#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৯
মনোমুগ্ধকর একটা সকাল শুরু হলো আরাবীর।বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে ও।লাবণ্যময়ী লাগছে আরাবীকে।মেয়ের হাসিখুশি চেহারা দেখে জিহাদ সাহেব আর লিপি বেগমও বেশ খুশি।
আজ আরাবী সুন্দর একটা বেবি পিঙ্ক রঙের সেলোয়ার কামিজ পরেছে।হালকা সেজেছেও মেয়েটা।উদ্দেশ্য আজ অফিসে যাবে।জায়ান বলেছে ওকে বিয়ের আগ পর্যন্ত অফিসে যেতে।এরপর বিয়ের পরেও যদি ও অফিস করতে চায় সমস্যা নেই জায়ানের।সম্পূর্ণটা ওর মতামত।এখনও জোড় করতো না।তবে শুধু আরাবীকে প্রতিদিন দেখতে পাবে।ঠিক এই কারনেই জায়ান আরাবীকে অফিসে যেতে বলেছে।ফাহিম খাবার টেবিলে ফাহিম এসে আরাবীকে তৈরি দেখে বলে উঠে,
‘ কিরে কোথাও যাচ্ছিস?’
আরাবী জুস খেতে খেতে বলল,
‘ হ্যা অফিসে যাচ্ছি।কেন?’
ফাহিম ভেবেছিলো আরাবী আর অফিসে যাবে না।তাই এমন প্রশ্ন করেছিলো।তবে এখন যখন যাচ্ছে এতে আপত্তি নেই ফাহিমের।ও বলে,
‘ হুম! দ্রুত নাস্তা কর।তোকে নামিয়ে দিয়ে আমি কলেজে যাব।’
‘ আচ্ছা।’
নাস্তা সেরে ফাহিম আর আরাবী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলো।আরাবীকে অফিসের সামনে নামিয়ে দিয়ে ফাহিম চলে গেলো।আরাবী অফিসে আসল।দূর থেকে ওকে দেখে ছুটে আসল আলিফা।এসেই আরাবীকে ঝাপ্টে ধরল।খুশিতে বাকবাকুম হয়ে বলতে লাগল,
‘ আমি জানতাম এমনটাই হবে।তোকে জায়ান স্যার এতো সহজে ছাড়বেই না।অবশেষে দেখ আমার ধারণাটাই সঠিক হলো।’
আরাবী বেশ অবাক হলো আলিফার কথায়।বলল,
‘ তুমি..মানে তুই কিভাবে? মানে?’
আলিফা আরাবীকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো। হেসে বলে,
‘ আমায় ইফতি স্যার বলেছে।আর তাছাড়া আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিলো যে জায়ান স্যার তোকে পছন্দ করে।ওইযে ওইদিন স্ট্রোররুমে তুই অসুস্থ হয়ে পরলি নাহ?জায়ান স্যার যেন পাগল হয়ে গিয়েছিলো তোকে ওই অবস্থায় দেখে। কি পাগলামিটাই না করেছিলো। এতেই আমার সন্দেহ হয়েছিলো জায়ান স্যার তোকে পছন্দ করেন।তবে ইফতি স্যারের থেকে জানতে পারলাম স্যার তোকে প্রচন্ড ভালোবাসেন।’
আরাবী আলিফার কথায় লজ্জা পেলো।আলিফা দুষ্টু হেসে বলে,
‘ ইশ,লজ্জা পাচ্ছে দেখি আমাদের আরাবী। লজ্জা পেলে তোকে অনেক মায়াবী লাগে।জায়ান স্যার দেখলে পাগল হয়ে যাবে।’
আরাবী মুখ ফসকে বলে ফেলল,
‘ সে এমনিতেই পাগল।কিসব বলে আমাকে।লজ্জায় আমি মাথা উঠাতে পারি না।’
কথাটা বলে যেন নিজেই ফেসে গেলো আরাবী।আলিফা আরাবীকে খোচাখুচি করতে লাগল।
‘ এই আরাবী বল না?কি বলে জায়ান স্যার তোকে?বল না?কিরে?আরে লজ্জা পাচ্ছিস কেন?আমিই তো।অনেক রোমান্টিক স্যার তাই নাহ?তোকে দেখেই তো বোঝা যাচ্ছে।আহা,আমার যে কবে বিয়েটা হবে।আমিও যে কবে তোর মতো একটা জায়ান স্যার পাবো?’
