স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #পর্বঃ২৪

0
719

#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৪
গ্রিন লঞ্চ রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামলো।একে একে নেমে আসল ফাহিম,নূর,জায়ান।জায়ান নেমে আরাবীকে গাড়ি থেকে নামতে সাহায্য করল।মেয়েটা শাড়ি সামলাতে পারে না অতো একটা।জায়ান আরাবীর হাতটা আর ছাড়ল না। আরাবীও কোনো প্রকার জোড়াজুড়ি করল না। রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে সোজা তারা ছাদে চলে আসল।খোলা আসমানের নিচে বসে আড্ডা দেওয়ার ব্যাপারটাই আলাদা।ছাদে এসেই চোখ জুড়িয়ে গেলো আরাবীর।কি সুন্দর ডেকোরেশন চারপাশের।ফেইরিলাইটসগুলো বিভিন্ন গাছের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে।যার ফলে সেটা আরও সুন্দর লাগছে।আর্টিফিশিয়াল ফুল দিয়েও সাজানো।জায়ানরা কর্নারের একটা টেবিলে বসল।ছাদের চারদিকে কাচের বাউন্ডারি দেওয়া।আরাবী চারপাশ কুটুর কুটুর চোখে দেখছে।ঠোঁট জুড়ে মুচঁকি হাসির রেশ।জায়ান আরাবীর হাস্যজ্জ্বল মুখশ্রী দেখতে ব্যস্ত।জায়ান মুখটা একটুখানি আরাবীর কাছে এগিয়ে আনল।ফিসফিসিয়ে সুধাল,
‘ পাশে আমি বসে আছি।জনাবার তো সেদিকে তো দেখছি কোনো হুশই নেই।’

আরাবী নড়েচড়ে বসল।মৃদু স্বরে বলল,
‘ আমি তো জাস্ট দেখছিলাম।’
‘ বাট আই কান্ট স্ট্যান্ড ইট এট এল।’

আরাবী মুখ টিপে হাসল।এই লোকটাও না।জায়ান ম্যেনু কার্ডটা আরাবীর দিকে এগিয়ে দিল।বলল,
‘ কি খাবে বলো।’
‘ আইস্ক্রিম।’
ম্যেনু কার্ড না দেখেই আরাবী বলল।জায়ান ভ্রু-কুচকে তাকালো আরাবীর দিকে।হালকা ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ওয়েদার আজকে।আর মেয়েটা কিনা আইস্ক্রিম খেতে চায়।সেবার ঠাণ্ডার কারনে কি ভয়ান*ক অবস্থাটা না-ই হয়েছিলো।ওকে সেই অবস্থায় দেখে জায়ানের কেমন লাগছিলো তা বলে বোঝানো যাবে না।জায়ান ম্যেনু কার্ডটা আবার বাড়িয়ে দিলো আরাবীর দিকে।গম্ভীরমুখে বলে,
‘ আইস্ক্রিম খাওয়া যাবে না।অন্যকিছু অর্ডার করো।’

আরাবী মুখ ফুলালো জায়ানের কথায়।এই ঠাণ্ডা ওয়েদারে তার আইস্ক্রিম খেতে অনেক ভালো লাগে।আর লোকটা নাকি ওকে বারণ করছে খেতে।
‘ কিন্তু আমার যে আইস্ক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে।আমি আইস্ক্রিম না খেতে পারলে কিছুই খাব না।’

আরাবী অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।জায়ান লম্বা শ্বাস ফেলল।এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা যায় না।কেমন বাচ্চাদের মতো জেদ ধরছে।জায়ান হার মানল।আরাবীকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘ আচ্ছা,আইস্ক্রিমই নিও।বাট শুধু অল্প ছোটো সাইজের একটা নিবে।তোমার ঠাণ্ডার সমস্যা আছে আরাবী।’

আরাবী আর দ্বিমত করল না।লোকে বলে না, ‘ নাই মামা থেকে কানা মামা ভালো।’

জায়ান কফি অর্ডার করল।নূর নিলো পাস্তা আর ফাহিম কোল্ড কফি নিলো।ওরা খাবারটাও এঞ্জয় করছে।সাথে আবার টুকাটুকি কথাও বলছে।এভাবে কথার এক পর্যায়ে নূরের চোখ এক জায়চায় চলে যায়।ওদের থেকে দু টেবিল দূরে ইফতিকে দেখে অবাক হলো নূর।আরে ইফতি এখানে কি করছে?নূর আরেকটু ভালোভাবে তাকালো।সাথে একটা মেয়েও আছে।এই ইফতিকে ওদের সাথে আসার জন্যে অনেক সেধেছে জায়ান আর নূর।কিন্তু ইফতি যাবে না সাফ মানা করে দিয়েছে। ছুটির দিন সে বাড়িতেই বিশ্রাম নিবে জানিয়ে দেয়।কিন্তু এখন নূর বুঝতে পারছে ইফতির মিথ্যে বলার কারন।তবে এই ছিলো ইফতির মনে।নূর শয়তানি হাসি দিলো।আজ তো হাতে নাতে ধরবে ইফতিকে।এই বেটা ওকে বহুত জ্বালায়।মানে ইফতি আর নূরের সম্পর্ক সা*প নেউলে।দুজন সারাক্ষণ ঝগড়া করে।আজ তার সোধ নিবে।নূর সুযোগের সৎ ব্যবহার করল।এমন ভাণ করল যেন ও ইফতিকে এখনই দেখেছে।অবাক কণ্ঠে বলে উঠল,
‘ জায়ান ভাইয়া। ওই দেখো ইফতি ভাইয়াকে দেখা যাচ্ছে।ও না কি ভাণ ধরল ও আমাদের সাথে আসবে না।ও রেস্ট নিবে বাসাতেই।কিন্তু ওটা ছিলো বাহানা।দেখো ও জানি কোন মেয়ের সাথে ডেটে এসেছে।’

