#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩১
নতুন বঁধুকে করে ঘরে তোলা হয়েছে।তাকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য মানুষের ভীড়।সবাই কানাঘুষা করছে আরাবীকে নিয়ে।কেউ কেউ প্রশংসা করছে।তো আবার কেউ কেউ বদ’নাম করছে।সব কথাই কানে আসছে আরাবীর।একজন তো বলেই ফেলল,
‘ বাড়ির ছেলেটা এতো সুন্দর।শেষমেষ কিনা এমন কালো মেয়ে ছুটলো ছেলেটার কপালে?কি দেখে এই মেয়ে পছন্দ করে আনলো তারা?’
আরাবী শক্ত হয়ে রইলো।ও নিজেকে আগে থেকেই প্রস্তুত করে রেখেছিলো।এসব কথা যে শুনতে হবে তা ও ভালোভাবেই জানে।এই সমাজ কালো ছেলেদের ফর্সা বউ পাওয়াকে স্বাভাবিক নজরে দেখলেও।ফর্সা ছেলে যদি কালো বউ আনে তাহলেই এদের হাজারটা কথা শুরু হয়ে যায়।নানান কুৎসা রটাতে থাকে তারা।এদিকে এসব কথা শুনে নূর রেগে গেলো।সহসা রাগি গলায় বলে,
‘ আপনারা আমার ভাবিকে দেখতে এসেছেন। ভালোভাবে তাকে দেখবেন,মিষ্টি মুখ করবেন তারপর চলে যাবেন।আপনাদের এতোসব ফাউল কথাবার্তা কে বলতে বলেছে?’
মহিলাগুলো কানাঘুষা যেন আরও বেড়ে গেলো।একজন বলল,’ ভাবির পক্ষ নিয়ে উকালতি করা হচ্ছে।ক’দিন যাক তারপর দেখব এই ভাবি আর ননদ সারাদিন সা’পে নেউলে ঝগড়া করছে।’
‘ সেটা আমাদের ব্যাপার আমরা বুঝে নেবো।আপনাদের কি?দেখুক বেহুদা সব কথা বলবেন না।নাহলে কিন্তু অনেক খারাপ হবে।তাই বলছি চুপচাপ এখান থেকে চলে যান।’
যারা যারা এভাবে কানাঘুষা করছিলো তারা নূরের ঝাঝালো কণ্ঠের কথায় একে একে চলে গেলেন।নূর থপ করে আরাবীর পাশে বসল।আরাবীর মলিন মুখশ্রী দেখে বলে,
‘ ভাবি তুমি মন খারাপ করো না।এইসব মানুষদের কথা একদম কানে তুলবে না।তুমি আমাদের কাছে বেস্ট।এখন এইভাবে মলিন মুখে থেকো না।ভাইয়া নাহলে রেগে যাবে।’
আরাবী নূরের কথায় এইবার হাসি হাসি মুখ করে নূরের দিকে তাকালো।অনেকটা সময় এভাবেই কাটলো।একে একে রুমটা খালি হলো।তার কিছুক্ষণ পর মিলি বেগম আসলেন খাবার ট্রে হাতে নিয়ে।আরাবীর সামনে সেটা রাখলেন।তারপর আরাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মুচঁকি হেসে বলেন,’ সেই কখন খেয়েছ।নিশ্চয়ই এখন খুব ক্ষিদে পেয়েছে।’
আরাবী বলল,’ নাহ নাহ আন্টি।আমার ক্ষিদে পাইনি।’
মিলি বেগম একটুখানি পোলাও মাখিয়ে নিয়ে তা আরাবীর দিকে বাড়িয়ে দিলেন।চোখের ইশারায় বোঝালেন খাবারটুকু খাওয়ার জন্যে।আরাবী বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নিলো।মিলি বেগম আরাবীকে খাওয়াতে খাওয়াতে বলেন,’
জায়ান আর নূরের মতো আমাকে ছোটো মা ডাকলে আমি খুশি হবো।’
আরাবী মাথা দুলালো।বলল, ‘ আচ্ছা ছোটো মা।’
অনেক খুশি হলেন মিলি বেগম।
‘ এইতো এইভাবেই ডাকবে।’
