কৃষ্ণবেণী #পর্ব_৪৪ #নন্দিনী_নীলা

0
567

#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_৪৪
#নন্দিনী_নীলা

তৃষ্ণা যখন চোখ মেলে তাকাল ও নিজের পাশে শুয়ে থাকা বকুল কে দেখল। ও চমকে উঠল।
বকুলের গায়ে ধাক্কা দিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে দিল।
” কি হয়েছে বুবু?”
” তুই কখন এলি?”
” অনেকক্ষণ এসে তোমায় কত ডাকলাম তুমি উঠলে না।”
তৃষ্ণা চমকে উঠল। মাথায় মাথা দিয়ে উঠে বসল। ও তো জায়ানের সাথে কথা বলছিল ঘুমালো কখন? হঠাৎ মনে পড়ল শেফালী দরজা ধাক্কানো তারপর জড়িয়ে ধরা। তৃষ্ণা চমকে উঠল তারপর ওর কিছু মনে পড়ছে না। কাঁধে আঘাত পেয়েছিল। ও কাঁধে হাথ রাখল। এখনো চিনচিন ব্যথা করছে।
” বুবু কি ভাবছ?”
” তুই এসে কি অবস্থায় পেয়েছিস?”
” আমি আর জোভান এসেছি সারে এগারোটায়। এসে দেখলাম তুমি ঘুমিয়ে গেছ ডাকলাম সারা শব্দ দিলে না।”
” ওহ।” আনমনে চিন্তিত গলায় বলল।
” খেয়েছিস কিছু?”
” না আমরা খেয়েই এসেছি।”
” বাবা তোকে আসতে দিল?”
” হ্যা তুমি একা বাসায় শুনে আর না করেনি।”
তৃষ্ণা বাথরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখল পাঁচটা বাজে। আযান পড়বে তৃষ্ণা ওযু করে এসে আযানের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। সকালে শেফালীর ব্যবস্থা করতে হবে। কি করেছিল মেয়েটা ওকে জড়িয়ে ধরে? যে তার পরের কিছুই মনে পড়ছে না।

নামাজ পড়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখল জায়ান এর অনেক গুলো কল। তৃষ্ণা ও কল করল। কিন্তু রিসিভ হলো না। তৃষ্ণা উঠে নিচে নেমে এল বকুল ঘুমিয়ে গেছে আবার। তৃষ্ণা শেফালীর রুমের সামনে এসে দাড়িয়ে আছে। দরজা চাপানো ও ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চমকে উঠল। রুম ফাঁকা কেউ নাই। বিছানা ও ফাঁকা। ও অবাক হয়ে ভেতরে ঢুকে খেয়াল করল শেফালীর কোন জিনিস পত্র রুমে নাই সব ফাঁকা। সব কিছু নিয়ে শেফালী গেল কোথায়?
দুশ্চিন্তায় তৃষ্ণা ছটফট করে রুমে ফিরে এল। তার আগে আশেপাশে ভালো করে চেক করে এসেছে কিন্তু শেফালীকে পাওয়া গেল না। তৃষ্ণা ব‌ই খোলে বসে আছে। গতকাল কি সব হলো ওর সাথে। কিচ্ছু পড়তে পারে নাই। ব‌ই খোলেও পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছে না বারবার শেফালীর কথা ভাবছে। মেয়েটা এতো ভোরে উধাও হলো কি করে?
ব্রেকফাস্ট টেবিলে খবর পাওয়া গেল শেফালী পালিয়েছে।‌
সাদিকুর চেয়ার টেনে বসে বললেন,,” এখন কেমন আছো তৃষ্ণা?”
তৃষ্ণা অবাক গলায় বলল,,” আমার আবার কি হয়েছে?”
” গতকাল তো ফ্লোরে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলে। ডক্টর এনে জানতে পারলাম তোমাকে নাকি ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। এসব তো শরীরে জন্য ভালো নয় তুমি এমনটা করেছো কেন?”
তৃষ্ণা ঢোক গিলে বলল,,” আমি কিছু করিনি বাবা। আমি তো…
তৃষ্ণা সবটা খোলে বলল। সাদিকুর চিন্তিত গলায় বললেন,,” শেফালী কি এজন্য পালিয়ে গেল।”
” প্রথম থেকেই ওকে আমার পছন্দ হয়নি বাবা। কেমন জানি ব্যবহার করতো আর কাল আমার ঘুমের পেছনে ওর হাত ছিল। ও এমনটা কেন করল?”
