স্নিগ্ধ_কাঠাগোলাপ #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #পর্বঃ৩৪

0
708

#স্নিগ্ধ_কাঠাগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৪

প্রচণ্ড অস্বস্তি নিয়ে বসে আছে নূর।ওর অস্বস্তির একটাই কারন।আর তা হলো এখন ওর পাশে বসে আছে আহাদ।যে নূরের বাগদত্তা।আহাদ নূরের হাতটা মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে রেখেছে।নূর চেয়েও পারছে না বলতে।যে আপনি সরে যান।আপনার এই স্পর্শ আমার সহ্য হচ্ছে না।এভাবে ওকে স্পর্শ করবে।ওর যত্ন করবে।তা একজনকে নিয়েই কল্পনা করেছিলো নূর।আর সেটা হলো ফাহিম।কিন্তু এই কথাগুলো বলার সাধ্যি যে ওর নেই।কিভাবেই বা বলবে ও এই কথাগুলো?আহাদকে কষ্টও দিতে চাইছে না।আবার নিজেও কষ্ট সহ্য করতে পারছে না।এই মর’ণযন্ত্রণা আর নেওয়া যাচ্ছে না কোনোভাবেই।এদিকে নূরের হাতের অনামিকা আঙুলের আংটিটা নড়াচড়া করতে করতে ধীর স্বরে বলে উঠল,’ জায়ান ভাইয়া তো বিয়ে করেই নিলো।এইবার বাড়িতে বলে আমাদের বিয়েটাও যেন জলদি হয়ে যায় এই বিষয়ে আমি কথা বলব।অনেক হয়েছে অপেক্ষা।’

নূরের বুকটা ধ্বক করে উঠল।বিষাদ ভরা চোখে তাকালো আহাদের দিকে।কাঁপা স্বরে বলে উঠল,’ ক..কিন্তু আমার অনার্স শেষ হওয়ার পরে এই বিষয়ে কথা উঠবে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো নাহ?’

আহাদ মুচঁকি হেসে বলে,’ তা আমি জানি।কিন্তু আমার সে সহ্য হয় না।আমার বউকে এইবার যতো দ্রুত সম্ভব আমার বাড়িতে নিয়ে যাবো।পড়াশোনা তো বিয়ের পরেও করা যায় তাই নাহ?’
‘ বাট আ`ম নট রেডি ইয়্যেট।’

আহাদ নূরের হাতটা দুহাতের আঁজলায় শক্ত করে ধরল।নরম গলায় বলে,’ বিয়ের জন্যে কেউ তেমন একটা প্রস্তুত থেকে না নূর।আমি জানি তুমি তোমার পরিবারকে ছেড়ে যাবে, তাদের ছাড়া থাকতে পারবে না।এই ভয়েই এই কথা বলছ।তবে এটাই যে নিয়ম নূর।সবাইকে এই কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়।তবে আই প্রমিস নূর।আমি তোমাকে কখনও কষ্ট দিবো না।সবসময় তোমার পাশে থাকবো।তোমার ব্যক্তি স্বাধীনতায় কখনও হস্তক্ষেপ করব না।ইয়্যু জাস্ট হ্যাভ টু ট্রাস্ট এন্ড লাভ মি।’

নূর মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে ধরল।আহাদের কথাগুলো কিন্তু খুব সুন্দর আর গোছালো।তারপরেও আহাদের এই গোছানো কথাগুলোই নূরের কাছে তিক্ত মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে এই কথাগুলো তীব্রভাবে আঘা’ত করছে ওর বুকের বা-পাশটায়।নূরের চোখ ছলছল করে উঠল।শেষে এক ফোটা অশ্রুকণা ওর গাল ভিজিয়ে দিয়ে গড়িয়ে পরল।আহাদের চক্ষু সেটা এড়ায় না।আহাদ নূরের চোখের পানিটুকু মুছে দিলো।গালে আহাদের স্পর্শ পাওয়ায় চমকে তাকায় নূর।আহাদ বিচলিত কণ্ঠে বলে,’ আহা,এইভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদছ কেন নূর?বিয়ে করব এটা বলেছি।তার মানে এই না যে এখনই তোমাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছি তোমার পরিবার থেকে।এভাবে কেঁদো না তো মেয়ে।আমার তোমার কান্না সহ্য হয় না।তুমি হাসলেই তোমাকে মায়াবতী লাগে।’

