স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #পর্বঃ৩৯

0
604

#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৯
জায়ানের বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে বসে আছে আরাবী।লজ্জায় জায়ানের দিকে তাকাতে পারছে না।এদিকে জায়ান আরাবীর কাণ্ড দেখে এইবার হেসে বলে,’ আশ্চর্য! সামান্য একটু চুমু খেয়েছি আর কিছু করেছি তোমায়?এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে?’

আরাবী জায়ানের কথা শুনে মুখ ফুলালো।মিনমিন করে বলে,’ আমি বাধা দিয়েছি সেইজন্যেই তো থেমেছেন।নাহলে আপনি নিজ ইচ্ছায় থেমে যাওয়ার ব্যক্তি নাকি।’
‘ মিনমিন করছ কেন?যা বলবে জোড়ে বলবা।’

আরাবী এইবার সরে আসল জায়ানের কাছ থেকে।নাক ফুলিয়ে বলে,’ বলেছি আপনি একটা চরম নির্লজ্জ মানুষ।’
‘ ধন্যবাদ প্রশংসা করার জন্য। তবে এটা আমি আগেই থেকেই জানি যে আমি নির্লজ্জ। নতুন কিছু বলো।’

আরাবী মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে ঘুরে গেলো।জায়ান আরাবীর হাত টেনে ওকে আবারও নিজের কাছে এনে বলে,’ এখন আবার মুখ ফুলিয়ে রেখেছ কেন?এইভাবে মুখ ফুলাবে না।দেখতে কিউট লাগে তোমায়।আমার চুমু খেতে ইচ্ছে করে।’

আরাবী ভড়কে গিয়ে সরে এলো।বলল,’ উফ,কিসব বলেন?আর আপনার কি শুধু আমাকে চুমু খেতেই ইচ্ছে করে নাকি?’
‘ হ্যা।তুমি জাস্ট একবার অনুমতি দেও। আমি সারাদিনই তোমায় চুমু খাবো।’
‘ এটাতে কি এমন আছে?এমনভাবে বলেন যেন চুমুতে কতো স্বাদ।’
‘ অনেক স্বাদ।তুমি পাও না?’
‘ নাহ।আপনার কাছেই এসব অদ্ভুত কথা শুনি। তা আমাকে চুমু খেলে এটার কি টেস্ট পান আপনি? বলেন তো শুনি।

জায়ান ভ্রু উঁচিয়ে বলে,’ তুমি জানতে চাও?’
‘ হ্যা।’ ভীষণ আগ্রহ নিয়ে জবাব দিলো আরাবী।

জায়ান বাকা হাসল।তারপর মুখটা নামিয়ে আরাবীর কানের কাছে আনল।ফিসফিস করে বলল,’ Kak moya ‘

এটা বলেই জায়ান সরে আসল।এদিকে আরাবী ভ্যাবলার মতো বসে আছে।এই লোক এটা কি বলল?এটা কেমন ভাষা?এক পর্যায়ে আরাবী নাক মুখ কুচকে বলে,’ আপনি কি সহজ ভাষায় কিছু বলতে পারেন নাহ?এটা কি বললেন?এই kak moya এইটা আবার কি?’

জায়ান এইবার এসে বকবক করতে থাকা আরাবীকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলো।আরাবী চমকে উঠল।পর পর চ্যাঁচিয়ে উঠে,’ আরে? কি করছেন?’
‘ অনেক কথা হয়েছে।এইবার গোসল দিবে।তারপর খেতে হবে।ক্ষুদা পেয়েছে আমার।’
‘ কিন্তু আগে আমার প্রশ্নের জবাব দিন। একটু আগে আপনি ওটা কি বললেন?’

জায়ান আরাবীকে নিয়ে ওয়াশরুমে এসে একটা টুলে বসিয়ে দিয়ে বলে,’ আগে আমার কথা মতো সব করবে আমি যা যা বলেছি।তাহলে ওটার মিনিং বলব।’

না চাইতেও এইবার আরাবী জায়ানের কথা মেনে নিলো।আরাবীকে গোসল করিয়ে দিতে চেয়েছিলো জায়ান।তবে আরাবী রাজি হয়নি।ও একাই পারবে বলে জায়ানকে বের করে দিয়েছে।এদিকে জায়ান গিয়ে খাবারগুলো রান্নাঘর থেকে গরম করে আনল।ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে খাবারগুলো তাই।খাবারগুলো গরম করে রুমে এসে দেখে আরাবী মাত্রই বের হয়েছে ওয়াশরুম থেকে।খুরিয়ে খুরিয়ে হাটছে মেয়েটা। জায়ান খাবারের ট্রেটা টেবিলে রেখে জলদি আরাবীর কাছে এসে ওকে কোলে তুলে নিলো।তারপর রাগি চোখে আরাবীর দিকে তাকিয়ে বলে,’ এতো বেশি বেশি পাকনামি করো কেন?আমি বলেছিলাম না।আমি না আসা পর্যন্ত বসে থাকবে?আমি রুমে নিয়ে আসব?’
‘ এইটুকুই তো।কিছু হবে না।’
‘ বেশি বুঝো তুমি মেয়ে।’
‘ হুহ!’

