#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩২
বেশ কিছুক্ষণের নীরবতা চলছে দুজনের মাঝে। ফোন কানে দিয়েছে রেখেছে ঠিকই কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। আদ্রিতা মুখ খুললো অনেকক্ষণ পর,
“এই যে আপনি ফোন দিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন। কথা বলেন না। এটাকে কি প্রেম বলে?”
ওপাশ থেকে উত্তর এলো,
“তুমি যদি অনুভব করতে পারো এই নীরবতাকে। তবে প্রেম। নয়তো প্রেম নয়। পারো কি অনুভব করতে?”
“পারি তো।”
“তাহলে প্রেম।”
“আমার আপনাকে কিছু বলার আছে ফারিশ?”
ফারিশের দ্বিধাহীন উত্তর,
“জি বলুন,
আদ্রিতার চট করে মনে পড়লো। কতক্ষণ আগে ফারিশ তাকে ‘তুমি’ করে বলেছে। আদ্রিতা বিচলিত কণ্ঠে বললো,“একটু আগে আপনি আমায় তুমি করে বলেছেন?”
ফারিশ পুরোই অমান্য করলো কথাটা। সে বললো,“কই না তো।”
আদ্রিতা দমে গেল। ভুল শুনলো কি তবে। ভাবতে গিয়ে প্রশ্ন করলো,
“সত্যি বলছেন?”
“মিথ্যে বলে আমার লাভ।”
আদ্রিতা চুপ হয়ে গেল। বিষয়টা ঝেরে ফেলে বললো,
“যাক বাদ দিন। যে কথা বলছিলাম।”
“জি বলুন। কি কথা?”
“ফোনে বলা ঠিক হবে কি না বুঝচ্ছি না।”
“সমস্যা নেই। বলে ফেলুন দ্বিধাহীন।”
আদ্রিতা কিছু সময় নিলো। বার কয়েক নিশ্বাস নিয়ে বললো,“কথাটা আমার বান্ধুবী চাঁদনীকে নিয়ে।”
এবার যেন বেশ আগ্রহ পেল ফারিশ। সে সটান হয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো। চিন্তিত স্বরে বললো,
“কি হয়েছে চাঁদনীর?”
“না না কিছু হয় নি। আসলে হয়েছে কি,
“পরিষ্কার করে বলুন।”
আদ্রিতা আর বেশি সময় নিলো না। চটপট বলে ফেললো,“আসলে আমার বন্ধু চাঁদনী আপনার ভাই আদিবকে পছন্দ করে। ভালোওবাসে আর আমার এও মনে হয় আদিব ভাইয়াও চাঁদনীকে পছন্দ করে কিন্তু বলতে পারছে না। আমার বন্ধু চাঁদনীর মতোই। তাই আপনি যদি এ বিষয় কিছু করতে পারতেন।আদিব ভাইয়ার সাথে কথা বলে।”
কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে থেমে গেল আদ্রিতা। ফারিশ চুপচাপ বসে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। ফারিশের চুপ থাকাটায় বেশ বিপাকে পড়লো আদ্রিতা। সে বললো,“কিছু বলবেন না।”
চট করেই ফারিশ হেঁসে উঠলো। শব্দ হলো সেই হাসিতে। আদিব সোফায় বসে চিপস খাচ্ছিল আর টিভি দেখছিল। ফারিশের হাসিটা এতটাই উচ্চস্বরে ছিল যে আদিবও শুনতে পেল সেই হাসি। আদ্রিতা ভড়কে গেল মুহূর্তেই। কান থেকে একবার ফোন সরিয়ে পুনরায় কান পেতে বললো,“কি হলো আপনি হাসছেন যে?”
ফারিশ জবাব দিলো না। তার হাসির রেশ বাড়লো। মিনিট তিন যেতেই থামলো। আদ্রিতা তখনও চুপচাপ বসে। ফারিশ বললো,“শুনছেন,
আদ্রিতা কপট উত্তর দিলো,
“জি বলুন।”
“আপনার বান্ধবীকেও আমার ভাইও ভালোবাসে। কিন্তু লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না। এখন আপনার কাজ হলো চাঁদনীকে ফোন করে কথাটা বলা আর বাকিসব আমি দেখছি।”
কথাটা বলেই তড়িৎ ফোন কেটে দিল ফারিশ। আদ্রিতা নির্বিকার ভঙ্গিতে বসা। বিষয়টা হুট করেই মাথার উপর দিয়েই গেল মনে হয়। কিছু সময় যেতেই ব্যাপারখানা বুঝতে পেরে আদ্রিতা আপনাআপনি হেঁসে উঠলো। এবার মনে হয় চাঁদ আপু আদিব ভাইয়ার কোলে উঠতে প্রস্তুত হবে।”
—-
ফারিশ হেঁটে এসে সোজা বললো আদিবের পাশ দিয়ে। আদিব তখন বাচ্চাদের মতো চিপস খাচ্ছিল আর টিভি দেখছিল। ফারিশ আয়েশ করে সোফায় বসে আদিবের চিপসের প্যাকেট থেকে দু’টো চিপস নিয়ে মুখে পুড়ে নিলো। বললো,“তোমার জন্য একটা সুখবর আছে আদিব।”
আদিব চট করেই চাইলো ফারিশের মুখশ্রীর দিকে। অবাক নয়নে শুধালো,
“কি সুখবর ভাই?”
