স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #পর্বঃ৪৫

2
723

#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪৫
বসুন্ধরার পুরো মল ঘুরল ননদ ভাবি মিলে।অবশেষে ডিসাইড করল আলিফা যেহেতু মেক-আপ করতে ভালোবাসে।তাই ওকে একটা ভালো ব্রান্ডের মেক-আপ স্যেট কম্বো গিফট করবে।
আর সাথে তো ডায়মন্ডের ছোট্টো একটা কানেরদুল জাতীয় টপ কিনল।কেনাকাটা শেষ হতেই এইবার আরাবী আর নূর বেড়িয়ে পরলো।গাড়ি চলছে নিজ গতিতে।পথের ধারে ফুচকা বিক্রেতাকে দেখে আরাবী গাড়ি থামাতে বলল।হঠাৎ গাড়ি থামাতে বলায় নূর বলল,
‘ কি হয়েছে ভাবি?গাড়ি থামাতে বললে যে?’

আরাবী মুখে চওড়া হাসি ফুটিয়ে বলে,
‘ বাহিরে এসেছি।কিছু খাবোনা তা কি হয়?’

আরাবীর কথায় নূর হেসে বলে,
‘ আচ্ছা তা এই ব্যাপার?তা কি খাবে?’
‘ ফুচকা!’

নূর মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলো।পর পর কিছু একটা ভেবে মুখ লটকিয়ে বলে,
‘ কিন্তু ভাইয়া জানতে পারলে খবর করে ছাড়বে আমাকে ভাবি।ভাইয়া এসব খাবার পছন্দ করে না।তবে আগে আমাকে কিছু বলতো না।কিন্তু একবার বান্ধবীদের পাল্লায় পরে ফুচকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ছিলাম।সেদিন অনেকগুলা ফুচকা খেয়েছিলাম।তাও বোম্বাই মরিচ দিয়ে।রাতেই পেট ব্যথা শুরু হয়।যা আস্তে আস্তে মাত্রারিক্ত হয়ে দাঁড়ায়।এরপর আমাকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়।ফুড পয়জনিং হয়ে গিয়েছিলো আমার।ফুড পয়জনিং এর কারন জানার পর ভাইয়া তো সেই রেগে গিয়েছিলো।আমাকে যে পরিমান বকেছে আর ধমকেছে।ওটার পর আমি আর ফুচকা খাইনি।ইনফেক্ট বাহিরের কোনো খাবারই এরপর আমি খাইনি।’

নূরের কথা শুনে শুকনো ঢোক গিলল আরাবী।সব শুনে ওরও ভয় লাগছে।কিন্তু মনকে কিভাবে মানাবে?ফুচকা তাকে খেতেই হবে।নাহলে শান্তি নেই।আরাবী জোড়পূর্বক হাসি টানল ঠোঁটে। বলল,
‘ আহা,সে অনেক পুরনো কথা।আর একপ্লেট ফুচকা খেলে কিছু হবে না।তাছাড়া তোমার ভাইয়া জানলে তো বকবে।আসো তো এতো চিন্তা করলে হয়?’

আরাবীর জোড়াজুড়িতে রাজি হয় নূর।পরে দুজন মিলে যায় ফুচকা স্টোলে।আরাবীর তো এখনই জিহভে জল আসছে।আরাবী ফুচকাওয়ালাকে বলে,
‘ মামা বোম্বাই মরিচ দিয়ে দু প্লেট ফুচকা।টকটা একটু বেশি দিবেন।’

অর্ডার দিয়ে দুজনে মিলে বসল সেখানের এক বেঞ্চিতে।কিছুক্ষণ ফুচকা ওয়ালা ফুচকা নিয়ে এসে ওদের দিলো।আরাবী তো হাতে পেতেই গপাগপ খেলো সব। কিন্তু খাওয়া শেষে পাঁচ মিনিটও সইলো না।দৌড়ে গিয়ে রাস্তার পাশে ড্রেন আছে। সেখানে বমি করে দিলো।নূর তো ভয় পেয়ে গেলো।আরাবীর অবস্থা দেখে।বমি করতে করতে একেবারে পেটের ভীতর সব বের করে তবেই ক্ষান্ত হলো মেয়েটা।নূরের গায়ে এলিয়ে পরল।নূর অস্থির হয়ে বলে,
‘ ভাবি কি হয়েছে তোমার?আমি আগেই বলেছি এসব খেও না।তোমার এই অবস্থা হয়েছে ভাইয়া জানতে পারলে বাড়িতে তান্ডবলীলা শুরু করে দিবে।নূর আরাবীকে আরও দুজন মহিলার সাহায্যে বেঞ্চিতে এনে বসালো।মহিলা দুটোকে ধন্যবাদ জানালো নূর।আর আরাবী তো স্বাভাবিক অবস্থাতেই নেই।বমি করে মেয়েটা একদম নিস্তেজ হয়ে পরেছে।নূর ওদের ড্রাইভারকে ডাকল।তারপর তার সাহায্যে আরাবীকে গাড়িতে উঠিয়ে নিলো।আরাবীকে নিজের বুকের মাঝে আগলে নিলো নূর।তারপর ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলল,
‘ কাকা প্লিজ পাশেই হসপিটাল আছে একটা।সেখানে চলুন।’

