কৃষ্ণবেণী #পর্ব_৪৫ #নন্দিনী_নীলা

0
559

#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_৪৫
#নন্দিনী_নীলা

চব্বিশ ঘন্টা চলে গেছে তৃষ্ণা নিখোঁজ পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছে‌। শহর শহরের বাইরে তন্ন তন্ন করে খোঁজ চলছে। ড্রাইভার শুধু শেফালীর বর্ণনা দিতে পেরেছে আর কারো বর্ণনা দিতে পারে নাই কারণ সবাই মুখ ডেকে এসেছিল‌। এদিকে ভোরে জায়ান দেশের মাটিতে পা রাখে। অনেক দিন পর নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেয়ে নিজের মনটাই অনেক ভালো ছিল। কিন্তু ওর এই ভালো থাকাটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না বাসার পৌঁছে সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেল।
তৃষ্ণা কে জানিয়েছিল দুইদিন পর আসবে। এটা ছিল মিথ্যা। সেদিন ওরা সব কাজ শেষ করে প্লেন এ উঠে। তৃষ্ণার জন্য ছিল এটা সারপ্রাইজ। কিন্তু ওর জন্য এমন সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল ও কল্পনা ও করতে পারেনি। ড্রাইভার জায়ানের সামনে মাথা নিচু করে সব ঘটনা খুলে বলেছে জায়ান নিজের রাগ দমাতে পারেনি। ড্রাইভারের মাথায় বন্দুক ধরে চিৎকার করে উঠল,,” ও বলবে আর তুই দরজা খুলে দিলি। যে মেয়ে দুইদিন আগে বাসা ছেড়ে পালিয়ে গেছে তার সাথে তুই আপোস করলি। তোকে ওরা কত টাকা দিয়েছে বল। কার হয়ে এই কাজ করলি?”
জোভান ভাইকে টেনে ধরে ড্রাইভার কে বাইরে যেতে বলে। ড্রাইভার ভয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেছে। জায়ান রক্ত বর্ণ চোখে জোভানের দিকে তাকিয়ে আচমকাই জোভান কে আঘাত করে বসে। জোভান ছিটকে ফ্লোরে মুখ থুবড়ে পড়েছে।‌
” কোন সাহসে এসব আমার থেকে আড়াল করলি। answer me.”
জেসমিন জায়ানের হাত ধরে বললেন,,” বাবা শান্ত হ। বাসায় মারামারি, রাগারাগী করে তো কিছু হবে না। ব‌উমাকে খোঁজে বের কর আগে‌। সেটা এখন ইম্পর্ট্যান্ট বেশি।”
জায়ান ধপ করে সোফায় বসে পড়ে। সাদিকুর বাসায় নাই তিনি থানায় গেছেন। বকুল আর লিয়া পাশেই দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে।
” এক দিন পেরিয়ে গেছে তৃষ্ণা নিখোঁজ আর সবাই এতো বড় খবর টা আমার থেকে আড়াল করে গেছে। আমি নিজেকে কীভাবে কন্ট্রোল করব ভাবেন। কোথায় আগে কিভাবে আছে? তৃষ্ণা কিছু হলে আমি কি করব নিজেও জানি না।”
জায়ান উপরে উঠে যাবে তখনি গার্ড একটা গিফট বক্স হাতে ভেতরে এসে বলে জায়ানের নামে গিফট এসেছে।
জায়ান থেমে যায়। জেসমিন বেগম বক্স হাতে নেয়। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে‌। গিফট কে পাঠালো? এমন বিপদে আবার গিফট পাঠালো কে?
জায়ান পা চালিয়ে উপরে উঠতে যাবে। জেসমিনের কথা শুনে চমকে উঠে।
” রুহুল কে জায়ান? রুহুল নামের কেউ গিফট পাঠিয়েছে।”
জায়ান থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। বিস্মিত নয়নে পেছনে ঘুরে তাকালো গিফট বক্স এর দিকে।
অজানা ভয়ে ওর বুকটা ধক করে উঠল। অজান্তেই ওর গলা শুকিয়ে এল। সব সময় নিজেকে শক্ত রাখতে পারলেও এবার ও পারছে না। তৃষ্ণা ঠিক আছে তো? ওকে রক্ষা করতে পারব তো আমি?
