লুকোচুরি_গল্প #পর্ব_৩৪ #ইশরাত_জাহান

0
260

#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_৩৪
#ইশরাত_জাহান
🦋
দুপুরের খাবার খেয়ে মাত্র বসেছে রিক ও কেয়া।এখন আর কেয়া রিকের সাথে কথা বলতে লজ্জা পায় না।রিক ও কেয়া মিলে একসাথে গল্প করতে থাকে।তখনই কল আসে নীরার।কেয়া রিসিভ করতেই নীরা বলে,”শোন শাকচুন্নি! বরের কোল ছেড়ে এবার আমার শ্বশুর বাড়িতে আয়।আমার ননদের বিয়ে ঠিক হয়েছে।”

কেয়া চশমায় হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে বলে,”নীরব ভাইয়ের কি হবে তাহলে?ভাইয়া না আপুকে অনেক ভালোবাসে?”

নীরা কপাল চাপড়ে বলে,”ওরে আমার ননদ আর আমার ভাইয়ের বিয়ের কথাটাই বলছি।তুই আর কমলালেবু(রিক) তাড়াতাড়ি চলে আয় তো।”

“আচ্ছা দোস্ত আমি ওর সাথে কথা বলে আসছি।”

“আমি হলে ক্যাডার সাহেবের হাত ধরে টেনে নিয়ে আসতাম।বরকে টাইট দিতে শেখ।”

টিটকিরি মেরে কেয়া বলে,”হ্যাঁ আর তোমার জামাই কি করতো?তোমাকে কোলে করে ঘরে নিয়ে আসতো।”

“ওটাকে ভালোবাসা বলে। মাই ক্যাডার সাহেব ইজ দা বেস্ট হাসব্যান্ড।তাড়াতাড়ি আয়।”

বলেই কল কাটে নীরা।কেয়া রিকের সাথে কথা বলে চলে যায় দ্বীপের বাসায় সাথে করে রিকের মাকেও নিয়ে যায়।মিসেস নাজনীন রিকের মায়ের সাথে সোফায় বসে সবকিছু বলতে থাকেন।রিক দ্বীপ আর নীরব অভ্রকে নিয়ে গল্প করছে।কেয়া নীরা ও দীপান্বিতা তাদের ঘরে বসে আছে।এখন বড়রা মিলে বিয়ের তারিখ ঠিক করবে।তাই সবাইকে ডাকা।

সোফায় বসে আছে বড়রা সবাই।দীপান্বিতা ঘরে ছিলো নীরা টেনে নিয়ে এসেছে।ড্রয়িং রুমের সাথে খাবার টেবিল।সেখানে বসে মেয়েরা আলাপ শুনছে।পুরুষ মানুষ সাথে দ্বীপ ও রিক বসেছে সোফায়।মিস্টার সমুদ্র বলেন,”সামনে তো রোজা।আপনাদের কি ইচ্ছা রোজার ঈদ শেষ করে বিয়ে দেওয়ার?”

দ্বীপ বলে ওঠে,”এত দেরি করার কি দরকার?অলরেডি এদের রিলেশনশিপ গেপ ছিলো অনেক।তাই আমার মনে হয় এদের বিয়ে তাড়াতাড়ি দেওয়াই ভালো।”

মিস্টার সমুদ্র বলেন,”শুভ কাজে দেরি করতে নেই।আমরা তাহলে কবে থেকে বিয়ের আয়োজন শুরু করবো?”

বাবার কথার উত্তরে দ্বীপ বলে,”আমরা কাল থেকেই আয়োজন শুরু করি।এই মাসের মধ্যেই বিয়ে দেওয়ার ব্যাবস্থা করলেই ভালো হয়।আমার আপাতত কলেজের প্রেসার নেই।”

নীরা আপত্তি জানিয়ে বলে,”কিন্তু এই মাসে তো হাতে গোনা দশ বারোদিন আছে।কিভাবে কি করবো?”

“আমরা সবাই আছি তো।ম্যানেজ হয়ে যাবে।এই মাসের মধ্যে বোনের বিয়ে হলে আমিও একটু শান্তিতে বোনের বিয়ে ইনজয় করতে পারব।”

সবাই খুশি হয়ে দ্বীপের কথাতে রাজি হলো। কালকে থেকেই কেনাকাটা শুরু করবে।লোকজন ডাকবে।তারপর ধুমধাম করে বিয়ে হবে দীপান্বিতা ও নীরবের।নীরা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো দ্বীপের দিকে।কিন্তু এত লোকজনের ভিতর কিছু বললো না।

রাতের খাবার শেষ করে নীরা ঘরে এসে দ্বীপকে বলে,”সত্যি করে বলুন!”

দ্বীপ নীরার দিকে তাকিয়ে বলে,”কি?”

“এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার কারণ কি?”

“কি আবার?বোনের সংসার তাড়াতাড়ি হবে।”

“আমাকে কি খুকি মনে হয়?”

“কিছুতেই না।তুমি তো আমার খোকন খুকির মা।”

“ইয়ার্কি ছাড়েন।বিয়েটা এত তাড়াতাড়ি কেন?আপনি জানেন আমি একটু পার্লারে যেতে চেয়েছিলাম।আপনার জন্য পারতেছি না।এত তাড়াতাড়ি বিয়েতে কি করবো?”

“আমার বউকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সুন্দর লাগে।”

“টাকা বাঁচানোর ধান্দা। কিপ্টা জামাই আমার।”

“মাসে মাসে যে হাজার টাকার জিনিস এনে দেই তা চোখে পড়ে না?চুপচাপ কোনো কথা না বলে বিয়ে ইনজয় করো।”

নীরা এসে দ্বীপের কলে বসে।বলে,”নিজের বউ বাচ্চাকে সুরক্ষিত রাখতে কত চেষ্টা আমার ক্যাডার সাহেবের।”

“বুঝতে পেরেছো তাহলে?”

