স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #পর্বঃ৩৭

0
681

#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৭
আরাবীর আকাশে আজ মন খারাপের মেঘ জমেছে।নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে কষ্ট দিয়ে এখন যেন নিজের বুকটা পুড়ে যাচ্ছে।কেন বলতে গিয়েছিলো ওই কথাগুলো?মানুষটা খেয়েও যায়নি।আরাবীর চোখজোড়া জলে টইটম্বুর।একসময় দুহাতে মুখটা ঢেকে ফুঁপিয়ে উঠল।কাঁদতে কাঁদতে বলে,’ আ`ম সরি।আমি সেভাবে বলতে চায়নি।আ`ম রেয়েলি ভেরি সরি।’

আরাবী এখন হারে হারে টের পাচ্ছে।এই মানুষটার সামান্য অভিমান সে সহ্য করতে পারছে না।সেখানে এই মানুষটাকে ছাড়া নিজের অস্তিত্ব কল্পনাও করতে পারবে না আরাবী।এটা ভাবলেই যেন নিজের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আরাবীর।মানুষটা এখন ওর হৃদয়ের সবটা জুড়ে বাস করে।আরাবী এখন নিজের অনুভুতিগুলোকে খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছে।ও যে লোকটাকে ভালোবেসে ফেলেছে।এতে কোনো সন্দেহ নেই।
আরাবী আকাশের দিকে তাকিয়ে ভেজা কণ্ঠে বলল,
‘ আই লাভ ইয়্যু জায়ান।লাভ ইয়্যু সো মাচ।আই জাস্ট কান্ট লিভ উইথআউট ইয়্যু।’

আরাবী হাতের ফোনটার দিকে তাকালো।এই নিয়ে কতোগুলো ফোন আর ম্যাসেজ করেছে সে জায়ানকে।লোকটা একটা ম্যাসেজও সিন করেনি।অনেকটাই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে ও জায়ানকে।অফিস থেকে ফিরুক একবার।যে করেই হোক তাকে মানিয়েই ছাড়বে আরাবী।
ওর ভাবনার মাঝেই দরজায় করাঘাতের শব্দ পেলো আরাবী।ভড়কে গিয়েছিলো প্রথমে।পর পর নিজেকে সামলে নিলো।চোখ মুছল শাড়ির আঁচলে।এরপর গিয়ে দরজা খুলল।দরজা খুলতেই সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিকে দেখে একটা চমকালো আরাবী।স্বয়ং সুহানা সাখাওয়াত দাঁড়ানো এখানে।আরাবী তাকে দেখেই শাড়ির আঁচল মাথায় টানলো।নরম গলায় বলে,
‘ আসুন মা।ভেতরে আসুন।’

আরাবীর এই নরম কণ্ঠে বলা কথায় ছিটেফোঁটাও দাম দিলেন না সুহানা সাখাওয়াত। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আরাবীর দিকে তাকিয়ে কথার বাণ ছুড়ে দিলেন।
‘ এতো আদ্যিক্ষেতা করতে হবে না।বিয়ের পর থেকে শুধু তোমার কির্তীকালাপগুলো দেখলাম।এই বাড়ির বউ তুমি।তাও বড়ো বউ।সেই হিসেবে তোমার তো কিছু দায়িত্ব তো আছে তাই নাহ?নাকি আমার ছেলে আহ্লাদ পেয়ে একদম মাথায় উঠে বসেছ।আসার পর থেকে তো এক কাপ চা-ও বানিয়ে খাইয়ে দেখোনি।পায়ের উপর পা তুলে রাজরানি হয়ে বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছ?তোমার মা বাবা তো এতো জমিদার না, যে তুমি বাবার বাড়ি একশজন কাজের মানুষ আছে।তাই কোনোদিন কাজ করোনি।বড়োলোক বাড়িতে বিয়ে করে নিয়ে ভেবেছ শুধু খাবে আর ঘুমাবে আর কিছু করা লাগবে না। তাই নাহ?’