নূর চুপচাপ আহাদের দিকে তাকিয়ে আছে।আহাদ ভাবছে নূর পরিবার থেকে দূরে চলে যাবে এই জন্যে কাঁদছে।কিন্তু আহাদ তো জানেই না।নূর কাঁদছ ওর ভালোবাসা হারানোর ভয়ে।যাকে এতোগুলো বছর যাবত মনের মণিকোঠায় রাজত্ব করতে দিয়েছিলো তাকে সরিয়ে ফেলতে হবে।এই ভয়ে কাঁদছে।নূর কিছুতেই ফাহিমকে ছাড়তে পারবে না।কোনো একটা উপায় খুঁজে বের করতে হবে।আর যদি কোনো উপায় না পায় তবে নিজেকে শেষ করে দিবে।তবুও আহাদকে বিয়ে করবে না।এই মন তো কবেই সে ফাহিমের নামে লিখে দিয়েছে।সেখানে এই দেহে কেন অন্যকারো আধিপত্য করতে দিবে?কোনোদিন হবে না।
নানান রকম এলোমেলো চিন্তাভাবনা কিলবিল করছে নূরের মাথায়।আহাদ ছেলেটা নূরকে খুব ভালোবাসে এটা সত্যি।আহাদের চোখে ভালোবাসা দেখতে পায় নিজের জন্যে নূর।নূরকে যেন চোখে হারায় ছেলেটা।আহাদ দেখতে শুনতে যেমন সুদর্শন।তেমন তার চলাফেরা,আচার-আচরণও খুব সুন্দর আর মার্জিত।আহাদের পরিবারও খুব ভালো।কোনোরকম খামতি নেই।তবুও কেন নূর আহাদকে ভালোবাসতে পারলো না?এতো এতো বোঝানোর চেষ্টা করেছে মনকে।কিন্তু এই মনটা মানতেই চায়না।সে তার আধিপত্য ফাহিমকে দিয়েছে।ফাহিম ছাড়া ওর জীবনে অন্যকারো অস্তিত্ব সহ্য করতে পারে না নূর।নাহ,এভাবে আর চলবে না।এই সম্পর্কের ইতি টানতে হবে।নূর আহাদকে সরাসরি বিষয়টা জানানোর জন্যে মুখ খুলল।কিন্তু আহাদের ওই সরল চোখের চাহনী নূরকে থামিয়ে দিলো।কিভাবে পারবে নূর এই ছেলেটাকে কষ্ট দিতে?কিভাবে?দোষটা তো আহাদের নাহ?দোষটা তো ওর।অন্য একজনের বাগদত্তা হয়েও সে আরেকজনকে ভালোবেসেছে।এটা তো অন্যায়।কিন্তু এই অন্যায় অবিচার কি ভালোবাসা মানে?মানে না তো।তাই তো নূর ভালোবেসেছে ফাহিমকে।
নূর ভেতরে ভেতরে গুমড়ে ম’রছে।সে জানে একতরফা ভালোবাসায় কতো কষ্ট।কতোটা যন্ত্র’ণা।সেই একই যন্ত্রণায় কিভাবে আহাদকে ঠেলে দিতে পারে ও?যেখানে ছেলেটার কোনো দোষ নেই।

নূরকে এইভাবে অন্যমনস্ক দেখে আহাদ নূরের মুখের সামনে তুরি বাজালো।নূরের ধ্যান ফিরল।আহাদ বলে,’ কোথায় হারিয়ে গেলে?’
‘ ক..কিছুনা। ওই এমনি।’

আহাদ গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করল।নূর এতে হকচকিয়ে গেলো।চরম অস্বস্তিবোধ হচ্ছে ওর।আহাদ ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন করল,
‘ নূর একটা কথা বলবে?’
‘ কি?’
‘ আমি যখনই তোমার কাছে আসি।তোমার পাশে বসি।তোমার দিকে তাকাই।তুমি কেমন যেন করো।মনে হয় আমার সান্নিধ্যে তোমার অস্বস্তি হচ্ছে।নূর তোমার প্রবলেমটা কোথায়?ইয়্যু ক্যান সেয়ার উইথ মি।হোয়াটস রং নূর?জাস্ট ট্যাল মি।’

নূর এদিক সেদিক তাকালো।এই ছেলেটা যেন ওকে আগাগোড়া পড়ে নিতে পারে।এতো ভালো কেন হতে হবে ওকে?আহাদের এই সরলতা এই নম্র,ভদ্র আর এই ভালো ব্যবহারের কারনেই তো নূর চেয়েও পারছে না আহাদকে সত্যিটা বলতে।ছেলেটা যে অনেক কষ্ট পাবে।এই সহজ,সরল, প্রাণবন্ত ছেলেটা মূর্ছা যাবে।এইভাবে নিস্পাপ একটা মানুষকে কষ্ট দিয়ে নূর সুখী হতে চায় না।আহাদ আবারও শান্ত স্বরে বলে,’ জাস্ট রিল্যাক্স নূর।টেইক ইট ইজি।এইভাবে ঘামছ কেন?’