“কেনো বুঝবো না?আমার ক্যাডার সাহেব আমাকে ভালোবাসে।এটা জানার পর থেকে আমার ক্যাডার সাহেবের মন পড়তে শুরু করেছি।”

বলেই নীরা দ্বীপের চোখ থেকে চশমা খুলে নেয়।চশমা পাশের টেবিলে রেখে বলে,”কয়েকমাস পর থেকে আমাকে আরো সচেতন হতে হবে।লাফালাফি করা যাবে না।ভারী কিছু নেওয়া যাবে না তাই আপনি তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে ফেলতে চান।”

দ্বীপ ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে।বলে,”আমার চুনু মুনুদের মায়ের দেখছি চুনু মুনু আসার আগমনে বুদ্ধির আগমন করেছে।”

“হে হে হে।”ভেংচি হাসি দেয় নীরা।

_____
আজ নীরব ও দীপান্বিতার বিয়ের জন্য কেনাকাটা করতে যাবে একসাথে পুরো পরিবার।শনিবার হলেও কলেজে যেতে হবে দ্বীপের।যাওয়ার আগে বারবার নীরাকে বলেছে,”তুমি যেনো মার্কেটে যাবে না।আমি এসে নিয়ে যাবো।রিস্ক নেওয়ার কোনো দরকার নেই।”

নীরা মুখ গোমড়া করে বলে,”বাহ!আমার ভাই আর ননদের বিয়ে আমি কিছু করবো না।আনন্দ করবো না আমি?”

“আনন্দ করবে তবে এখন বুঝেশুনে।বাবুদের আগমনটাও তো বুঝতে হবে।”
বলেই নীরার গালে হাত দিয়ে নীরার দিকে তাকায় দ্বীপ।নীরা আলতো হেসে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে বলে,”ঠিক আছে আমি ওদের সাথে যাবো না।কিন্তু আপনি কলেজ থেকে এসে আমাকে নিয়ে যাবেন।”

“আচ্ছা,ঠিক আছে। দাদীন আছে বাসায়।কিছু লাগলে ডাক দিও।পারলে তুমি দাদীনের সাথে বসেই গল্প করবে।”

“হুম।”
দ্বীপ নীরার কপালে ভালোবাসা দিয়ে বিদায় নেয়।সবাই মিলে কিছুক্ষণ পর বের হবে।দুপুরে সবাই বাইরে খাবে।নীরার জন্য মিসেস সাবিনা রান্না করে রেখেছেন।

______
দ্বীপ কলেজে থেকে এসেছে।নীরা সাথে সাথে দ্বীপকে জড়িয়ে বলে,”মিস ইউ,ক্যাডার সাহেব।”

দ্বীপ নীরাকে আগলে বলে,”মিস মাই চন্দ্রপাখি অ্যান্ড মাই চুনু মুনু।”
বলেই নীরাকে নিয়ে ঘরে যায়।দ্বীপ গোসল করে বাইরের যাওয়ার ড্রেস পরেই নীরার সাথে দুপুরের খাবার খায়।মিসেস সাবিনা এখন ঝাল মশলা অল্প দিয়ে রান্না করেন।নীরার যেনো গ্যাসের সমস্যা না হয় আর শরীরে পুষ্টি বেশি বেশি থাকে তাই।দ্বীপ নীরার সাথে সেই খাবারটি খাচ্ছে।নীরা বলে,”মামণি তো ফ্রিজে মাংস রেখেছে।আমি গরম করে দেই?”

দ্বীপ নীরার হাত ধরে আটকে বলে,”কোনো দরকার নেই।আমার বউ যদি মা হওয়ায় এত কষ্ট করে আমি কেনো বাবা হওয়ায় কষ্ট করবো না?”

নীরা মিষ্টি এক হাসি দেয়।দ্বীপ নিজেও খাচ্ছে নীরাকেও খাইয়ে দিচ্ছে।খাওয়া দাওয়ার পর দ্বীপ নীরাকে নিয়ে চলে যায় শপিং মলে।শপিং করার ভিতরে দ্বীপ নীরাকে নিয়ে এক কর্নারে আসে।ওখানে বাচ্চাদের জিনিসপত্র বিক্রি হয়।সেখান থেকে ঘোরাঘুরি করে অনেক কিছু দেখতে থাকে দ্বীপ ও নীরা।অভ্রর জন্য কিছু খেলনা আর দুইটি বাবুর ছবি কিনে নেয়।একটি ছবি মেয়ে বাবুর আরেকটি ছবি ছেলে বাবুর।মিসেস শিউলি বলেছেন,”ঘরে বাচ্চাদের ছবি টাঙাইয়া ওই ছবি সারাদিন দেখবা।তোমার বাচ্চাটাও ওরকম সুন্দর হইবো।”

দ্বীপ কথাটি না মানলেও নীরার খুব ভালো লাগে কথাটি।নীরা বলে,”আমার ওমন বাবুর দরকার নেই।আল্লাহ যেমন দিবে তাতেই খুশি।কিন্তু আমি এমনিতেই ঘরে বাবুর ছবি চাই।ওদের দেখলে আমি অনুভব করবো যে আমাদের চুনু মুনু আমার গর্ভে আছে।এমনিতেও ওরা আমাকে উষ্টা দিয়ে উগান্ডায় পাঠাবে।কিন্তু তারপরও আমি চাই বাবুদের ছবি।”

নীরার আবদার দ্বীপ না করতে পারে না।তাই নীরাকে নিয়ে বেবী শপ থেকে কিনে দেয় বাবুদের ছবি।

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here