“তোমার বিয়ে দিচ্ছি আমি।”
তড়িৎ কাশি উঠে গেল আদিবের। ফারিশ টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে আদিবকে খাওয়ালো। আদিব পানিটুকু ঢকঢক করে গিলে বললো,
“এসব কি বলছো ভাই?”
“ঠিকই বলছি। তুমি আজ হসপিটালে যাবে আদিব। উঠে দাঁড়াও গোসল করে আসো। আজ তোমার একটা হিল্লে না করলেই নয়।”
আদিব সটান হয়ে দাঁড়ালো। মিনমিন কণ্ঠে বললো,“আজ না বললে হয় না।”
ফারিশের তড়িৎ উত্তর,“না হয় না। চলো দ্রুত।”
আদিব অসহায়ের ন্যায় বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। চিপসের প্যাকেট ধরিয়ে দিলো ফারিশের কাছে। ফারিশ নিলো। এক টুকরো চিপস মুখে পুড়ে বললো,“ভালো মতো গোসল করবে আদিব। তাড়াতাড়ি যাও। আমি অপেক্ষা করছি।”
আদিব আর দাঁড়ালো না। সে বুঝেছে ফারিশ ভাই আজ তার হিল্লে করিয়েই ছাড়বে।
আর ফারিশ ভাবছে আজ আদিবের হিল্লের সাথে সাথে আদ্রিতাকেও সেই গোপনীয় কথা বলবে। যে গোপনীয় কথা আদিবহীনা কেউ জানে না।’
—-
বেলা তখন দুপুরের কড়া রোদ্দুরে আচ্ছন্ন। ঘড়িতে প্রায় দুপুর দুটোর কাছাকাছি। আদ্রিতা মাত্র গোসল সেরে আসলো পরনে ঢিলেঢালা সেলোয়ার-কামিজ। চুল মুছতে মুছতে নিজ রুমে প্রবেশ করলো আদ্রিতা। বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। সেখানে কড়া রোদ্দুরে ভরপুর। মাত্র গোসল সেরে আসায় শীতে শরীর কাঁপছে আদ্রিতার। ভেবেছিল ছাঁদে যাবে না কিন্তু শীতে ঠেলায় না গিয়ে উপায় নেই। আদ্রিতা ভেজা জামাকাপড় নিয়েই ছুটে গেল বাড়ির ছাঁদে। কিছুক্ষণ রোদ্রে বসে মাথা শুকিয়ে ফিরবে।”
“তোমার কি এখনো রোদ পোয়ানো হয় নি আদিব?”
খানিকটা বিচলিত কণ্ঠে সদ্য গোসল সেরে আসা ফারিশ বললো। ছাদের উপর থেকে উত্তর এলো না কোনো। ফারিশ আলমারি খুলে কিছু রঙচটা পোশাক দেখলো কি পড়া যায়। ফারিশ সচরাচর পাঞ্জাবি পড়ে না। কিন্তু আজ তার পাঞ্জাবি পড়তে ইচ্ছে করছে। একবার ভাবলো পড়বে। আবারও কোথাও গিয়ে বললো,“আজ থাক অন্য আরেকদিন।”
ফারিশ কফি কালার শার্ট বের করলো। সঙ্গে ছাইরঙা প্যান্ট। ফারিশ শার্ট প্যান্ট দুটো বিছানায় রাখতে রাখতে আবারও আওয়াজ বললো,“তুমি কি এখনো আসো নি আদিব?”
