#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৫ (বোনাস পর্ব)
#মেহরিন_রিম
_আমি না গেলে হয়না ইশা?
আয়নার দিকে তাকিয়ে চুল বাধছিল ইশা। তখন ই পিছন থেকে ফাইজা এসে তাকে এই প্রশ্ন করে। চুলে বেণী করা শেষ হলে ইশা ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলে,
_তুমি না গেলে আম্মুকে মানাতে ঝামেলা হয়ে যাবেতো আপু। কেন তোমার কোনো কাজ আছে?
_হ্যা রে একটু বই কিনতে যেতাম আরকি। আচ্ছা একটা কাজ করা যায়তো। মোহনা যখন যাবেই তাহলে তুই ওর সাথে ফিরে আসিস। আমরা একসাথে বের হবো তাহলে আর ছোট আম্মু কিছু বলবে না।
ইশা এসে ফাইজার গালদুটো টেনে দিয়ে হাসিমুখে বললো,
_উফ,এইজন্য তোমাকে আমি এত্ত ভালোবাসি জানোতো আপু। এত ভালো ভালো আইডিয়া তোমার মাথায় কি করে আসে বলতো।
_হয়েছে আর পাম দিতে হবেনা। কিন্তু দেখিস বোন, বেশি দেড়ি করিস না কিন্তু। তাহলে আবার ছোট আম্মু চিন্তা করতে পারে।
_আরে তুমি এসব নিয়ে ভেবোনা তো,আমি তাড়াতাড়ি ই চলে আসবো। এখন তুমি জলদি রেডি হয়ে এসো তো।
_জাস্ট পাঁচ মিনিট।
ফাইজা বেড়িয়ে যেতেই ইশা খাটে বসে পা নাড়াতে নাড়াতে ভাবতে লাগলো,
_কি এমন সারপ্রাইজ দেবে নিরব ভাইয়া? আবার বিদেশ টিদেশ চলে যাচ্ছে নাতো? না না, তাহলে তো তুই মিঙ্গেল হওয়ার আগেই সিঙ্গেল হয়ে যাবি ইশা! আচ্ছা আমিতো এমনিতেও সিঙ্গেল,যাই হোক সেটা বড় কথা নয়।
_ইশা আমি রেডি, নিচে আয়।
ফাইজার ডাকে ইশা উঠে দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিল এর সামনে গিয়ে নিজের বেণী টা সামনে এসে কিছুক্ষন দেখলো। তারপর উচ্চস্বর এ “আসছি” বলে নিচে চলে গেলো।
ইশা নিচে আসতেই রুকসানা নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে বললেন,
_কিরে কোথাও যাচ্ছিস তোরা?
ইশা ফাইজার দিকে একনজর তাকিয়ে বলল,
_হ্যা আম্মু,ঐ নিরব ভাইয়া বলেছে আমাদের ট্রিট দেবে তাই যাচ্ছি। ফাইজা আপুও যাচ্ছে আমার সাথে,আর মোহনাও যাবে।
রুকসানা বেগম আপত্তি করলেন না। সোফায় বসে বললেন,
_ঠিক আছে যা। আবার বেশি কিছু খেতে যাসনা। রাতে কাচ্চি রান্না করবো, বাহিরের খাবার খেয়ে গ্যাস্ট্রিক বাড়িয়ে আসলে কিন্তু আমার কোনো দোষ নেই।
_ঠিক আছে,ঠিক আছে।
_এই দাঁড়া,গাড়ি নিয়ে যা তোরা।
ইশা আর ফাইজা একে অপরের দিকে তাকালো। তারপর ইশা আপত্তি জানিয়ে বলল,
_না না আম্মু, এর সুন্দর বিকেলে গাড়ি নিয়ে বের হবো কেন? আমরা হেটেই যাবো আর নাহলে রিক্সার করে চলে যাবো।
_হ্যা ছোট আম্মু,আর গাড়ি নিয়ে যেতে হবেনা।
_ঠিক আছে তোদের ইচ্ছে।
ইশা আর ফাইজা একই সাথে বাইরে বেরিয়ে মোহনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। মোহনা এসে পৌঁছানোর পর ফাইজা বই কেনার উদ্দেশ্যে চলে গেল, অন্যদিকে ইশা আর মোহনা গেলো কলেজের উদ্দেশ্যে।
_ইশা,আমার না একটু ডাউট হচ্ছে।
ইশা ভ্রু কুঁচকে মোহনার দিকে তাকিয়ে বলল,
_কিসের ডাউট?
