স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #পর্বঃ২৬

0
711

#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৬
‘ সরি আরাবী।আমি আহানাকেই বিয়ে করব।তোমাকে বিয়ে করা এখন আমার পক্ষে সম্ভব না।যতোই আমি বলি তোমার গায়ের রঙে আমার কিছু যায় আসে না।কিন্তু দিনশেষে এইটাই ম্যাটার করবে।সমাজ তোমাকে কটু কথা শোনাবেই তো সাথে আমাকে আর আমার ফ্যামিলির মানুষদেরও শুনতে হবে।আর তোমার ফ্যামিলি স্ট্যাটাসও আমার সাথে যায় না।মানে তুমি আমি কোনোভাবেই একে-অপরের হতে পারি না।আমি এখন বুঝতে পারছি। তুমি আমার মোহ ছিলে।ভালোবাসা না।তুমি আমি কোনোদিন এক হবো না।ভালো থেকো আরাবী।’

জায়ানের মুখনিঃসৃত এক একটা নিষ্ঠুর বাক্যগুলো আরাবীর হৃৎপিণ্ডটা মনে হয় ঝা’ঝরা করে দিলো।কি অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের বা-পাশটায়।আহ,এতো কষ্ট কেন?এটা তো হবারই ছিলো তাই নাহ?ও আগেই বলেছিলো ও শুধু মাত্র জায়ানের মোহ ছিলো।যেটা কেটে গেলে জায়ান ওকে ছুড়ে ফেলে দিবে।কিন্তু ও তো লোকটাকে পছন্দ করে ফেলেছে।ভালোলাগে লোকটাকে ওর ভীষণ।আরাবীর অশ্রুধারা চোখ দিয়ে অবিরাম ঝরছে।নিঃশ্বাস নিতে এতটা কষ্ট কেন হচ্ছে?আরাবী বুকের বা-পাশটা খামছে ধরল।হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠল,
‘ আমাকে ছেড়ে যাবেন না এভাবে।আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।এভাবে বিয়েটা ভেঙ্গে দিলে আমি আর আমার বাবা মা সমাজে মুখ দেখাবে কিভাবে?আর তাছাড়া আপনাকে আমি আমার হৃদয়ে জায়গা দিয়েছি।ভালোলাগে আপনাকে আমার।এমনটা বলবেন না।’

জায়ান আজ কেমন নিষ্ঠুর হয়ে গেলো।একবারও আরাবীর ওই মায়াময়,কোমল মুখটার দিকেও তাকালো না।শক্ত কণ্ঠে বলে,
‘ আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল।আমাকে আর ফলো করবে না।তুমি তোমার রাস্তায় যাও।আমি আমার রাস্তায়।’

এই বলে জায়ান পিছনে ঘুরে গেলো।তারপর একপা দুপা করে চলে যেতে লাগল।আরাবী চিৎকার করে উঠল।কেঁদে কেঁদে জায়ানকে যেতে মানা করছে।কিন্তু জায়ান যেন আজ আরাবীর এই করুণ স্বরের ডাক শুনতেই পাচ্ছে না।তা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে জায়ান আস্তে আস্তে ধোঁয়ায় মিলিয়ে গেলো।আরাবী হাত বাড়িয়েও ধরতে পারল না জায়ানকে।হারিয়ে ফেলল জায়ানকে আরাবী।আরাবী ধপ করে বসে পরল।চিৎকার করে কেঁদে উঠে,
‘ আমাকে ছেড়ে যাবেন না জায়ান।যাবেন না।আমি ম’রে যাচ্ছি জায়ান।এতো বড়ো কষ্ট আমাকে দিবেন না জায়ান।’
________
আরাবীর চোখের জলে জায়ানের পরিহিত শার্ট ভিজে যাচ্ছে। আরাবীকে বুকে নিয়ে সোফায় বসে ছিলো জায়ান।ডক্টর এসে আরাবীকে দেখে গিয়েছিলো।আরাবীর প্যানিক এট্যাক হয়েছিলো। ডক্টর দেখে যাওয়ার পর সবাই জায়ান আর আরাবীকে একা অফিসরুমে রেখে চলে গিয়েছিলো।জায়ান আরাবীকে খুব যত্নে বুকের মাঝে আগলে নিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।আরাবীর ফোঁপানোর আওয়াজে আর ওর চোখের জলে শার্টে ভেজা ভেজা অনুভব হওয়ায় জায়ানের ঘুম ছুটে যায়।ঘুমের মধ্যে আরাবীকে এতো করুণভাবে ফোঁপাতে দেখে অস্থির হয়ে উঠে জায়ান।এভাবে কাঁদছে কেন মেয়েটা?কিসের এতো ভয়?জায়ান দেখল আরাবী জায়ানের বুকের কাছের শার্টটা শক্ত করে খামছে ধরে আছে।যেন জায়ান কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে।আর আরাবী জায়ানকে কিছুতেই হারাতে দিবে না।আরাবী কান্নার মাঝেই বিরবির করে কিছু বলছে।জায়ান শোনার জন্যে কান পাতল।
‘ আমাকে ছেড়ে যাবেন না ।আপনি যা বলবেন আমি তাই করব।আমি ম’রে যাব।আমার কষ্ট হচ্ছে। ফিরে আসুন আমার কাছে।ফিরে আসুন জায়ান।’