” আমি তো গতকাল বাসায় ঢুকে শেফালী কে দেখতে পায়নি। তুমি ফ্লোরে ছিলে আমি নিজেই তোমার খোঁজ নিতে গিয়ে ছিলাম। কারণ বাসায় একা ছিলে তুমি।”
তৃষ্ণা ঠোঁট কামড়ে চিন্তিত মুখে বসে আছে।
ওদের চিন্তায় ভাটা পড়ল কলিং বেল এর আওয়াজ এ। রান্না ঘর থেকে রান্না করার মহিলাটি দরজা খুলে দিল। ভেতরে আসলো লিয়া। লিয়া কে দেখেই তৃষ্ণা খাবার ফেলে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরল।

এদিকে জোভান বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,,” ভাবির ক্ষতি চেষ্টা করছিল হয়ত শেফালী। এভাবে অপরিচিত কাউকে বাসায় ঢোকানো ঠিক হয়নি। যদি ভাবির কোন ক্ষতি হয়ে যেতো।”
সাদিকুর বললেন,,” ধরা পরা গেছে তাই পালিয়ে গেছে। কিন্তু কেন তৃষ্ণার ক্ষতি করতে চাইবে?”
” ভাইয়াকে ট্যাপে ফেলার জন্য করতেই পারে। ভাবি তার দূর্বলতা এজন্য তাকে লাগাতে চাইছে হয়ত।”
” শেফালী যার পরিবর্তে এসেছিল তার কাজ থেকে ওর খোঁজ নিতে হবে। এসব জায়ান কে জানানোর প্রয়োজন নেই। তাহলে চিকিৎসা ফেলেই ছুটে আসতে চাইবে।”
” ভাবি যদি বলে দিয়ে থাকে?”
” না বলে থাকলে বলতে মানা করে দিও।”
” ভাইয়ার থেকে এসব লুকানো কি ঠিক হবে।”
” আপাতত না জানুক দেশে ফিরলে জানানো যাবে।”
জোভান আচ্ছা বলে খাবার খেতে লাগল। বকুল সেই মুহূর্তেই গুটিসুটি পায়ে হেঁটে এল টেবিলের কাছে‌। সাদিকুর উঠে চলে গেছেন টেবিলে শুধু জোভান বসে আছে। বকুল কে দেখেই ওর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল।
” গুড মর্নিং।”
বকুল মুখটা ভোঁতা করে চেয়ার টেনে বসল। জোভানের কথা ও বুঝে নি।
” কি ক‌ইলেন?”
জোভান বলল,” শুভ সকাল।”
বকুল হাসল।
“বকুল তোমার পড়াশোনা করতে ইচ্ছে করে না?”
বকুল বলল,,” না পড়ালেখা অনেক কষ্টের। স্যার রা খালি মারে।”
” কে বলছে তোমায়। ভাবি পড়াশোনা করছে জানো?”
” হ জানি তো। বুবুর তো ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল অনেক পড়াশোনা করবে। কিন্তু আমাগো তো টাকা পয়সা নাই বেশি তাই আব্বায় আমাগো পড়াশোনা করাতে পারে নাই। আর আমার আবার এতো পড়াশোনা করার ইচ্ছেও নাই।”
” তা তোমার কি করার ইচ্ছে আছে।”
” আমার মারামারি, বন্দুক চালানো শেখার ইচ্ছে। যখন আপনের শয়তান ভাই আমারে তুলে নিছিল মন চাইছিল বেটাকে মেরে তক্তা বানাই দেই।”
জোভান বকুলের কথা শুনে শব্দ করে হেসে উঠল।
তৃষ্ণা লিয়ার সাথে কথা শেষ করে এসে দেখে বকুল খেতে বলেছে ও হাত ধুয়ে উপরে চলে এল।
বকুল আর জোভান কথা বলতে বলতে খাবার শেষ করল।

এদিকে শেফালী একটা লোকের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটা রাগান্বিত গলায় বলল,,” কাজ করতে পারলি না উল্টো পালিয়ে এলি।”
” কি করতাম আমি। সময় মতো জায়ানের বাপ চলে এসেছিল। তাও ওই বাড়ি থাকলে আমি বিপদে পরে যেতাম। তৃষ্ণা জেগে উঠেই সব মনে করে আমায় আটকে দিত। জান হাতে নিয়ে পালিয়েছি।”
লোকটা শেফালীর কথায় রাগে কাঁপতে লাগল।কাজের কাজ কিচ্ছু হলো না উল্টো সংকেত দিয়ে এল এই হা’রাম’জাদি।

