হচ্ছিলো। মেঘলা ডাক্তারের থেকে পরামর্শ করে পরশুদিন ওকে দেশের বাহিরে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য।

বাংলাদেশের ডাক্তাররা বলেছে যদি একটু উন্নতি হয় হতে পারে।তাই মেঘলা একটু আসা নিয়েই বিদেশ পাড়ি দেয় ভাইকে নিয়ে।

এখানে মেঘের যদিও একটুও মত ছিলো না তারপর ও মেঘলা মেঘের বাচ্চার ওয়াদা দিয়ে ওকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যায়।
________________

আয়ান দৌড়ে কেবিনে ঢুকে দেখে মায়রা বেডে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। আর তার পাশেই আর্দ্র দাড়িয়ে ফোন টিপছে।

আয়ান দৌড়ে গিয়ে মায়রাকে জরীয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দেয়।

ভাইয়ের এমন ভালোবাসা দেখে মুচকি হাসে আর্দ্র। ও মনে মনে ভাবে,,,

-“কতটা লাকি আমার বউ!এতো কেয়ারিং একজন ভাই পেয়েছে। আয়ানের মতো কেয়ার তো আমিও করতে পারবো না!”
_____________

ভাইয়ার কেবিনে বসে ছিলাম, তখনি ভাইয়া এসে জরীয়ে ধরে আমাকে।

আমি ভাইয়াকে বলি,,,

-“কালকে কই ছিলে ভাইয়া?”

আমার প্রশ্নটা শুনে ভাইয়া কেমন যেন আমতা আমতা করতে লাগলেন। আয়ান ভাইয়া বললো,,,

-“কালকে অনেক দরকারি একটা সার্জারি ছিলো তো তাই আসতে পারিনি, ”

-“ওহ। ”

আয়ান ভাইয়া আর্দ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,,,

-“আর্দ্র মায়রার এমন অবস্থা কিভাবে হলো।”

আমি ভীত দৃষ্টিতে আর্দ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।মনে মনে প্রে করছি যেনো আর্দ্র ভাইয়া আজকের ঘটনা না বলে।

আর্দ্র ভাইয়া ভাইয়াকে বলে,,,

-“আসলে আয়ান,,,”

আর্দ্র ভাইয়া আর কিছু বলতে যাবে তখনই একজন দৌড়ে এসে বলে,,,,

-“ডা.আয়ান আপনার পেশেন্ট এর শ্বাস নিতে প্রবলেম হচ্ছে, জলদি আসুন। ”

আয়ান ভাইয়া কথাটি শুনে আমাদের উদ্দেশ্য বলে,,,

-“তোরা থাক, আমি একটু দেখে আসি!”

ভাইয়ার কথার বিপরীতে মাথা নাড়লাম আমি।

ভাইয়া চলে যাওয়ার পর, আমি আর্দ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

-“আর্দ্র প্লিজ ভাইয়াকে আজকে ঘটা কোনো কিছু বলবেন না তাহলে ভাইয়া পাগল হয়ে যাবে নিশ্চিত! ”

আমার কথা শুনে আর্দ্র ভাইয়া চোখ ছোট ছোট করে বললেন,,,,

-“আমি যদি নাও বলি তাহলে বাড়ির কারো না কারো কাছ থেকে আয়ান ব্যাপারটা যেনে যাবে, তখন কি করবি? ”

-“তখনকার ব্যাপার হ্যান্ডেল করে নিবো। বাট আপাতত না, ভাইয়াকে দেখে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছিলো তাই এখন আর স্ট্রেস দিতে চাই না।”

-“আচ্ছা বলবো না!”

আর্দ্র ভাইয়ার কথা শুনে প্রশান্তির শ্বাস ফেললাম।

আমি বসে ছিলাম তখনি ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে আমার। ম্যাসেজটা দেখে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয় আমার।আর মনের ভেতর জাগে আর্দ্র ভাইয়াকে হারিয়ে ফেলার ভয়।

-“এবার হয়তো আর্দ্র ভাইয়াকে হারিয়ে ফেলবো আমি! ”

ম্যাসেজটার দিকে তাকিয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু বির্ষজন দিলাম আমি।

#চলবে?

(গেজ করো তো সবাই ঐটা কিসের ম্যাসেজ হতে পারে,😶)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here