#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৬
#মেহরিন_রিম
পূর্ন তাকিয়ে দেখলো বইটার আরো একটা কপি আছে সেখানে। ফাইজা চলে যেতে নিলেই সে পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলল,
_তুমি নিয়ে যাও বইটা, আমি অন্য সময় এসে নেবো নাহয়।
ফাইজা থমথমে গলায় বলল,
_দ দরকার নেই,আপনি নিয়ে যান।
পূর্ন ফাইজা সামনে এসে বইটা ওর হাতে দিয়ে বলে,
_তুমি না নিলেও এটা আমি এখন নেবোনা। তাই বলছি নিয়ে যাও।
ফাইজা পূর্নর হাতে আবার বইটা দিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
_বললাম তো আমার দরকার নেই। আপনার নেওয়ার হলে নিন,নাহলে রেখে যান।
কথাটা বলে ফাইজা পাশ থেকে চলে যেতে নিলে পূর্ন নিজের স্থানে স্থির থেকে বলে,
_কারণ টা কি আমি?
কথাটা বলেই পিছনে ঘুরে তাকায় পূর্ন। ফাইজা সামান্য ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,
_আপনি আমার কাছে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ মানুষ নন, তাই এমনটা ভাবার কোনো মানেই হয়না।
ফাইজা বেড়িয়ে যায় সেখান থেকে, আর পূর্ন একদৃষ্টিতে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। ফাইজার এমন কঠোর রূপের সাথে সে মোটেই পরিচিত নয়। এই ফাইজা কে বড্ড অপরিচিত মনে হচ্ছে তার। তাচ্ছিল্যের সূরে শব্দহীন হাসে পূর্ন। মনে মনে ভাবে,
_এমন টাই তো চেয়েছিলাম আমি, আমার উদ্দেশ্যে আমি সফল। তবুও কেন ওর এমন ব্যবহার আমার মনে কষ্টের সৃষ্টি করছে? হাহ, বাস্তবতা বড্ড কঠিন।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে পূর্ণ। হাতে থাকা বইটা রাখতে গিয়েও রাখলোনা । ফাইজা যে এই বই এ জীবনে আর কিনবেনা সেটা ভালো করেই বোঝা হয়ায়ে গেছে তার, তাই বইটা নিজেই নিয়ে নিলো সে।
__
কলেজ থেকে বেড়িয়েই রিক্সায় উঠে পড়লো ইশা আর মোহনা। ইশা মুখে কিছুই বলছে না, কেবলই তার চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। মোহনা তাকে শান্ত করার জন্য বলল,
_ইশা আমি তোকে আগেই বলেছিলাম, তেমনটাই হলো। আর তুই নিরব ভাইয়া জন্য কাঁদছিস? ও তো তোকে কখনো ভালোই বাসেনি।
_কিন্তু আমিতো বেসেছিলাম মেহু, তুই আমার দিকটা বুঝতেই পারছিস না।
_বুঝতে পারছি আমি, কিন্তু এখন একটা ছেলের জন্য কেঁদেকেটে অসুস্থ হওয়ার কোনো মানেই হয়না ইশা। আন্টি যদি বুঝতে পারে তখন কি বলবি তুই?
ইশা চুপ করে রইলো। মোহনা রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলল,
_মামা এখানেই দাড়ান। ইশা আমার একটু ফুফির বাসায় যেতে হবে। আমি এখানেই নেমে যাই,তুই চলে যা বাসায়।
ইশা চোখের জলটুকু হাত দিয়ে মুছে বলল,
_আমি একা রিক্সায় যাবোনা। আমিও নেমে যাই এখানে, হেটে চলে যাবো।
মোহনা আর ইশা সেখানেই নেমে গেলো। মোহনা ইশাকে বুঝিয়ে ওর ফুফির বাসার দিকে চলে গেলো। একদম আশ্রমের সামনেই নেমেছে তারা। ইশা সেদিকে তাকিয়েই দেখতে পেলো আয়শা আশ্রমের উঠোনে একটা চেয়ারে বসে রয়েছেন। এই কদিনে আয়শার সঙ্গে বেশ ভালোই সখ্যতা গড়ে উঠেছে ইশার। ইশা অনেক সময়ই তার সঙ্গে এসে গল্প করে, আয়শার ও ইশার সঙ্গে কথা বলতে খুব ভালো লাগে।
ইশা মন খারাপ করেই আশ্রমের দিকে যেতে লাগলো। অন্যদিকে আদৃত ও ওদের ফলো করে এদিকেই আসছিল, সে এর আগেও দেখেছে ইশাকে এই আশ্রমের দিকে যেতে। আদৃতের জানতে ইচ্ছে করলো ইশা কি করতে যাচ্ছে এখানে,তাই সে বাইক নিয়ে কিছুটা আড়াল থেকে ইশার দিকে নজর রাখলো।
আয়শা আশ্রমের গেইটের পাশে একটা চেয়ারে বসে চোখে চশমা পরে কাথা সেলাই করছিলেন। ইশা তার পাশে এসে মুখ গোমড়া করে আরেকটা চেয়ারে বসে পরে।
ঘাড় ঘুরিয়ে ইশাকে দেখেই আয়শার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তবে পরক্ষণেই তার গোমড়া মুখ থেকে অবাক হয় আয়শা, ইশাকে সবসময় সে হাসিখুশি থাকতে দেখেছে কখনো এমন মন খারাপ করে থাকতে দেখেনি। আয়শা কাথাটা পাশে রেখে ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
_কি হয়েছে ইশা? মন খারাপ করে আছিস কেন? পরীক্ষা ভালো হয়নি বুঝি?