নূর শুকনো ঢোক গিলল।আহাদ হালকা হাসল।এইবার নূরের হাতটা টেনে আনল মুখের সামনে।উদ্দেশ্য নূরের হাতের উল্টোপিঠে ঠোঁটের ছোঁয়া দিবে।এই প্রথম আহাদ এমন কিছু করার পরিকল্পনা করল।নাহলে সবসময় নূরের হাত ধরা পর্যন্তই ওর স্পর্শ করার সীমাবদ্ধতা ছিলো।
এদিকে নূর আহাদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে চট করে আহাদের থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিলো।উঠে দাঁড়ালো।এক্ষুণি এটা কি করতে চাইছিলো আহাদ?
নূর আমতা আমতা করে বলে উঠল,
‘ আমার শরীরটা ভালো লাগছে না।আজ সারাদিন ছোটাছুটি করেছি তো অনেক।তাই মাথা ব্যথা করছে।আমি রুমে যাই।গিয়ে একটু ঘুমাব।’

এদিকে আহাদ স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলো।নূরের অকস্মাৎ এমন ব্যবহারে অনেকটা অবাক হয়েছে।পরপর নূরের কথায় হুশ আসল আহাদের।নিজের কাজে নিজেই লজ্জা পেলো আহাদ।নাহ,কাজটা ঠিক হয়নি।এইভাবে নূরের অনুমতি না নিয়ে এতোদূর আগানো উচিত হয়নি।মেয়েটা বোধহয় অনেক লজ্জা পেয়েছে।সেই সাথে ভয়ও পেয়েছে।পাবেই তো।আহাদ তো আর কোনোদিন এসব চিন্তাভাবনাও মাথাতে আনেনি।আহাদও উঠে দাঁড়ালো। মোলায়েম স্বরে বলে,
‘ আ`ম সরি নূর।তোমার থেকে পার্মিশন না নিয়ে আমার এভাবে আগানো উচিত হয়নি। আ`ম এক্সট্রেমলি সরি।’
‘ ই..ইটস ওকে।ক্যান আই গো নাও?’

আহাদ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।তারপর কিছু একটা ভেবে বলে,
‘ বেশি খারাপ লাগছে?আমি কি তোমাকে রুম পর্যন্ত এগিয়ে দিবো।’
‘ গার্ডেন থেকে রুমে যাবো।ইটস ইজি।সমস্যা নেই আমি যেতে পারবো।’

নূর আর সময় অপচয় করল না একছুটে চলে আসল ওর কক্ষে।এদিকে আহাদ নিশ্চুপ চোখে নূরের প্রস্থান দেখল।মাঝে মাঝে নূরকে দেখলে কেমন যেন লাগে আহাদের।অন্যসব কাপলদের মতো ওরা না।একটা স্বাভাবিক কাপলরা যেভাবে তাদের লাইফ লিড করে তেমন না।অফিসের কাজে আহাদ এমনিতেই ব্যস্ত থাকে।তেমন একটা সময় দিতে পারে না নূরকে।আর যখনই সময় পায়।তার সবটা সে নূরকে দিতে চায়।যাতে নূর ওর সাথে কম্ফোর্ট্যাবল হয়।ও নূরকে আর নূর ওকে বুঝতে পারে যেন।কিন্তু আহাদের মনে হয় ওর এতো প্রচেষ্টা সবকিছুই বিফলে যাচ্ছে।সে যতোই নূরের সাথে ইজি হবার চেষ্টা করুক না কেন?নূর কেমন যেন ওর থেকে পালিয়ে বেড়াতে চায়।সে জানে ওদের বিয়েটা পারিবারিকভাবেই ঠিক হয়েছে।তাই নূরের ওর সাথে একটা স্বাভাবিক সম্পর্কে আসতে টাইম লাগবে।নাহ,আহাদও আরও অপেক্ষা করবে।মেয়েটা ও ভালোবাসে।যখন নূরকে প্রথমবার আহাদরা ওর ফ্যামিলি নিয়ে দেখতে আসে।তখনই নূরকে প্রথম দেখাতেই আহাদের ভালো লেগে যায়।সেই ভালোলাগা থেকে আস্তে আস্তে ভালোবাসা।
আহাদ নূরকে অনেক ভালোবাসে।ভালোবাসার মানুষটার জন্যে আহাদ সব করতে পারবে,সব।
আহাদ নূরকে কখনও কষ্ট পেতে দেখতে পারে না।নূরকে হাসিখুশি রাখার জন্যে আহাদের যা করতে হবে আহাদ করবে।লাগলে ওর প্রাণটাও কু’রবান করে দিবে।তাও যেন মেয়েটা সুখে থাকে।ভালো থাকে।এখন থেকে নূরকে আরও বেশি বেশি সময় দিবে ভাবল আহাদ।এই অল্প সময়ে মেয়েটার কাছাকাছি আসা যাবে না।ওর সাথে বেশি বেশি টাইম স্পেন্ড করবে।তাহলে নূর ইজি হবে ওর সাথে।নূরের সব জড়তা কেটে যাবে।

#চলবে__________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here