তুমিময়_প্রাপ্তি🍁 #পর্ব_৬ #মেহরিন_রিম

0
461

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৬
#মেহরিন_রিম
_কি এমন সারপ্রাইজ দেবে তুমি যা আমাদের কাউকে বলা যায়না,হুম?
ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ইশার দিকে তাকালো নিরব। তারপর মুচকি হেসে বলল,
_সারপ্রাইজ যখন দেবো তখন ঠিক ই দেখতে পাবি।

ভেংচি কেটে বেঞ্চে বসে পড়ে ইশা। পড়ের সপ্তাহে তাদের বিদায় অনুষ্ঠান,তার জন্যই সবাই নাচ,গান,অভিনয় এর প্রাকটিস করছে। ইশা বরাবরেই নাচে পারদর্শী,তবে গানের দিক থেকেও পিছিয়ে নয় সে। যেকোন প্রোগ্রাম এ তাকে গান নাচ দুটোই করতে হয়,এবারেও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে তার ইচ্ছে নিরবের সাথে একসঙ্গে গান গাইবে। এটা ইশার কাছে অনেক বড় ব্যাপার হলেও নিরব এবং বাকিদের কাছে তেমন একটা বড় ব্যাপার নয়।

ইশার অতি চেষ্টা করেও নিরব এর ফোনটা দেখতে পারছে না,অবশেষে একটু পিছনে গিয়ে দেখতে নেবে তখনি নিরব ফোনটা সরিয়ে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
_তুই আবার জাসুসি করা কবে থেকে শুরু করলি রে ইশা? অনেক্ষন ধরে দেখছি আমার ফোনের উপর নজর তোর, চুরি টুরি করার প্লান করছিস নাকি?

_আমার বয়েই গেছে তোমার ফোন চুড়ি করতে। তোমার ফোন কি সোনা নাকি যে আমি চুড়ি করতে যাবো? আর সোনা হলেই বা কি,আমার তো ওসব গয়নার উপর কোন আকর্ষণ ই নেই। আমার জামাই না অনেক ভাগ্যবতী, না মানে ভাগ্যবান যে আমার মতো একটা বউ পাবে। কোনো সোনা গয়না কিনে দিতে হবেনা, ওর টাকাও বেঁচে যাবে। আর…

_থাম ভাই,মাফ চাই দোয়াও চাই। তোর এই স্পিকার দয়া করে অফ কর। আমি বুঝেছি তুই আমার ফোনের কিচ্ছু করবিনা।

ইশা এবার চুপ করে আবার বেঞ্চে গিয়ে বসলো। অমনি সেখানে বিভিন্ন স্টাইল এ কাঁদতে কাঁদতে মোহনা হাজির হলো। একবার টিস্যু দিয়ে চোখ মোছার প্রাকটিস করছে আবার হাত পা ছড়িয়ে কাঁদার প্রাকটিস করছে। ইশাকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে যেই ওর গায়ের উপর পড়তে নিবে তখন ই ইশা ওকে সোজা করে দাড় করিয়ে ধমক দিয়ে বলে,
_তোর সমস্যা টা কি হ্যা,কখন থেকে দেখতেছি ম*রা কান্না
কাঁদতাছোস। এমন একটা ভাব করতেছিস যেন তোর জামাই ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে।

মোহনা নিজের নাটক বাদ দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
_তুই বুঝতে পারতেছিস না,কান্নার ও না অনেকগুলো ভ্যারিয়েশন আছে। আর আমাকে এমনভাবে কাঁদতে হবে যেন আমার উপর ছেলেরা ক্রাশ খেয়ে যায়, আর আমার কাছে এসে চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে,”প্লিজ মেহু,ডোন্ট ক্রাই”।

