স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #পর্বঃ৩৩

0
710

#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৩
একটু পরেই বৌভাতের অনুষ্ঠান শুরু হবে।পার্লারের মেয়েরা আসবে এটা জায়ান আরাবীকে জানাতেই আরাবী জায়ানকে বলে।ওদের মানা করে দিতে।এইসব ভারি মেক-ওভার ভালো লাগে না আরাবীর।জায়ানকে বলে ও আলিফার কাছেই সাজবে।জায়ান কোনোরকম দ্বিমত করেনি।রাজি হয়ে যায় আরাবীর কথায়।আলিফাকে ফোন করে এখানে আসার কথা বলে দেয়।আলিফা রাজি হলে।জায়ান ইফতিকে পাঠিয়ে দেয় আলিফাকে আনতে।
আলিফা এসে এখন আরাবীকে সাজাতে ব্যস্ত হলো।ফাউন্ডেশন নিয়ে তা লাগাতে যাবে।তার আগেই আরাবীর গলা,ঘাড় গলার একটু নিচে এসব স্থানে নজর যেতেই আলিফা হা করে তাকিয়ে থাকে।আলিফার কোনো নড়চড় না দেখে আরাবী বলল,’ কি হলো তোর?এমন স্ট্যাচু হয়ে গেলি কেন?’

আলিফা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,’ ঘাড়,গলা এসবের দিকে একবারও নজর দিয়েছিস?ভাইয়া তো দেখছি সেই রোমান্টিক। লাভ বাইটে একদম ভড়িয়ে ফেলেছে।’

আলিফার লাগামছাড়া কথায় আরাবী থতমত খেয়ে যায়।চোখ বড়ো বড়ো করে বলে,’ কি সব বলছিস?’

আলিফা আরাবীর মুখটা আয়নার দিকে ধরে বলে,’ নিহেই দেখে নেহ।কি একটা অবস্থা হয়েছে।এগুলো কি আর কেউ দেখেছে?’

আরাবী তাকালো নিজের দিকে।পরক্ষণে নিজের শরীরের এহেন বেহাল দশা দেখে লজ্জায় হতভম্ব হয়ে গেলো।ইশ,লোকটা একদম ড্যাস্পারেট।জায়গাগুলো একদম কালচে হয়ে গিয়েছে।আরাবী লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে বসে রইলো।আলিফা হু হা করে হেসে দিলো আরাবীর অবস্থা দেখে। হাসতে হাসতেই বলে,’ ইশ লজ্জায় একদম লাল হয়্র যাচ্ছে।তোর ভাগ্য আরও ভালো ভাইয়া তোকে এতো ভালোবাসে আর এতো রোমান্টিক।নাহলে তুই যেই গাধি।চুমু কিভাবে খেতে হয় সেটাও তো মনে হয় জানিস না।’

আরাবী ঘুরে তাকালো আলিফার দিকে।চোখ ছোটো ছোটো করে বলে,’ তুই মনে হয় রোমান্সে পিএইচডি করেছিস?আমাকে যেইভাবে কথা শোনাচ্ছিস।নাকি ইফতি ভাইয়াকে একদম চুমু টুমু খেয়ে রফাদফা করে দিয়েছিস।তোর দ্বারা তো সবই সম্ভব।’

আলিফা হতম্ভব।আরাবী যে এমন একটা কথা বলবে তা ভাবতেও পারি নি।শুকনো ঢোক গিলে বলে,’ ছি! এমন কিছুই না।আমি একদম ইনোস্যান্ট।’
‘ হ্যা কতোটা ইনোস্যান্ট তা তো আমি দেখতেই পাচ্ছি।’
‘ উফ,বেশি কথা বলিস না তো।এখন সাজাতে হবে।নাহলে দেরি হয়ে যাবে।এরপর আমার নিজেরও তৈরি হতে হবে।’

আরাবী চুলগুলো খোপা করতে করতে বলে,’ তুই জামাকাপড় আনিস নাই এখানে?আমি তো বলে দিলাম এখানে একবারে নিয়ে আসতে।’
‘ এনেছি তো।এখানেই তৈরি হবো।’
‘ ভালো করেছিস।’

আলিফা এইবার আরাবীকে সাজাতে লাগল।কালো রঙের লেহেঙার সাথে হালকা গোল্ডেন মেক-ওভার নিয়েছে।সিম্পল সাজেই ভীষণ অমায়িক লাগছে আরাবীকে।
সাজানো শেষে আলিফা বলে,’ সুন্দর লাগছে।তবে পার্লারের মেয়েরা আরও সুন্দরভাবে সাজাতো।’
‘ নাহ ওদের সাজ ভালো লাগে না।তুই সুন্দর করে সাজাতে পারিস। এইবার যা তুই তৈরি হয়ে নেহ।’
‘ আমি নূরের রুমে আমার সবকিছু রেখে এসেছি।সেখানেই যাচ্ছি।’
‘ কেন এখানে কি হয়েছে?’
‘ নিউলি ম্যারেড কাপলদের আমি ডিস্টার্ব করতে চাইছি না।বাহিরে ভাইয়া অপেক্ষা করছে তার বউয়ের জন্যে।আমি যাচ্ছি।’