জায়ানের নামটা খুব করুণভাবে উচ্চারণ করল আরাবী।জায়ানের প্রেমিক হৃদয় তার প্রিয়তমা কাঠগোলাপের এহেন রূপ দেখে যেন যন্ত্রণায় থে’তলে গেলো।আরাবীর নরম গালে নরম স্পর্শ করে জায়ান ওকে ডাকতে লাগল,
‘ আরাবী?আরাবী?আমি কোথাও যাচ্ছি না।চোখ খোলো আরাবী।এইতো আমি।দেখো তোমার কতো কাছে আমি।তুমি আমার বুকের মাঝে আছো আরাবী।এর থেকে নিরাপদ স্থান আর কোথাও পাবে তুমি?তাকাও আমার দিকে।’

জায়ান আরাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।জায়ানের আদুরে স্পর্শে আর ডাকে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায় আরাবী।কিন্তু অসহ্য মাথা যন্ত্র’ণায় আবারও চোখ বন্ধ করে ফেলে।মাথায় হাত দিয়ে আবারও পিটপিট করে তাকায়।এইবার পূর্ণদৃষ্টিতে আরাবী জায়ানের দিকে।জায়ানকে ওর এতো কাছে।এতো নিকটে দেখে আরাবীর চোখজোড়া ছলছল করে উঠে।কাঁপা হাতটা বাড়িয়ে জায়ানের খোচাখোচা দাঁড়ি সমেত গালে হাত ছোঁয়ায় আরাবী।জায়ান আরাবীর স্পর্শে চোখ বন্ধ করল।আরাবীর সেই হাতের উপর হাত রাখল।এই প্রথম আরাবী নিজ সেচ্ছায় জায়ানের এতো কাছে এসেছে।এভাবে ছুঁয়েছে ওকে।আরাবীর চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরছে।ফুঁপিয়ে উঠল আরাবী।জায়ান থপ করে চোখ খুলল।যত্ন সহকারে আরাবীর চোখের জল মুছে দিলো।কোমল গলায় বলল,
‘ কেন কাঁদছ?এভাবে কেঁদে আমার হৃদয়ে কেন আ’ঘাত করছ?তোমার এক একটা অশ্রু ফোটা আমার বুকে তীব্র ব্য’থা সৃষ্টি করছে।এভাবে কেঁদো না মেয়ে।মর’ণ যন্ত্রণা হয় আমার।’

আরাবী জোড়ে জোড়ে কয়েকটা শ্বাস নিলো।নিজের কান্না থামানোর চেষ্টা করছে।কিছুটা স্বস্তি পেতেই।ভেজা কণ্ঠে বলল,
‘ যদি কোনোদিন লোকজনদের কটু কথায়,তারা যদি তাচ্ছিল্য করে হাসাহাসি আমার কারনে আপনাকে নিয়ে।
তাহলে কি আমাকে ছেড়ে দিবেন আপনি?’