জায়ান আর আরাবী চট করে তাকালো নূরের ইঙিতকৃত স্থানে।আর ফাহিম আগামাথা না বোঝায়।চুপচাপ বসে আছে।আরাবী ভালোভাবে তাকিয়ে খেয়াল করল।ইফতির সাথের মেয়েটা আর কেউ না।ওটা আলিফা।আরাবী হা হয়ে গেলো।এই মেয়ে ইফতির সাথে কি করছে?জায়ান আরাবীর হা ওর হাত দ্বারা বন্ধ করে দিলো।আরাবী এতে হুশ হলো।ও অবাক হয়ে বলে,
‘ এরা দুজন এখানে কি করে?’

জায়ান আরাবীর হাত ধরে উঠে দাঁড়াল।বলল,
‘ সেটা এখানে বসে থেকে তো আর জানতে পারব না।চলো ওদের দেখেই জেনে আসি।’

জায়ান আরাবীকে টেনে নিয়ে চলল।পেছনে পেছনে নূরও যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো।কিন্তু ফাহিমকে তখনও বসে থাকতে দেখে।আবার ফিরে আসল।কোনো কিছু না বলে ফাহিমের হাতটা চেপে ধরল।উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলে উঠল,
‘ আরে আপনি বসে আছেন কেন?চলুন।’

নূর ফাহিমের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।আর ফাহিম ওর হাত ধরা নূরের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।নূর ওর হাতটা আঁকড়ে ধরতেই।অদ্ভুত অনুভূতি হলো ফাহিমের।যা কোনোদিন অনুভব করেনি ফাহিম।নূরের ওই একটুখানি স্পর্শে যেন ফাহিমের পুরো সত্তা নড়ে উঠেছে।হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছে বেচারার।কেন হচ্ছে এসব?ফাহিম অবাক হয়ে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখল।ওর সামনে দিয়ে এগিয়ে যাওয়া ওই প্রাণোচ্ছল মেয়েটিকে।
______
‘ তোমাকে সুন্দর লাগছে আলিফা।’ আলিফা আজ একটা কালো রঙের ফ্লোরাল গাউন পরে এসেছে।ইফতি যেন চোখ সরাতে পারছে না।মেয়েটাকে অনেক সুন্দর লাগছে।তাই মনের কথাটা চেপে রাখতে পারেনি আর।

ইফতির প্রশংসায় আলিফার লজ্জা লাগল।তবে তা বুঝতে দিল না ইফতিকে।মুখ ভেংচি মেরে বলে,
‘ হঠাৎ এতো আদিক্ষেতা কেন করা হচ্ছে শুনি?’

ইফতি ভ্রু কুচকালো।বলল,
‘ আমাকে ভেংচি কাটছ মেয়ে।ভুলে যেও না আমি তোমার বস।’
‘ সেটা অফিসে এখানে না।একদম আমাকে থ্রেড দিবেন না।’

ইফতি থতমত খেয়ে গেলো।বলল,
‘ আচ্ছা কাল অফিসে এসো তুমি।তখন দেখাব মজা।বস হই আমি তোমার।’

আলিফা রাগি স্বরে বলে,
‘ এসব বলার জন্যে আমাকে এখানে এনেছেন?তাহলে বলব আমি ব্যস্ত।বাড়িতে অনেক কাজ আছে আমার।’

ইফতি যেন ধৈর্যহারা হলো।এই মেয়ে এতো বোকা কেন?ওকে নিয়ে ঘুরতে বের হওয়া,একান্তে কিছু সময় কাটাতে চাওয়া।এগুলো কিসের জন্যে ও করছে সেটা কি মেয়েটা বুঝতে পারছে নাহ?ইফতির রাগ লাগল।দাঁতে দাঁত চিপে বলে,
‘ আমি কি জন্যে তোমাকে এখানে এনেছি এখনও সেটা বুঝতে পারো নি?এতো বোকা কেন তুমি?মানুষের সুন্দর মুডটাকে কিভাবে ভেস্তে দিতে হয়।সেটা তুমি খুব ভালোভাবে জানো।’

আলিফা গাল ফুলালো ইফতির কথায়।
‘ আমি বোকা না আপনি বোকা।খামোখা এখানে এনে আমার সাথে ঝগড়া করছেন।কেন এনেছেন আমাকে এখানে?’
‘ বিকয আই লাভ ইউ ইডিয়ট।’