পরপর তৃষ্ণার দিন গুলো ভালোই কাটছিল শেফালী আপদ বিদেয় হয়েছে। লিয়া ফিরে এসেছে আবার বকুল আছে‌। তৃষ্ণার পরীক্ষা চলছিল সাথে ফোনে কথা চলছিল জায়ানের সাথে‌। জায়ানের থেকে শেফালীর সব করা কাজ লুকিয়ে গিয়েছে তৃষ্ণা জোভানের জন্য। আর মাত্র দুইটা পরীক্ষা আছে। জায়ান দেশের বাইরে গেছে বাইশ দিন হয়ে গেছে। তার পা এখন আগের থেকে ভালো হাঁটতে পারে। আর দুইদিন পর সে দেশে ফিরে আসবে।
তৃষ্ণা বলে রেখেছে দেশে এসেই তাকে নিয়ে মৌমিতার হাতে দেখা করাতে নিয়ে যেতে হবে।
জায়ান বলেছে বাসায় এসে নিয়ে যাবে।
” বুবু আমি তোমার স্কুল দেখমু।”
” আমার পরীক্ষা শেষ হোক তারপর তোরে নিয়ে যাবনি।”
” আইচ্ছা।”
বকুল বোনের রেডি হ‌ওয়া বসে দেখল। তৃষ্ণা রেডি হয়ে বলল,,” লিয়ার সাথে থাকিস।”
” আইচ্ছা।”
তৃষ্ণা হেসে বেরিয়ে এল। বকুল পেছনে পেছনে এল গাড়িতে উঠা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে র‌ইল। তৃষ্ণা চলে যেতেই বকুল ভেতরে চলে এল। জোভান আজ বাসায় নাই। সে তার ভার্সিটিতে গেছে। লিয়ার সাথে বসে বকুল শাক বাছাই করছে। আর দুজনে গল্প করছে।

তৃষ্ণা চোখ পিটপিট করে তাকাতেই মুখে উপর ঝুঁকে থাকা এক অপরিচিত পুরুষ দেখে চমকে উঠে। ভয়ার্ত চোখ মেলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিড়াল চোখের লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। তৃষ্ণা কথা বলার জন্য মুখ খুলবে তখনি খেয়াল করে ও কথা বলতে পারছে না উম উম করছে। তৃষ্ণা হাত বাড়িয়ে মুখের বাঁধন খুলতে হাত নাড়াতে গেলেই লক্ষ্য করে ও হাত নড়াতে পারছে না‌। যেন শক্ত কিছু দিয়ে হাত বেঁধে রাখা হয়েছে। ও মাথা ঝুঁকিয়ে দেখল ওকে একটা চেয়ারে বসিয়ে ওর হাত, পা ও মুখ বেঁধে রেখেছে।
তৃষ্ণা মনে পরল এক্সাম শেষ করে ও বের হয়েছিল। যথারীতি গাড়িতে উঠে বসে। কিন্তু হঠাৎ গাড়ি থেমে যায় শেফালী গাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তৃষ্ণা চোখ বড়ো বড়ো তাকিয়ে ছিল।
” তুমি এখানে?”
শেফালী গাড়ির জানালায় উঁকি মেরে বলল,,” ম্যাম আমি খুব বিপদে পরেছি একটু হেল্প করবেন প্লিজ।”
তৃষ্ণা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,” তোমার সাহস তো কম না। এতো সব কান্ড করে আবার আমার কাছে সাহায্য চাইতে আসছো। পালিয়ে গিয়ে ও আবার আমার সামনে এসেছ ভয় করছে না।”
” আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি ম্যাম। নিজের জীবন বাঁচাতে এসব করেছি।”
” মানে?”
ড্রাইভার পেছনে ঘুরে বলল,” ম্যাম কোন সমস্যা?”
তৃষ্ণা কিছু বলতে যাবে ফাঁকা জানালা দিয়ে শেফালী আঘাত পাওয়া হাত দেখাতেই তৃষ্ণা আঁতকে উঠে। হাতে লম্বা করে কাটা তাতে গলগলিয়ে রক্ত পড়ছে। তৃষ্ণা সব ভুলে গাড়ির দরজা আনলক করতে বলে ড্রাইভার কে।
” এসব কি বলছেন ম্যাডাম আপনাকে বের করা যাবে না। প্লিজ চলুন।”
” দেখছেন না শেফালী আহত। আপনি প্লিজ খুলুন ওর সাহায্যের প্রয়োজন। আমি ওকে সাহায্য করব।”
শেফালী মনে মনে শয়তানি হাসি দিচ্ছে।
” সরি ম্যাডাম।”
বলেই জানালা আটকে গাড়ি স্টার্ট দিতে নেয় তৃষ্ণা চিৎকার করে উঠে,,” আমি কিন্তু জায়ানের কাছে বিচার দেব। আপনি আমার কথা শুনেন নি তখন কিন্তু আপনার‌ই বিপদ হবে।”
লোকটা ভয় পেয়ে দরজার লক খুলে দেয় তৃষ্ণা বেরিয়ে এসে শেফালীকে দেখে আরো চমকে যায়।
” তোমার এই অবস্থা কীভাবে হয়েছে?”
