স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #পর্বঃ২৭

0
596

#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৭

‘ আহানা আমার কাজিন।মায়ের ইচ্ছে ছিলো আহানা আর আমার বিয়ে দেওয়ার।বাট উই নেভার হ্যেড সাচ অ্যা রিলেশানশিপ। আমি ওকে আমার বোন মানি।ও আমার কাছে ঠিক নূরের মতো।আর আহানা নিজেও আমাকে আর ইফতিকে বড়ো ভাই মানে।’

আরাবী চুপটি করে লেপ্টে আছে জায়ানের কাছে।কিছুই বলছে না।কি আর বলবে?শুধু শুধু ভয় পেয়ে প্যানিক এট্যাক হয়ে গেলো ওর।

একটু আগেই আরাবী জায়ানের কাছে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করেছে ওর সাথে যে মেয়েটা ছিলো সেটাই কি আহানা ছিলো? আরাবী ভেবেছিলো জায়ান রেগে যাবে।কিন্তু না জায়ান রাগ করেনি একটুও।বরংচ উপরোক্ত কথাগুলো অনেক নম্র স্বরেই বলেছে।সবটা শুনে যেন আরাবীর বুকের ভেতরে থাকা সব ভয় দূর হয়ে গেলো।
জায়ান আরাবীর দিকে তাকালো।ওর এলোমেলো চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিলো।আরাবী মুচঁকি হাসল।জায়ান এইবার প্রশ্ন করল, ‘ আরাবী।সত্যি করে বলো তো? কি এমন হয়েছে যার কারনে তোমার এইভাবে প্যানিক এট্যাক শুরু হয়ে গিয়েছিলো?আমি সবটা সত্যি জানতে চাই।তুমি জানো মিথ্যে কথা আমার পছন্দ না।’

আরাবী চট করে উঠে বসল।ভয়ে ভয়ে তাকালো জায়ানের দিকে।জায়ান তীক্ষ্ণ চোখে আরাবীকে পর্যবেক্ষণ করছে।কিছু একটা হয়েছে।আরাবীর চোখ মুখ দেখেই জায়ান বুঝতে পারছে।জায়ান শান্ত কণ্ঠে বলল,
‘ বলো আরাবী।আমার কাছ থেকে কিছু লুকোবে না।’

আরাবী লম্বা শ্বাস নিলো।সত্যিই তো! জায়ানের থেকে কথা লুকাবে কেন আরাবী?যার সাথে পুরোটা জীবন কাটাতে হবে।তার কাছে মিথ্যে বলবে কেন?আর কেনই বা এতো লুকোচুরি খেলবে।এই মানুষটার কাছেই তো ওর সুখ,দুঃখ সব, সবকিছু স্যেয়ার করতে হবে।
আরাবী মন স্থির করল।তারপর একে একে সকালের ঘটনাগুলো বলল জায়ানকে।সবটা শুনে জায়ানের দিকে তাকালো আরাবী।জায়ানকে শান্ত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরাবী অবাক হলো।কি হলো?লোকটা এতো শান্ত কেন?আরাবী শুকনো ঢোক গিলে বলে,’ আপনি রাগ করেননি?’

জায়ান বাঁকা হাসল।আরাবীর আরেকটু কাছ ঘেষে বসল।ঘাড় কাত করে আরাবীর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ আমি যদি রেগে থাকি।তাহলে আমার ঠোঁটে চুমু খেয়ে আমার রাগটাকে শান্ত করবে?’

আহ,এতো বে’শরম কেন এই লোক?এতো লাগামছাড়া কেন তার কথাবার্তা। আরাবী লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিলো।জায়ান হাসল আরাবীকে লজ্জা পেতে দেখে।আরেকটু লজ্জা দিলে কেমন হয়?জায়ান ওর বামপাশের ভ্রু তর্জনী আঙুলের সাহায্যে চুলকে বলল,’ তোমায় চুমু দিয়েও তো শান্তি পাবো না।আমার চুমু ডোজ নেওয়ার মতো স্ট্যামিনা তোমার শরীরে নেই।সামান্য শোউল্ডারে চুমু দেওয়ায় কাঁপাকাঁপি করে পরে যেতে নিয়েছিলে।ঠোঁটে চুমু খেলে তো তোমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।’

আরাবীর যেন এইবার মনে হলো মাটি ফাঁকা হোক।আর ও ঢুকে যাক সেখানে।এই লোকটা আর সবার সামনে একদম গম্ভীর হয়ে থাকে।ওর কাছে আসলেই তার মুখে কথা খই ফুটে।এমন কেন লোকটা?কেন বুঝে না। তার এহেন কথাবার্তায় আরাবীর অনেক লজ্জা লাগে।অবশ্য আরাবী জানে জায়ান এইসব কথাবার্তা ইচ্ছে করেই করে।
আরাবী পিটপিটিয়ে তাকায় জায়ানের দিকে।গাল ফুলিয়ে বলে,’ আপনি আমায় রীতিমতো ইনসাল্ট করছেন?’