আরাবীকে খাবারটুকু খাইয়ে এইবার চলে গেলেন মিলি বেগম।নূর আর সাথে ওর কিছু কাজিন এইবার আরাবীকে নিয়ে রওনা হলো।বাসর ঘর সাজানো শেষ।আরাবীকে নিয়ে সেখানে আসল তারা।আরাবীকে ফুলে সজ্জিত বিছানার মাঝখানে সুন্দরভাবে বসিয়ে দিয়ে তারা চলে গেলো।আর আরাবীকে একা ঘরে হালকা ভয় জড়ানো দুরুদুরু বুকে সেখানে চুপচাপ বসে রইলো।
সময় কাটলো কিছুক্ষণ।এরপর বাহির থেকে বেশ শোরগোলের আওয়াজ ভেসে আসতে লাগল।আরাবী বুঝল জায়ান তবে এসে পরেছে।
—–
‘ ভাইয়া চুপচাপ আমাদের দাবি করা টাকাটা দিয়ে দেও।’ নূর হাতে চাবিটা নিয়ে এক আঙুলে ঘোরাতে ঘোরাতে বলল।
জায়ান পকেটে হাত গুজে নির্বিকার চিত্তে বলে,
‘ এতো টাকা দিয়ে তোরা কি করবি?তোদের নিজেদের একাউন্টে টাকা ভড়পুর আছে।’
ইফতি বলল,’ আহা ভাইয়া।এসব বলা বাদ দেও তো।বিয়ে করতে যাওয়ার সময় তো এমন করোনি।তখন তো আলিফা বলতে দেরি তোমার টাকা দিতে দেরি হয়নি।’
জায়ান বাঁকা হেসে বলে,’ তখন বউকে আনতে গিয়েছিলাম।সালিসাহেবাদের আবদার পূরণ না করলে কি বউকে নিজের করে আনতে পারতাম?কিন্তু এখন তো আমার বউকে আমার রাজ্যে নিয়ে এসেছি।তাই আর কোনো কিছুই আমাকে আটকাতে পারবে না।’
নূর ভ্রু-কুচকে বলে,’ কেন পারবো নাহ?আমাদের টাকা না দিলে আজ রুমে ঢোকা যাবে না।’
জায়ান বুঝল শুধু শুধু এদের সাথে তর্ক করে লাভ নেই।অযথা সময় নষ্ট করছে।তাই জায়ান চুপচাপ নূরদের হাতে একটা এনভেলাপ ধরিয়ে দিলো।নূর তো বেজায় খুশি।সাথে সাথে জায়ানের রুমের দরজার লক খুলে দিলো।জায়ানও সাথে সাথে রুমে প্রবেশ করে গেট আটকে দিলো।
জায়ান যেতেই নূর এইবার হাসি মুখে এনভেলাপটা খুলল।খুলতেই যেন সবার মাথায় হাত।এই এনভেলাপে শুধু কতোগুলো কাগজ টাকার আকৃতিতে ছিড়ে দেওয়া হয়েছে।নূর হতভম্ব হয়ে আছে।ইফতি নূরের মাথায় গাট্টা দিয়ে বলে,’ বলদ কোথাকার।ভাইয়া টাকা দিতে দেরি তুই দরজা খুলে দিতে দেরি করিস নাই।গাধা আগে একবার খুলে তো দেখবি।’
নূরের চেহারা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো।জায়ানের রুমের দরজার সামনে গিয়ে ধুমধাম বারি মেরে বলল,
‘ ভাইয়া এটা একদম ঠিক করলে না।এর শোধ আমি কালকে নিবো বলে দিলাম।তুমি খুব খারাপ ভাইয়া।’
সবাই মুখ ভাড় করে চলে গেলো।এদিকে জায়ান নূরের কথায় নিস্তব্ধে হাসল।জায়ান কাল সকালে ওদের টাকাটা দিয়ে দিবে।আজ শুধু ওদের একটু জ্বালাতন করল।জায়ান এইবার ঘুরে তাকালো।বাহ,রুমটা তো বেশ সুন্দরভাবে সাজিয়েছে।যেমনটা জায়ান দেখিয়েছে।ওতো ফুলটুল দিয়ে সাজানো জায়ানের ভালো লাগে না।ওর শুধু একটাই চাওয়া ছিলো যেটুকুই সাজাবে কাঠগোলাপ আর বেলি ফুল দিয়ে সাজাবে।কারন জায়ান জেনেছে।আরাবীর কাঠগোলাপ আর বেলি ফুল নাকি ভীষণ পছন্দ।ওই ফুল দিয়েই সাজিয়েছে রুমটা।খুব সিম্পলভাবেই সাজিয়েছে।তারপরেও যেন অসাধারণ লাগছে দেখতে।ঘরের আনাচে কানাচে সব জায়গায় সুন্দর ডিজাইনার ক্যান্ডাল জ্বালানো।এতে যেন আরও মোহনীয় পরিবেশ তৈরি হয়েছে।জায়ান এইবার নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর দিকে তাকালো।বুকটা যেন প্রশান্তিতে ছেঁয়ে গেলো।অবশেষে মেয়েটা আজ তার অর্ধাঙ্গিনী। তার চির জীবনের সঙ্গী।জায়ান এগিয়ে গেলো আরাবীর দিকে।