” রুহুল মাই ফ্রেন্ড।” নির্লিপ্ত গলায় বলল জায়ান।
জেসমিন এগিয়ে এসে ওর হাতে গিফট বক্স দিয়ে বললেন,,” ওহ আচ্ছা। নাও তোমার ফ্রেন্ড কি গিফট পাঠিয়েছে দেখো? কোন বিশেষ কারণে কি এই গিফট? তোমাকে আগে থেকে কিছু জানিয়েছিল কিছু?”
জায়ান কাঁপা হাতে গিফট বক্সের প্যাকেট খুলছে। তৃষ্ণা যেন কোন ভাবে রুহুল এর হাতে না পড়ে। এটা প্রার্থনা করছিল মনে মনে। এতো দিন হয়ে গেছে রুহুল এখনো সব কি মনে পুষে রেখেছে? জায়ান তৃষ্ণার চুলের গোছা হাতে নিয়ে ফ্লোরে হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে ওর শরীর মাত্রাতিরিক্ত ঘামছে‌। ওর হাতের মুঠোয় একটা ছোট চিরকুট ‌তাতে লেখা,,
” দোস্ত ভালো আছিস? বুক কাঁপছে? গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তাই না? শরীরে শক্তি কি ফুরিয়ে গেছে।আমারো হয়েছিল রে! কেমন লাগছে? তোর হট ব‌উয়ের সঙ্গে রাত কাটাতে খুব মজা লাগবে রে। তাই তো বলি আমার রগচটা গম্ভীর বন্ধুটা বিয়ে করল কি করে? এতো সুন্দর মেয়ে পেলে কেউ কি আর লোভ সামলাতে পারে? শুনলাম তুই নাকি ব‌উয়ের কেশের প্রেমে দেওয়ানা। আমি তোর বন্ধু। তুই না মানলে কি হবে? আমি তোর পছন্দের জিনিস আর যাইহোক ভোগ করব না তাই তো তোর জিনিস তোর ঠিকানায় তোর হাতে পৌঁছে দিলাম যত্ন সহকারে। ব‌উয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে চুল নিয়ে বসে থাক। আমি ঠিক নিজের আয়েশ মিটিয়ে তোর জিনিস তোর কাছে পাঠিয়ে দেব। মেরে ফেলব না ভয় পাস না কেমন। বা-ই।”
“রুহুল”
জায়ান বুকে হাত দিয়ে নিজের শরীরে ভার ছেড়ে দিল। এদিকে জেসমিন, জোভান, বকুল সবাই দৌড়ে এল জায়ানের কাছে।
” ভাইয়া কি হলো তোমার?”
জায়ান কথা বলতে পারছে না।
” ও কি বলার মতো পজিশনে আছে। তাড়াতাড়ি হসপিটালে চল‌।”
জেসমিন ছেলের মাথা কোলে নিয়ে কেঁদেই ফেলল। বকুল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে চুলের দিকে। অস্পষ্ট সুরে বলল,,” এই চুল তো বুবুর মাথার। এখানে এইভাবে কেন?”
জোভান গার্ড ডেকে জায়ানকে ধরে গাড়িতে উঠালো। জেসমিন জায়ানের বুকে আলতো চাপ দিচ্ছে। বকুল আর লিয়া বাসায় র‌ইল।
হসপিটালে এসে ডক্টরের সাথে কথা বলে জানা গেল অতিরিক্ত শক, ও টেনশনে heart attack হয়েছে জায়ানের। সাদিকুর থানা থেকে ছুটে এসে হসপিটাল। ছেলের এই অবস্থা দেখে তিনি থমকে গেছেন। এদিকে থানায় আয়ান ও অসুস্থ হয়ে পরেছে। দুজনের কিছুতে মিল না হলেও গভীর কোন আঘাত বা অসুস্থতা হলে দুজনের শরীরেই তার দেখা পাওয়া যায়। জেল পুলিশ হঠাৎ আয়ানের অবস্থা দেখে লকাপ খুলে ভেতরে এসে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে আপনার?