_নিরব ভাইয়াকে অনেকদিন ধরে দেখছি ফোনের মধ্যে ডুবে থাকতে,কেন তুই খেয়াল করিসনি।
_হ্যা করেছি তো?
_তো মানে? তুই কিছু আন্দাজ করতে পারছিস না?
ইশা যে একদমই কিছু আন্দাজ করেনি তা নয়। তবে নেগেটিভ চিন্তা থেকে দূড়ে থাকতে মোহনাকে একটা ঝাড়ি দিয়ে বলল,
_দেখ আমার আন্দাজ কখনো সঠিক হয়নি তাই আমি কিছু আন্দাজ করতেও যাবোনা। আর তুই এত নেগেটিভ ভাবছিস কেন বলতো, বি পজিটিভ ইয়ার..
_হ্যা তুমি থাকো তোমার চিন্তা নিয়ে।
ইশা ভেঙচি কেটে সামনের দিকে তাকিয়ে হাটতে লাগলো। মোহনার কথায় পাত্তা না দিলেও ইশা নিজেই অনেকটা আন্দাজ করতে পারছে নিরবের সারপ্রাইজ এর ব্যাপারে। সেসব ভাবলে এখনই মনটা খারাপ হয়ে যাবে তাই আর মাথা ঘামাতে চাইলো না ইশা। গেলেই বুঝতে পারবে কি সারপ্রাইজ নিরব এর।
___
বই পড়ার নেশাটা ফাইজার অনেক আগে থেকেই। মূলত পূর্নর থেকেই এই অভ্যাস আয়ত্ত করেছে সে। ভার্সিটিতে যাওয়ার পর থেকেই দেখতো পূর্ন যখন ই বসে থাকে কোথাও তখন ই তার হাতে একটা বই থাকবেই। বিশেষ করে গোয়েন্দা বিষয়ক থ্রিলার বই তার বেশ পছন্দ ছিল। ফাইজাও সেই থেকে বই পড়ার ভালোই অভ্যাস তৈরি করেছে, বিশেষ পূর্নকে ভোলার জন্য বই পড়াটা তার কাছে মেডিসিন এর মতো।
বুক শপ এ এসে অনেক খোজার পর নিজের কাঙ্ক্ষিত বইটি খুজে পেলো ফাইজা। তবে যখন ই বইটা নিতে যাবে তখনি পাশ থেকে আরো একটি হাত এসে পড়ে একই বই এর উপর। পাশ ফিরে তাকাতেই থমকে যায় ফাইজা।
পূর্ন ও এই বইয়ের উদ্দেশ্যেই এসেছিল এখানে। ফাইজা কে দেখে ও নিজেও বেশ অবাক হয়ে যায়। নিজেদের অজান্তেই একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে দুজন।
বেশ কিছুটা সময় পেড়িয়ে গেলো এভাবেই। হঠাৎ পাশ থেকে কারোর আওয়াযে ধ্যান ভাঙলো দুজনের।
_আপু,ভাইয়া আপনারা কেউকি বইটা নিবেন? নাহলে আমি এটা নিতাম আরকি।
চমকে ওঠে দুজন, ঝড়ের বেগে হাত সরিয়ে কিছুটা দূড়ে সরে যায় ফাইজা। পূর্নও বইয়ের উপর থেকে হাতটা সরিয়ে নেয়। তাদের দুজনের থেকে উত্তর না পেয়ে তৃতীয় ব্যাক্তিটি ই বইটি নিয়ে যায়।
