#এসো_রূপকথায়
#কলমে_ফাতেমা_তুজ_নৌশি
#পর্ব:২
শান্ত পরিবেশ। রিয়ার চোখ থেকে এক বিন্দু অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। রিসানের ব্যবহার তাকে কষ্ট দিচ্ছে। পুরুষটি সর্বদাই ওকে কষ্ট দিল। নিষ্ঠুর লোক! একটা ধাক্কা দিয়ে চলে এল রিয়া। এসে দেখল মেহনূরকে ঘরে পাঠানো হয়েছে। চারপাশে হাসি ঠাট্টা চলছে। এদের কে দেখে বোঝার উপায় নেই এদের বাড়ির বউ পালিয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছে সব কেমন স্বাভাবিক। এসব ই বুঝতে পারছে না রিয়া! রাত ও কম নয়। দুটো বাজে। রিয়া চোখের জলটুকু মুছে নিল। ওর থাকার জন্য আলাদা রুম দেওয়া হয়েছে। তবে সমস্যাটি হচ্ছে একা থাকার অভ্যেস নেই। সর্বদা আপার সাথেই ঘুমিয়েছে। তাই অস্বস্তি হচ্ছে। কিছু সময় পর রিসানকে দেখা গেল। পোশাকটি পরিবর্তন করে এসেছে। শরীরে নতুন পারফিউম দেওয়া। নজর ঘুরিয়ে নিল রিয়া। রিসান এসেই ভাইকে জড়িয়ে ধরল। জাহিদ ও মৃদু এসে আলিঙ্গন করল।
“বেস্ট অফ লাক ব্রো।”
“থ্যাংক ইউ চ্যাম্পিয়ন।”
দুজনের কথোপকথনের মাঝেই রিয়াকে দেখতে পেল জাহিদ। কাছে এসে বলল,”আপু,কোনো সমস্যা?”
রিয়া কিছু বলতেই চাচ্ছিল,তবে পথিমধ্যে ঝামেলা তৈরি করল রিসান।
“কি সমস্যা হবে। সমস্যা থাকলেও আমি দেখে নিব। তুই যা।”
জাহিদকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। রিয়া বিরক্তি নিয়ে বলল,”আমি একা ঘুমাতে পারি না। আপা সব সময় পাশে থাকে।”
রিসান যেন মজা পেল। ট্রাউজারের পকেটে হাত রেখে বলল,”তো এখন কী বলতে চাচ্ছ? আমি পাশে গিয়ে ঘুমাব?”
কথাটি বলেই দুষ্টু হাসল রিসান। রিয়া বোকার মতো তাকিয়ে রইল।
“যাও এখন। আই উইস,সদ্য বিবাহিত বোনের প্রথম রাতের প্রাইভেসি ব্রেইক করবে না।”
অপমানে গা জ্ব লে গেল রিয়ার। ও রিসানের পথে বাঁধা হলো। লম্বাটে পুরুষটির বুকে সজোরে ধাক্কাল। লাভ হলো না ঠিক ই তবে এতেই শান্তি মিলল ওর।
“শুনেন, মিস্টার ইসরাফিল রিসান। আপনি আমার দেখা সব থেকে বাজে পুরুষ।”
রিসান হাসল। তার মাঝে খারাপ লাগা নেই। ও বরং নিচু হয়ে চোখে চোখ রাখল।
“আই নো, বেবি গার্ল। এন্ড ইউ নো হোয়াট তুমি পৃথিবীর সব থেকে নিষ্ঠুর মেয়ে।”
সমস্ত রাত এপাশ ওপাশ করে পেরিয়ে গেল রিয়ার। নিষ্ঠুর মেয়ে কথাটি ওর হজম হলো না। বরং ওর বলতে ইচ্ছে হলো আপনি পৃথিবীর সব থেকে নিষ্ঠুর পুরুষ। যে আমায় শেষ করে দিয়েছেন।
সকাল দশটা বাজলেও ঘুম ভাঙল না রিয়ার। ওর চোখ লেগেছে শেষ রাতে। তাছাড়া গত দিন বড়ো চাপ গিয়েছে। তাই শরীর বিশ্রাম চাইছে। কন্যাটির ঘুম ছুটল গানের আওয়াজে। চারপাশ থেকে বেশ জোরেই গানের আওয়াজ হচ্ছে। বিরক্তি,অনিচ্ছা নিয়েই ওঠল ও। হাই তুলে এল বারান্দায়। তখনই নজরে পড়ল বলিষ্ঠ দেহের পুরুষটিকে। রিয়ার চোখ যেন থমকে গিয়েছে। কোথাও একটা মায়া কাজ করছে। এক কালে বড়ো আরাধ্যের ছিল কী না।
রুম থেকে বের হতেই চা এগিয়ে দিল সানা। এক গাল হাসল রিয়া। চা কাপে চুমুক দিয়ে বলল,”শরীর ক্লান্ত ছিল খুব। তাই লেট হলো।”
“সমস্যা নেই। এখনো তো বর বউ ই ওঠে নি।”
এ কথা বলেই হাসল সানা। রিয়া ও অপ্রস্তুত হাসল। তবে ওর ভেতরটা হাসছে না। ওর মনের প্রশ্ন গুলো পুনরায় জেগে ওঠেছে। সানা রিয়ার থেকে বেশ অনেকটা বড়ো। তবে কথায় মায়া রয়েছে। তাই রিয়ার ভালো লাগে। দুজন কথা বলতে বলতে বাগানে এল। পুরো বাগান ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে। পরিবেশে ভেসে বেড়াচ্ছে মিষ্টি ঘ্রাণ। সেই সাথে মৃদুমন্দ হাওয়া। সুন্দর একটি পরিবেশ। অথচ রিয়ার জন্য সুন্দর হলো না। কোথা হতে যেন পানি এসে ভিজিয়ে দিল ওকে। বিষয়টা এত দ্রুত ঘটল যে বোঝার সময় অবধি পেল না রিয়া। সমস্ত শরীর ভিজে একাকার। সানা চেচিয়ে ওঠল।
“হায় আল্লাহ। রিসান, এটা কী করলি?”
