স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #পর্বঃ৪২

0
606

#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪২
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ছটফট করছে নূর।ভালো লাগছে না।আহাদের কথাগুলো মস্তিষ্কে কিলবিল করছে।অসহ্যকর অনুভূতি যেন।ফাহিমকে ভুলে যেতে হবে ওকে।ভুলে যেতে হবে।আহাদকে বিয়ে করতে হবে।কিন্তু আহাদ কি সুখী হবে ওর সাথে?আর ওই কি পারবে ফাহিমকে ভুলে আহাদকে মেনে নিতে?আহাদ বলে এটা নাকি ওর ভালোলাগা।কিন্তু ও নিজে তো জানে ও ফাহিমকে অনেক ভালোবাসে।এটাকে আহাদ ভালোলাগা বললে বলুক।তবে আহাদের সাথে তো অন্যায় করতে পারবে না।কি করবে নূর?কি করবে?পাগল পাগল লাগছে একদম। নূর চোখ বন্ধ করল।চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরছে।এমন সময় নূরের ফোন বেজে উঠল।নূর চমকে উঠল।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে জায়ান ফোন করেছে।নূর চোখ মুছে নিলো।নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে ফোনকল রিসিভ করল।
নূর সালাম জানালো।জায়ান সালামের জবাব নিয়ে বলল,
‘ কি করছিস?’
‘ এইতো একটু শুয়ে ছিলাম।’

জায়ান ডেকে উঠল,
‘ নূর?’
‘ জি ভাইয়া?’
‘ তুই ঠিক আছিস?তোর কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন?’

নূর ঘাবড়ে গেলো।গলা খাকারি দিয়ে নিজেকে ঠিক করে নিয়ে বলে,’ আ..আমি ঠিক আছি ভাইয়া।আসলে অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি তো এই কারনে এমন শোনাচ্ছে কণ্ঠ।’

জায়ানের মনের সন্দেহ কমল না।ও খেয়াল করেছে ইদানিং নূরের চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পরেছে।নূর খাওয়া দাওয়া করে না ঠিক ঠাক শুকিয়ে গিয়েছে।বোনটার কি হয়েছে কে জানে?আহাদের সাথে কি কিছু হয়েছে?আচ্ছা, নূরকে আহাদের সাথে বিয়ে দিবে সেটা কি ওরা ঠিক করছে?কিন্তু আহাদ তো অনেক ভালো একটা ছেলে।নূরের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে এমন কোনোদিনই আসবে না। জায়ান মানুষ চিনতে ভুল করে না।আর ওর একমাত্র বোনকে একজন মানুষের সাথে বিয়ে তো জায়ান এমনি এমনি দিবে না তাই নাহ?খোঁজ খবর নিয়ে তবেই এই সম্পর্কে এগিয়েছে।
জায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলল।পর পর বলে উঠল,
‘ বেশি ব্যস্ত না থাকলে আরাবীর কাছে যা।ও পায়ের ব্যথাটা বেড়েছে।আসলে পোড়া ঘা শুকিয়ে আসলে আস্তে আস্তে তখন অনেক ব্যথা করে।ও মলম লাগাবে না ঠিকভাবে আমি জানি।আর দুপুরে আমি আসব না।সেটা ওকে বলেছি।তাই ও খাবারে হেলাফেলা করবে।ছোটো মাকে বলিস ওকে জোড় করে খাওয়াতে।আর তুই একটু দেখে মেডিসিন খাইয়ে দিস।আর হ্যা ও রুমে থাকতে থাকতে রোর হয়ে যায়।তুই একটু ওর সঙ্গ দিস।রাগ করিস না নূর ঠিক আছে?’

নূর হেসে বলল,’ তুমি যে এতো কেয়ারিং একটা হাসব্যান্ড হবে আমি ভাবতেই পারিনি।আর তুমি চিন্তা করো না।সব ঠিক হয়ে যাবে।আর আমি ভাবির সাথেই থাকব।সো নো চিন্তা ডু ফুর্তি ভাইয়া।’

জায়ান হেসে ফোন কেটে দিলো।জায়ান ফোন কাটতেই নূর উঠে দাঁড়ালো।ওয়াশরুমে গিয়ে চোখেমুখে পানি দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো।তারপর আরাবীর কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
রুমের সামনে এসে দরজায় নক করল।ওপাশ থেকে আরাবীর কণ্ঠস্বর শোনা গেলো।নূর হেসে প্রবেশ করল।
এদিকে নূরকে দেখেই আরাবী সোজা হয়ে বসল।হেসে বলল,’ এসো নূর।বসো এখানে।’

নূর মিষ্টি করে হেসে বলে,’ বসতেই এসেছি ভাবি।কি করছিলে?’
‘ এইতো কিছু না আম্মুর সাথে কথা বললাম।’
‘ ওহ সবাই ভালো আছে তারা?’
‘ হ্যা আলহামদুলিল্লাহ!’
‘ যাক শুনে খুশি হলাম।তো এখন তোমার পায়ের অবস্থা কেমন?’