সুহানা সাখাওয়াতের এক একটা কথা যেন বুকে তীব্রভাবে আঘাত করল আরাবীর।এসব কি বলল তিনি?বিয়ের পর এই প্রথম সুহানা সাখাওয়াতের সাথে ভালোভাবে দেখা হলো আরাবীর।নাহলে তিনি সচরাচর ওর দিকে তো তাকানও না।আর আজ প্রথমবারেই এমন ব্যবহার মোটেও আশা করেনি আরাবী।আরাবী ভরাক্রান্তে হৃদয়ে থেমে থেমে বলল,’ আমি ক্ষমা চাচ্ছি মা।আমার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে না পারার জন্যে।আমায় বলুন আমাকে কি করতে হবে।আমি সব করে দিচ্ছি।’

সুহানা সাখাওয়াত রাগি গলায় বলেন,’ এখন আমার সাথে এভাবে মধু মিশিয়ে কথা বলছ।আমার ছেলে আসলে তো ঠিকই তার কানে আমার নামে বিষ ঢুকিয়ে দিবে।’
‘ ছিঃ ছিঃ মা এসব কি বলছেন।আমি এটা কখন ভাবতেও পারি না।’
‘ সেটা সময়ই বলে দিবে।এখন আর এসব মেলোড্রামা করো না।নিচে যাবে। রান্নাঘরে মিলি আছে।সেখানে গিয়ে ওকে বলবে আজকের রান্না তুমি করবে।আমি মিলি থেকে কোনো খোটা শুনতে পারব না।ও যেন না বলতে পারে যে আমি আমার পুত্রবধূকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াই।কথা যেন মাথায় থাকো।এখন যাও কাজে।’
‘ আ..আচ্ছা মা।’

সুহানা সাখাওয়াত চলে গেলেন।আরাবী ঠোঁট কামড়ে ধরল।সুহানা সাখাওয়াত তো ঠিকই বলেছেন।এখানে আসার পর থেকে একটা কাজও আরাবী করেনি এই বাড়ির লোকদের জন্য।আসলে করবেই বা কিভাবে?এতোদিন তো জায়ান অফিসে যায়নি।বিয়ের পর আজকেই প্রথম গেলো অফিসে।জায়ানের কারনেই কোনো কাজ করতে পারেনি।শুধু রুমের টুকিটাকি কাজ করেছে।তবে বাবা মা টেনে নিয়ে কথা বলায় আরাবীর ভীষণ খারাপ লেগেছে।তবে মনের কষ্ট মনে রেখে আরাবী সুহানা সাখাওয়াতের কথা মতো রান্নাঘরে চলে আসল।মিলি বেগম তখন ফ্রিজ থেকে গোস্ত বের করে ভেজাচ্ছিলেন।আরাবী ওনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,’ ছোটোমা কি করছেন?’

মিলি বেগম আরাবীকে দেখে মুচঁকি হাসলেন।অতঃপর বললেন,’ আজ বৃষ্টি হচ্ছে।ভাবলাম খিচুরি রান্না করি।সাথে গোস্তের কালা ভুনা করলে একদম জমে যাবে।জায়ানের অনেক পছন্দ।ছেলেটার এই দুটো হলে যেন আর কিছু লাগে না। ওহ,হ্যা এর সাথে তার শুটকি ভর্তাও চাই।’

আরাবীর যেন আগ্রহ বারল।সে এখনও ঠিকঠাকভাবে জানে না জায়ানের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়ে।
আরাবী মৃদু হেসে বলে,’ বলেছিলাম কি ছোটো মা।আজকের রান্নাটা আমি করি?’

মিলি অবাক হয়ে তাকালো আরাবীর দিকে।বলল,’ তুমি রান্না পারো?’

আরাবী চওড়া হাসি দিয়ে বলে,’ সব রকমের রান্না পারি আলহামদুলিল্লাহ! ‘
‘ মাশা-আল্লাহ!’
‘ তাহলে রান্নাটা আমি করি?’
‘ এতো খুশির কথা।বাড়ির বউ আজ প্রথমবার রান্না করবে।’

মিলি বেগমকে আরাবীর ভীষণ পছন্দ।মানুষটা অনেক নরম হৃদয়ের অধিকারি।একদম সহজ-সরল একটা মানুষ।কি সুন্দর সবসময় হাসিখুশি থাকেন।তাকে দেখতেও আরাবীর ভীষণ ভালো লাগে।
আরাবী কাজে লেগে পরল।সাথে সাহায্যও করলেন মিলি।বেগম।প্রথমবার তো তাই আরাবী জানে এখানের জিনিসপত্র কোনটা কোথায় আছে।খিচুরি বসিয়ে এইবার আরাবী গরুর গোস্তের কালা ভুনা রান্না শুরু করল।মশলা কষানোর সময় আরাবী এইবার মিলি বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলেন,’ বলছি ছোটো মা উনার আর কি কি পছন্দ?আর কি কি অপছন্দ?মানে যেটা তিনি একদম পছন্দ করেন না?’