এদিকে জায়ানকে এগিয়ে আসতে দেখেই আরাবী নড়েচড়ে বসল।হৃদস্পন্দের গতি হু হু করে বেড়ে গেলো যেন।ভয়,উত্তেজনা, ভালোলাগা সবগুলো অনুভূতি একাকার হয়ে যেন এক অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হয়েছে।
জায়ান এসে বসল আরাবী পাশে।আরাবী মাথা নিচু করে ছিলো।সেভাবেই ধীর আওয়াজে জায়ানকে সালাম জানালো।জায়ানও সালামের উত্তর নিলো।এরপর হাত বাড়িয়ে আরাবীর চিবুক স্পর্শ করল।আরাবীর দেহ মৃদু কাঁপল।জায়ান আরাবীর মুখটা উঁচু করে ধরল।এক ধ্যানে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলো আরাবীর দিকে।এইদিকে আরাবী চোখ বন্ধ করে উথাল-পাতাল শ্বাস নিচ্ছে।জায়ান এগিয়ে এসে এইবার আরাবীর ললাটে চুমু খেলো। যেন এতোদিন বুকের ভেতর কতোটা ভালোবাসা আর মায়া আরাবীর জন্যে জমিয়ে রেখেছে।তা বোঝানোর চেষ্টা করল।আদৌ কি মেয়েটা তা বুঝতে পারল?তবে আরাবীর চোখ থেকে ওর অজান্তেই এক ফোঁটা অশ্রু ঝরে পরল।
জায়ান সরে আসল। এরপর বৃদ্ধা আঙুলের সাহায্যে ওই চোখের পানিটুকু মুছে দিলো।আরাবী তাকালো জায়ানের দিকে এইবার।জায়ান আরাবীর ওই মায়াবী দৃষ্টিতে একপলক তাকিয়ে আরাবীকে টেনে নিয়ে সাথে সাথে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরল।আরাবীও চোখ বন্ধ করে ফেলল।লোকটার এই প্রসস্ত বুকে এতো শান্তি কেন?সব স্ত্রীদেরই কি স্বামীর বুকে এতো শান্তি লাগে?মনে হয় যেন এর থেকে নিরাপদ স্থান আর কোথাও নেই?এইটাই যেন চিরশান্তির নীড়।জায়ান আরাবীর চুলের ভাঁজে চুমু দিয়ে তারপর ওর কানের কাছে আসল।জায়ানের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস আরাবীর কানের কাছে এসে বারি খেতেই আরাবী জায়ানের বুকের কাছের টি-শার্টটা খামছে ধরল।জায়ান ফিসফিস করে বলল,
‘ বঁধু সাজে তোমাকে একদম দমবন্ধকরা সুন্দর লাগছে আরাবী।যখন তোমায় এই সাজে প্রথম দেখলাম।আমার যেন নিঃশ্বাসটাই আটকে গিয়েছিলো।’
আরাবী মুচঁকি হাসল জায়ানের কথা শুনে।তারপর ধীর আওয়াজে বলল,’ বর বেশে আপনাকেও অনেক সুন্দর লাগছিলো।’
জায়ান হালকা হেসে বলে,’ তাই নাকি?’
‘ হুম।’
‘ কই? আমি তো দেখলাম না তোমাকে আমার দিকে তাকাতে।’
আরাবী এইবার জায়ানের বুক থেকে মাথা তুলল।মুখ ফুলিয়ে বলে,
‘ আমি কি আপনার মতো নির্লজ্জ নাকি?আমি একবার তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিয়েছি।আমার লজ্জা করে না বুঝি?’