‘ জায়ান স্যারের আশা বাদ দিয়ে দেও।আপাততো নিজের ইফতি স্যারকে আগে সামলাও।আর অন্য মানুষের রোমান্টিক কথাবার্তা শোনা পাপ।চলো আমিই তোমাকে স্পেশালভাবে রোমান্টিক কথাবার্তা কাকে বলে শোনাচ্ছি।’
এই বলে ইফতি খপ করে আলিফার হাত চেপে ধরল।আলিফা অকস্মাৎ এমন করায় চমকে উঠল।পরক্ষণে সম্পূর্ণ ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই চেচিয়ে উঠল,
‘কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?আমি যাবো না।ছাড়ুন?’
ইফতি টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলছে,
‘ ছাড়বো কেন?রোমান্স সম্পর্কে জানবে না?’
এইবার আরাবীর দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ ভাবি একটু ম্যানেজ করে নিন।আমি আপনার বান্ধবীকে নিয়ে যাচ্ছি।সমস্যা নেই ভাইয়া একটু পরেই আসছে।’
আলিফাকে নিয়ে ইফতি চলে গেলো।এদিকে ইফতির কথায় আরাবী থম মেরে রইলো।একেতো ওকে হঠাৎ করে ‘ ভাবি ‘ ডাকায় বুক ধ্বুকপুক করছে।তার উপর এভাবে ওকে লজ্জা দিলো।জায়ান আসছে এটা ওকে জানিয়ে দিয়ে কি বুঝালো?
তা নিয়ে আর ভাবলো না আরাবী।তবে এটুকু বুঝতে পেরেছে আলিফা আর ইফতির মাঝে সামথিং সামথিং চলছে।
আরাবী নিজের ডেস্কে গিয়ে বসল।কিছু কাজ বাকি আছে।তা এখন বসে বসে করবে আরাবী।অফিসে দু একজন ছাড়া কেউ আসেনি।আর যারাই এসেছে সবাই ক্যান্টিনে।অফিস আওয়ার শুরু হতে এখনও বিশ মিনিট বাকি।
একমনে কাজ করতে লাগল আরাবী।অনেকটা সময় কেটে গেলো এভাবে।তারপর কাজের ফাঁকে হঠাৎ কিছু কথায় আরাবীর হাতজোড়া থেমে গেলো।ওর পাশের ডেস্কের তিনজন মেয়ে এসেছে।তারা নিজেদের মাঝে কথা বলাবলি করছে।তাদের মাঝে একজন বলছে,
‘ এই তোরা শুনেছিস জায়ান স্যার নাকি এখন এংগেজড।গতকাল নাকি তার বাগদান হয়েছে।’
সাথের মেয়েটা শুনে অবাক হয়ে বলে,
‘ কি বলছিস?হঠাৎ করে কিভাবে মানে?’
অপর মেয়েটা বলল,
‘ আরে কিসের হঠাৎ করে?স্যারের গার্লফ্রেন্ড আছে না?আহানা ম্যাম।তার সাথেই হবে।এটা তো আমরা সবাই-ই জানি।’
‘ ওহ হ্যা ঠিক বলছিস।যা বলিস দুজনকে মানায় কিন্তু অনেক।একদম মেড ফোর ইচ-আদার।আহান ম্যামও কি সুন্দর দেখতে।পুরো যেন বিদেশি পুতুল একটা।’
‘ যাক খবরটা শুনে খুশি হলাম।’
আরও নানান কথা বলতে লাগল তারা।এদিকে তাদের কথপকথন সম্পূর্ণটাই শুনেছে আরাবী।কেমন যেন ঝিম মেরে বসে রইলো কতোক্ষণ।এসব কি শুনছে সে?জায়ানের প্রেমিকা আছে?সে অন্য কাউকে ভালোবাসে?তবে যে লোকটা প্রতিনিয়ত ওকে বলে যে সে ওকে ভালোবাসে।কিন্তু এখন আবার কি শুনছে এসব?