____
অফিস থেকে বেড়িয়ে পাশের একটা কফিশপে বসে কফি খাচ্ছিল আদৃত,মাথার মধ্যে তার এখনো ইশার চিন্তাই ঘুড়ে বেরাচ্ছে। বিল দেওয়ার জন্য সামনে থাকা লোকটিকে ডাকতে যাবে তখনি আদৃতের চোখ যায় অপর পাশের একটা টেবিলের দিকে। খেয়াল করে দেখে বুঝতে পারে সেখানে নিরব একটা মেয়েকে নিয়ে বসে আছে,বেশ হেসে হেসে কথা বলছে তারা। তাদের দেখে যে কেউ বলবে যে তারা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড। আদৃত এই নিয়ে ভাবতে চাইলো না। বিলটা দিয়ে বেড়িয়ে যাবে তখনি তাদের কিছু কথা কানে আসে আদৃতের। বুঝতে পারে নিরব এখন মেয়েটাকে নিয়ে কলেজে যাবে বন্ধুদের সাথে আলাপ করাতে।
আদৃত বেড়িয়ে এলো কফিশপ থেকে। কেন যেন মনে হলো ইশাও সেখানে আসবে। কিছু একটা ভেবে বাইক নিয়ে কলেজের দিকে গেলো আদৃত।
তার কিছুক্ষন এর মধ্যেই নিরব ও সেই মেয়েটিকে নিয়ে বেড়িয়ে যায় কফিশপ থেকে।
___
কলেজে এসে বেশ কিছুক্ষন ধরে নিরব এর জন্য অপেক্ষা করছে ইশা,মোহনা সহ নিরবের আরো দু তিনজন বন্ধু।
তাদের কথা শুনে এতক্ষনে ইশা বেশ ভালোই আন্দাজ করতে পারছে যে তার নেগেটিভ ভাবনাটা সত্যি হলেও হয়ে যেতে পারে। ইশা বেশ মনমরা হয়ে বসে আছে আর মোহনা তাকে বিভিন্ন কথা বলে তার মন ভালো করার চেষ্টা করে চলেছে।
যেই ভাবনা নিয়ে ভয় পাচ্ছিল সেটাই সত্যি হলো। একটা মেয়ের হাত ধরে কলেজে ঢুকলো নিরব। মেয়েটাকে আগেও দেখেছে ইশা। পাশের কলেজেই ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার এ পড়ে মেয়েটা। নিরব সবার নিকট মেয়েটাকে নিজের গার্লফ্রেন্ড বলে পরিচয় করিয়ে দিলো নিরব। সবাই ট্রিট দেওয়ার জন্য নিরব কে জোড় করতেই নিরব বলে উঠলো,
_আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে খাওয়াবো। এই ইশা? কি হয়েছে তোর,চুপ করে আছিস যে?
মোহনা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ইশার মনের অবস্থাটা। ইশা অনেক কষ্টে নিজের কান্না আটকে বললো,
_কই না তো, আচ্ছা আম্মু না আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে বলছে। আমার ট্রিটটা নাহয় অন্যদিন নিয়ে নেবো কেমন।
কথাটা বলে ইশা সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে মোহনাও তার সঙ্গে চলে এলো সেখান থেকে। অন্যদিকে এতক্ষন ধরে সবটাই দূর থেকে দেখছিলো আদৃত। ইশা কলেজ থেকে বেড়িয়ে যেতেই আদৃত ও বেড়িয়ে আসে কলেজ থেকে।
#চলবে
[রিচেক করতে পারিনি তাই বানান এ ভুল থাকতে পারে। অনেকেই বোনাস পার্ট চেয়েছেন তাই অনেক কম সময়ে লিখে দিলাম। আশা করি আপনারা নিজেদের মতামত জানাবেন।]