আয়ান ব্যথিত গলায় বলল,,” আমার ভাই জায়ানের কি কিছু হয়েছে একটু খোঁজ নিয়ে দেখেন তো!”
পুলিশ বিরক্ত হয়ে সাদিকুর কে ফোন করে সব জানতে পেরে আয়ান কে জানাল। আয়ান সব শুনে ভেতরে ভেতরে পৈশাচিক আনন্দ পেলেও ওর শিকারী অন্য কেউ নিয়েছে শুনে রাগান্বিত হলো।
আয়ান বলল,” আমি আর জায়ান যমজ একজনের সমস্যা হলে দুজনের শরীরে ইফেক্ট পড়ে। আমাকে হসপিটালে নিয়ে চলুন প্লিজ।”
সব শুনে জেল পুলিশ চমকে উঠল। অফিসারের কাছে এসে সব খুলে বলল। তিনি ও জানেন যমজ ভাই বোনের ক্ষেত্রে এমনটা হয়ে থাকে। তাই তিনি রাজি হলো। কয়েকজন মিলে আয়ান কে হসপিটালে নিয়ে যেতে লাগল। আয়ান বলল জায়ান যে হসপিটালে আছে ওকে যেন সেই হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাই করা হলো। এদিকে মনে মনে আয়ান শয়তানি হাসি দিচ্ছে। ও এতোক্ষণ সব মিথ্যা বলেছে। আয়ান আর ও যমজ হলেও ওদের একজনের সমস্যা আরেকজন কে কাবু করে না কখনো। আয়ান আগেই জানতে পেরেছিল জায়ান তৃষ্ণার শোকে হার্ট অ্যাটাক করেছে ও সেটা শুনতেই নিজের নাটক শুরু করে দিয়েছে। হসপিটালে গিয়ে ওর একমাত্র উদ্দেশ্য পালিয়ে তৃষ্ণা কে উদ্ধার করা। ওর শিকারী কেন আরেকজন ভোগ করবে এটা ও কিছুতেই মানবে না।

আয়ান কে চিকিৎসা করতে নেওয়া হয়। জেসমিন অবাক হয়ে আয়ানের কেবিনের দিকে তাকিয়ে আছে। ছোট থেকে কখনো দুজনের এতো টান উনি দেখেন নি আজ হঠাৎ জায়ানের মতো আয়ান কীভাবে অসুস্থ হলো? পাশাপাশি রুমে নেওয়া হয়েছে দুজনকে। জায়ানের অবস্থা খারাপ। জ্ঞান ফেরেনি এখনো। এভাবে জায়ান ভেঙে পড়বে কেউ ভাবেনি। কিন্তু আমরা যা ভাবি সবসময় তাই হবে এমনটা তো নয়।
আয়ান অসুস্থতার ভান করে পরে আছে। ঠিক দুই ঘন্টা পর জায়ানের জ্ঞান ফিরল। ঠিক মতো হসপিটালে আনার জন্য ওর এ যাত্রায় বেঁচে গেছে। কিন্তু এতোটা টেনশন দেওয়া যাবে না। কিন্তু ডক্টর তো জানে না তৃষ্ণা কে না পাওয়া অবধি ওর টেনশন যাবে না। সাদিকুর ছেলের সামনে এসে বললেন,,” তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে ব‌উমাকে বাঁচাবে কি করে?”