আরাবী পায়ের দিকে তাকিয়েই বলে,’ আগের থেকে ভালো।’
‘ মলমটা লাগিয়েছিলে?’

এই পর্যায়ে আরাবী আমতা আমতা করতে লাগল।জায়ান অফিসে যাওয়ার সময় মলম লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো।এরপর আর লাগায়নি আরাবী।আরাবীকে চুপ থাকতে দেখে নূর যা বুঝার বুঝে ফেলল।শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলে,
‘ আমার ভাই ঠিকই বলেছে। তুমি যে কিছু করবে না তা সে ভালোভাবেই জানে।’

আরাবী মুখ ফুলালো।বজ্জাত লোক নূরকে এসব ফোন করে বলে দিয়েছে।হাহ্! নূর গিয়ে ভালোভাবে ক্ষতটা পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে দিলো।এর মধ্যে মিলি বেগম আসলেন।তার হাতে খাবারের ট্রে।নূর উঠে গিয়ে তা নিজের হাতে নিলো।বলল,
‘ আমিই একটু পর যেতাম।যাক তুমি নিয়ে এসেছ।’

আরাবী নাক মুখ কুচকে বলল,’ আপনাদের ছেলে বেশি বেশি করে ছোটো মা।অল্প একটুই তো পুড়েছে৷ আমি কি নিচে গিয়ে সবার সাথে খাবারটা খেতে পারতাম নাহ?’

মিলি বেগম হেসে বলেন,’ এইটা আমার ছেলের ভালোবাসা তোমার প্রতি। তাছাড়া একটুখানি পুড়েনি।ডক্টর এসে বলে গেলো না?ভালোভাবে যত্ন না নিলে ইনফেকশন হয়ে যাবে।’
‘ ডক্টররা একটু বেশি বেশিই বলে। ‘
‘ হয়েছে৷ এখন খেয়ে নেও তোমরা।”

মিলি বেগম খাবার দিয়ে চলে গেলেন। নূর আর আরাবী একসাথে খেয়ে নিলো।খাওয়া দাওয়া শেষে দুজনে একসাথে অনেকক্ষণ গল্প করল।কথায় কথায় জায়ান,ইফতি আর নূরের ছোটোবেলার কথাও বলল নূর।সব শুনে আরাবী বলে,’ তোমার ভাই তো তাহলে ছোটোবেলায় অনেক দুষ্টু ছিলো।’
‘ হ্যা ভাবি।ভাইয়া অনেক কিউটও ছিলো।’

কথাটা বলেই থামল নূর।পর পর আবার কিছু একটা ভেবে বলল,’ ভাবি আমাদের ছবির এলবাম আছে।তোমাকে দেখাই তাহলে বুঝবে।’

আরাবী উৎসুক নজরে তাকিয়ে আছে।নূর ওর বাবার রুমে গিয়ে সেখান থেকে এলবামটা নিয়ে আসল।তারপর আরাবীর সামনে বসল।প্রথমে জায়ানের দাদা দাদি আর নিহান সাহেব আর মিহান সাহেবের ছবি।তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে নিহান সাহেবের বিয়ের ছবি।এই ছবিটা দেখে চমকে উঠল আরাবী।এটা তো সুহানা সাখাওয়াত না।এটা অন্য কেউ।তবে কে?আর নিহান সাহেবের সাথে বঁধু বেশে দাঁড়িয়ে আছে।আরাবীর মনে প্রশ্ন জাগ্রত হয়।তবুও চুপ থাকে।এইভাবে আরও অনেক ছবি দেখল নিহান সাহেব আর ওই মহিলাটার।এইবার মহিলার কোলে একটা বাচ্চা।নূর সেটা দেখিয়ে বলে,’ ভাবি এটা জায়ান ভাইয়া।’

আরাবী চোখ পিটপিট করে তাকায়।ছোট্টো একটা বাচ্চা জায়ান।মহিলাটার কোলে কি সুন্দর ফোকলা দাঁতে হেসে দাঁড়িয়ে আছে।গুলুমুলু দেখতে একদম।কিউটের ডিব্বা।
এভাবে আরও এগিয়ে গেলো।এরপর জায়ান পাশাপাশি আরেকজন বাচ্চা।জায়ান দাঁড়িয়ে আছে।আর মহিলাটার কোলে আরেকটা বাচ্চা।সেই বাচ্চাকে দেখিয়ে নূর হেসে বলল,’ ভাবি এটা আমি।’
‘ মাশা-আল্লাহ! তুমিও অনেক কিউট ছিলে দেখতে।’

নূর ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,’ এখন কি আমি কিউট নাহ?’