ইশা টলমলে চোখে একবার আয়শার দিকে তাকায়। তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। ইশার কান্না দেখে আয়শা অবাক হয়ে যায়। ইশার মুখটা দুহাতে ধরে সামনে এনে বলে,
_কি হয়েছে মা,কাঁদছিস কেন? না বললে আমি বুঝবো কি করে? বাড়িতে মা বকেছে?
ইশা মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। আয়শা ইশার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলেন,
_তাহলে?
ইশা নিজের কান্না নিয়ন্ত্রনে এনে সবটা খুলে বলে আয়শা কে। সবটা শোনার পর আয়শা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
_আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন মা। হয়তো ছেলেটা তোর জন্য ভালো ছিলোনা তাই তুই তাকে পাসনি, তুই ওর চেয়ে আরো অনেক ভালো ছেলে পাবে নিজের জীবনে।
_কিন্তু আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে আন্টিমনি।
_এগুলো ক্ষনিকের কষ্ট মা, তুই বরং ওকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা কর। দেখবি তখন আর কষ্ট হবেনা ওর জন্য। দেখবি, তোর জীবনে একদম রাজপুত্রের মতো ছেলে আসবে।
আরো কিছুক্ষন আয়শার সঙ্গে কথা বলল ইশা। আদৃত তাদের সব কথাই আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনছে। ইশাকে এভাবে কাঁদতে দেখে তার মোটেই ভালো লাগছে না। ইশার মুড ঠিক করার কথা ভেবে আদৃত রাস্তার পাশে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
ইশা নিজের চোখ মুছে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই সামনে আদৃত কে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন চালাতে দেখতে পেলো। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
_আপনি এখানে?
আদৃত ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ইশার দিকে তাকালো। তারপর নিজের ফোনটা পকেটে রেখে তার সামনে গিয়ে বলল,
_কেন? রাস্তাটা কি তোমার কেনা নাকি?
অন্য সময় হলে হয়তো ইশা রেগে গিয়ে ঝগড়া শুরু করে দিতো,আদৃত ও তেমনটাই ভেবেছিল। কিন্তু বর্তমানে ঝগড়া করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ইশার নেই। তাই সে কিছু না বলেই চলে যেতে নেয়। আদৃর বেশ অবাক হয়, ইশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
_কি ব্যাপার,ঝগড়া করলে না যে? নাকি শোকে কাতর হয়ে ঝগড়া করতেই ভুলে গেছো?
আদৃতের কথা শুনে ইশা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল,
_আপনি এতক্ষন আমার কথা শুনছিলেন?
থতমত খেয়ে গেলো আদৃত। তবে সেটা প্রকাশ না করে ইশার সামনে গিয়ে বলল,
_তোমার কথা শোনার কোন ইচ্ছে নেই আমার। কিন্তু তোমার যা গলার স্বর,অনেক দূর থেকেও তা শোনা যায়।
ইশার ঠিক বিশ্বাস হলোনা আদৃতের কথা,কেননা সে মোটেই জোড়ে জোড়ে কথা বলেনি। তবে এ নিয়ে খুব বেশি ভাবলোনা ইশা, আদৃত কিছু শুনলে শুনুক তাতে তার কি।
ইশাকে চুপ থাকতে দেখে আদৃত বুকে হাত গুজে বলল,
_চোখে রঙিন চশমা পড়ে থাকলে এভাবেই কাঁদতে হয়।
এবার কিছুটা রাগ হলো ইশার। তবে সে গম্ভীর সুরে বলল,
_আমি চোখে রঙিন চশমা পরবো নাকি সাধারণ চশমা পরবো সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবেনা।
কথাটা বলে সেখান থেকে চলে গেল ইশা। আদৃত তো ইশার মন ভালো করার জন্য এমনটা বলেছিল,কিন্তু সে এটা কি বলে গেল? আদৃত মনে মনে ভাবলো,
_ভুল কিছুতো বলেনি। আসলেই তো, ওর লাইফ ও যা খুশি করবে। আমি কেন তা নিয়ে ভাবতে যাচ্ছি?
নিজের কাধে কারোর স্পর্ষ টের পেয়ে পিছনে ফিরে তাকালো আদৃত। আয়শা তার দিকে তাকিয়ে বলল,
_ইশাকে চেনো বুঝি তুমি?
আদৃত কি বলবে বুঝতে পারলো না। আমতা আমতা করে বললো,
_হ্যা মানে কিছুটা..
আয়শা মুচকি হেসে বললেন,
_তুমি যে আমাদের কথা লুকিয়ে লুকিয়ে শুনছিলে সেটা কিন্তু আমি আগেই দেখেছি।
আদৃত কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়শা হাতের ইশারায় তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
_থাক,কিছু বলতে হবেনা। আর তুমি চিন্তা করোনা আমি ইশাকে কিছু বলবোনা।
চুপ করে রইলো আদৃত। আয়শা তার গায়ে হাত বুলিয়ে সামান্য হেসে বললেন,
_মেয়েটা বড্ড সহজ সরল। ওকে কিছু বলতে চাইলে ঠিক সময়ে বলে দিও…
কথাটা বলে আয়শা চলে গেলেন সেখান থেকে। আর আদৃত একই জায়গায় দাড়িয়ে মনে মনে তার কথার অর্থ খুজতে লাগলো।
#চলবে
[পরবর্তী পর্বের অর্ধেক লেখা শেষ।
আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য পেলে রাতে আরেকটি পর্ব দিবো ইনশাল্লাহ। তাই কমেন্টে নিজেদের মতামত জানিয়ে যাবেন।
হ্যাপি রিডিং।]