মোহনার কথা শুনে রুমে থাকা সবাই হো হো করে হাসতে লাগলো। মোহনা আর ইশা থাকা মানে সেই জায়গাটা কমেডি দিয়েই ভর্তি থাকবে। ইশা একবার নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
_আমি এখন আসি হ্যা,আম্মু আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে বলেছে। মোহনা তুইতো তোর আন্টির বাসায় যাবি তাই না, তাহলে আমি একাই গেলাম টাটা গাইস…

কথাটা বলেই ইশা বেরিয়ে এলো ক্লাসরুম থেকে। তার বাসা এখান থেকে বেশি দূড়ে না,তাই একা যেতে কোনো সমস্যা হয়না তার।

ইশা বেশ খানিকটা রাস্তা পার করে এসেছে,আর কিছুদূর গেলেই তার বাড়ি। ইশা রাস্তার একপাশ দিয়ে হাটতে হাটতে অপর পাশে চোখ পড়তেই দেখলো একজন মহিলা রাস্তা পাড় হওয়ার চেষ্টা করছেন, প্রায় অর্ধেক এর বেশি পথ চলেও এসেছেন তিনি। এমন সময় পাশ থেকে দ্রুতগতিতে একটি বাইক আসতে দেখে সেই মহিলা খানিকটা ঘাবড়ে গিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে পরে। ইশা তার অবস্থা বুঝতে পেরে তার হাত ধরে টান দিয়ে রাস্তার পাশে নিয়ে আসে। বাইকটা সেই জায়গায় আসার পড়েই বাইকে থাকা লোকটা খানিকটা ধমকের সুরে বলে,
_দেখে রাস্তা পাড় হতে পারেননা? এখন কিছু একটা হয়ে গেলে তো দোষ আমার ই হতো।

কথাটা বলেই লোকটা বাইক নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। ইশা বুঝতে পারে সেই মহিলা বেশ ভয় পেয়ে আছে। তাই সে খানিকটা নরম সুরে বলে,
_একটু দেখে চলবে তো,এখনি কত বড় দূর্ঘটনা ঘটে যেতো বলো তো।

সেই মহিলা ইশার দিকে এক নজর তাকায় তবে কিছু বলতে পারেনা। ইশা নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে তার সামনে দিয়ে বলে,
_পানিটা খাও, এত অস্থির হচ্ছো কেন হুম? কিছু হয়নি তো নাকি,এটাই অনেক। নাও খাও..

মহিলাটি ইশার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে কিছুটা পানি খেলো, এবার সে কিছুটা শান্ত হলো। ইশার দিকে বোতলটা এগিয়ে দিয়ে তার মাথায় হাত দিয়ে বলল,
_তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেই মা, আমার জীবন বাঁচালে তুমি।
সে এবার খানিকটা হতাশ হয়ে বলল,
_অবশ্য না বাঁচলেই বা কি হতো।

ইশা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
_এমন কথা বলছো যে? আচ্ছা বাদ দাও,তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমার শরীর ঠিক। তোমার বাড়ি কি এদিকেই? তাহলে বলো,আমি পৌঁছে দিচ্ছি তোমাকে।

মহিলা তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে বলল,
_আমার আবার বাড়ি,হাহ.. আমার যে কোনো বাড়ি নেই মা।

_তাহলে? তুমি থাকো কোথায়?

সেই মহিলা কিছুটা সামনে একটা আশ্রমের দিকে ইশারা করে বললে,
_ঐযে আশ্রম টা দেখছো, আপাতত ওটাই আমার বাড়ি।

ইশা মহিলার দিকে লক্ষ্য করে দেখলো তার বয়স খুব একটা বেশি নয়। ইশা কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে যাবে তখন ই তার মনে পড়ে বাড়ি যেতে অনেকটা দেড়ি হয়ে যাচ্ছে,আরো দেড়ি করলে নিশ্চই একগাদা বকা শুনতে হবে।
ইশা মহিলার দু কাঁধে হাত রেখে বলল,
_তোমার সাথে আমি অন্য একদিন কথা বলতে আসবো হ্যা। বড্ড দেড়ি হয়ে গেছে,আজ বরং আমি আসি আন্টিমনি টাটা টাটা।