আরাবী মাথা দুলালো।নাহ,এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।অন্যদের কথায় কান দিবে না আরাবী।জায়ানের মুখ থেকে সব শুনবে।জায়ান যা বলবে সেটাই আরাবী মেনে নিবে।অচেনা অজানা মানুষদের জন্যে নিজের হবু বরকে সন্দেহ করা একদম ঠিক নাহ।আরাবী আর ওই মেয়েদের কথায় কান দিলো না।চুপচাপ নিজের কাজে মন দিলো।মিনিট পাঁচেক পর জায়ানকে দেখা গেলো।সে মাত্রই অফিসে এসেছে।জায়ানকে দেখে সবাই শুভ সকাল জানালো।আরাবীও বাদ যায়নি।তবে তাকায়নি জায়ানের দিকে।এদিকে জায়ান ভ্রু-কুচকে আরাবীকে দেখছে।কিন্তু কিছু না বলে নিজের অফিসরুমে চলে গেলো।এর কিছুক্ষণ পরেই আরাবীর ল্যান্ডলাইনে ফোন করল জায়ান।আরাবী হ্যালো বলতেই জায়ান বলে উঠে,
‘ দ্রুত আমার কাছে এসো।পাঁচ মিনিটে আমার কাছে আসা চাই।’
এটা বলেই ফোন রেখে দিলো জায়ান।এদিকে আরাবী ছোটো মুখ করে ধীর পায়ে চলে এলো জায়ানের অফিসরুমের সামনে।
‘ ম্যে আই কাম ইন স্যার?’
‘ ইয়েস।’
আরাবী দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল।করতেই সম্মুখে জায়ানকে দেখে ভড়কে গেলো আরাবী।লোকটা এভাবে ভুতের মতো সামনে এসে দাঁড়াবে ভাবেনি একদম।বড্ড ভয় পেয়েছে মেয়েটা।এদিকে আরাবীর ভীতু মুখশ্রী দেখে মৃদ্যু হাসল জায়ান।তারপর দরজাটা হাত বাড়িয়ে ভালোভাবে লক করে দিলো।এরপর দু হাত বুকের মাঝে আড়া-আড়িভাবে ভাঁজ করে রেখে গম্ভীর স্বরে বলে উঠে,
‘ কি সমস্যা তোমার?’
আরাবী এদিক সেদিন নজর ঘুরিয়ে বলল,
‘ কি সমস্যা?কোনো সমস্যা নেই।’
‘ আরাবী আমার চোখের দিকে তাকাও।’
জায়ানের শীতল কণ্ঠস্বর কানে আসতেই মৃদ্যু নড়েচড়ে উঠল আরাবী।তবুও তাকালো না জায়ানের দিকে।
জায়ান আবার বলল,
‘ তখন আমাকে ইগনোর করলে কেন?আমার দিকে তাকালে না কেন?কি হয়েছে?’