মিলি বেগম আরাবীর প্রশ্নে হাসলেন।বললেন,
‘ জায়ান মোটামুটি সবকিছুই খায়।তবে ও মিষ্টিজাতীয় কিছু পছন্দ করে না।পছন্দ করে না মানে একদমই করে না।ঝাল ঝাল খাবার অনেক পছন্দ করে।শাকটাক এতো খায় না।তবে সবজি অনেক পছন্দ।অনেকগুলো সবজি দিয়ে একসাথে নিরামিষ রান্না করলে ও খুব পছন্দ করে।সবধরনের ভর্তা।তাও অনেক ঝাল দিয়ে।ওর কারনে আমার আলাদা করে ভর্তা করতে হয়।মানে মরিচ ভর্তা ওর ওলওয়েজ লাগে।ও যেকোন তরকারির সাথে মরিচ ভর্তা খাবে।ওতো ঝাল আমরা আবার কেউ খেতে পারতাম না।ও ঠিক ওর মায়ের মতো হয়েছে।আপাও এমন ঝাল খেতো।একবার কি হয়েছিলো জানো?যখন আমি নতুন বউ হয়ে বাড়িতে আসলাম।তখন তো আর ওতো কিছু জানতাম না।আপা যে নিজের জন্যে আলাদা একপদ তৈরি করত এটা আমি জানি না। তো আমি ভুলে একদিন আপার তরকারির দেখে খেয়ে ফেলেছিলাম।ব্যস,কাম খতম।যেই ঝাল ছিলো বাবা গো বাবা।এখনও সেটা মনে পরলে আমার চোখে পানি চলে আসে।’

মিলি বেগমের মুখের এক্সপ্রেসন দেখে হেসে ফেলল আরাবী।সাথে হাসলেন মিলি বেগমও।কথা বলতে বলতে কালাভুনাটাও হয়ে গিয়েছে।আরাবী এইবার শুটকি ভর্তা আর মরিচ ভর্তা করে ফেলল।তারপর অন্যদের জন্যে কম ঝাল দিয়ে অন্যান্য রান্না করল।কালাভুনাও দুটো করেছে একটা বেশি ঝাল আর এক্লটা কম ঝাল।রান্না প্রায় শেষ।এমন সময় মিহান সাহেবের কণ্ঠস্বর শুনতে পাওয়া গেলো।তিনি চা খেতে চাচ্ছেন।আর মিলি বেগমকেও ডাকছেন।তা শুনে আরাবী বলে,’ ছোটোমা আপনি যান।রান্না তো শেষ।আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসছি আপনি যান।’

রান্না সব শেষ হয়ে যাওয়ায়।মিলি বেগমও দ্বিমত করলেন না।আরাবীর কথায় রাজি সায় দিয়ে তিনি চলে গেলেন।যাওয়ার আগে বললেন মিহান সাহেব রংচা খান। আর তার জন্যেও বানাতে বললেন।আরাবী তাই তিনজনের জন্যে বানাবে ভাবল।ও নিজেও একটু খাবে।
তিনি যেতেই আরাবী চুলোতে চা বসালো।তারপর ভাবতে লাগল আজ জায়ানের জন্যে নিজ হাতে সব রান্না করেছে।একদিকে সুহানা সাখাওয়াতকে ওর ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।কারন তার কথার কারনেই আরাবী আজ রান্না করতে এসেছে।আচ্ছা,ওর হাতের রান্না খেয়ে লোকটার কি পছন্দ হবে?নাকি ও রান্না করেছে শুনে খাবেই না।যেই রাগ করেছে জনাব।নাহ,তার জায়ান এমনটা করতেই পারে না।ও তো জানে জায়ান ওকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে।আরাবী হাইপার হয়ে শুধু শুধু মানুষটাকে এভাবে কষ্ট দিয়ে ফেলল।আচ্ছা,সবসময় তো জায়ানই ওর কাছে আগে আসে।ভালোবাসার ঘনিষ্ঠ মুহুর্তগুলোতে জায়ানই ওকে আগে কনভিন্স করে।আজ যদি ও নিজেই আগে জায়ানের কাছে এগিয়ে যায়।আর ওর ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে।তবে কেমন হবে ব্যাপারটাএকটা সুন্দর শাড়ি পরবে।হালকা সাজবে মানুষটার জন্যে।খুব রোমান্টিকভাবে ভালোবাসার কথা জানাবে জায়ানকে।এসব ভেবেই লজ্জায় গাল গরম হয়ে এলো আরাবীর।তার এসব ভাবনাতেই গণ্ডগোল হয়ে গেলো।আরাবী চিনির বদলে লবন দিয়ে ফেলেছে।দেওয়ার সাথে সাথেই বুঝতে পেরেছে।কিন্তু কিছু করার নেই।আরাবী ‘ ইশ ‘ শব্দ করে বলল,’ হায় রে এটা কি করলাম?কি ভুল করে ফেললাম।চাচ্চু অপেক্ষা করছেন চায়ের জন্যে।’

