তুমিময়_প্রাপ্তি🍁 #পর্ব_১১ #মেহরিন_রিম

0
448

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১১
#মেহরিন_রিম
আদৃত অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে যায় যখন ইশা কে সেই একই শাড়ি পরে একইভাবে নাচতে দেখে। তারমানে এই কদিনে তার মাথার মধ্যে শুধু ইশাই ঘুরপাক খাচ্ছিল? ইশাকে দেখার জন্য সে রোজ ছাঁদে গিয়ে অপেক্ষা করতো! এমনি হাজারো প্রশ্নতে জর্জরিত হলো আদৃতের মন। তবে এরই মাঝে তার স্থির দৃষ্টি নিমজ্জিত রয়েছে ইশার পানে। আশেপাশের এত কোলাহলের মাঝেও তার মাঝে এক অদ্ভুত অনুভূতি বাসা বাঁধছে। এক নাম না জানা অনুভূতি,যেই অনুভূতি এর আগে কখনো হয়নি। সবার করতালির আওয়াজে চিন্তা ভঙ্গ হয় আদৃতের, ফিরে আসে বাস্তবে। আর এক মুহূর্তও এখানে থাকা সম্ভব নয় তার পক্ষে, চেয়ার থেকে উঠে দ্রুতগতিতে পা বাড়িয়ে একটা ফাঁকা যায়গায় চলে যায় আদৃত। ঘনঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজের অশান্ত মনকে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে সে। কেন হচ্ছে এমন? এই অদ্ভুত অনুভূতির অর্থই বা কি?

___
প্রোগ্রাম শেষ হতে এখনো অনেকটা সময় বাকি। তবে ফাইজা আর এখানে থাকতে চাইছে না, ইশার কথায় এতক্ষন থাকলেও এখন আর পারছে না। ইশাকে কোনোরকম মানিয়ে কলেজ থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয় ফাইজা। তখন ই পিছন থেকে কেউ বলে ওঠে,
_ফাইজা দাড়াও….

নিজের হাতে থাকা ব্যাগটা খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয় ফাইজা। কণ্ঠটা যে পূর্নর এটা বুঝতে সময় লাগেনি তার।এই কণ্ঠস্বর তার অতি পরিচিত,একটা সময় এই কণ্ঠ শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকতো সে। আর এখন, হাহ এখন সেই কণ্ঠই তার কাছে সবচেয়ে অস্বস্তিজনক লাগছে। পিছনে তাকালো না ফাইজা, নিজের জায়গায় স্থির থেকেই উত্তর দিলো,
_জি বলুন।

ফাইজার মুখে আপনি সম্বোধন শুনে খুব বেশি অবাক হলোনা পূর্ন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
_ফাইজা…ফাইজা আই এম সরি।

চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো ফাইজার। তবুও নিজের কণ্ঠ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল,
_স সরি কেন?

_দেখো সেদিনের বিহেভিয়ার এর জন্য আমি আসলেই দুঃখিত। ওভাবে রিয়েক্ট করাটা আমার উচিৎ…

_ভুল কিছুতো বলেন নি আপনি,আমার মতো মেয়ের সাথে ওর চেয়ে ভালো আচরণ করাও যায়না।

ফাইজার কণ্ঠে অভিমান স্পষ্ট। পূর্ন কোনো প্রতিত্তর দেওয়ার ভাষা খুজে পেলোনা। ফাইজা আবারো বলল,
_আর কিছু বলবেন আপনি?

পূর্ন কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,
_না..

_ঠিক আছে।

কথাটা বলেই ফাইজা ছুটে বেরিয়ে গেল কলেজ থেকে। নিজের চোখের জল সে কাউকে দেখাতে চায়না, পূর্নকে তো একদমই না। যার কাছে এই চোখের জলের কোনো মূল্যই নেই, ফাইজার মতে তাকে এই চোখের জল দেখানোর কোনো মানেই হয়না।

পূর্ন একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো। ফাইজার এমন আচরণের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পূর্নর এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে দু বছর আগের সেই দিনের কথা। তখন ফাইজার সদ্য ভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছে আর পূর্ন মাস্টার্স এর ফাইনাল এক্সাম দিবে।

“””
_কি হচ্ছে টা কি ফাইজা? বললাম তো আমাকে ফলো করা বন্ধ করো। আমার কথা শুনতে চাওনা কেন তুমি?

পূর্নর এমন কথায় ফাইজার মাঝে তেমন কোনো ভাবান্তর দেখা গেলোনা। সে আপনমনে পূর্নর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
_বিকজ আই লাভ ইউ..

_বাট আই ডোন্ট লাভ ইউ। এন্ড ইউ হ্যাভ টু নো দ্যাট।

_তুমি বললেই কি আমার মেনে নিতে হবে নাকি?