শেফালীর গায়ে আরো আঘাতের চিহ্ন তৃষ্ণা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। শেফালী তৃষ্ণার হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগে,,” আমাকে একজন লোক আপনাদের বাসায় পাঠিয়েছিল আপনাকে মারতে। তারপর সে চেঞ্জ করে বলল আপনাকে কিডন্যাপ করতে। আমি রাজি হচ্ছিলাম না বলে সে আমার মাকে ধরে নিয়ে গেছে। আপনাকে তার হাতে তুলে না দিলে সে আমার মাকে মেরে ফেলবে।”
” কি সব বলছো। কে আমায় তুলে নিতে চায়?”
” আমাকে ক্ষমা করবেন আপনি আমি নিরুপায়।”
বলেই তৃষ্ণার মুখে একটা স্পে করে দেয়। তৃষ্ণা ঘোলাটে চোখে তাকিয়ে আছে শেফালীর দিকে। এদিকে আরো কয়েকজন পুরুষ এগিয়ে এসে ড্রাইভারের হাত পা বেঁধে গাড়ির ভেতরে ফেলে রাখে। তৃষ্ণাকে একটা লাল গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
তৃষ্ণা ঘোলাটে চোখে সবটাই দেখে কিন্তু ওর শরীর অসাড় হয়ে এসেছে এক ফোঁটা শক্তি ও নেই। আটকাতে পারছে না।
পুরুষালী হাতের স্পর্শে তৃষ্ণার ধ্যান ভঙ্গ হয়। ওর সামনে দাঁড়ানো বিড়াল চোখের ভয়ংকর লোকটা ওর কপাল থেকে চুল সরিয়ে দিচ্ছে। তার আঙুলের স্পর্শে তৃষ্ণা থরথরিয়ে কাঁপছে ভয়ে।
“You look so pretty. তাই তো বলি জায়ান কাকে বিয়ে করে দেওয়ানা হয়ে গেল। তোমার রুপের কাছে তো সবাই হার মানতে বাধ্য বেবি।”
তৃষ্ণা অনেক কথা বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না। ওকে কথা বলার কোন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তৃষ্ণা কাঁদতেও পারছে না। চোখ ফেটে একাই জল গড়িয়ে পরছে। এই লোকটার হাত থেকে কিভাবে ছাড়া পাবে? আর জায়ান সে তো এখনো দেশের বাইরে। তৃষ্ণা যে এমন কঠিন বিপদে পড়েছে সে কি জানতে পেরেছে? কেন তখন ওই শেফালীর মায়া পড়ে বের হলাম। আমি তো আগে থেকেই ওকে পছন্দ করতাম না। ওকে আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম। আর সেটা সেদিন প্রমাণ ও হয়েছিল। তারপর কিভাবে ওই মেয়েটার পাতা ফাঁদে আমি পা দিলাম হায় আল্লাহ কিভাবে এখানে থেকে মুক্ত হবো আমি।
তৃষ্ণার গায়ে এখনো স্কুল ড্রেস। সাদা হিজাব মাথায় বাঁধা ছিল কিন্তু এখন বাধা নাই কে খুলল? এই লোকটা? লম্বা চুলের গোছা ফ্লোরে দোল খাচ্ছে। একটা অপরিচিত পুরুষের সামনে খোলা চুলে থাকতে খুব অস্বস্তি হচ্ছে তৃষ্ণার। লোকটা কেমন লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
“বৃথা চেষ্টা করে লাভ নাই। তুমি কি জানতে চাও আমি জানি।”
তৃষ্ণা উম উম করছে। লোকটা এগিয়ে এসে বলল,,” I am Ruhul. জায়ানের একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু জানো ও আমায় তোমাদের বিয়ের খবরটা দেয়নি। এমনকি ও বিয়ে করেছে আমি তো তাই জানতাম না। এটা কি ঠিক বলো? বেস্ট ফ্রেন্ড ওর আমি ও আমার থেকে এতো বড় কথাটা লুকিয়ে কি ঠিক করলো তুমি বলো তৃষ্ণা বেবি। আমি কি তোমায় দেখলে ওর থেকে ছিনিয়ে নিতাম? উল্টো বলল না বলেই নিতে হলো।”
বলতে বলতে এগিয়ে এসে তৃষ্ণার মুখের বাঁধন খুলে দিল। তৃষ্ণার ফর্সা মুখটা দীর্ঘ সময় বাধা থাকার ফলে গালে লাল দাগ পড়ে গেছে। জোরে জোরে শ্বাস দিতে লাগল তৃষ্ণা। অস্পষ্ট সুরে বলল,,” পা নি”
রুহুল নিজে হাতে তৃষ্ণাকে পানি খাইয়ে দিল। তৃষ্ণা সব ভুলে আগে পানি খেয়ে নিজের পিপাসা মিটাল।
” আপনি আমায় এখানে কেন ধরে এনেছেন?”
