#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪৪
কাল বাদে পরশু আলিফার জন্মদিন।আরাবী ভেবেছে আজ একটু বাহিরে যাবে।কিছু গিফট কিনা লাগবে না বুঝি?
হাতের কাজগুলো সেইজন্যে জলদি সেরে নিয়েছে।দুপুরের রান্নাটাও করে নিয়েছে আরাবী।মিলি বেগমের শরীরটা আজ ভালো নেই।তাই আরাবীই আজ রান্না করেছে।বিয়ের চারমাস হয়ে গিয়েছে।এই কয়েদিনে তেমন কোনো কাজই করেনি আরাবী।শুয়ে বসে দেখতে দেখতেই কেটে গিয়েছে চারমাস।কিন্তু এভাবে আর কয়দিন?ও এই বাড়ির বড়ো বউ।ওর নিজের তো অনেক দায়িত্ব আছে।কাজ সব শেষ করে নিয়ে রুমে ফিরে আসল আরাবী।এখন একটু একটু নিরিবিলি সময় পেয়েছে।এখন জায়ানকে বলে অনুমতি নেওয়া যাক।
আরাবী সাত পাঁচ না ভেবে জায়ানকে কল করল।দুবার রিং হতেই জায়ান কলটা রিসিভ করল।
আরাবী সালাম জানাল।সালামের জবাব নিয়ে বলল,
‘ কি করছ?’
আরাবী বিছানায় বসে পা দুলাতে দুলাতে বলে,
‘ এইতো কিছু নাহ।’
‘ একটু পর আজান দিবে।গোসল তো মনে হয় করোনি।গোসলটা করে।নামাজ পরে নেও।’
‘ আচ্ছা ঠিক আছে। আর আজ কি আপনি বাসায় আসবেন দুপুরে?’
জায়ান একটা ক্লান্তময় শ্বাস ছেড়ে বলল,
‘ নাহ,আজ আসব না। তুমি অভিমান করো না সোনা।কাজের অনেক প্রেসার।বাবা আর ইফতিও সমানে কাজ করছে।একটার পর একটা প্রজেক্ট হাতে আসছে। যা আমরা হাতছাড়াও করতে পারছি না।’
আরাবী দীর্ঘশ্বাস ফেলল।সে বুঝে জায়ানকে।সে জানে লোকটা আপ্রাণ চেষ্টা করে বাসায় তাড়াতাড়ি আসার জন্যে।ওর সাথে আলাদা একটু টাইম স্পেন্ড করার জন্যে।কিন্তু লোকটা পেরে উঠে না।এই কয়দিনে তিনবেলা খাবারটুকুও মনে হয় খায়নি মানুষটা।আরাবীর মন খারাপ হলো।তবে তা বুঝতে দিল না জায়ানকে।
হালকা আওয়াজে বলল,
‘ আমি অভিমান করি না।আপনি শুধু নিজের একটু খেয়াল রাখবেন। তাহলেই হবে। আমার আর কিছু লাগবে না।’
‘ আই লাভ ইয়্যু আরাবী।’
অন্তরটা প্রশান্তিতে ছেঁয়ে গেলো আরাবীর।লোকটার মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনলে এতো ভালো লাগে কেন?কেন এতো সুখ সুখ অনুভব হয়?আরাবীর গালজোড়া লজ্জায় লাল হলো।
জায়ান দুষ্টু হেসে বলে,
‘ তোমার লজ্জা পাওয়া মুখটা মিস করে গেলাম।সমস্যা নেই।আজ রাতে ভীষণ রকম লজ্জা দিব তোমায়।আর আমি তা মন ভড়ে দেখব।’
আরও লজ্জা পেলো আরাবী।লাজুক হেসে বলে,
‘আপনি চরম নির্লজ্জ একটা লোক।’
জায়ান শব্দ করে হাসল।বলল,
‘ সেটা তো তুমি ভালভাবেই জানো।’
‘ উফ রাখুন তো।এইবার শুনুন।’
‘ হ্যা বলুন।’
আরাবী ইতস্তত করে বলল,
‘ আসলে আমি একটু বাহিরে যেতে চেয়েছিলাম।’
‘ আচ্ছা।নূরকে সাথে নিয়ে যেও।’
আরাবী বেশ অবাক হলো।জায়ান একটাবার জিজ্ঞেসও করল না কেন আরাবী বাহিরে যেতে চাইছে।আরাবী অবাক স্বরে বলল,
‘ আপনি কারন জিজ্ঞেস করবেন না?আমি কেন বাহিরে যেতে চাইছি।’
জায়ান শীতল কণ্ঠে বলল,
‘ আমি তোমাকে বিশ্বাস করি আরাবী।তোমার দরকারেই তুমি বাহিরে যেতে চাইছ।আর আমি তোমাকে বিয়ে করে এনেছি আরাবী।তুমি আমার স্ত্রী।আমার অর্ধাঙ্গিনী।আমার অর্ধেক অঙ্গ তুমি।তোমাকে অবিশ্বাস কেন করব আমি?আর অযথা প্রশ্নই বা কেন করব?’
