কৃষ্ণবেণী #পর্ব_২৬ #নন্দিনী_নীলা

0
558

#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_২৬
#নন্দিনী_নীলা

বান্দরবান থেকে ফিরেছে দুই দিন হলো। বাড়িটা নিস্তব্ধ হয়ে আছে। চারদিকে থেকে বিপদ এসে ঘিরে ধরেছে। জায়ান কোন দিক সামলাবে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। বান্দরবান থেকে ফেরার পথে আয়ানের গাড়িটা খুব বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট হয় সেখানে গুরুতুরু ভাবে আঘাত হয় উষসী ও আয়ান। দুজনেই হসপিটালে ভর্তি। এইদিকে বান্দরবানে থাকতেই উর্মি কিডন্যাপ হয়। বেড়াতে যাওয়ার আনন্দ সম্পুর্ন নষ্ট করে সবাই বাড়ি ফিরে আসছিল তখন আবার এক্সিডেন্ট। এতো ঝড় এসে পরেছে এদিকে আর মাত্র পনেরো দিন পর ইলেকশন সেই নিয়ে কাজ করতে হবে। সব মিলিয়ে জায়ান ক্লান্ত অবিশ্রান্ত এতো টেনশন নেওয়া যাচ্ছে না। জায়ান কপালে হাত দিয়ে বসে আছে। তৃষ্ণা গুটিগুটি পায়ে জায়ানের পাশে এসে বসলো। কাঁপা কাঁপা হাতে জায়ানের কপালে আলতো চাপ দিতে লাগলো।

জায়ান ভ্রু কুঁচকে তাকালো তারপর বলল,” তৃষ্ণা আমি মরে গেলে। তুমি কি খুব বেশি কষ্ট পাবে?”

তৃষ্ণা বুক ধক করে উঠে।
” কি বলছেন এসব? কেন বলছেন?”

” খুব ক্লান্ত লাগছে মনে হচ্ছে এই যন্ত্রণা ভোগ করার থেকে মৃত্যু অনেক শান্তির। আমি এতো কিছু সামলাতে পারছি না।”

” উর্মি আপুকে পাওয়া যাবে দেখবেন কিচ্ছু হবে না তার।”

” উর্মি কে তো আমি পাবোই কিন্তু বাবাকে এবার জেতাতে পারব না। এজন্য হয়তো আমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাবে।”

” এভাবে কেন ভাবছেন। যা হবে ভালোই হবে। আপনি এতো টেনশন করবেন না। আপনাকে এমন দূর্বল ভাবে একটুও মানাচ্ছে না। আপনাকে অসহায় দেখালে আমার খুব কষ্ট হয়।”

” কিন্তু একটা কথা কি জানো? উর্মি এবার বুঝবে ওর ভাই ওর খারাপ চায় নি। কিন্তু ও আমার বোনকে কিডন্যাপ করার সাহস করেছে ওকে তো আমি ছেড়ে দিব না।”

” কে করেছে এই কাজ?” অবাক গলায় বলল তৃষ্ণা।

জায়ান তৃষ্ণার হাত নিজের কপালে ধরে বলল,” মাথা টিপে দাও।”

” কে করেছেন বলেন দয়া করে।”

” ওয়েট করো এখনি জানতে পারবে।”

তৃষ্ণা দুশ্চিন্তায় থাকতে পারছে না কিন্তু জায়ানের মুখ থেকে কথা বের করা তো ওর পক্ষে ও সম্ভব নয়। ও দাঁড়িয়ে জায়ানের চুল টেনে দিচ্ছে। জায়ান চোখ বন্ধ করে আছে।‌তখনি দরজায় নক পরে। আর সঙ্গে সঙ্গে জায়ান মাথা তুলে তাকায়।

তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলে,” তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে চলে আসছে। যাও দরজা খোল।”

তৃষ্ণা হতভম্ব গলায় বলে,” কি বলছেন? আমি উত্তর চাইলাম আপনার কাছে।‌ বাইরে থেকে কেউ তার উত্তর কীভাবে দেবে!”

