#অতিরিক্ত_চাই_তোকে
#মারিয়াম_আক্তার_সাদিয়া
#পার্ট:১৮
একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন বদ্ধ ঘরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে আর্দ্র। এভাবে প্রায় বেশ কয়েকমাস ধরেই অজ্ঞান হয়ে আছে ও।
কিছু সময় পার হয়ে যাওয়ার পর ঐ লোকটি প্রবেশ যে কিনা আর্দ্রের মতো চেহারা প্লাস্টিক সার্জারি করে এবং আর্দ্রের মতো কন্ঠস্বর আওতা করে এতোদিন মায়রার ওপর পশুর মতো নির্যাতন করে আসছিলো। লোকটি আর কেও নয় সে হচ্ছে “তীব্র “!
প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ও উন্মাদ পাগল হয়ে উঠেছে যে নিজের চেহারা পাল্টাতেও একবারও ভাবেনি তীব্র। তীব্র আর্দ্রের সামনে গিয়ে পাশে থাকা বালতি থেকে সব পানি আর্দ্রের ওপর ঢেলে দেয়।
ধরফরিয়ে উঠে বসে আর্দ্র। আর্দ্রর জ্ঞান ফেরার পর ও মাথা ধরে কিছুক্ষণ বসে থাকে।প্রচন্ড যন্ত্রনা করছে ওর মাথায়।আর্দ্র আস্তে করে মাথা উঁচু করে আশেপাশের পরিবেশ ব্যাখা করার চেষ্টা করে।
আর্দ্র অতীত মনে করে,,,
মায়রাকে বাসায় দিয়ে আর্দ্র জরুরি একটা কাজে বাহিরে চলে যায়।মাঝ রাস্তায় আশার পর হটাৎ আর্দ্র গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়।আর্দ্র বিরক্ত হয়ে গাড়ি থেকে নামবে তখনি কেও ওকে শক্ত কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করে। তারপর থেকে ও এখানে অজ্ঞান অবস্থায়।
বর্তমান,,,
আর্দ্র সামনে তাকিয়ে কিছুটা ঘাবড়ে যায় নিজের মতো চেহারা অন্য কাওকে দেখে।তীব্র বেশ ইনজয় করছে আর্দ্রের এমন অবস্থা। আর্দ্র চিন্তিত স্বরে বলে,,,,
–কে আপনি?
–নিশ্চুপ।
–কথা কানে যায় না নাকি? কে আপনি? আর আমি এখানে কি করছি?
–তীব্র কে চিনিস?
তীব্রের নাম আর তীব্রের মতো কন্ঠস্বর শুনে বেশ ঘাবড়ে যায় আর্দ্র। কপাল থেকে ফোটা ফোটা ঘাম গাল বেয়ে চুইয়ে পড়ছে আর্দ্রের।তীব্র তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,,,
–কি হলো ভয় পাচ্ছিস কেনো?
আর্দ্র কাপা সুরে বলে,,,
–তুই বেঁচে আছিস?আর তোর চেহারা আমার মতো কেনো?
–অবিয়াসলি বেঁচে আছি, নিজের বোনের মৃত্যুর প্রতিশোধ না নিয়ে কিভাবে মরবো আমি?
আর্দ্রের ঠিক এই ভয়টাই ছিলো যে তীব্র একদিন না একদিন ঠিকই ফিরে আসবে,
আর্দ্রের নিজ কপালের ঘাম হাত দিয়ে মুছে নেয়।ও তীব্র কে বলে,,,,
–দেখ তীব্র তুই ভাবছিস, তোর বোন নিজ ইচ্ছেয় সুইসাইড করেছে।
তীব্র রেগে যায়।ও অনেক জোরে আর্দ্রের গালে একটা থাপ্পড় দেয় যার কারনে আর্দ্রের ঠোঁট ফেটে রক্ত পড়তে থাকে কিন্তু তবুও শান্ত থাকে আর্দ্র। ও আবারও শান্ত সুরে বলে,,,
–বোঝার চেষ্টা কর তীব্র এখানে আমার কোনো দোষ নেই,,,
কথাটা শেষ না হতেই তীব্র নিজের প্যান্টের বেল্ট খুলে আর্দ্রকে আঘাত করতে থাকে।চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে তীব্রের সাথে আর্দ্রের ও কিন্তু তারা দুজনই নিশ্চুপ।
________________
বেডের পাশে পড়ে আছে মায়রা।কাল রাতের মার গুলো বেশ জোরেই ছিলো যার ফলে মারের দাগগুলো থেকে রক্ত চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে ওর।কিন্তু মায়রার ওদিকে কোনো খেয়াল নেই, ও আর্দ্রের কথা ভাবতে ব্যাস্ত মায়রার এখনো কেনো যেনো বিশ্বাস হচ্ছেনা যে এটাই ওর আর্দ্র।