জায়ান ভ্রু উঁচু করে বলে, ‘ ইনসাল্ট?তোমাকে ইনসাল্ট কোথায় করলাম?এটা সত্যি কথা বললাম।স্বামি সোহাগ পেতে হলে শরীরে শক্তি বাড়াতে হবে।তার জন্যে বেশি বেশি খেতে হবে।খেলেই তো স্ট্যামিনা বাড়বে।বাট তোমার যেই পাটকাঠির মতো শরীর।বাসর রাতে আমি যদি লিপকিস করি তাতেই তো মনে হয় তুমি বেহুস হয়ে তিনদিন বেহুশ হয়ে থাকবে।এমনটা করলে তো হবে না সোনা।খেতে হবে বেশি বেশি করে।আমার আদর লাগবে না? বলো?’

আরাবী উঠে দাঁড়ালো।জায়ানের থেকে কয়েক হাত দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।লজ্জায় যেন মরে যাচ্ছে আরাবী।কি শুরু করে দিয়েছে এই লোক।আরাবী নাক মুখ কুচকে বলে, ‘ আপনি চরম অস’ভ্য একটা লোক।এতো বেশরম কথাবার্তা কেউ কি করে বলতে পারে?’

জায়ানের যেন পছন্দ হলো না।আরাবী জায়ানের কাছ থেকে সরে যাওয়ায়।ও উঠে গিয়ে আরাবীর সামনে দাঁড়ালো।আরাবী আবার পেছাতে নিবে তার আগেই আরাবীর কোমড় আঁকড়ে ধরল জায়ান।হেঁচকাটানে ওকে নিজের কাছে এনে নেশাক্ত কণ্ঠে বলে,’ পুরুষ মানুষ একজনের কাছেই নির্লজ্জ,বেশরম আর অসভ্য হয়।আর সেটা হলো তার বউ।আর আমি এমনিতেই ভীষণ নির্লজ্জ।আর লজ্জা পাবে মেয়েরা।ছেলেরা লজ্জা পায় নাকি?জানতাম না তো।’

‘ সরুন তো আপনি।’

জায়ান আরাবীকে আরেকটু শক্ত করে ধরে বলে,’ সরেছি।’

আরাবী কাঁদো কাঁদো মুখে বলে,’ এটাকে সরে যাওয়া বলে?’
‘ ইয়্যেস।তুমি সরতে বললে আমি আরও তোমার কাছে আসব।’

আরাবী বোকা বোকা কণ্ঠে বলে,’ আর যদি কাছে আসতে বলি?তখন দূরে সরে যাবেন?’

জায়ান মাথা নিচু করে আরাবীর কানের কাছে মুখ আনল।আরাবী শক্ত করে আঁকড়ে ধরল জায়ানের শার্ট।চোখজোড়া ঠেসে বন্ধ করল।জায়ান ফিসফিস করে বলে,’ একবার কাছে আসতে বলেই দেখো না।এতোটাই কাছে আসব যে তুমি নিঃশ্বাস ফেলার জায়গাটুকুও পাবে না।’

জায়ান আরও কিছু বলবে তার আগেই দরজায় শব্দ করল কেউ।সাথে সাথে ওইপাশ থেকে ইফতির কণ্ঠস্বর ভেসে আসল।
‘ ভাই?আসতে পারি?ভাবির জ্ঞান ফিরেছে?’
‘ হ্যা আয়।’

আরাবী সরে এলো জায়ানের কাছ থেকে।জায়ান বাঁকা হাসল।ইফতি,আলিফা আর আহানা ভেতরে প্রবেশ করল।জায়ান এমন ভাব করল যেন সে কিছুই করেনি।এদিকে আরাবীর এখনও শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।বদমা’ইশ লোক কি কি করল ওর সাথে।
এদিকে আলিফা এসেই জড়িয়ে ধরল আরাবীকে।মেয়েটা বোধহয় কেঁদেছে ভীষণ।আলিফা ভাঙা গলায় বলে, ‘ এখন কেমন লাগছে তোর?’