এই বিষা’ক্ত কথাগুলো বলল কিভাবে আরাবী?ভাবতে পারলো কিভাবে?ওর ভালোবাসা কি এতোটাই ঠুনকো?সামান্য লোকজনের কথায় ও আরাবীকে ছেড়ে দিবে?যার মধ্যেই ওর সম্পূর্ণ অস্তিত্ব বিরাজমান।তাকে কিভাবে ছাড়বে জায়ান?রাগ হলো জায়ানের।চোয়াল শক্ত হয়ে আসল।আরাবীর মাথার পিছনে হাত দিয়ে আরাবীর চুল খামছে ধরল।মৃদু ব্যথা পেলো আরাবী।তবে শব্দ করল না কোনো প্রকার।জায়ান দাঁতেদাঁত চিপে বলে,
‘ সাহস কিভাবে হলো তোর?কিভাবে ভাবতে পারলি তুই এসব?আমাকে ভালোবাসিস না ঠিক আছে।সেটা আমি মেনে নিলাম।কিন্তু এসব উল্টাপাল্টা চিন্তাভাবনা করে।এটলিস্ট আমার ভালোবাসাকে ঠুনকো মনে করে তাকে অপমান করিস না।আমি একবার না বহুবার বলেছি।আমি তোর গায়ের রঙ দেখে তোকে ভালোবাসি না।ইয়্যুর স্কিন কালার ড্যাজেন্ট ম্যাটার টু মি।এই একটা কথা কেন বুঝিস নাহ?তোর কি দেখে আমি তোকে ভালোবেসেছি তা আমি নিজেও জানি না।শুধু এটুকু জানি আমি তোকে ভালোবাসি।বুঝেছিস?’

জায়ান ছেড়ে দিলো আরাবীকে।তারপর সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো।নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কিছুতেই।জায়ানের কেভিনের একপাশের দেয়াল সম্পূর্ণ কাঁচের।যেখান থেকে বাহিরের সব কিছু দেখা যায়।জায়ান সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো।রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে শেষমেষ ধুপধাপ করে একেরপর এক ঘুষি সেই দেয়ালে দিতে লাগল।আরাবী হতভম্ব।এতোটা রাগতে জায়ানকে এখনও দেখেনি আরাবী।এটা আজই প্রথমে।ভয় পেয়ে গেলো আরাবী।কিন্তু যখন দেখল জায়ানের হাত ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।দ্রুত ছুটে এলো জায়ানের কাছে।জায়ান আবার একটা ঘুষি মারতে যাবে তার আগেই আরাবী হুট করে জায়ানকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।জায়ানের হাতটা সাথে সাথে থেমে যায়।আরাবী ভাঙা কণ্ঠে বলে,
‘ এমন করবেন না।থেমে যান।আপনার হাত থেকে র’ক্ত ঝরছে।’

জায়ান তাচ্ছিল্য হেসে বলে,’ হাতের ক্ষ’তটা দেখা যায় বলে দেখলে।কিন্তু তোমার কথার আঘাতে যে আমার হৃদয়ে অদৃশ্য ক্ষত তৈরি হয়েছে। সেটা কেন দেখতে পারছ না?কেন বুঝতে পারছ নাহ?’

আরাবী আরও শক্ত করে ধরল জায়ানকে।চোখ বন্ধ করে বলে,’ আমাকে ক্ষমা করে দিন।আসলে আমি একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছিলাম।তাই ভয় পেয়ে ওসব বলে ফেলেছি।আর বলব না।সরি।আপনি একটু শান্ত হোন।’