” আমার মাথা কাজ করছে না বাবা। আমার নিজেকে খুব দূর্বল লাগছে। আমি তৃষ্ণাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না‌ বাবা ও আমার একমাত্র দূর্বলতা ওকে নিয়ে আমি কোন রিক্স নিতে পারব না। রুহুলের আমার উপর অনেক রাগ, বিদ্বেষ ও কখনো তৃষ্ণা কে ছাড়বে না। আমার এতো অসহায় লাগছে নিজেকে। প্লিজ বাবা তুমি কোন ভাবে তৃষ্ণা কে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও। ও আমার শক্তি ওকে ছাড়া আমি মরে যাব।”
সাদিকুর এর হাত ধরে জায়ান কেঁদে উঠল। সাদিকুর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ছেলের দিকে। জায়ান নিজে এমন ভেঙে পড়বে আর কাঁদবে উনি যেন বিলিভ করতে পারছে না। নিজের ছেলেকে উনি চিনতেই পারছে না। ছেলের অসহায় এর মতো কাকুতিমিনতি উনি অবাক হয়ে শুনছেন। জায়ান বিদেশে থেকে লেখাপড়া শেষ করে এসেই পলিটিক্স শুরু করে দেয়। চাকরি না করে উনার সাথে উঠা বসা শুরু করে। উনার ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। পরপর উনার ইলেকশনে জেতা সম্পূর্ণ ক্রেডিট জায়ানের। দৌড়াদৌড়ি সব জায়ান একা করেছে। নিজের সাহস আর দক্ষতা বারবার প্রমাণ করেছে। এজন্য উনি নিজের পর এই ছেলেকে ইলেকশনে দাঁড় করাতে চান। সেই ছেলে আজ কাঁদছে কাকুতিমিনতি করছে উনি কিংকতৃব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে আছেন।
তৃষ্ণার প্রতি ছেলের এই অগাধ ভালবাসা উনি টের পেলেন। সব সময় ছেলেটা সবার বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় আর আজ ছেলেটা নিজেকে সাহস দিতে পারছে না বলে কি তার ভালবাসাকে বাঁচাতে পারবে না? তাদের কি কিছুই করার নেই? সব সময় ছেলেটা কেন নিজেকে নিগড়ে দেবে এবার না হয় তারাই তার ভালবাসা ফিরিয়ে দিক।
সাদিকুর ছেলের হাত ধরে বললেন,,” আমি তোমার বাবা কথা দিচ্ছি জায়ান। ব‌উমা কে সহীহ সালামত তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব। তুমি টেনশন নিও না। আমার সর্বস্ব দিয়ে আমি তৃষ্ণা কে রক্ষা করার চেষ্টা করব।”
বলেই তিনি বেরিয়ে এলেন হসপিটালে থেকে।
জায়ান চোখ বন্ধ করে আছে ওর চোখের সামনে তৃষ্ণা কাঁদছে ওকে বাঁচাতে বলছে। ও ধরফরিয়ে উঠে বসল।
রুহুল ওর একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড সুদূর আমেরিকার। পড়াশোনার জন্য আয়ান -জায়ান দুই দেশে পাড়ি জমায়। জায়ান আমেরিকা, আয়ান লন্ডন। দুজন ছোট বেলা থেকেই সাপ নেউলের মতো। এজন্য দুজনকে দুই দেশে পাঠানো হয়। আমেরিকা গিয়ে বন্ধুত্ব হয় রুহুলের সাথে। একজন আরেকজনের জান এমন বন্ধু। হঠাৎ একদিন রুহুল জানাল ও একটা মেয়েকে ভালবাসে। নাম Dolly.। ডলি ওদের ইয়ারের ছিল। কিন্তু সাবজেক্ট আলাদা। রুহুল তাকে প্রপোজ করবে সব প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে কিন্তু সেইদিন জানতে পারে মেয়েটির ধর্ম আলাদা। তাই পিছিয়ে আসে। কিন্তু পারে না মেয়েটিকে ছাড়া কিছুই বুঝে না যেন। তখন ওরা ভাবলাম মেয়েটার সাথে বন্ধুত্ব করবে। ডলি খুব মিশুক স্বভাবের ছিল। তাই খুব তাড়াতাড়িই ওদের তিনজনের একটা ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক গড়ে উঠে। রুহুল মেয়েটার প্রতি আস্তে আস্তে দূর্বলতা বাড়তে থাকে। বন্ধুত্ব হ‌ওয়ার পর ডলির সাথে এভাবেও কথা হয় ও অন্য ধর্মের কারো সাথে সম্পর্ক করবে নাকি যদি কেউ ওকে প্রপোজাল দেয়। ডলি তখন হেসে বলে ছেলে পছন্দ হলে করবে।