জায়ান আরাবীকে নিয়ে বিছানায় বসালো।এরপর খাবারগুলো আনল।তারপর নরম স্বরে বলে,’ আমি রাগ করেছি বলে এইসব খাবার একা হাতে তৈরি করেছ?’

আরাবী মিষ্টি হেসে বলে,’ আমি একা করিনি।ছোটো মা হেল্প করেছে তো।আর তিনিই বলেছেন আপনার এসব খাবার পছন্দ।’
‘ তাই?’
‘ হুঁ!’

জায়ান এইবার প্লেটটা হাতে নিলো।এরপর নিজের হাতে আরাবীকে খাইয়ে দিতে লাগল।আরাবী বিনা বাক্যে স্বামীর হাতে খেতে লাগল।এ যেন অমৃত।আরাবী আল্লাহ্ তায়ালার কাছে হাজার কোটি শুকরিয়া জানায়।এই মানুষটাকে তার জীবনসঙ্গী হিসেবে দান করার জন্যে।এতোটা সুখি মানুষ করার জন্যে ওকে। আরাবীকে খাইয়ে দেওয়া শেষ হলে। এইবার জায়ান আরেকটু খাবার নিলো প্লেটে।তারপর সেটা আরাবীর দিকে বারিয়ে দিয়ে বলে,’ এইবার তুমি আমায় খাইয়ে দেও। ‘

আরাবী আলতো হেসে প্লেটটা হাতে নিলো। তারপর সুন্দরভাবে জায়ানকে খাইয়ে দিলো এক লোকমা।কিন্তু আরাবী জায়ানকে ঠিকভাবে খাওয়াতে পারছে না।কারন জায়ান ওর থেকে অনেক লম্বা।তাই আরাবী মিনমিন করে বলল,’ এভাবে খাওয়াতে পারছি না তো।আপনি আমার থেকে অনেক লম্বা।’

জায়ান হেসে ফেলল আরাবীর কথায়।বলল,’ আমি বেশি লম্বা না।তুমি বেশি খাটো।’

আরাবী রাগি চোখে তাকালো জায়ানের দিকে।
‘ কে খাটো?আমি পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি।এই হাইটের মেয়েদের খাটো বলে?আপনি তো তালগাছের মতো লম্বা।’

জায়ান ভাব নিয়ে বলল,’ হাহ্! আমার এই হাইট-টাই পার্ফেক্ট।মেয়েরা এই হাইটের ছেলেদের জন্যে পাগল।’
‘ ইশ ঢং! এখন কিছু করুন।আমি এভাবে খাওয়াতে পারছি না।পা-টা ভালো থাকলে দাঁড়িয়েই খাইয়ে দিতাম।’
‘ আর দাঁড়াতে হবে না তোমায়। দাঁড়াও আমিই ব্যবস্থা করছি।’

এই বলে জায়ান উঠে দাঁড়িয়ে গেলো।তারপর ফ্লোরে বিছানো কার্পেটের উপর বসে পরল।আরাবী মোটেও আশা করেনি জায়ান ওর জন্যে এভাবে নিচে বসে পরব।আরাবী অস্থির হয়ে বলে,’ আরে কি করছেন?নিচে বসছেন কেন?উঠে আসুন।ওখানে বসা লাগবে না।আমি দাঁড়িয়েই খাইয়ে দিবো।’

জায়ান সেভাবেই বসে রইলো।গম্ভীর স্বরে বলল,’ বেশি কথা বলো না তো।নেও এইবার খাইয়ে দেও।’

কি আর করার জায়ানের কথায় পরাজিত হয়ে আরাবী সেভাবেই খাইয়ে দিলো জায়ানকে। পুরোটা খাবার চোখ বন্ধ করে খেয়েছে জায়ান।যেন খুব করে উপভোগ করেছে খাবারের স্বাদটুকু।খাওয়ানো শেষ হলে জায়ান আরাবীর হাত ধুইয়ে দিলো। এরপর খাবারের ট্রেটা সরিয়ে রাখল।আরাবী উৎসুক নজরে তাকিয়ে আছে জায়ানের দিকে।খাবারটা কেমন লেগেছে জানার জন্যে। এক পর্যায়ে অধৈর্য হয়ে নিজেই জিজ্ঞেস করল,’ কেমন লেগেছে আমার রান্নাগুলো? বললেন না যে।’