জায়ান ওর বুকের কাছে থাকা আরাবীর মুঠো হাতজোড়া ছাড়িয়ে নিলো।এটা করায় চমকে গেলো আরাবী।কিছু বলবে তার আগেই আরাবীর হাত ধরে টেনে ওকে নিজের সামনে নিয়ে আসে।এরপর আরাবীকে ঠেলে ওই কাঁচের দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরে।আরাবীর কাঁধের ওড়নার দিকে হাত বাড়াতেই আরাবী চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়।জায়ান ওড়নাটা সরিয়ে ফেলে।তারপর মুখ গুজে দেয় আরাবীর কাঁধে।সেখানে গভীরভাবে ঠোঁট ছুঁইয়ে রাখে।জায়ানের প্রথমবার করা এমন স্পর্শে দিশেহারা হলো আরাবী।থরথরিয়ে কেঁপে উঠল শরীর।দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মেয়েটা।জায়ানের কাঁধে হাত রেখে সেখানটা শক্ত হাতে খামছে ধরে।জায়ান যেন পাগল হয়ে যাচ্ছে আরাবীর দেহের মেয়েলী সুঘ্রাণে।জোড়ে নিঃস্বাস টেনে নিয়ে আবার ছাড়ল জায়ান।জায়ানের নিঃশ্বাসের উষ্ণতা যেখানটায় এসে পরেছে। আরাবীর মনে হলো সেখানটা যেন অসাড় হয়ে গিয়েছে।জায়ান এইবার আরাবীর কাঁধে কাঁমড় দিলো।জায়ানের দন্তাঘাতে ব্যথা পেয়ে আরাবী নিজেই জায়ানের আরও কাছে এসে ওকে শক্ত করে ধরল।কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলো জায়ান।স্থানটা লাল হয়ে গিয়েছে।দাঁতের আঘাতের স্থানগুলো ফুলে গিয়েছে।
জায়ান এইবার সেই আঘাতের স্থানে ফটাফট দু তিনটে চুমু দিয়ে দিলো।তারপর দ্রুত নিজেকে স্বাভাবিক করে সরে আসল।এদিকে যেন প্রথমবার জায়ানের ঠোঁটের স্পর্শে নিজের দেহে অনুভব করতে পেরে যেন আরাবীর দুনিয়াদারি ঘুরছে।ভণভণ করছে মাথাটা।গায়ে যেন বিন্দুমাত্র শক্তি নেই।জায়ান যেন সব শুষে নিয়েছে।আরাবী টালমাটাল পায়ে দাঁড়াতে না পেরে পরে যেতে নেয়।জায়ান দ্রুত আরাবীকে নিজের সাথে আঁকড়ে ধরে।আরাবীর অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসে জায়ান।এইটুকুতেই এই অবস্থা মেয়েটার।তাহলে বিয়ের পর কি হবে?
তবে এটা করতে চায়নি জায়ান।কিন্তু নিজের রাগটাকে কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছিলো না।সেইজন্যেই এটা করেছে।নাহলে রাগ উঠলে ওর হুশ থাকে না।পরে মেয়েটা অনেক ভয় পেয়ে যাবে।মেয়েটার কাছে আসলে।ওর একটুখানি স্পর্শে জায়ান শান্তি পায়।তাই তো শান্তির সন্ধানেই এমনটা করেছে।আর তা ম্যাজিকের মতো কাজেও লেগেছে।জায়ান আরাবীকে কোলে তুলে নিলো।আরাবী চুপচাপ জায়ানের বুকে মুখ গুজে দিলো।জায়ান গিয়ে সোফায় বসল।আরাবীকে নামালো না কোল থেকে।দুষ্টু হেসে আরাবীর কানে কানে বলে,
‘ শোউল্ডারে চুমু দেওয়াতেই এই অবস্থা হয়েছে তোমার।যখন আমি তোমাকে লিপকিস করব।তখন কি করবে?’

আরাবীর শ্বাস প্রশ্বাস ঘণ হয়ে এসেছে।জায়ানের বুকে কপাল ঠেকিয়ে চুপচাপ বসে আছে ও।কি বলবে ও এখন?লোকটার লাগামছাড়া কথাবার্তায় ওর কথা বলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।লজ্জায় ওর গাল গরম হয়ে উঠেছে।কান দিয়ে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে।
জায়ান হাসল।ফের ফিসফিস করে বলল,
‘ বিয়ের পর তোমার এই দেহের প্রতিটি ভাজে ভাজে,প্রতিটি অংশে আমার ভালোবাসার স্পর্শে মাতাল করব তোমায়।খুব করে ভালোবাসব।তুমি তখন কি করবে কাঠগোলাপ?কোথায় লুকাবে। সেই আমার বক্ষপিঞ্জরে এসেই তোমার স্থান হবে।তোমার লুকানোর একমাত্র নিরাপদ স্থানই যে আমি।আর আমার ব্যক্তিগত সবচেয়ে প্রিয় ফুল তুমি।’

#চলবে______________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here