আরাবী দ্রুত সেই পাত্রটা নিয়ে হাটা ধরল পানিগুলো ফেলার জন্যে।হঠাৎ পেছন থেকে সুহানা সাখাওয়াতের গলা শোনা গেলো।
‘ এই মেয়ে?রান্না হয়েছে?জায়ানরা তো এসে পরবে।এখনও রান্না হয়নি?’

অকস্মাৎ এভাবে আসায় আরাবী এমনভাবে চমকে গেলো। যে মেয়েটার ভড়কানোর কারনে ওর হাতের গরম পাত্রটা ওর হাত থেকে ছুটে গিয়ে ওর পায়ের উপরেই পরে যায়।টগবগানো গরম চায়ের পানি।সবটা আরাবীর পায়ের উপরে পরল।তীব্র যন্ত্রণায় আরাবী ‘ মা গো! ‘ বলে চিৎকার করে ফ্লোরে বসে পরে ওর পাজোড়া হাত দিয়ে ধরে ফেলে। সুহানা সাখাওয়াত নিজেও ভড়কে যান।এমনটা যে হবে তিনি ভাবতে পারেননি।পরক্ষণে আরাবীকে যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখে তার ঠোঁটের কোণে ক্রুর হাসি ফুটে উঠে।ভালো হয়েছে।আরও কাতরাক।মজা পাচ্ছে সে।
তবে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে হবে না।উনাকে ধরতে হবে।নাহলে সবার নজরে খারাপ হয়ে যাবেন তিনি।তাই না চাইতেও গিয়ে ধরেন আরাবীকে।অভিনয় করে ন্যাকা স্বরে বলেন,’ ও মাই গড।ইশ, এটা কি হয়ে গেলো।আমি তোমাকে ভয় দেখাতে চাইনি আরাবী।আ`ম সরি।’

আরাবী যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে বলে,’ আপ..আপনার দোষ নেই মা।মা একটু কষ্ট করে বরফ নিয়ে আসুন মা।আমার ভীষণ জ্বলছে।’

এদিকে আরাবীর চিৎকারে মিলি বেগম,নূর ছুটে এসেছেন।মিহান সাহেবও সার্ভেন্টসদের সাহায্য নিয়ে আসলেন।আরাবীর এই অবস্থা দেখে তারা হতভম্ব।মিলি আর সুহানা আরাবীকে ধরে নিয়ে।খুব কষ্টে ড্রয়িংরুমের সোফায় নিয়ে বসালেন।আরাবী চোখ বন্ধ করে দাঁতেদাত চিপে ব্যথাটা সহ্য করার চেষ্টা করছে। নূর গিয়ে দ্রুত ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে আসল।মেয়েটা মাত্রই ভার্সিটি থেকে ফিরেছে।আরাবীর চিৎকার শুনেই দৌড়ে এসেছে।নূর আস্তে আস্তে আরাবীর পায়ে বরফ দিতে লাগল।মিলি বেগম চিন্তিত স্বরে বললেন,’ এসব কিভাবে হলো?’
‘ আসলে আমি দেখতে গিয়েছিলাম রান্না কতোদূর হয়েছে।আরাবীর হাতে তখন চায়ের পাত্র ছিলো।আমি ওকে ডাক দিলাম।ও চমকে উঠল।ভয় পেয়ে হাতের পাত্রটা ছেড়ে দিলো।আর এইটা ঘটে গেলো। আ`ম সরি আরাবী।’