নূরের কথামতো ড্রাইভার সেখানে পৌছালো।আরাবীকে জলদি ইমার্জেন্সিতে নেওয়া হলো।স্যালাইন দেওয়া হলো অভিজ্ঞ ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী।ঘণ্টাখানিক পর আরাবী কিছুটা সুস্থবোধ করে।এরপর সেখানের একজন গাইনোলজিস্ট এসে আরাবী চেক- আপ করল।পরে আরাবীকে কিছু টেস্ট দিলো করতে।নূর আরাবীকে সাহায্য করল পুরোটা সময়।সবগুলা টেস্ট করা শেষ।আরাবীর এখন প্রচুর ক্ষুদা লেগেছে। আরাবী দূর্বল গলায় বলল,
‘ নূর আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।আমি মনে হয় কিছু না খাওয়া পর্যন্ত আর এক কদমও হাটতে পারব না।এদিকে তোমার ভাইয়া তিন চারবার ফোন দিয়েছে। আমি ধরিনি।’

নূর ঘাবড়ানো কণ্ঠে বলে,
‘ আমাকেও দিয়েছে।আমিও ধরিনি।আমার অনেক ভয় লাগতেছে ভাবি।’
‘ ভয় পেও না।আপাতত আমাকে কিছু এনে দেও।আমি খেয়ে একটু ঠিক হয়ে নেই।বাসা তো আর বেশি দূরে না এখান থেকে জলদি চলে যাবো।’

এর মাঝে আবারও ফোনটা বেজে উঠল।জায়ান আবারও কল দিয়েছে।আরাবী রিসিভ করল না।নূর ভয়ে অস্থির।তাড়াতাড়ি ছুটল কিছু খাবার আনার জন্যে।এদিকে আরাবীর ফোনে মেসেজ আসল একটা।জায়ান লিখেছে,
‘ কোথায় তোমরা আরাবী।ফোন ধরছ না কেন?প্লিজ পিক আপ দ্যা ফোন। ‘

আরাবীর এইবার খারাপ লাগছে জায়ানের জন্যে। বেচারা অনেক চিন্তা করছে।কিন্তু কিছু করার নেই।এখন যদি জায়ানের কল ও রিসিভ করে তো ওর কণ্ঠস্বর শুনেই জায়ান বুঝে ফেলবে ওর কিছু হয়েছে।আর নূর তো বেচারি অনেক ভয় পায় ওর ভাইকে।ভয়ে না আবার উল্টাপাল্টা বলে দেয় তখন আবার আরেক ঝামেলা।নূর আসলে একটু খেয়ে আপাততো শরীরটা একটু ঠিক হলেই বাসায় ফিরবে তারা।
আরাবী এইবার একটু উঠে দাঁড়ালো। পানির তৃষ্ণা পেয়েছে। তাই পানি খাবার জন্যে ফিল্টারের সামনে যাবে।হঠাৎ কেউ একজন আরাবীর বাহু ঘাবলে ধরল। চমকে উঠে আরাবী।তাকিয়ে দেখে একজন মহিলা।বয়স আনুমানিক ষাটের কাছাকাছি হবে।সাদা শাড়ি গায়ে জড়ানো।চুলগুলো উষ্কখুষ্ক।চেহারায় অনেক কাটাছেঁড়ার দাগ,সেই সাথে ভয় আর আতংক।আরাবী আরও একটু ভালোভাবে দেখল। হঠাৎ আরাবীর খেয়াল হলো মহিলাটাকে ও কোথায় যেন দেখেছে।মহিলাটি খুব আপন কেউ ওর।আরাবী অস্থির হয়ে উঠল।মনে করার চেষ্টা করতে লাগল।কোথায় দেখেছে তাকে।কিন্তু ওর ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটে মহিলাটির পাগলাটা আচরণে।মহিলাটি ভয়ার্ত কণ্ঠে আরাবীকে বলছে,
‘ আমি আমার সাফুর কাছে যাব।আমাকে আমার সাফুর কাছে নিয়ে চলো।ওরা আমাকে আমার সাফুর কাছে যেতে দিচ্ছে না।আমার পুতুল সোনাটাও অনেক কাঁদছে আমার জন্যে।তুমি,, তুমি কি আমাকে আমার সাফু আর পুতুল সোনার কাছে দিয়ে আসবে আমাকে?বলো?দিয়ে আসবে বলো?বলছ না কেন?বলো?’