আলিফা আরাবীকে চোখ টিপে চলে গেলো।আলিফা বেরিয়ে যেতেই এইবার আরাবী ওর হাতের গহনাগুলো পরতে লাগল।চুরি,আংটি এসব পরছে।ঠিক তখনই রুমে প্রবেশ করে জায়ান।আরাবীর দিকে চোখ যেতেই চোখজোড়া স্থির হয়ে যায় জায়ানের।হৃৎপিণ্ডদের গতি হুহু করে বেরে যায়।জায়ান বুকের বা-পাশটায় হাত রাখল।ফিসফিস করে বলে,’ হোয়াই ইয়্যু আর সো বিউটিফুল মাই লাভ।আই কান্ট রেসিস্ট দিছ টেরিব্যাল ড্রাগ এডিকশন বিউটি ওফ ইয়্যুরস।’

জায়ান আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় আরাবীর দিকে।আরাবী অনেক আগেই জায়ানের উপস্থিতি টের পেয়েছে।তবুও কিছুই বলছে না।ওর ভীষণ লজ্জা লাগছে।সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকে যেন জায়ানের চোখে চোখ রাখতেই পারছে না।জায়ান এসে একদম দাঁড়ায় আরাবীর পেছনে।সেভাবেই আরাবীর পেটে দুহাত রেখে আরাবীকে নিজের বাহুবন্ধনে নিয়ে আসে।আরাবী মাথা নিচু করে আছে।জায়ান ঠোঁট ছোয়ালো আরাবীর কাধে।চোখ বন্ধ করে নেয় আরাবী।কেঁপে উঠে ওর দেহ।জায়ান ঘোরলাগা কন্ঠে বলে, ‘ ইয়্যুর বিউটি ইজ ব্রেথট্যাকিং মাই লাভ। আই ক্যান নেভার এক্সপ্রেস ইন ওয়ার্ডস হাও মাচ ইয়্যু মিন টু মি।আই ফল ফোর ইয়্যু মোর ডিপলি এভ্রিড্যে।’

জায়ানের প্রশংসা শুনে আরাবীর ঠোঁটের কোণে লাজুক হাসি ফুটে উঠল।জায়ান এইবার আরাবীকে নিজের দিকে ফিরালো।আরাবীর কপালে চুমু দিয়ে বলে,
‘ তুমি কি জানো মেয়ে?আমার ভবিষ্যত তুমি।যার স্বপ্নের সৌন্দর্যে আমি বিশ্বাসী।’

আরাবী জায়ানকে দুহাতে জড়িয়ে ধরল এইবার।জায়ানের বক্ষে মুখ গুজে বলে,’ এতো প্রশংসা করবেন না তো।আমি ওতো সুন্দর না।আর এতো প্রশংসা শুনলে আমার লজ্জা পায়।’

জায়ানের রাগ উঠে গেলো আরাবীর কথাটা শুনে।আবারও মেয়েটা নিজেকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে।জায়ান শক্ত কণ্ঠে বলল,
‘ কতোবার তোমায় বলব?নিজেকে এইভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে না।আমার সহ্য হয় না।আমাকে রাগিও না আরাবী।আমি রেগে কিন্তু অনেক ভয়ংকর হয়ে যাই।আমি চাই না আমার দ্বারা সামান্য আঘাতও তুমি পাও।তোমার গায়ে একটুখানি ফুলের টোকাও আমার সহ্য হবে না।’

আরাবী নিজের কাজে নিজেই হতভম্ব।সে জানে জায়ান এসব কথাবার্তা সহ্য করতে পারে না।তারপরেও ভুলে বলে ফেলল।আরাবী জায়ানের পিঠে আলতোভাবে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,’ আচ্ছা সরি।রাগ করবেন না।আর বলব না।’

জায়ান আরাবীকে এইবার বাহুবন্ধনী থেকে মুক্ত করল।শীতল গলায় বলে,’ সরি এক্সপেক্ট করব না।অন্যভাবে আমাকে মানাতে হবে।’

জায়ানের কথায় আরাবী চিন্তায় পরে গেলো।অন্যভাবে কিভাবে মানাবে সে লোকটাকে।আরাবী ঠোঁট উলটে বলল,’ কিভাবে?আপনি বলে দিন না।’

জায়ান এইবার ঝুঁকে আসল। বাকা হেসে বলল,’ আমার ঠোঁটে চুমু খাও।দেখবে আমার রাগ সুরসুর করে কোথাও একটা চলে গিয়েছে।’