কথাটা বলেই বড় বড় পা ফেলে বাড়ির দিকে চলে গেলো ইশা।

____
সকাল বেলা জিম থেকে ফিরে এসে নিজের ব্রেকফাস্ট সেরে নিলো আদৃত। বেডরুম এ এসে বারান্দার দিকে তাকাতেই বাহিরের মিষ্টি রোদ চোখে এসে পড়লো তার। অত:পর নিজের ফোন আর দুরবিন টা নিয়ে ছাদে চলে এলো সে। ছাদের উপর থেকে আশেপাশের অনেক সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায়। বারোতলা ছাঁদের উপর থেকে অনেক দূড়ের এলাকাও দেখা যায়। আর ছাঁদে এলে দুরবিন দিয়ে আশেপাশের ভিউ দেখা আদৃত এর অভ্যাস।

আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। রেলিং এর পাশে দাঁড়িয়ে দুরবিন এর মাধ্যমে আকাশে উড়তে থাকা পাখিগুলোকে দেখতে লাগলো সে। এভাবেই একটা পাখিকে মার্ক করতে করতে ধীরে ধীরে একটা বাড়ির ছাঁদে চোখ পড়লো তার। খুবই সূক্ষ্মভাবে একটি মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। যদিও তার মুখ দেখা যাচ্ছে না, সম্ভবত অন্যদিকে তাকিয়ে নাচ করছে সে,পড়নে তার লাল রঙের শাড়ি। চুলগুলো উঁচু করে খোপা করা।
আদৃত একদৃষ্টিতে তাকিয়ে মেয়েটার নাচ দেখতে লাগলো, নিজের অজান্তেই মেয়েটার মুখ দেখার ভীষণ ইচ্ছে হলো তার।

_তোকে খুঁজতে খুঁজতে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি,আর তুই কিনা এখানে দাঁড়িয়ে আছিস!

ছাঁদে এসে হাপাতে হাপাতে কোমড়ে হাত দিয়ে কথাটা বলল সায়ান। সায়ান এর কথা শুনে আদৃত চোখ থেকে দুরবিন টা সরিয়ে একনজর সায়ান এর দিকে তাকালো। আবারো সেই ছাঁদের দিকে নজর দিলো সে,তবে কাউকেই দেখতে পেলো না। মুখ থেকে বিরক্তিসূচক “শিট” আওয়াজ বেড়িয়ে এলো আদৃত এর। পরক্ষণেই নিজের কাজে অবাক হলো সে। মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলো,
_হুয়াট’স রং উইথ মি? এভাবে একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমি!

আদৃতকে নিজের ভাবনায় মগ্ন থাকতে দেখে সায়ান তার কাছে এসে বলল,
_কিরে ভাই, কোন দুনিয়ায় হারিয়ে গেলি?

আদৃত নিজের ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এসে দুই আঙুল দিয়ে কপালে স্লাইড করে বলল,
_তেমন কিছু না। তুই বল,সকাল সকাল এখানে? কিছু হয়েছে?

সায়ান কপালে হাত দিয়ে বলল,
_তোর কি স্মৃতিশক্তি ও কমতে শুরু করলো ভাই? আমি না তোরে কাল রাতেই বললাম পূর্নকে এয়ারপোর্ট এ রিসিভ করতে যাবো, এর মধ্যেই ভুইলা গেলি?

_আসলে হাফ ঘুমের মধ্যে দেখেছিলাম তো,তাই মনে ছিলোনা। আচ্ছা তুই নিচে গিয়ে দাঁড়া,আমি জাস্ট পাঁচ মিনিট এ আসছি।

#চলবে

[কালকে একটু ব্যাস্ত থাকায় গল্প দিতে পারিনি,তার জন্য আমি দুঃখিত। সবাই রিসপন্স করবেন, রাতে আরেকটা পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো।
হ্যাপি রিডিং]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here