আরাবী আলিফার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।যেমন আলিফাকে শান্ত করার প্রচেষ্ঠা।
‘ আমি ঠিক আছি।চিন্তা করিস না।’

আলিফা এইবার আরাবীকে ছেড়ে দিলো।
‘ ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি পুরো।’

বলতে বলতে আবারও আলিফার চোখে জল আসে।আরাবী হেসে হাত বাড়িয়ে মুছে দেয়।ইফতি নাক মুখ কুচকে ফেলে তা দেখে।বলে,’ এইবারও তো কান্না থামাও।সেইযে কান্না শুরু করেছ।’

আলিফা নাক ফোলালো।রাগি চোখে ইফতির দিকে তাকিয়ে বলে,’ আপনার সমস্যাটা কি?এখন কি শান্তি মতো কাঁদতেও পারব নাহ?’
‘ আমি কি সেটা না করেছি?বাট কান্না করারও একটা লিমিট থাকে।কিছুর থেকে কিছু হলেই চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলে।’

এইবার যেন আলিফা আরও ক্ষ্যাপে গেল।চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,’ আমি নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেলি।বদমাইশ লোক।আমার থেকে আই লাভ ইয়্যু শোনার জন্যে যে নিজে ভ্যা ভ্যা করেন তখন?আমি আপনাকে জীবনেও আপনাকে সেটা বলব না।আসিয়েন আবার আমার কাছে।’

সবাই হা করে ওদের দুজনের ঝগড়া দেখছে।ইফতি খুকখুক করে কেঁশে উঠল।তারপর চোখ রাঙালো আলিফাকে।আলিফাকে এতোক্ষণে বুঝতে পারল।ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে।সামনে জায়ান দাঁড়ানো এই কারনে মেয়েটা মেয়েটা যেন দ্বিগুণ লজ্জা পেলো।আস্তে আস্তে চোরের মতো গিয়ে আরাবীর পেছনে লুকিয়ে পরল।এদিকে আরাবী আর আহানা হু হা করে হেসে দিলো।জায়ানও হালকা হাসল।তবে আরাবীর হাস্যজ্জ্বল মুখের দিকে চোখ যেতেই।চোখজোড়া জুড়িয়ে এলো জায়ানের।হৃদয়ে প্রশান্তির ঢেউ বয়ে গেলো।মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকল।আরাবী স্নিগ্ধ,কোমল,মায়াজড়ানো হাস্যজ্জ্বল মুখ।

আহানা এইবার নিজেই এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো আরাবীর দিকে।মুচঁকি হেসে বলে,’ হ্যালো ভাবি।আমি আহানা।জায়ান ভাইয়ার কাজিন।আই মিন খালাতো বোন।’

আরাবী একটু দ্বিধাদ্বন্দে ভুগলো।তবে শেষে হাত মেলালো আহানার সাথে।বলল,’ আমি আরাবী মৃধা।’
‘ তোমার নামটা যেমন সুন্দর।তুমিও দেখতে সুন্দর।কি মিষ্টি দেখতে তুমি।ভাইয়া এইজন্যেই বোধহয় তোমাকে দেখে এতো পাগল হয়ে গিয়েছে।’

আরাবী লজ্জা পেলো।মৃদু স্বরে বলল,’ তুমি তো আমার থেকেও বেশি সুন্দর।একদম বিদেশে পুতুল একটা।’
‘ থ্যাংক ইয়্যু ভাবি।’

আহানা আরাবীকে জড়িয়ে ধরল।আরাবী প্রথমে ভড়কে গেলেও।পরে নিজেকে সামলে নেয়।আহানাকেও জড়িয়ে ধরে।
মেয়েটা যেমন দেখতে সুন্দর,ওর ব্যবহারটা তেমন সুন্দর।কিভাবে এক সেকেন্ডে ওর সাথে মিশে গেলো।আর এই মেয়েটাকে নিয়েই নাকি আরাবী ভয় পাচ্ছিলো।মাথা থেকে এইবার অযথা চিন্তা সব ঝেরে ফেলে দিলো।আর এইসব ফা’লতু বিষয় নিয়ে চিন্তা করবে না আরাবী।এখন সময় এসেছে জীবনটা উপভোগ করার। জায়ানের সাথে সুন্দর একটা জীবন অতিবাহিত করতে চায় আরাবী।ভেবেই মুচঁকি হাসল।আরাবী,আলিফা আর আহানা নিজেদের মাঝে কথা বলায় ব্যস্ত।

জায়ান ততোক্ষণে সিসি টিভি ফুটেজ চ্যাক করে নিয়েছে।ইফতিকেও দেখিয়েছে সেটা। ভিডিও দেখা শেষ হতেই জায়ান গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে,’ মেয়ে দুটোকে যেন কাল থেকে আর অফিসে না দেখি।আর হ্যা ওদের স্পেশাল ট্রিটম্যান্ট করতে ভুলবি না।আমার আরাবী আজ ওদের কারনে কষ্ট পেয়েছে। এতো সহজে পার পেয়ে যাবে।সোফিয়া আন্টির কাছে পাঠিয়ে দিস ওদের। উনিই ভালোভাবে খাতির যত্ন করবে মেয়ে দুটোর।’

ইফতি জায়ানের কথা সব শুনে হেসে বলে, ‘ তুমি যেভাবে বলছ সেভাবেই সব হবে ভাই।’

ইফতির কথা শুনে জায়ান বাঁকা হাসল।

#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here