আরাবী জায়ানের কথায় লজ্জা পেলো।জায়ানের বুকে আলতো হাতে ধাক্কা দিয়ে বলে,’ ধ্যাৎ, শুধু এসব লুচু চিন্তাভাবনা মাথায় ঘুরে আপনার।’

আরাবী জায়ানের কাছ থেকে সরে যেতে নিতেই জায়ান আরাবীর হাত ধরে হেচকা টানে ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।আরাবী হকচকিয়ে যায়।কিছু বলার জন্যে মুখ খুলবে।তার আগেই জায়ান তার অধরজোড়া আরাবীর অধরে চেপে ধরে।ঝংকার তুলে যায় আরাবীর দেহ মন জুড়ে।খামছে ধরে জায়ানের বুকের কাছটা।একসময় চোখ বন্ধ করে স্বামীর ভালোবাসায় হারিয়ে যায়।
_________
মাত্রই তৈরি হয়ে নূরের রুম থেকে বের হলো আলিফা।অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে।ওরই দেরি হলো।নূরকেও সাজিয়ে দিয়েছে।তার দেখাদেখি নূরের আরও দুজন কাজিনও সাজলো।ওদের সাজাতে গিয়ে আলিফার দেরি হয়ে গিয়েছে।আলিফা তারাহুরো করে এগিয়ে যাচ্ছে।এমনসময় কেউ একজন একটা কক্ষের দরজা খুলে আলিফাকে টেনে ভেতরে নিয়ে আসল।চমকে যায় আলিফা।সেই সাথে ভীষণ ভয়ও পায়।চোখ বন্ধ করে মৃদু চিৎকার করে উঠে,’ ও মা গো।’

জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে আলিফা।হঠাৎ সম্মুখে কারও হাসির শব্দ শুনে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়।তাকাতেই দেখে ইফতি ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।তার মানে এই কাণ্ডটা ইফতিই করেছি।আলিফা রেগে বোম হয়ে গেলো।ইফতিকে একটা ঘুষি দিয়ে বলতে লাগল,’ শয়তান লোক,খারাপ লোক।আমি কি ভয় পেয়েছিলাম আপনি জানেন?আর একটু হলে হার্ট এট্যাক হয়ে যেতো।’
‘ উফ মারছ কেন?আচ্ছা সরি আর করব না।’

আলিফা মেরেই যাচ্ছে।একসময় ইফতি আলিফার দুটো হাত চেপে ধরে ওর এক হাতের মাঝে।আরেকহাতে আলিফার কোমড় আঁকড়ে ধরে বলল,’ তোমার এই পুচকে পুচকে হাতের আঘাতে আমার কিছুই হবে না।শুধু নিজের এনার্জি লস করছ।’

আলিফা ছোটাছুটি করতে করতে বলে,’ ছাড়ুন তো।আপনার সাথে কোনো কথা বলব না আমি।’

ইফতি আলিফাকে আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে।আলিফার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো।ভূমিকম্পের ন্যায় কেঁপে উঠল আলিফা।ইফতির কাণ্ডে আলিফা যেন শ্বাস আটকে গেলো।কাঁপা গলায় বলল,’ ক..কি করছেন?’
‘ উম, দেখছ না প্রেম করছি।’

ইফতি আলিফার ঘাড়ে ঠোঁটের আবেশ দিলো।চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো আলিফা।লোকটার আজ কি হলো?এমন করছে কেন?
আলিফা কাঁপা কণ্ঠে বলে,’ এমন করছেন কেন? ছাড়ুন না।’

ইফতি তাকালো আলিফার দিকে।ইফতির চোখের দিকে তাকালো আলিফা।আজ ইফতির চোখে অন্যরকম এক নেশা দেখতে পাচ্ছে।ইফতি নেশালো কণ্ঠে বলে,’ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে আলিফা।ইয়্যু আর লুকিং এবসুলুটলি গর্জিয়াস।পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।আ..আলিফা তোমায় যদি আমি একটা চুমু খাই।তুমি কি রাগ করবে?আই জাস্ট ক্যান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ।’

এতোটা অস্থির ইফতিকে কোনোদিন হতে দেখেনি আলিফা।কি বলবে ইফতিকে।কণ্ঠনালিটা যেন কেউ শক্ত করে চেপে ধরেছে।ইফতির এই আবদারটাও না করতে পারছে না।লোকটাকে আজ ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে না আলিফার।লোকটাকে ও ভালোবাসে।তার ওই ভালোবাসার ছোঁয়া তো সে সাধরে গ্রহণ করবে।আলিফা শুকনো ঢোক গিলল।জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে এগিয়ে এলো ইফতির কাছে।ইফতির গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরল।তারপর চোখ বন্ধ করে নিলো।আলিফার নিরম সম্মতি পেয়ে ইফতি মুচঁকি হাসল।আর এক মুহূর্তও দেরি না করে আলিফার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।দুজন দুজনার মাঝে মত্ত হয়ে রইলো অনেকটা সময়।

#চলবে________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here