জায়ান আরাবীর হাত দুটো ওর হাতের মাঝে নিলো।তারপর কিছু না বলেই অসংখ্য চুমুতে ভড়িয়ে দিলো আরাবীর হাত দুটো।এরপর থেমে গিয়ে বলে,’ অনেক অনেক অনেক সুস্বাদু হয়েছে খাবারগুলো।প্রথমবার রান্না করেছ।এভাবে খালি হাতে কোনো গিফট ছাড়া তোমার রান্নার প্রশংসা করতে পারছিলাম না।তাই চুপ করে ছিলাম।’
‘ খালি হাতে মানে কি আবার?আপনি প্রশংসা করবেন।সেটাই তো আমার কাছে বড়ো গিফট।’
‘ উহু! বললেই হয় না-কি?এখন বলো কি গিফট নিবে?এতো সুস্বাদু রান্না করেছ।গিফট তো দিতেই হবে তোমাকে।’

আরাবী কিছুক্ষণ ভাবল তারপর দাঁত ক্যালিয়ে বলে,’ ওইযে kak moya বললেন নাহ?ওটার অর্থ কি বলুন।’
‘ এটা কোনো গিফট চাওয়া হলো?এটা তো এমনিতে জিজ্ঞেস করলেই আমি বলতাম।আমি তোমাকে সম্পূর্ণ এক প্লেট খাবার খাওয়ানোর জন্যে এটা বলেছিলাম।এটড় অর্থ আমি বলেই দিতাম।’

আরাবী মুখ ভেংচি কাটল।বলল,’ তো বলুন।’

জায়ান শ্বাস ফেলল।এই মেয়ে একদম বাচ্চাদের মতো ব্যবহার করে।ওর কাছে থাকলেই এমন করে।অবশ্য জায়ানের ভালোলাগে আরাবীর এই বাচ্চামো ব্যবহার।জায়ান বলল,’ তোমার ফোন কোথায়?’

ফোনের কথা জিজ্ঞেস করায় আরাবী ওর মাথার বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে দিলো।জায়ান এইবার বলল,
‘ গুগলে সার্চ করো।” what is the meaning of kak moya.” এটা লিখো।’

আরাবী তাই লিখল।সাথে সাথে উত্তর আসল।
‘ Kak moya, is a russain language and it means, like mine.’

আরাবী এইবার ভাবল।ও জায়ানকে জিজ্ঞেস করেছে ওকে কিস করলে জায়ানের কেমন লাগে?জায়ান উত্তরে এই রাশিয়ান ভাষাটা বলেছে।যার অর্থ লাইক মাইন।
ইশ,লোকটা এতো কিছু কিভাবে জানে?এমন সব কথা বলে।যেগুলো মানুষ বুঝতেই পারবে না।
আরাবী লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখল।জায়ান দুষ্টু হাসল আরাবীকে লজ্জা পেতে দেখে বলল,’ কি এটার অর্থ জানার জন্যে এতো ডেস্পারেট হয়ে পরেছিলে। তো এখন লজ্জা পাচ্ছ কেন?’
‘ আপনি যে এসব বুঝিয়েছেন।সেটা কি আমি জানি?’ নিচু কণ্ঠে বলল আরাবী।

জায়ান বিছানায় শুয়ে পরল।তারপর হাত বাড়িয়ে আরাবীকে টেনে ওর বুকের মাঝে শুইয়ে দিলো আরাবীকে।আরাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,’ আমি তোমাকে উদ্দেশ্য করে যতো কথাই বলি না কেন আরাবী?তুমি একটু গভীরভাবে তা অনুভব করিও।তাহলেই বুঝবে।আমার প্রতিটি কথার মাঝেই আমি বুঝিয়ে দেই তুমি আমার। তুমি আমার। তুমি আমার।তুমি আমার #স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ৷’

জায়ানের কণ্ঠে ‘ তুমি আমার স্নিগ্ধ কাঠগোলাপ।’ বাক্যটা শুনে প্রশান্তিতে চোখ বুঝে আসে আরাবীর।চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বিরবির করল,
‘ আমি আপনার।আপনি আমার। আমরা দুজন দুজনার।’

#চলবে________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। শান্তভাবে ওদের সময়গুলো উপভোগ করুন একটু।কারন খুব শীঘ্রই সাইক্লোন আসতে চলেছে ওদের জীবনে।কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here