জায়ান আরেকটু কাছে এসে বসল আরাবীর।কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,
‘ এতো লজ্জা তোমার কোথা থেকে আসে আজ দেখব আমি।খুব গভীরভাবে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখব।ঠিক কতোটা লজ্জা তুমি পেতে পারো।’
আরাবী ধরফরিয়ে উঠল।গাল দুটোতে ঈষৎ লাল আভা ছড়ালো।শ্যামবর্ণা আরাবীকে লজ্জা পাওয়া মুখটা দেখতে জায়ানের দারুণ লাগে।আরাবী এইবার লজ্জা লুকানোর জন্যে চট করে উঠে দাঁড়ালো।আমতা আমতা করে বলল,’ আ..আমার অস্বস্তি হচ্ছে।এই ভারি গাউন পরে।আমি একটু ফ্রেস হতে চাই।’
জায়ান বুঝল তার বউ ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে। তাই তো এভাবে পালাতে চাইছে।জায়ান এইবার বিনাবাক্যে আলমারির দিকে এগিয়ে গেলো। তারপর একটা প্যাকেট বের করে এনে আরাবীর হাতে দিলো।বলল,
‘ যাও ফ্রেস হয়ে এটা পরে এসো।এখানে তোমার প্রয়োজনীয় সব আছে।’
আরাবী মাথা দুলালো।তারপর চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই জায়ান আবার ডেকে উঠল। আরাবী ঘার ঘুড়িয়ে তাকাতেই বলে,
‘ আলমারির সেকেন্ড ড্রয়ারে তোমার দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা আছে।সময় মতো তা হিসেব করে নিয়ে নিও।’
‘ ওতো টাকা দিয়ে আমি কি করব?’
‘ তা তো জানি না।তোমার হকের টাকা।তোমার যা মন চায় করবে।’
আরাবী এইবার একটু ভাবনায় পরে গেলো।অনেকক্ষণ কিছু একটা ভেবে তারপর বলে,
‘ আচ্ছা গরিব পথশিশু আর বৃদ্ধদের ওই টাকাগুলো দিয়ে দিলে কেমন হবে?’
জায়ান আরাবীর চিন্তাধারায় অনেকটা মুগ্ধ হলো।মেয়েটা কি সুন্দর অনায়াসেই না এতো সুন্দর একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো।জায়ান মুচঁকি হেসে বলে,
‘ খুব ভালো হবে।তুমি যা চাইবে তাই হবে।’
আরাবী চওড়া হেসে বলে,’ তাহলে আমরা দুজনে মিলে সময় করে একদিন এটা করব।’
‘ আচ্ছা,এইবার যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।’
আরাবী খুশি মনে এইবার ওয়াশরুমে চলে এলো।নিজের সাজসজ্জাগুলো ভালোভাবে তুলে নিয়ে মুখটা ধুয়ে ফেলল।তারপর বিয়ের ভারি গাউনটাও খুলে ফেলল।লম্বা সময় নিয়ে একটা গোসল দিলো।আহ,এইবার শান্তি লাগছে।এতো এতো সাসসজ্জায় যেন অস্থির হয়ে উঠেছিলো মেয়েটা।তোয়ালে দিয়ে চুলগুলো পেচিয়ে নিয়ে।এইবার জায়ানের দেওয়া প্যাকেটটা খুলল।খুলতেই ভালোভাবে খেয়াল করে দেখল সাদা রঙের শাড়ির সাথে ফ্লোরাল প্রিন্ট ও এমব্রয়ডারি কাজ করা ভীষণ সুন্দর একখানা নরম তুলতুলে জর্জেট শাড়ি।এর সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ।আরাবী বুঝল শাড়িটা ভীষণ পাতলা।এটা পরলে শরীরের সবকিছুই দৃশ্যমান থাকবে।এই শাড়ি পরে আরাবী জায়ানের সামনে যাবে কিভাবে?কিন্তু জায়ান নিজে এটা ওকে দিয়েছে।লোকটা তো ভালোবেসেই এনেছে ওর জন্যে।আর জায়ান ওর স্বামী।এই রূপ,এই লাবন্য এই সব কিছু তো এখন ওর স্বামীর জন্যেই তাই নাহ?এখন তার জন্যেই নিজেকে সাজিয়ে তুলতে হবে।আরাবী আর সময় নষ্ট করল না।শাড়িটা পরে নিলো।পরা শেষে আয়নায় তাকালো।অতঃপর নিজেকে দেখে নিজেই লজ্জা পেলো আরাবী।ইশ,এইভাবে জায়ানের সামনে যাওয়া মানে লজ্জায় ম’রে যাওয়া।