পুর্নর আগে থেকেই মাথা গরম ছিল তার উপর ফাইজার কারণে মেজাজ টা আরো বিগড়ে যেতে লাগলো। পূর্ন কোনো উত্তর না দিয়ে ফাইজার পাশ থেকে সামনের দিকে হাটা শুরু করলো। ফাইজাও তার পাশে হাটতে হাটতে বললো,
_তুমি যদি আমাকে ভালোই না বাসো তাহলে আমাকে তুমি করে বলো কেন শুনি। তার মানে আমি বাকিদের থেকে স্পেশাল আর…

_কথা একবার বললে কানে যায়না তোমার?
পূর্নর ধমকে খানিকটা কেপে ওঠে ফাইজা। পূর্ন এবার বলতে শুরু করে,
_তোমার মতো মেয়ে না আমি জীবনে দুটো দেখিনি। একটি ভালো করে কথা বলেছি কিনা তাতেই ভেবে নিলে আমি তোমাকে ভালোবাসি। হাউ ফানি! অবশ্য তোমার মতো মেয়ের থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশাও করা যায়না বোধ হয়। আগেও নিশ্চই অভ্যাস আছে ছেলেদের পিছনে ঘুড়ে বেড়ানোর? নাহলে তো আমার পিছনে এমন আঠার মতো চিপকে থাকতে পারতে না। ভালোভাবে বলেছিলাম তোমাকে,শুনলে না তো। এবার লাস্ট বারের মতো বলছি, আমার পিছনে একদম ঘুরঘুর করবে না। অসহ্য লাগে আমার।

কথাটা বলেই সেখান থেকে হনহন করে চলে যায় পূর্ন। আর ফাইজা সেই একই জায়গায় পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে। আশেপাশের মানুষ তার দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন কথা বলে চলেছে। সেই মুহূর্তে কষ্টে,লজ্জায় যেন মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছিল ফাইজার। আশেপাশে একনজর তাকিয়ে এলোমেলো পায়ে সেই স্থান ত্যাগ করে ফাইজা।

“””
আর ভাবতে চাইলো না পূর্ন। সেদিনের এই কঠিন কথাগুলো বলতে যে পূর্নর কতটা কষ্ট হয়েছিল সেটা হয়তো ফাইজা কখনো জানতেও পারবেনা,পূর্ন জানাতেও চায়না। সে শুধু চায় ফাইজা নিজের জীবনে এগিয়ে যাক, নতুন করে সবকিছু শুরু করুক।

_কিরে তুই দারিয়ে আছিস কেন? আর আদি কোথায়?

সায়ান এর কথায় তার দিকে তাকায় পূর্ন। সায়ান ফোনের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছে। পূর্ন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
_ফোন করে দেখ।

_ফোনে পেলে কি আর তোকে জিজ্ঞেস করতাম? ফোনটাও তো বন্ধ করে রেখেছে।

_ওকে তো চিনিস ই, দেখ গিয়ে হয়তো বাসায় চলে গেছে আর নাহলে অফিসে।

_তাই হবে হয়তো। আচ্ছা তাহলে তুই চল আমার সঙ্গে।

_তুই যা,আমার কিছু কাজ আছে আমি পড়ে আসবো।

_ঠিক আছে রাতে আসিস কিন্তু। আম্মু তোকে আসতে বলছে,আদিকেও নিয়ে আসিস।

_হুম।

____
_আপুর কি হয়েছে আম্মু? শরীর খারাপ লাগছে বলে যে তাড়াতাড়ি চলে এলো।

বাড়িতে এসেই রুকসানার কাছে গিয়ে কথাগুলো বলল ইশা। রুকসানা সোফায় বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
_ফাইজা তো এসেই নিজের ঘরে চলে গেলো। তুই গিয়ে একটু দেখতো, কে জানে মেয়েটার আবার কি হলো।

_আচ্ছা আমি একটু ফ্রেশ হয়ে তারপর দেখছি।
কথাটা বলে নিজের ঘরে ফ্রেশ হতে চলে গেলো ইশা।

প্রায় এক ঘণ্টা যাবৎ শাওয়ার এর নিচে বসে আছে ফাইজা। চোখের অশ্রুগুলো পানির সাথে মিশে যাচ্ছে। ফাইজার মনে শুধু একটা কথাই ঘুরছে,
_কার জন্য কষ্ট পাচ্ছি আমি,কার জন্যই বা কাঁদছি? যেই মানুষটার কাছে আমার কোনো দামই নেই তার জন্য?

অনেক চেষ্টা করছে ফাইজা নিজের কান্না আটকানোর। তবুও বারংবার সে ব্যার্থ হচ্ছে। যেই মানুষটার থেকে দূড়ে সরে থাকতে চাইছে,সেই মানুষটা কেন তার সামনে এল?

_আপু? তুমি কি ওয়াশরুম এ? ঠিক আছো তুমি?

ইশার ডাকে হুশ ফেরে ফাইজার। নিজের কণ্ঠ স্বাভাবিক রেখে উত্তর দেয়।
_হ্যা ইশা,আমি ঠিক আছি।

_আচ্ছা তুমি বের হও,অনেক ছবি দেখানো বাকি আছে।

কথাটা বলেই খাটে গিয়ে বসলো ইশা। ফাইজা এবার দূর্বল পায়ে উঠে দাঁড়াল। মনকে স্থির করার চেষ্টা করলো সে। পূর্ণ কেবলই তার অতীত,তার জন্য সে একটুও কষ্ট পাবেনা। একটুও না।

#চলবে

[সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।
হ্যাপি রিডিং।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here