মায়রা আর আর্দ্র সেদিনের পর থেকে একটা আলাদা বাসায় থাকে কারন আর্দ্রের ট্রান্সফার হয়েছে। আর্দ্রের বাবা চেয়েছিলো যে ওকে এখানেই রাখতে কিন্তু অদ্ভুতভাবে আর্দ্র সেদিন রাজি হয়নি। নতুন বাসায় ওঠার আগে মায়রা অনেক রঙিন স্বপ্ন বুনেছিলো কিন্তু মায়রা তো আর জানতো না যে এই নতুন বাসাটাই ওর জীবনের সব রঙিন স্বপ্ন গুলোকে কালো অধ্যায়ে পরিনত করবে।
আমেরিকা,,,,
রুমের জানালা দিয়ে ব্যাস্ত নগরী দেখছে আয়ান, হাতে ধোঁয়া উড়ন্ত কফি। মাঝে মাঝে আবার কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আয়ান। ডাক্তারির বাকি কিছু পড়া কমপ্লিট করতে আয়ান আমেরিকা এসেছে,যদিও ওর ফ্যামিলিকে ছেড়ে আসার কোনো ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু পরিস্থিতি বাধ্য করেছে ওকে।
হটাৎ পিছন থেকে একটা মেয়ে এসে আয়ানকে জরীয়ে ধরে।আয়ান মুচকি হাসি দেয়।
–ঘুম ভাঙলো মহারানির?
মেয়েটা আয়ানকে আরেকটু শক্ত করে জরীয়ে ধরে বলে,,,,
–হুম। আমাকে আগে ডাকেননি কেনো?
–তোমার ঘুমন্ত চেহারা দেখে কেনো যেনো ডিস্টার্ব করতে ইচ্ছে করলো না তাই।
মেয়েটি আয়ানকে ছেড়ে দুহাত দিয়ে চুলগুলো কে খোপা করে নিলো।মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেই দৃশ্য দেখলো আয়ান।মেয়েটি আয়ানকে বলে,,,,
–মায়া করতে গিয়ে আমার কাজের তো লস করে দিলেন।
আয়ান মেয়েটির সামনে গিয়ে গালে টুক্কুশ করে চুমু দিয়ে বলে,,,
-“মায়া না গো বউ ভালোবেসে। অনেক ভালোবাসি তোমায়।
–আমিও অনেক ভালোবাসি, এক সমুদ্র সমান ভালোবাসি।
জরীয়ে ধরে একে অপরকে তারা দুজন।ভালোবাসার রঙে রঙিন হয় আবারও নতুন করে।
(এই মেয়েটা কে গেজ করুন সবাই! 😁)
আর্দ্র কে মারার পর ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসে পড়ে তীব্র। তীব্র তার একজন লোককে ডেকে ইশারা করে কিছু বলে।
তীব্রের ইশারা পাওয়ার পর লোকটি রুমে থাকা টিভি থেকে কিছু ভিডিও অন করে।ভিডিও টা দেখে চোখের পানির বন্যা বয়ে যায় আর্দ্রের।ভিডিও গুলো ছিলো মায়রাকে অত্যাচার করার ভিডিও। আর্দ্র রেগে তীব্র কে বলে,,,
–মায়রাকে কেনো এভাবে অত্যাচার করছিস তীব্র? ও কি দোষ করেছে।
তীব্র পায়ের ওপর পা তুলে বসে। ও হাতে থাকা গানটা ঘোড়াতে ঘোড়াতে বলে,,
–মায়রার দোষ একটাই ও তোর জীবন, যেমনটা আমার বোন আমার কাছে ছিলো। মায়রাকে কষ্ট দিলে তুই এমনিতেই মারা যাবি তার থেকেও বড় কথা আমার কষ্টের চেয়ে দ্বিগুণ কষ্ট পাবি।
–মায়রাকে ছেড়ে দে তীব্র, তুই আমাকে মেরে ফেল কিন্তু ওকে ছেড়ে দে।
তীব্র হিংস্র হেসে বলে,,
–দিবো তো,আজকেই দিবো সারাজীবন এর জন্য ছেড়ে দিবো। আজকে তোর সামনে তোর লাইফ লাইনকে মারবো আর তুই শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবি।
তীব্র চলে যায়।আর্দ্র পেছন থেকে অনেকবার তীব্র কে আকুতি মিনুতি করছে কিন্তু তীব্র সেটা শুনেছে বলে মনে হয় না।
#চলবে?
(বোনাস পার্ট টা সুন্দর করে এবং বড় করে দিবো ইনশাআল্লাহ। বোনাস পার্ট রাতে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম ❤️)