” দরজাটা খোলে আসো। তারপর দেখো কীভাবে আসে।”

জোভান দরজায় সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রুমে এসেই জায়ানের পায়ের কাছে বসে পরলো। মাথা নিচু করে গরগর করে সব সত্য বলে দিলো। তৃষ্ণা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সোফার হাতল ধরে। জায়ান বেশি কিছু করলো না। উঠে দাঁড়িয়ে জোভান কেও কাঁধ ধরে দাঁড় করালো।

” ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি ওই মিহির শয়তান টাকে চিনতে পারি নাই। ওর জন্য আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম। কিন্তু ও আমাকে ঠকিয়ে আমাদের বোনকে নিয়ে পালিয়ে গেল। ও যে এমন আমি বুঝতেই পারি নাই। তুমি উর্মি কে ফিরিয়ে আনো ভাই আমি ভুল করেছি তার শাস্তি তুমি আমাকে দাও। আমি মাথা পেতে নিবো।”

জায়ান জোভানের দুই গালে হাত রেখে বলল,” তুই কি আমার ভাই?”

জায়ানের প্রশ্নে জোভান থতমত খেয়ে গেল।
” কিরে থমকালি কেন? তুই আমার ভাই না। আর উর্মি আমার বোন নয়। তোরা দুজন ভাই বোন। তোর বোনের দায়িত্ব তোর। তাকে আমি খোঁজে টাইম ওয়েস্ট করতে পারব না। নিজের বোনের সুখের জন্য যার সাথে হাত মিলিয়ে ছিলি। এসব তাকে নিয়েই কর। আমি কিছু করতে পারব না সরি।”

জোভান ঠাস করে ফ্লোরে বসে জায়ানের পা চেপে ধরে মিনতি করতে লাগলো।
” আমাকে ক্ষমা করে দাও ভাই। আমি চরম অন্যায় করেছি। তোমাকে ভুল ভেবেছি। আমি আসলে উর্মির চাওয়াকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ভুল মানুষ কে বিলিভ করে ফেলেছিলাম।”

তৃষ্ণার দুই ভাইয়ের কথার আগা গোড়া কিছুই বুঝতে পারছে না। হা করে কথা গিলছে শুধু। জায়ান এসব কি বলছে ভাই বোন নয় মানে কি। তাদের কথা ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু এখন কিছু না বলাই ভালো। ও চুপ করে দুজনের কথা বার্তা শুনছে। জোভান ব্যর্থ হয়ে বেরিয়ে গেল।

জেসমিন বেগম মেয়ে, ছেলে ছেলের ব‌উয়ের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পেরেছে। জোভান মায়ের কাছে গিয়ে মায়ের হাত ধরে মাথা নিচু করে বসে র‌ইলো। জেসমিন বেগম কি হয়েছে জিজ্ঞেস করছে। জোভান কথা না বলে মায়ের কাছে মাথা নিচু করে বসে ‌র‌ইলো।

এদিকে আয়ানের তেমন কিছুই হয়নি। এক্সিডেন্ট তো বানানো। উষসী কে গাড়িতে রেখে নিজে নেমে পরেছিল আর গাড়িতে ব্রেক ফেল করানো ছিল। উষসী এক্সিডেন্ট করে আধমরা হতেই ও নিজেই নিজেকে আঘাত করে পাশে পরে ছিল। পরদিন উষসী কে কিছু করতে চাইছিল কিন্তু উর্মি নিখোঁজ হতেই সব প্ল্যান ভেস্তে যায়। ওরা উঠার আগেই সবাই বেরিয়ে পরে। উষসী নিজেকে রক্ষা করতে গাড়ি নিয়ে একাই বেরিয়ে পরে। আর আয়ান যে আগেই গাড়িতে অঘটন ঘটিয়ে রেখেছে যা উষসী জানতেও পারে না। বাঁচার জন্য মানুষ কি না করে উষসী ও করেছিল শেষ পর্যন্ত লড়ার। এখনো করে যাচ্ছে হসপিটালের বেডে শুয়ে। কিন্তু আয়ান যে ওকে লড়াই ছাড়া মৃত্যু দিতে চায় এজন্য তো অসুস্থতার নাটক করে হসপিটালে পরে আছে যাতে সুযোগ বুঝে আরেকজনের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে।

উষসী আর আয়ানের কেবিন পাশাপাশি।‌ আয়ান রাত গভীর হতেই নিজের কেবিন ছেড়ে উষসীর কেবিনে যায়। উষসীর মুখে অক্সিজেন মাস্ক। ঘুমাচ্ছে উষসী। আয়ান উষসীর অক্সিজেন মাস্ক ধরে এক টান মেরে খুলে ফেলে। সাথে সাথে উষসী চোখ মেলে ঝটফট করতে লাগে অক্সিজেন এর জন্য।
” কেমন লাগছে উষসী? তোমাকে হসপিটালে এতো কষ্ট করে বাঁচতে হবে না। তুমি একেবারে সব কষ্টের উর্ধ্বে চলে যাও কেমন। আবারো বলছি তোমাকে খুবই মিস করবো।”
বলেই আয়ান বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে। উষসী অক্সিজেন মাস্ক ফ্লোর থেকে নিতে চাইছে। কিন্তু পারছেনা কারণ ওর হাতে স্যালাইন লাগানো। স্যালাইনে টান লেগে গলগলিয়ে রক্ত পরতে শুরু করছে। মৃত্যুর তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছে উষসী।
এভাবেই কি শেষ হয়ে যাবে উষসীর জীবন??? থেমে যাবে তার হৃদস্পন্দন!!
_______________________