ডলিকে প্রপোজ করার জন্য রুহুল সব ঠিক করে ফেলে কিন্তু ঝামেলা হয় সেদিন। আচমকা ডলি এসে জায়ানকে প্রপোজ করে বসে। হতভম্ব রুহুল ও জয়ানের চোখ। বন্ধুর দিকে তাকাতে পারে না জায়ান এমন আজব কান্ড করব ডলি কল্পনার বাইরে ছিল।
জায়ান প্রপোজ এক্সেপ্ট করে না। এদিকে সেদিনের পর থেকে রুহুল ওকে ভুল বুঝতে লাগে ভাবে ওই ডলিকে হয়তো বুঝিয়েছে ও ওকে পছন্দ করে তাই তো ওকে প্রপোজ করেছে। ডলি জায়ানের পেছনে পাগলের মতো লেগে যায় জায়ান বিপদে কি করবে বুঝতে না পেরে আরেকটা মেয়ের সাথে রিলেশন এ জড়ায় যাতে ডলি ওর পিছু ছাড়ে। ডলি সত্যি ওর পিছু ছাড়ে আর রুহুল এর সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে। রুহুল জায়ানের কাছে ক্ষমা চেয়ে সব ঠিক করে নেয়। একদিন হঠাৎ জায়ানের বাসায় এসে উপস্থিত হয় ডলি। জায়ানের সেদিন জন্মদিন ছিল তাই সব ফ্রেন্ডদের সাথে ড্রিংক করে ছিল। সবাই চলে যাওয়ার পর ও দরজার আটকে শুতে যাবে উপস্থিত হয় ডলি। দরজা খুলে ডলিকে দেখে চমকে উঠে।
কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে ডলি ওকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে নিয়ে আসে। আর ওকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে ওর উপরে উঠে বসে। জোর করে ঠোঁটে চুমু খেতে লাগে। জায়ান নেশায় থাকলেও জ্ঞানে ছিল ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে উঠে বসে।
” আর ইউ ম্যাড?”
ডলি চিৎকার করে বলে,,” Yes, I’m crazy. But only for you. What is there in that girl that I don’t have? Why are you in a relationship with her?”
জায়ান ডলির হাত মুচড়ে দিয়ে বলল,,” দেখ বাড়াবাড়ি করো না। বেরিয়ে যাও আমার বাসা থেকে। তোমার মতো মেয়ের মুখ আমি দেখতে চাইনা।”
ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয় জায়ান ডলি লাজ লজ্জা ভুলে জোর করে জায়ানের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে উঠে পড়ে লাগে। এদিকে জায়ান ছিল ড্রাংক অবস্থায় নিজেকে একটা মেয়ের কাছে বেশিক্ষণ শক্ত রাখতে পারে না। আবার যদি সেই মেয়েটি ওকে নিজে থেকে কাছে টানে। মাতাল অবস্থায় ডলির জড়াজড়িতে জায়ান নিজেও আঁকড়ে ধরে ওকে।‌ নিজে থেকে ওর সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে কাছে টেনে ঠোঁটে চুমু খেতে লাগে। এদিকে দরজা খোলা রেখে ওরা গভীরে চলে যাচ্ছিল। রুহুল ভুলে নিজের ফোন ফেলে যায় তাই সেটা নিতেই আবার আসে দরজা খোলা পায় দেখে আর কলিং বেল দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু এসে এমন অবস্থা নিজের ভালবাসার মানুষটিকে নিজের প্রাণ প্রিয় বন্ধুর সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে ওর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে‌। ছুটে এসে জায়ান কে ডলির উপর থেকে সরিয়ে ঘুসি মারে। এইদিকে ডলি এসব দেখে এগিয়ে এসে রুহুল কে থাপ্পড় মারে আর বলে,,” কোন সাহসে তুমি জায়ান কে মারলে আমি নিজেই এসেছি ওর কাছে!”
থমকে যায় রুহুল, ” এসব কি বলছো তুমি? আমি তোমায় ভালবাসি তুমি ওর কাছে কেন আসবে?”