আরাবীর বাহু ধরে একপ্রকার ঝাকানো শুরু করে দিয়েছে মহিলাটি।এমন সময় পাঁচ ছয়জন লোক ছুটে আসল।মহিলাটি পিছে ঘুরে লোকগুলোকে দেখে আতংকে অস্থির হয়ে উঠল।সরে গিয়ে এইবার আরাবীর পিছনে লুকিয়ে পরল।কান্না করতে করতে বলে, ‘ ওরা আসছে আমাকে নিতে।আমি যাবো না।তুমি আমাকে লুকিয়ে ফেলো।আমার সাফু আর পুতুল সোনা কাঁদছে আমার জন্যে।’

কিন্তু লোকগুলো ততোক্ষণে পৌছে গিয়েছে।আরাবীর পিছন থেকে একজন লোক মহিলাটিকে টেনে বের করে আনল।মহিলাটি ছাড়া পাবার জন্যে অস্থির হয়ে ছোটাছুটি করছে।তা দেখে আরাবীর বুকটা ছ্যাত করে উঠল।ধীর আওয়াজে বলল,
‘ উনি এমন করছেন কেন?আর আপনারাই বা এমন করছেন কেন উনার সাথে?’

ততোক্ষণে একজন নার্স এসে মহিলাটিকে একটা সিডেটিভ দিয়ে দিলো।অস্থির মহিলাটি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পরে।তারপর ধরাধরি করে তারা মহিলাটিকে নিয়ে গেলো।আরাবীর অনেক খারাপ লাগল।চোখে পানি চলে আসল আরাবীর।বলল,
‘ উনার সাথে এটা কি করলেন আপনারা?উনি কষ্ট পাচ্ছেন?’

একজন মধ্যবয়স্ক লোক এসে দাঁড়ালো আরাবীর সামনে।তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল,’ আমরা আমাদের কাজ করছি।আর মহিলাটি অসুস্থ।সে মানষিক ভারসাম্যহীন একজন মানুষ।তাই এমন পাগলামি করছেন।আপনার এসব আর ভাবতে হবে না আমাদেরটা আমরা বুঝে নেব।’

এসব বলে লোকগুলা চলে গেলো।আরাবী স্তব্ধ দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।কেন যেন অনেক অস্থির লাগছে আরাবীর।মহিলাটাকে কেমন অনেক চেনা চেনা লাগছে।কিন্তু মনে পরছে না আরাবীর।অতিরিক্ত চিন্তায় আরাবীর মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেলো।আরাবী মাথার চুলগুলো খামছে ধরল।হঠাৎ কাধে কারো স্পর্শ পাওয়ায় চমকে উঠে আরাবী।পিছনে তাকিয়ে দেখে নূর দাঁড়িয়ে আছে।নূর আরাবীর চোখমুখ দেখে বলে,
‘ ভাবি আর ইয়্যু ওকে?এমন লাগছে কেন তোমাকে?’

আরাবী নূরকে আঁকড়ে ধরল।ধরা গলায় বলে,
‘ নূর আমার ভালো লাগছে না।বাসায় যাবো নূর।আমাকে বাসায় নিয়ে চলো।মাথাটা অনেক ব্যথা করছে।’

নূর আরাবীকে আঁকড়ে ধরে গাড়িতে নিয়ে বসালো।আরাবীর জন্যে একটা ডিম সিদ্ধ,আর একটা স্যান্ডুউইচ এনেছে নূর।সেগুলো আরাবীর দিকে বাড়িয়ে দিলো।আরাবী ডিম সিদ্ধটা খেলো আর স্যান্ডউইচের অর্ধেক খেলো।এখন অনেকটা শান্তি লাগছে।আরাবী সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুঝল।চোখ বন্ধ করতেই আবারও সেই মহিলাটির চেহারা ভেসে উঠল।আরাবী আবারও মনে করার চেষ্টা করতে লাগল।কোথায় দেখেছে তাকে।অনেকক্ষণ ভাবার পর চমকে উঠল আরাবী।বড়ো বড়ো চোখে সামনে তাকালো।জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে আরাবী।নাহ,এটা কিভাবে সম্ভব?এটা কিভাবে সম্ভব?সে কিভাবে এখানে?মানে কি?আরাবী কোনো কিছু মিলাতেই পারছে না।এমন অনাকাঙ্ক্ষিত সত্যির সম্মুখীন হয়েছে আরাবী।এখন হিসেব মিলানোর পর নিজের দুচোখে দেখা ঘটনাটুকুও যেন কল্পনা লাগছে। কিন্তু এটা কল্পনা না।এটা সত্যি।সত্যি আরাবী তাকেই দেখেছে।হ্যা তাকেই দেখেছে।হ্যা ওটা সাথি বেগমই ছিলো।জায়ানের মা ওটা।কিন্তু এটা কিভাবে হলো?উনি তো মারা গিয়েছেন।মৃত ব্যক্তিকে এখন আবার জীবিত দেখছে আরাবী।চিন্তায় এখন মাথা ফেটে যাচ্ছে আরাবীর।

#চলবে__________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here