মাঝরাতে তৃষ্ণার ঘুম ভেঙে যায় জায়ানের ফোনের রিংটোন এ। লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে। জায়ান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সারাদিন নানান টেনশনে থাকে এজন্য এতো কল আসছে তবু ও জাগ্রত হয়নি। তৃষ্ণা জায়ানের ফোন ট্রি টেবিলের উপর থেকে হাতে নেয়। ও কল রিসিভ করা এখন বুঝে। এটা জায়ান ই শিখিয়েছে ওকে। ও ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ভাবছে এতো রাতে কে কল করছে। আর এতো কল কেন করছে?
ধরতে গিয়ে ধরলো না জায়ান আবার এজন্য যদি রাগ করে।
ও ফোন পাশে রেখে জায়ান কে ডাকতে লাগে। জায়ান উঠছে না। তৃষ্ণা ধাক্কা দিয়ে ডাকছে।
জায়ান নড়ে চড়ে আবার তৃষ্ণা কে বসা থেকে শুইয়ে দিয়ে জাপ্টে ধরে। তৃষ্ণা পরলো বিপাকে। একে উঠাতে চাইছে সে না উঠে আরো ঘুমানোর জন্য সুন্দর করে শুয়ে পরছে।

” উঠুন দয়া করে। কে যেন কল করছে ধরে দেখেন।”

জায়ান বিরক্তিকর চোখে তাকালো। এবার ওর কানে ফোনের শব্দ গেল ও হাত বাড়িয়ে টেবিল লাইট অন করে উঠে বসলো।
আর বিড়বিড় করে বলল,” শান্তি তে ঘুমাতেও দিবে না। আগামীকাল থেকে এই ফোন অফ করে ঘুমাতে হবে।”

ফোন হাতে নিয়ে দেখে নাম ছাড়া নাম্বার থেকে কল আসছে কয়েকবার ও কল ব্যাক করলো। যেই হোক
রিসিভ করলেই ধমক দিবে এমন অসময়ে কল‌ দেওয়ার জন্য।
” হ্যালো আমি ** হসপিটালে থেকে বলছিলাম। আপনি কি মিস্টার আয়ান ও মিসেস উষসীর বাড়ির লোক।”

হাসপাতালের ফোন কল দেখেই ও বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। বড় লাইট জ্বালিয়ে বলল,” Everything is fine. এতো রাতে কল করেছেন কেন?”

নার্স বলল,” আপনি দ্রুত হসপিটালে আসুন।”
বলে নার্স কল কেটে দিলো। তৃষ্ণা নিজেও পেছনে দাঁড়িয়ে কথা শোনার চেষ্টা করছে। কিছু না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করল,” কি হয়েছে?”

” তুমি শুয়ে পরো আমাকে হসপিটালে যেতে হবে একটু।‌”

” এই রাত একটায় হসপিটালে কেন?”

” না গেলে জানতে পারব নাকি। দেখে আসি। টেনশন করো না। ঘুমাও।”

তৃষ্ণার কি হলো ফট করেই জায়ানের হাত ধরে বলে উঠলো,” আমিও যাব আপনার সাথে।”

” কিহ? অসম্ভব। আমি তোমাকে নিয়ে এই রাতে কোথাও যাব না। চুপচাপ শুয়ে পরো।”

তৃষ্ণা আরো সাহসের সাথে বলল,” আমিও আপনাকে একা যেতে দেব না। আমি যাব।”

” তুমি এতো জেদি হলে কবে?”

” আপনার সাথে থেকে থেকে অনেকটা আপনারা মতো হয়ে যাচ্ছি।”

” আচ্ছা যাও রেডি হয়ে নাও।”

দুজনেই বেরিয়ে পরলো বাসার আর কেউ জানতেও পারলো না।
হসপিটালে কি অপেক্ষা করছে জায়ান আর তৃষ্ণার জন্য?

#চলবে…..

আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রিয় পাঠকমহল কেমন আছেন? আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here