ওর ভাবনার মাঝেই ওয়াশরুমের দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হলো।তারপর ভেসে আসল জায়ানের কণ্ঠস্বর,’ আরাবী দরজাটা খুলে এই নামাজের হিজাবটা নেও।ওযু করে একেবারে বের হও।দু রাকাত নামাজ আদায় করে নেই।’
আরাবী ধীরে গিয়ে দরজাটা আলতোভাবে খুলল।এরপর হাত বাড়িয়ে হিজাবটা নিলো।ওযু করে সেটা পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসল।জায়ান ওয়াশরুমের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো।দরজা খোলার আওয়াজে সেদিকে তাকালো।সদ্য স্নান করা স্নিগ্ধ মুখটা দেখে মুগ্ধ জায়ান।হিজাবে আবৃত ছোট্টো মুখটা ভীষণ পবিত্র আর আদুরে দেখাচ্ছে।জায়ান নরম গলায় বলে,
‘ যাও আলমারির বামসাইডে জায়নামাজগুলো আছে।সেগুলো বিছাও। আমি ওযু করে আসছি।’
আরাবী মাথা দুলালো।তারপর গিয়ে জায়ানের কথা মতো সব করল।ততোক্ষণে জায়ান ওযু করে এসে পরেছে।দুজন একসাথে নামাজ আদায় করল।নামাজ আদায় করা শেষ হলে জায়ান আরাবী মাথায় হাত রেখে দোয়া পরল।তারপর ফু দিয়ে দিলো। এরপর জায়ান উঠে গেলো।জায়ান উঠতেই আরাবী সুন্দরভাবে জায়নামাজগুলো ভাজ করে জায়গামতো রেখে দিলো।এরপর চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো আরাবী।এখন কি করবে?এই লম্বা হিজাবটা কি খুলে ফেলবে?কিন্তু এটা খুললে যে সব দৃশ্যমান হয়ে যাবে জায়ানের সামনে।তখন কি করবে আরাবী।কিন্তু আরাবীর কিছুই করতে হলো না।জায়ান নিজেই এগিয়ে আসল।হাত বাড়ালো আরাবীর দিকে।আরাবী চোখ বন্ধ করে নিলো।জায়ান নিজ দায়িত্বে আরাবীর হিজাবটা খুলে ফেলল।সাথে সাথে জায়ানের হাত ফসকে সেটা ফ্লোরে পরে গেলো।জায়ান স্থির নয়নে আরাবীর দিকে তাকিয়ে।এই শাড়িতে যে মেয়েটাকে এতো মারাত্মক আবেদনময়ী লাগবে কল্পনাও করেনি জায়ান।আরাবীর নারীদেহের আকর্ষনীয় অংশগুলো পুরোপুরি দৃশ্যমান।এই পাতলা ফিনফিনে জর্জেট শাড়ি তা আবৃত করতে ব্যর্থ।জায়ান ঘনঘন শ্বাস ফেলে এগিয়ে আসল আরাবীর কাছে।আরাবীর হাত ধরে ওকে নিজের কাছে টেনে আনল।আরাবী মৃদু কেঁপে উঠল।জায়ান ব্যাকুল কণ্ঠে আকুলতা নিয়ে বলে উঠল,
‘ তুমি কি জানো মেয়ে?তুমি আবেদনময়ী,তুমি মায়াবতী, তুমি সুন্দরী! তুমি সৌন্দর্যের ফুল নগরী! আমি সেই নগরের নাগরিক…আমি সেই পথে হেঁটে যাওয়া লাওয়ারিশ প্রেমিক।আজ সেই প্রেমিককে কি তুমি গ্রহণ করবে?আমার হবে তুমি কাঠগোলাপ?’
#চলবে__________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।