” কিন্তু আমিতো জায়ান কে ভালবাসি।”
” জায়ান তোমাকে ভালবাসে না প্লিজ ওকে ছেড়ে দাও।”
” নো, আই লাভ জায়ান। প্লিজ লিভ হার।”
অপমানে থমথমে মুখে রুহুল মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসে। জায়ান ফ্লোরে পড়ে ঘুমিয়ে গেছে। ডলি এগিয়ে এসে ওকে ধরে বিছানায় শুইয়ে নিজেও ওর সাথে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন জায়ান নিজের বাহুবন্ধনে ডলিকে দেখে চমকে উঠে।
” তুমি এখানে কি করছ?”
” কেন তোমার কিছু মনে নেই?”
জায়ানের আদো আদো সব কিছু মনে পড়তেই কল লাগায় রুহুল কে। রুহুল ওকে যা নয় তাই বলে অপমান করে।
” এসব কেন করলে আমাদের বন্ধুত্ব কেন নষ্ট করলে। ও তোমাকে অনেক ভালবাসতো।”
” বাট আমি শুধু তোমায় ভালবাসি। তোমার জন্য আমি মুসলিম হতেও দ্বিধা বোধ করব না। তুমি ও আমার‌ ভালবাসা এক্সেপ্ট করো জান।” বলেই ডলি ওকে জড়িয়ে ধরতে আসে।
রাগে জায়ান ডলির চুলের মুঠি ধরে আছড়ে ফেলে ফ্লোরে,,” তোর মতো মেয়েকে আমি জায়ান ভালবাসাব?”
জায়ান থুথু ফেলে বলল,,” দূর হ আমার সামনে থেকে নয়তো খুন করে ফেলব তোকে। লজ্জা করল না আমার সাথে এসব করার। তোর জন্য ভাইয়ের মতো বন্ধু হারালাম। তোর দিকে তো আমার তাকাতেও ঘৃণা করে। বের হ আমার বাসা থেকে।”
ডলি ছলছল চোখে তাকিয়ে বেরিয়ে এল বাসা থেকে। নিজের বাসায় এসে জায়ানের করা অপমান ও সইতে পারল না নিজের হাতের শিরা কেটে আত্নহত্যা করল। তার আগে একটা লম্বা মেসেজ পাঠায় রুহুল এর নাম্বারে। রুহুল ছুটে এসে ও ওকে বাঁচাতে পারে না। তার আগে ও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
মেসেজে লেখা ছিল,,
” রুহুল জানো আমি জায়ান কে অনেক ভালবাসি কিন্তু ও আমায় ভালবাসে না। ও আমায় ঘৃণা করে। তুমি আমায় ভালবাসা কিন্তু আমি জায়ানের জায়গা কাউকে দিতে পারব না। ওর ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভাল। তুমি ভাল থেকো। আমার জায়ান কে দেখে রেখো ওর জীবনে ভালবাসা এলে তাকে একবার দেখো সে কি আমার থেকেও সুন্দরী। ও কেন আমাকে ভালবাসলো না। তুমি আমার বন্ধু হয়ে একবার জিজ্ঞেস করিও। আমি জানি তুমি আমার কথা রাখবে। ভালো থেকো।”
সেই মেসেজ জায়ানকে দেখিয়ে রুহুল অনেক ঝগড়া করে জায়ানের সাথে।
” ওর মৃত্যুর জন্য তুই দায়ী।”
” ফালতু কথা বলিস না রুহুল। ওকে আমি মেনে নিলে তুই কি মানতে পারতি? ও নিজের জেদে নিজের জীবন দিয়েছে এখানে আমার দোষ কেন হবে?”
” দোষ তোর আমিতো চলে এসেছিলাম তোদের ছেড়ে তাহলে কেন ওকে তুই মানতে পারলি না। তাহলে আজ ও বেঁচে থাকতে। তোর জন্য ও মারা গেল।”
” রুহুল।”
” তুই যদি কোনদিন কাউকে ভালবাসিস সেইদিন আবার আমাদের দেখা হবে এর আগে না।”
” তোর মাথা একেবারে গেছে। ওই মেয়ে আমার সাথে কি করেছে জানা সত্ত্বেও তুই তার হয়ে কথা বলছিস ভালবেসে অন্ধ হয়ে গেছিস।”
” হ্যা আমি অন্ধ হয়েছি কখনো কাউকে ভালবাসলে তখন বুঝবি আমার কষ্টটা।”
#চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here