আরাবী ব্যথাতুর কণ্ঠে বলে,’ আপ..আপনার দোষ নেই মা।আমিই খেয়াল করিনি। আপনি সরি বলে আমাকে নিজের চোখে ছোটো করে দিবেন না।’

নূর আরাবীর পায়ে বরফ ঘষতে ঘষতে দেখে আরাবীর পায়ে ওলরেডি ফোসকা পরে গিয়েছে।বেশ ভালোই পুড়েছে।নূর বলল,
‘ ভাবি?ডক্টরকে আসতে বলি।অনেকখানিই ফোসকা পরেছে।’

এদিকে কাজ শেষ করে মাত্রই বাড়ি ফিরেছে জায়ান, নিহান সাহেব আর ইফতি।আজ অফিসে জরুরি মিটিং ছিলো।সেটা শেষ করেই এসেছে।কারন অফিসে আর কাজ ছিলো না তেমন একটা।তাই বাসাতেই এসেছে সবাই লাঞ্চ করে তারপর আবার যাবেন।
এদিকে বাসায় এসে ড্রয়িংরুমে সবাইকে এভাবে একঝোট হয়ে থাকতে দেখে ইফতি বলল।
‘ আজকে সবাই এখানে একসাথে।কোনো বিশেষ কিছু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে নাকি?’

নূর ইফতির কথা শুনে করুণ গলায় বলে,
‘ ভাবির পা পুড়ে গিয়েছে ইফতি ভাইয়া।’

এই কথাটা শুনে জায়ান চমকে তাকালো।কথাটা যেন একেবারে বুকের বা-পাশে বিষাক্ত তীরের মতো এসে বিধল।তার কাঠগোলাপ ব্যথা পেয়েছে।জায়ান দ্রুত বড়ো বড়ো পা ফেলে এগিয়ে আসল।আরাবী সোফায় বসে আছে।ওর পা টা টি-টেবিলের উপর উঠানো।নূর সেখানে বরফ গলা পানি দিচ্ছে।পা টা পুড়ে ফোসকা পরে গিয়েছে।যা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।জায়ান আরাবীর মুখের দিকে তাকালো।আরাবীর চেহারায় তীব্র যন্ত্রণার ছাপ। ওই যন্ত্রণাময় মুখটা দেখে জায়ানের হৃদয়টা যেন যন্ত্রণায় থেতলে গেলো।ইশ,কতোটা কষ্ট হচ্ছে ওর কাঠগোলাপের।জায়ানের ভেতরে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে প্রিয়তমা স্ত্রীকে দেখে তা কেউ বুঝতেই পারবে না।জায়ান কাউকে কিছু বলল না।না জিজ্ঞেস করল এটা কিভাবে হয়েছে।ও চুপচাপ গিয়ে এক ঝটকায় আরাবীকে কোলে তুলে নিলো।এদিকে জায়ানের উপস্থিতি টের পেয়ে অনুশোচনায় জায়ানের দিকে তাকাতে পারছিলো না আরাবী।তাই চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে ছিলো।কিন্তু হঠাৎ এভাবে জায়ান কোলে নেওয়ায় মেয়েটা চমকালো।পর পর সবার সামনে জায়ান ওকে কোলে নিয়েছে এর কারনে লজ্জা পেলো।তবে জায়ানকে কিছু বলল না।আরাবী জায়ানের গলাটা ভালো আবে জড়িয়ে ধরল।তারপর জায়ানের দিকে তাকালো।মানুষটা চোখ মুখ গম্ভীর করে রেখেছে।চোয়ালদ্বয় শক্ত হয়ে আছে তার।বেশ প্রেসার সাথে আরাবীকেও ধরে রেখেছে।বোঝাই যাচ্ছে জায়ান ভীষণ রেগে আছে।আরাবী ভয় পেলো।বার বার শুকনো ঢোক গিলতে লাগল।এই আগ্নেয়গিরিকে কিভাবে শান্ত করবে আরাবী?ভাবতেই ওর বুক ধরফর করতে লাগল।

#চলবে_________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here