আরাবী খিলখিল করে হেসে বলে,’ আরে বোকা।এখন তো সুন্দরী হয়েছ।’

নূরও হেসে ফেলল।এভাবে আস্তে আস্তে অনেক ছবি দেখল।এক পর্যায়ে আর আরাবী চুপ থাকতে পারল না।
বলল,
‘ নূর একটা কথা বলব।রাগ করবে?’
‘ নাহ ভাবি।রাগ কেন করব?বলো কি বলবে।’

আরাবী আমতা আমতা করল।পর পর সময় নিয়ে ধীর স্বরে বলে উঠল,
‘ এই সুন্দরী মহিলাটা কে নূর?বাবার সাথে ইনি কি করেন?এটা তো মা না।’

নূরের হাসি মুহূর্তেই গায়েব হয়ে গেলো।মন খারাপের ভীড় করল আর চেহারায়।আরাবী ঘাবড়ে গেলো।তবে কি ভুল কিছু প্রশ্ন করে ফেলেছে?এখন কি রাগ করেছে নূর ওর সাথে।আরাবী ঘাবড়ানো গলায় বলে,’ আ`ম সরি নূর।আমি ওইভাবে মিন করেনি।তুমি মন খারাপ করো না।আমি আসলে..’
‘ ইটস ওকে ভাবি।আমিই বুঝতে পারিনি যে ভাইয়া তোমাকে এখনও এই বিষয়ে জানায়নি।’

অনেকটা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল নূর।কিছুক্ষণ পিনপতন নিরবতা রইলো।নূর এইবার ছবির সেই মহিলাটির গায়ে হাত বোলালো।তারপর উদাসিন কণ্ঠে বলে উঠল,
‘ ইনি আমাদের মা।’

আরাবী চমকে তাকালো কথাটা শুনে।ইনি যদি ওদের মা হয়।তো সুহানা সাখাওয়াত কে? নূর ফের বলে,
‘ আমার মা যখন আমার চার বছর বয়স।তখন রোড এক্সিডেন্টে মারা যান।এখন যিনি আমাদের মা তিনি আমাদের আসল মা না।মা আর তিনি হলেন বোন।মা মারা যাবার পর আমার দাদা আর নানা বাবাকে আর সুহানা মাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আবার বিয়ে দেন।কারন তখন আমি অনেক ছোটো।ভাইয়ার বয়সও তখন বেশি না।সবার জোড়াজুড়িতে আর আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা বিয়ে কর‍তে রাজি হয়ে যান।আর বিয়ে করেন সুহানা মাকে।তবে বাবা সুহানা মায়ের সঙ্গে কোনোদিন সংসার করেননি।তুমি খেয়াল করেছ কিনা জানি না।তবে বাবা আর সুহানা মা আলাদা রুমেই থাকে।’

নূরের মুখে সব শুনে আরাবী অনেকটাই অবাক হলো।পর পর সুহানা সাখাওয়াতের প্রতি ওর সম্মান আরও বাড়ল।সৎমা মা হয়েও আরাবী দেখেছে সুহানা সাখাওয়াত যথেষ্ট স্নেহ করেন জায়ান আর নূরকে।আরাবী নূরের হাত ধরল। বলল,’ মন খারাপ করো না নূর।আল্লাহ্ তায়ালা কখন কাকে নিয়ে যান কেউ বলতে পারেন না।যার হায়াত যতোটুক সে ততোটুকুই বাঁচবে।তুমি আমি চাইলেও মৃত্যুকে আটকাতে পারব না।তবে এটা বলব ভাগ্য করে সুহানা মায়ের মতো আবার দ্বিতীয় একজন মা পেয়েছে।যে এইভাবে তোমাদের নিজের সন্তানদের মতো আগলে রেখেছেন।সত্যি তার প্রতি আমার সম্মান বেড়ে গেলো।’

আরাবীর প্রথম কথাগুলো ভালো লাগলেও।শেষের কথাগুলো শুনে মনে মনে তাচ্ছিল্য হাসল নূর।মনে মনে বলে,’ ভাবি তুমি আর জানো না।তার এই বিয়ের পেছনে কি উদ্দেশ্য ছিলো।আর আমাদের উনি সন্তান মেনেছেন?সব টাকা আর সম্পদের লোভে করেছেন তিনি।ইশ,যদি তোমায় এই সত্যিটা আমি এখন বলতে পারতাম।কিন্তু এখনও সঠিক সময় হয়নি এটা জানানোর।আগে জায়ান ভাইয়াকে জানাতে হবে এই বিষয়ে।ভাইয়া থেকেই তুমি শুনে নিও।’

কথাগুলো মনে মনে বলেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল নূর।

#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। নানু বাসায় ব্যস্ত সময় পার করছি।কাজিনদের একসাথে হওয়া।হৈ-হুল্লোড়ের সাথে দিন কাটে।আশা করি বুঝবেন।আমি সময় পেলেই লিখব।আর লিখা হলেই আপলোড দিবো।কেমন হয়েছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here