তুমিময়_প্রাপ্তি🍁 #পর্ব_১৭ (বোনাস পর্ব) #মেহরিন_রিম

0
418

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৭ (বোনাস পর্ব)
#মেহরিন_রিম
ফাইজা বুকশপ থেকে বেড়িয়েই রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে এলো। পূর্নর কথা ভেবে একদম ই কষ্ট পেতে চায়না সে।
কলিং বেল এর শব্দ পেয়ে রুকসানা দরজা খুললেন। ফাইজা ভিতরে ঢুকতেই সে জিজ্ঞাসা করলেন,
_ইশার কি কিছু হয়েছে ফাইজা?

ফাইজা রুকসানার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,
_কেন? ও ফেরেনি এখনো?

_সেতো অনেক আগেই ফিরেছে। কিন্তু ওর চোখমুখ থেকে স্বাভাবিক মনে হলোনা। আবার আমি জিজ্ঞেস করতে ঘরে গেলাম, কিন্তু সে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। যাওয়ার আগে তো সব ঠিক ই ছিল,হঠাৎ করে কি হলো বলতো?

ফাইজা কিছু বুঝতে পারলো না। তাই মুচকি হেসে রুকসানার সামনে গিয়ে বললো,
_আরে তুমি চিন্তা করোনা তো, ঐ বন্ধুদের সাথে একটু ঝগড়া হয়েছিল তো তাই হয়তো মন খারাপ করে আছে। আমি দেখছি গিয়ে, তুমি না কাচ্চি রান্না করবে? কাচ্চি দেখলে ইশার মন আপনা আপনিই ভালো হয়ে যাবে।

_ঠিক ই বলেছিস,আচ্ছা তুই ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।

_হুম।

ফাইজা উপরে উপরে স্বাভাবিক থাকলেও রুকসানার কথা শুনে তারও কিছুটা চিন্তা হচ্ছে। তাই সে নিজের ঘরে না গিয়েই আগে ইশার ঘরের দিকে গেলো। ইশার ঘরের সামনে এসে দেখলো দরজা বন্ধ। ফাইজা কয়েকবার দরজায় নক করে বলল,
_ইশা আমি, দরজা আটকে রেখেছিস কেন? দরজা খোল।

ইশা বালিশে মুখ গুজে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ছিল। ফাইজার গলার আওয়াজ পেয়ে ইশা বিছানা থেকে উঠে এসে দরজা খুলে দেয়। ফাইজা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশা তাকে জড়িয়ে ধরে, ফাইজা ঠিক বুঝতে পারলো না ইশার কি হয়েছে। ইশাকে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে বলল,
_এই মেয়ে কি হয়েছে তোর? চোখ মুখ এর কি হাল বানিয়েছিস।

ইশা ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফাইজা কে সবকিছু বলতে লাগলো।

___
_ভালোবাসার মানে কি পূর্ণ?

ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে সিগারেট হাতে কথাটা বলল আদৃত। পূর্ণ রুমে সোফায় বসে কিছু কাজ করছিল। আদৃত এর এমন প্রশ্ন শুনে ল্যাপটপ টা রেখে ব্যালকনির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
_কি বললি?

আদৃত সিগারেট এর ধোয়া ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়েই বলে,
_আই সেইড, হুয়াট ডু ইউ মিন বাই লাভ?

পূর্ণ আদৃতের পিছনে এসে তার কাধে হাত দিয়ে মজার সুরে বললো,
_আদৃত মেহরাজ কি প্রেমে পড়লো নাকি?

মাথা নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে হাসলো আদৃত। পিছন ফিরে পূর্ণর দিকে তাকিয়ে বলল,
_যা জিজ্ঞেস করলাম সেটা তো বল।

_এমনভাবে জিজ্ঞেস করছিস যেন আমি কোন মস্তবড় প্রেম বিশেষজ্ঞ!

_ভালো তো বেসেছিস।

চুপ করে গেল পূর্ণ। আদৃত সামান্য হেসে বলল,
_অস্বিকার তো করতে পারবিনা। বলতে পারবি তুই কখনোই ফাইজাকে ভালো বাসিসনি?

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে পূর্ণ। মুচকি হেসে বলে,
_ভালোবাসা বলে কয়ে হয়না, অপ্রত্যাশিত ভাবেই হয়তো কাউকে ভালোবেসে ফেলি আমরা। কখনো সেটা ভালো আবার কখনো দুজনের জন্যই ক্ষতিকর।

পূর্ন ব্যালকনি থেকে রুমে চলে আসে। ফাইজার জন্য তার মনে কোন অনুভূতি আছে কিনা এটা তার পক্ষে বলা মুশকিল। থাকলেও সেটা অব্যাক্ত রাখাই উচিৎ বলে পূর্নর ধারনা।
আদৃত আবারো আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেট এ টান দিলো। আজকাল নিজেকেই ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারেনা সে। নিজের মনকে যা বোঝাচ্ছে আর তার মন যা বুঝছে তা সম্পূর্ণই ভিন্ন।