রিসান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। তার মুখশ্রীতে বিশেষ কোনো আবরণ নেই। সবটা যেন স্বাভাবিক।
“আমি কেমন করে জানব এখানে ও দাঁড়িয়ে! আশ্চর্য দেখে চলে না কেন? ব্রেনের সাথে চোখটাও নেই নাকি?”
রিয়া ফুঁসে ওঠল,”কী বললেন?”
“একি, এ দেখি কানে কালা ও।”
রাগে আ ক্রো শে কান্না পেল রিয়ার। সানা ওদের দুজনের মাঝে এসে বলল,”অনেক হয়েছে। থাম তোরা। আমি তোয়ালে নিয়ে আসি।”
তোয়ালে আনতে যেতেই পুনরায় পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিল রিসান। রিয়া নিজের রাগ সামলাতে ব্যর্থ হয়ে তেড়ে গেল। পানির পাইপ ফেলে রিসান ও ছুট লাগাল। দুজন ছুটছে তো ছুটছেই। নিজেদের অবস্থান যেন ভুলে বসেছে। বাগান পেরিয়ে ওরা পুলের দিকে চলে এসেছে। রিয়ার খুব মজা লাগছে। অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে। ও ছুটতে ছুটতে নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলল। পড়ল সুইমিংপুলে। আচমকা হওয়ায় বেশ কিছুটা পানিও খেতে হলো। রিসান কিন্তু ওমনি দাঁড়িয়ে আছে। রিয়ার এবার সবটা মনে পড়ল। রিসান তার শত্রু। নি ষ্ঠু র পুরুষ। একটা মন খারাপ ছড়িয়ে পড়ল চারপাশে। ওপরে ওঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো রিয়া। পুলটা নতুন করা হয়েছে। সিঁড়ি বসানো হয় নি। বেশ গভীর ও। ওর নাকাল হওয়া দেখে মজা পাচ্ছে রিসান। এরই সাথে ভাবছে মেয়েটির আ ক্রো শ। একবার মুখ ফুটে বলছে না সাহায্যের কথা। রিসান হতাশার শ্বাস ফেলল। হাত বাড়িয়ে দিল। রিয়া তখন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে।
“ওঠে আসো।”
“প্রয়োজন নেই।”
কথাটি শেষ করেই রিয়া পুনরায় ওঠার চেষ্টা করল। তবে পারল না। সে মাঝামাঝি উচ্চতার একজন মেয়ে। আর পুলটির গভীরতা অনেক বেশি। একা ওঠে আসা ওর জন্য অসম্ভব। রিসানের মুখশ্রী ক্রমেই গম্ভীর হলো। ও ধপাস করে পানিতে ঝাপিয়ে পড়ল। ডুব দিয়ে মেয়েটির নিকটে এল।
“কোনো ধরনের অসভ্যতামি করবেন না।”
রিসান তাকে পাত্তা দিল না। বরং কোমর চেপে ওপরে ওঠিয়ে দিল। তারপর নিজেও ওঠে এল। পুরো সময়টায় রিয়া মৌন রইল। রিসান চুলের পানিটুকু হাতের সাহায্যে ফেলে নিয়ে বলল,”বেবি গার্ল, আই সয়ার তোমাকে ভে ঙে গুড়িয়ে দিব আমি। অসহ্য অনুভূতিতে ছেয়ে যাবে তোমার শহর।”
সানা একবার রিসানের দিকে তাকাচ্ছে একবার রিয়ার দিকে তাকাচ্ছে। কিছু বুঝতে পারছে না ও। রিয়া নিজেও নির্বিকার। রিসান এবার জবাব দিল।
“বলেছিলাম না এ মেয়ে কানা। তাই পুলে পড়ে গিয়েছিল। আর ওঠতেও পারছিল না।”
শেষ কথায় কিছুটা তাচ্ছিল্য মিশে আছে। রিয়ার মন খারাপটা আরো বৃদ্ধি পেল। তার উচ্চতা ৫ ফুট ২। এদিকে রিসানের সব বোনেরা ৫ ফুট ৫ এর ওপরে। এমন কি মেহনূর ও ভীষণ লম্বা। বেঁটে না হয়েও কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে। সানা রিসানকে চোখ রাঙিয়ে বলল,”চুপ কর তুই। যা এখন। ঠান্ডা লেগে যাবে।”
রিসান কথা না বাড়িয়েই চলে গেল। মন খারাপ নিয়ে ফিরল রিয়া। সানা তাকে আর কোনো প্রশ্ন করল না। রুমে ফিরে শাওয়ার নিয়ে একেবারে তৈরি হয়ে বের হলো ও। আহামরি কোনো সাজগোজ নেই। খুবই সাধারণ তবে সুন্দর। সানা বেশ গর্জিয়াজ মেকাপ করেছে। ও বলল বিউটিশিয়ানের থেকে একটু মেকাপ করে নিতে। তবে রিয়া নাকোচ করল। চেয়ে রইল অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষটির পানে। অফ হোয়াইট রঙের ব্লেজারে অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে রিসানকে। রঙটি যেন তাকে আলিঙ্গন করে আছে।
চলবে..