আরাবী প্রতিবার জায়ানের এহেন চিন্তাধারায় মুগ্ধ হয় খুব করে। একটা মানুষ কিভাবে এতোটা ভালোবাসতে পারে।জায়ানকে না দেখলে আরাবী জানতে পারতো না কোনোদিন।মানুষটা এখন যেন ওর রন্দ্রে রন্দ্রে মিশে গিয়েছে।এই মানুষটাকে ছাড়া দুনিয়াতে একটা নিঃশ্বাসও আরাবী নিতে চায় না।জায়ান যতোদিন আছে।ততোদিন আরাবী আছে।আরাবীর অস্তিত্ব জায়ানের মাঝে।মনে মনে এসব ভেবে হাসল আরাবী।মনে মনে কতো কি ভেবে ফেলে।কিন্তু মুখে কোনোদিন জায়ানকে এসব বলতে পারে না।শব্দগুলো যেন কণ্ঠনালিতে এসেই আটকে যায়।
আরাবী ধীর আওয়াজে বলে,
‘ আচ্ছা তাহলে রাখছি।আপনি প্লিজ দুপুরে খাবারটা খেয়ে তারপর যতো কাজ করার করবেন।শুধু আমার এটুকু কথা রাখিয়েন।’
জায়ান মৃদ্যু স্বরে বলে,
‘ তুমি বললে আমি আমার জান দিতেও রাজি।এতো সামান্য ব্যাপার।’
আরাবী আঁতকে উঠল।
‘ আল্লাহ্! এসব আর কোনোদিন বলবেন না দয়া করে।’
আরাবী ভয়ে পেয়েছে বুঝতে পেরে জায়ান।দ্রুত আশ্বাস দিয়ে বলল,
‘ আহা,ভয় পাচ্ছ কেন?এটা তো কথার কথা।’
‘ তারপরেও এসব আর বলবেন না।’
‘ আচ্ছা।’
‘ তাহলে রাখছি।’
‘ হুম।শুনো সাবধানে যাবে।আর নূর আর তুমি একসাথেই থেকো।’
‘ আচ্ছা আপনি চিন্তা করবেন না।’
‘হু!’
জায়ানের সাথে কথপকথন শেষ করে।আরাবী নূরের রুমে গেলো।নূর শুয়ে শুয়ে আহাদের সাথে কথা বলছে।আরাবী দেখেই নূর উঠে বসল।বলল,
‘ আরে ভাবি।বসো,বসো।’
আরাবী নাকচ করে বলে,
‘ নাহ নূর এখন বসব না।গোসল করিনি আমি।গোসল করে নামাজ পড়তে হবে।আজান দিয়ে দিয়েছে।তোমার সাথে একটু কথা ছিলো।’
ভ্রু খানিকটা কুচকে নূর বলল,
‘ হ্যা ভাবি বলো।কি কথা?’
‘ আসলে আমার বেস্টফ্রেন্ড আলিফাকে তো চিনো।ওর আগামী পরশুদিন জন্মদিন।আমি ওর জন্মদিনের উপহার কিনতে যাবো একটু।তোমার ভাইয়া থেকে অনুমতি নিয়েছি।সে বলেছে তোমাকে সাথে নিয়ে যেতে।তুমি একটু জলদি তৈরি হয়ে নিও।’
নূর লাফ দিয়ে নামল বিছানা থেকে।উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলল,
‘ আরেহ আলিফা আপুর বার্থডে।ভাবি আমিও গিফট কিনব আপুর জন্যে।তুমি যাও ভাবি।আমি ফটাফট তৈরি হয়ে নিব।’
আরাবী হেসে চলে গেলো রুমে।এদিকে আরাবী যেতেই নূর বিছানায় আসল।তারপর কিছু একটা মনে পরতেই জিহবা কাটল।ফোনটা বিছানা থেকে উঠিয়ে কানে ধরল।বলল,
‘ সরি, সরি,সরি।আসলে ভাবি এসেছিল।ভাবির বেস্টফ্রেন্ড আলিফা আপুর বার্থডে।ভাবি গিফট কিনতে যাবে।ভাইয়া বলেছে আমাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে।সেটাই ভাবি বলতে এসেছিলো।’
নূরকে এতোটা উত্তেজিত হতে দেখে হাসল আহাদ।নম্রমুখে বলল,
‘ এতোবার সরি বলছ কেন নূর?এখানে ক্ষমা চাওয়ার মতো কোনো কাজ তুমি করোনি।আর ভাবির সাথে বাহিরে যাবে ভালো কথা।আমি কি তোমার কাছে কৈফিয়ত চেয়েছি।নূর আমি তোমার যেই হই না কেন?তোমার নিজেরও একটা ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে।যেখানে কাউকেই হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই।’