শুধু টাওয়াল গায়ে শীতে কাঁপতে থাকা আদিব বললো,“এই তো ভাই হয়েছে আসছি।”
ফারিশের রুমের উপরই ছাঁদ। নিচ থেকে জোরে আওয়াজ করে বললেই শোনা যায় সব। আশেপাশে আলাদা কোনো শোরগোল না থাকায় আরো সুবিধা হয় ব্যাপারটায়।’
ফারিশ শার্ট প্যান্ট পড়ে তৈরি। মাথার চুল চুইয়ে পানি পড়ছে। সে এলেমেলো ভাবে চুলগুলো ঠিক করলো। কপাল লেপ্টে পড়ে রইলো তা। ফারিশের এলোমেলো চুল রাখা বেশি পছন্দ। তাই বেশিভাগ ক্ষেত্রেই চুল এলেমেলো রাখে। দেখতেও দারুণ লাগে। ফারিশ আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে পরখ করলো। চোখের পাশের দাগটা নজরে আসলো প্রথমে। এই দাগটা কিভাবে লেগেছিল ফারিশের ঠিক মনে নেই। তবে আবছা আবছা মনে পড়ে খুব সম্ভবত ছোট বেলায় সে বাথরুমে পড়ে গিয়েছিল তখনই দাগটা হয়। ফারিশ হাত দিয়ে চোখের পাশের দাগটা একটু স্পর্শ করলো। হাতে ঘড়ি জড়ালো আজ। হাল্কা একটু পারফিউমও লাগালো। এরপরই ডাকলো,“আদিব হয়েছে তোমার?”
আদিব এসে দাঁড়ালো দরজার মুখে। হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো,“জি ভাই।”
ফারিশ পিছন ঘুরলো। কালো প্যান্ট আর কালো টিশার্ট জড়িয়েছে আদিব। ফারিশ হতাশার নিশ্বাস ছাড়লো। বললো,“তুমি এইভাবে যাবে আদিব?”
আদিব অবাক হয়ে বললো,“কেন ভাই? এইভাবে কি সমস্যা?”
ফারিশ জবাব দিলো না। অতঃপর নিজেই আদিবকে সাজালো। কালো স্যুটব্যুট পড়িয়েছে ফারিশ। গলায় সাদা শার্টের ওপর কালো টাই। চুলগুলোও সুন্দর মতো সাজিয়ে দিলো। একদম পাক্কা বিজনেস ম্যানের মতো দেখাচ্ছে আদিবকে। ফারিশের চেয়ে আদিবের গায়ের রঙ ফর্সা। চোখদুটো বাচ্চাদের মতো মায়া ভরা। আদিব গায়ে গাতোরে বড় হলেও ফারিশের কাছে আদিবকে এখনও বাচ্চাদের মতো লাগে। সেই ছোট্ট তুলতুলে আদিব এখনও কেমন ভয় পেলে ফারিশের হাত জড়িয়ে ধরে কাঁদে। ফারিশ মৃদু হাসলো। বললো,“আজ ভাবিকে না মানিয়ে কিন্তু ফিরবো না আদিব।”
উত্তরে আদিব লাজুক হাসলো। ফারিশের ঠোঁটে হাসি দেখা গেল তার পরপরই।’
—-
ঘড়ির কাটা তড়তড় করে বাড়ছে। আদ্রিতা তার জর্জেট শাড়ি সামলাতে সামলাতে ব্যর্থ। আদ্রিতা সচরাচর শাড়ি পড়ে না। কিন্তু আজ স্পেশালি ফারিশের জন্য শাড়ি পড়েছে। শাড়ির গোলাপি রঙটা তার গায়ে মুক্তার মতো ফুটে উঠেছে। বাম হাতে পড়েছে ফারিশের দেয়া একডজন কাঁচের চুড়ি রিনিকঝিনিক শব্দ করছে তা। ডান হাতে ছোট্ট একটা কালো ওয়াচ। চুলগুলো খোলা। আদ্রিতা বরাবরই সিম্পল ছাম্পেল থাকতে পছন্দ করে কিন্তু আজ একটু সেজেছে। চোখে গাড়ো কাজল লাগিয়ে ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিকে দারুণ দেখাচ্ছে। আয়নায় নিজেই নিজেকে দেখে মুগ্ধ হচ্ছে। আদ্রিতার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে এখানে সে ফারিশের জন্য সাজছে। আপনাআপনি হেঁসে উঠলো আদ্রিতা। দারুণ লজ্জা লাগছে তার। আজ ফারিশ নিশ্চয়ই তাকে দেখে মুগ্ধ হবে অনেকটা। শেষ বারের মতো আয়নায় নিজেকে দেখে কাঁধে ছোট্ট ব্যাগ ঝুলালো। ফোনটা নিয়ে মাকে উচ্চ আওয়াজে বললো,“আমি আসছি মা।”
আদ্রিতা ঘর থেকে বের হলো। রুমে রাফিন আর মা তাকে দেখেই মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো। কিছু বলার আগেই আদ্রিতা বেরিয়ে পড়েছে। আদ্রিতা রিকশা ডাকলো। এরই মাঝে তার ফোন বাজলো তাকে জানানো হলো ইমারজেন্সি হসপিটালে যেতে হবে।’
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে সবটা জানার জন্য]
#TanjiL_Mim♥️.