___
_আমি তোকে আগেই বুঝিয়েছিলাম ইশা, কাউকে এভাবে ভালোবাসিস না। এগুলো কেবলই বয়সের দোষ, দেখবি কয়েকদিন পড়ে ঠিকই ভুলে গেছিস নিরব কে।

মুখে এমনটা বললেও ফাইজা নিজেই বুঝতে পারে সত্যিকারের ভালোবাসা এত সহজে ভোলা যায়না, তা শুধুই তাড়া করে বেরায়। চাইলেও সেখান থেকে বেড়িয়ে আসা যায়না। তবুও ইশাকে শান্ত করার জন্য কথাগুলো বলছে ফাইজা, আর ফাইজার ধারণা ইশা যেটাকে ভালোবাসা বলে দাবি করছে সেটা কেবলই তার মোহ।

ইশা চুপ করে ফাইজার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে, ফাইজা এত কিছু বললেও তার মুখে কোনো কথা নেই। ফাইজা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
_এই ইশা,কিছু তো বল। এই চুপ করে থাকাটা কিন্তু তোর সাথে মানাচ্ছে না। আর নিরব তো তোকে কখনো ভালোই বাসেনি।

ইশা চোখ তুলে ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলে,
_কিন্তু কেন আপু? কেন ভালোবাসেনি আমায়? যেখানে সবাই বুঝতে পেরেছে আমি নিরব ভাইয়াকে পছন্দ করি সেখানে ও কেন বুঝতে পারলোনা?

উঠে বসলো ইশা। করুণ চোখে তাকিয়ে বলল,
_আমি কি দেখতে খুব খারাপ যে আমাকে ভালোবাসা যায়না? মুখে বলিনি বলে কি ও একটুও বুঝবে না?

ফাইজা মুচকি হেসে বলে,
_সবসময় সব কথা মুখে বলতে হয়না রে পাগলি। তোকে যে ভালোবাসবে, তোর না বলা কথাগুলোও সে বুঝতে পারবে। তুই আর একটু বড় হলেই বুঝতে পারবি সবটা, তখন নিজের এই কান্নার কথা চিন্তা করে নিজেই অবাক হবি। মিলিয়ে নিস আমার কথা।

রুকসানা নিচ থেকে ডাক দিয়ে বলেন,
_ফাইজা,ইশা খেতে আয় তোরা।

ফাইজা ইশার গালে হাত দিয়ে বলে,
_অনেক হয়েছে কান্নাকাটি। তোর ফেভারিট কাচ্চি রান্না করেছে ছোট আম্মু, বিকেলেও কিছু খাসনি নিশ্চই। চল খেতে যাবি এখন।

_আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা আপু। তুমি আম্মুকে একটু বলে দিও আমার গ্যাস্ট্রিক এ প্রবলেম হচ্ছে তাই খেতে পারবোনা।

_এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে ইশা। আমি কিন্তু ছোট আম্মুকে গিয়ে সবকিছু বলে দেবো,তখন ভালো হবে তো?

_আমার সত্যি ই খেতে ইচ্ছে করছেনা আপু।

_কোনদিন তুই রাতে না খেয়ে ঘুমিয়েছিস শুনি? এবার শরীর খারাপ করবে তো বোন, চল আমি খাইয়ে দেবো তোকে।

_কিন্তু আপু…

_কোনো কিন্তু নয়,চল আমার সঙ্গে।

জোড় করে ইশাকে খেতে নিয়ে গেল ফাইজা। তবে তাকে খুব বেশি খাওয়াতে পারলো না। রুকসানা বেশ অবাক হলেন, যেই মেয়ে কাচ্চি পেলে অন্যদিনের চেয়ে ডাবল খেয়ে নিতে পারে। সেই মেয়ের কিনা খাওয়ার প্রতি কোনো আগ্রহ ই নেই। ফাইজা কে জিজ্ঞেস করলে ও কোনোভাবে ম্যানেজ করে নিলো তাকে।

___
এরই মাঝে আরো সাতদিন কেটে গেছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর কতকিছু করবে বলে ঠিক করে রেখেছিল ইশা,কিন্তু তার কিছুই করা হয়নি এই কদিনে। এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে ইশা, তবুও অধিকাংশ সময়ই মন খারাপ করে বসে থাকে। ফাইজা তাকে আরো তিনদিন আগে থেকে ঘুরতে যাবে বলতে বলতে আজকে রাজি করাতে পেরেছে। ইশাও ভাবছে একটু ঘুড়তে গেলে হয়তো মনটা ভালো হবে তার।

#চলবে

[পরপর দুদিন বোনাস পার্ট দিলাম। নাইস,নেক্সট ছাড়া আপনাদের কোনো মন্তব্য পেলে ভালো লাগতো।
হ্যাপি রিডিং।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here