নূর আহাদের প্রতিটা কথায় জাস্ট নিশ্চুপ হয়ে যায়।আহাদের এতো ভালোবাসা দেখে ওর নিজেকে নিজের কাছে নিজের ছোটো মনে হয়।ছেলেটা কতোটা কষ্ট দিচ্ছে নূর।প্রতিক্ষণে,প্রতিটিমুহূর্তে।’
নূর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘সরি বলেছি কারন আমি আপনাকে ফোনকলে রেখেই ভাবির সাথে আলাপে জড়িয়ে পরেছিলাম।আর আপনিও আছেন।শুধু কলটা ধরে রেখে কি হয়েছে।কেটে দিতেও তো পারতেন।’
আহাদ আবেগময় কণ্ঠে বলল,
‘ তোমার জন্যে পাঁচমিনিট কেন?আমি অনন্তকাল অপেক্ষা করতে পারব নূর।যদি সত্যি এটাও হয়ে থাকে তুমি আমার হবে না।তবুও আমি অপেক্ষা করব নূর।কারন ভালোবাসার মানুষের জন্যে অপেক্ষা করাতেও এক অন্যরকম সুখ থাকে।’
নিশ্চুপ হয়ে গেলো নূর।কি বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না কোনো।তাই বলল,
‘ এখন রাখছি তাহলে।আমাকে আবার তৈরি হতে হবে।’
আহাদ বুঝল ওর ওসব কথা শুনে।নূর এখন আর কথা বাড়াতে চাইছে না। আহাদ সবটা বুঝে আর কথা বাড়ালো না।চুপচাপ সবটা মেনে নিয়ে বলল,
‘ আচ্ছা।নিজের খেয়াল রেখ।আর সাবধানে থেকো।’
ফোনটা কাটতেই নূর চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
—
এদিকে আরাবী গোসল করে নিয়ে।নামাজ আদায় করে নিলো।এরপর সবার সাথে লাঞ্চ করে।ঘন্টাখানিক ঘুমোলো।উঠে আছরের নামাজ আদায় করে তৈরি হয়ে নিলো।তারপর দুজনে বেড়িয়ে পরল।আরাবী ভাবল আগে যমুনা ফিউচার পার্ক শপিং মল যাবে। এরপর বসুন্ধরায় যাবে।কারন বসুন্ধরা খানিকটা দূর হয়ে যায় ওদের জন্যে।আগে কাছেরটাতেই গিয়ে দেখা যাক।
যমুনা ফিউচার পার্ক শপিং মলে এসে গাড়ি থামলে।ওরা নেমে ভেতরে চলে গেলো।জুয়েলারি শপে গেলো আগে আরাবী।ভেবেছে ডায়মন্ডের বসানো ছোট্টো টপের মধ্যে একজোড়া কানের দুল কিনব।ছোটো ছোটো জুয়েলারি বরাবরই আলিফার অনেক পছন্দ।কিন্তু পুরো মল ঘুরে একটা কানের দুলও ভালো লাগেনি আরাবী আর নূরের তাই উপায় না পেয়ে বসুন্ধরাতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো আরাবী।শরীরটা একদম চলছে না।ইদানিং অল্পতেই মেয়েটা ক্লান্ত হয়ে যায়।ঘুম হয় না রাতে।ঘুমোতে চায় আরাবী।কিন্তু ঘুম আসে না।অথচ,চোখদুটো মরিচ লাগালে যেমন জ্বলে তেমন জ্বলে আরাবীর।কিন্তু মেয়েটা ঘুমোতে পারে না।
খাবারের পরিমানও আগের থেকে কমে গিয়েছে।খেতে পারে না এখন।জায়ান এসব ব্যাপারে জানে না।দূর্বল লাগে খুব। মাথা ঘুরায়।আর সকালের খাবার তো খেতেই পারে না।বমি পায় শুধু।
আরাবী এসব ব্যাপারে জানায়নি জায়ানকে।লোকটা সেই সকালে যায় অফিসে। বাসায় ফিরেও অনেক রাত করে।আর অযথা এসব বলে লোকটাকে প্রেশার দিতে চায় না আরাবী।
ক্লান্তিময় নিঃশ্বাস ছাড়ল আরাবী।শরীরটা ছেড়ে দিল।মাথা এলিয়ে দিলো সিটে।
#চলবে____________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।অনেকদিন পর লিখলাম।আগামী পর্বে একটা চমক আছে বিশাল বড়ো।অপেক্ষায় থাকুন।