ইফতির মুখে ‘ আই লাভ ইউ!’ শুনে থমকে গেলো আলিফা।স্তব্ধ হয়ে রইলো। সে আগে থেকেই জানত ইফতি ওকে ভালোবাসে।ও মেয়ে মানুষ।মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুবই প্রখর হয়।তারা খুব সহজেই মানুষের চোখ পরতে পারে।ওই চোখের দিকে তাকালেই বুঝতে পারে মানুষটার উদ্দেশ্য খারাপ নাকি ভালো।
সে হিসেবে আলিফাও অনেক আগে থেকেই অনুভব করতে পেরেছে ইফতি ওকে ভালোবাসে।কিন্তু আজ ইফতির মুখে ভালোবাসার স্বীকারোক্তি শুনে কেমন যেন সুখ সুখ অনুভূতিতে আলিফার হৃদয় ছেঁয়ে গেলো।চোখ বুঝে ফেলল আলিফা।ইফতি আবারও বলতে লাগল,
‘ জানি না কিভাবে কিভাবে যেন তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি আমি আলিফা।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি।ভাইয়ার বিয়েটা শান্তিমতো হলেই আমি তোমাকে বিয়ে করে নিব।’

চট করে তাকায় আলিফা।আবেগঘন হয়ে উঠে মুহূর্তেই।মুখ খুলে কিছু বলতে নিবে।তার আগেই শুনতে পায় প্রাণোচ্ছল র কণ্ঠে বলা কিছু কথা,
‘ ও আচ্ছা।সো তোমরা এখানে ডেটে এসেছ?আবার দুজনে মিলে বিয়েসাধির ব্যাপারেও কথা বলা হচ্ছে?’

আলিফা সামনে তাকাতেই হা হয়ে যায়।ওর সামনে জায়ান,আরাবী,নূর আর ফাহিম দাঁড়ানো।জায়ান গিয়ে ইফতির ঘাড়ে হাত রাখল।ইফতি ঘাড় ঘুরিয়ে বড়ো ভাইকে দেখে জোড়পূর্বক হাসল।জায়ান গম্ভীরমুখে বলল,
‘ সো দিছ ইজ হাও ইয়্যু রেস্ট।চাচ্চু আর ছোটোমাকে বিষয়টা জানাতে হয়।’

ইফতি চট করে উঠে দাঁড়ায়।আমতা আমতা করে বলে,
‘ ভাই..আসলে.. হয়েছি কি…’

জায়ান তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে,
‘ আসলে নকলে জানি না।আমি স্ট্রেট ফোরওয়ার্ড কথা বলতে পছন্দ করি।তাই জিজ্ঞেস করছি।তুই কি আলিফাকে সত্যি ভালোবাসিস?বেহুদা কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাই না আমি।সোজাসাপ্টা জবাব চাই।’

ইফতি জোড়ালো নিঃশ্বাস ফেলল।না এখানে হকচকানোর কিছু হয়নি।সে ভালোবেসেছে।আর ভালোবাসার কথা বুক ফুলিয়ে বলতে হয়।ইফতি তাই করল,
‘ হ্যা ভাইয়া।আমি আলিফাকে ভালোবাসি।আর ওকে বিয়ে কর‍তে চাই।’
‘ যাক শুনে ভালো লাগল।’

জায়ান এইবার আলিফার দিকে তাকালো।আলিফা খানিকটা ভড়কে গেলো।জায়ান মুচঁকি হেসে বলে,
‘ আরাবীর ফ্রেন্ড তুমি।সেই হিসেবে আমি সালিসাহেবা এখন।তো তুমিও কি ইফতিকে ভালোবাসো?ওকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি তোমার আছে?’

জায়ানের সোজাসাপ্টা প্রশ্নে আলিফা লজ্জা পেলো।আরাবীকে গিয়ে আলিফার কাধ জড়িয়ে ধরল।মুচঁকি হেসে বলে,
‘ আরে বলে ফেল।আমিও জানি তুই আমার দেবরকে ভালোবাসিস।’

আলিফা হাসল।লজ্জায় কথা বের হচ্ছে না বেচারির।তাই মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলো।
জায়ান শান্ত চোখে দুজনকে দেখে নিয়ে বলে,
‘ তোমরা দুজন যেহেতু দুজনকে ভালোবাসো।তাই এখানে আমার কোনো আপত্তি নেই।ফ্যামিলি চিন্তা করতে হবে না।ওদের আমি সামলে নিব।’

ইফতি আর আলিফা দুজনে বেশ খুশি হলো।দায়িত্বটা যেহেতু জায়ান নিয়েছে তাহলে আর চিন্তা নেই।পরবর্তী সময়টা ওরা একসাথে বেশ আনন্দের সাথেই কাটালো।

#চলবে_____
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন। জানি ছোটো হয়েছে।আজকের দিনটা মানিয়ে নিন।ইনশাআল্লাহ আগামীকালও গল্প দিবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here