এইবারও চুপ রইলো আরাবী।তবে জায়ান যে এতো ধৈর্য ধরার মানুষ না।জায়ান আরাবীর হাতটা ধরে একটানে ওকে নিজের বক্ষস্থলে এনে চেপে ধরল।ঠিক প্রথমবার জায়ানের এতোটা কাছে এসে যেন আরাবীর নিঃশ্বাস ব’ন্ধ হয়ে গেলো।হৃদস্পন্দন বেড়ে দ্বিগুন হলো।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো।এসব কি করছে লোকটা?এভাবে কাছে কেন আসছে?আরাবী জায়ানের বুকে হাত ঠেকিয়ে ওকে সরানোর চেষ্টা করতে লাগল।কিন্তু আরাবীর মতো ওতোটুক বিড়াল ছানার শরীর নিয়ে কি ও জায়ানের দানবীয় দেহটাকে সরাতে পারবে?একদমই না।তাই কতোক্ষণ দস্তাদস্তি করে থেমে গেলো আরাবী।সে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।ওমন লোহার শরীরের লোকটার সাথে কি সে পারে?আরাবীকে থেমে যেতে দেখে বাঁকা হাসল জায়ান। ভ্রু উঁচু করে বলে উঠে,
‘ কি? শক্তি শেষ?এই শরীর নিয়ে আসো আমার সাথে দস্তাদস্তি করতে?’
জায়ান আরাবীকে এইবার আরও গভীরভাবে জড়িয়ে ধরল।ঠাটিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো আরাবী।শক্ত হয়ে লেপ্টে রইলো জায়ানের বুকের মাঝে।জায়ান আরাবীর চুলের ভাজে মুখ গুজল।গভীর এক নিঃশ্বাস টেনে নিয়ে বলল,
‘ আহ!আ`ম গোগিং ক্রেজি ফোর ইয়্যু আরাবী।আই ওয়ান্ট টু হোল্ড ইয়্যু লাইক দিছ ফোর দ্যা রেস্ট ওফ মাই লাইফ।’
থামলো জায়ান।ঘন ঘন নিঃস্বাস টেনে নিলো কিছুক্ষণ।অতঃপর বলল,
‘ চুলে কি দেও আরাবী?এতো সুন্দর ঘ্রাণ কেন?আর তোমার শরীর থেকে অদ্ভুত সুন্দর ঘ্রাণ আসছে।আর তুমি কি খাও বলো তো?শরীরটা একদম তুলোর মতো নরম।ঠিকঠাক ধরার সাহজটুকুও করতে পারছি না।যদি ব্যথা পাও?’
এদিকে আরাবী লজ্জায় যেন ম’রে যাচ্ছে।এই কোন লোকের পাল্লায় পরলো ও?এতো ঠোঁটকাটা মানুষ হয়?এই লোককে দেখে জীবনেও কেউ ভাবতে পারবে না।এই লোক এতো অস’ভ্য চিন্তাভাবনা মাথায় নিয়ে ঘুরে।
এদিকে জায়ান এইবার আরাবীর কানের কাছে মুখ আনলো।ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ আরাবী আই ওয়ান্না কিস ইয়্যু।তোমার ঠোঁটজোড়া এতো আকর্ষনীয় কেন?স্ট্রবেরির মতো লাগে।ইয়্যু নো হোয়াট?আই লাভ স্ট্রবেরিস।’
আরাবী জায়ানের এইসব লাগামছাড়া কথাবার্তা টর্চার আর সহ্য করতে পারলো না।লজ্জা থেকে বাঁচার জন্যে।মেয়েটা লজ্জা দেওয়ার ব্যক্তির বক্ষপিঞ্জরেই নিজেকে লুকিয়ে নিলো।লজ্জা মাখা কণ্ঠে বলল,
‘ চুপ করুন।আমাকে এভাবে আর লজ্জা দিবেন না প্লিজ।’
এদিকে আরাবীর কান্ডে কিয়ৎক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে জায়ান।পর পর ওর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে।আরাবীকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে নিজের বক্ষপিঞ্জরায় ভালোভাবে লুকিয়ে নেয়।কারন তার কাঠগোলাপের যে বড্ড লজ্জা।আর সেই লজ্জা লুকোতে মেয়েটা ওর বুকেই আশ্রয় নিয়েছে।এই সুযোগ কিভাবে হাত ছাড়া করবে জায়ান?করবে না, একদম করবে না।
#চলবে_______
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।