” তোমার সাথে একটু একাকি টাইম পাস করতে।”
“মানে?”
রুহুল তৃষ্ণা পেছনে গিয়ে চুলের ঘ্রাণ টেনে বলল,,” Your hair is so cute.”
তৃষ্ণা চিৎকার করে বলল,,” দূরে সরুন আমার থেকে। লজ্জা করছে না বন্ধুর বউয়ের সাথে নোংরামি করতে।”
” এখনো তো কিছু করলাম‌ই না বেবি। এখনি হায়পায় হচ্ছো করার সময় কি করবে?”
” দেখুন আমাকে বাসায় পৌঁছে দিন দয়া করে। এসব খারাপ চিন্তা ভাবনা করবেন না।”
” জানোতো শেফালী কে তোমাদের বাসায় পাঠিয়েছিলাম তোমায় মারতে কিন্তু ও যখন তোমার ছবি দিল আমি তো শেষ। এতো সুন্দর কোন মেয়ে হয়। তাকে মারার আগে না হয় একটু আমোদ করে নেওয়া যায়। কিন্তু এখন ভাবছি তোমায় মারব না। তোমায় এমন অবস্থা করে জায়ানের কাছে পাঠাবো ও আধমরা তোমায় দেখেই হয়ে যাবে।”
” কি শত্রুতা উনার সাথে আপনার? কেন এসব করছেন? প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন আমি আপনার পায়ে পড়ছি।”
ছটফট করতে করতে বলল তৃষ্ণা।
রুহুল বলল,,” শুনছি এই চুল নাকি জায়ানের খুব পছন্দ। সত্যি নাকি?”
রুহুল চুল টেনে ধরে বলল। তৃষ্ণা কান্না করছে ওকে ছাড়ার জন্য।
” স্টপ ইউর মাউথ।”
এতো জোরে ধমক দিল যে তৃষ্ণা ভয়ে চুপ করে গেল। একটু পর দরজা খোলে রুহুল একটা কেচি হাতে ফিরে এল। তৃষ্ণার সামনে এসে কেচি ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করে দেখাল। তৃষ্ণা কেচির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে। আতঙ্কিত গলায় বলল,,” কেচি আনলেন‌ কেন? এটা দিয়ে কি করবেন?”
রুহুল দাঁত বের করে শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,,”জায়ানের পছন্দের চুল কাটব। এই চুল দেখে তোমায় পছন্দ করেছিল জায়ান তাই না। এই চুল যদি না থাকে তখনো কি জায়ান তোমায় পছন্দ করবে?”
” দোহাই লাগে এমনটা করবেন না।”
কান্নার জন্য তৃষ্ণা কথা‌ বলতে পারছে না। মাথা নাড়িয়ে যাচ্ছে অনবরত আর তোতলানো গলায় থামতে বলছে। রুহুল তৃষ্ণা পেছনে এসে মাথা শক্ত করে ধরে কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুলের গোছা নিমিষেই কেটে দিল। আর ঝরঝরিয়ে লম্বা চুলের গোছা ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ল। তৃষ্ণা স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে আছে ফ্লোরের দিকে। ওর যেন প্রাণটাই নিজের থেকে আলাদা হয়ে গেছে। জায়ানের চুল নিয়ে কত শত কথা বলা, আদর করা সব একে একে চোখের সামনে ভাসছে। ও এতো বড়ো শক নিতে পারল না চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।
রুহুল তৃষ্ণার চুল সুন্দর করে হাতে তুলে নিয়ে বলল,,” জায়ান তোর প্রিয় জিনিস তোর কাছে পাঠাচ্ছি। ব‌উ কিডন্যাপ হয়েছে এখন তো আর বিদেশে পড়ে থাকবি না। দেশে এসে এই চুল‌ হবে তোর জন্য আমার পাঠানো স্পেশাল গিফট।”
বলেই হাহাহা করে হাসতে লাগল।
#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here