#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৮
#মেহরিন_রিম
_যাবো ঠিক আছে,কিন্তু যাবো টা কোথায়?
সোফায় বসে চিপস খেতে খেতে প্রশ্নটা করলো ইশা। ফাইজা তার পাশে বসেই টিভি দেখছিল। ইশার প্রশ্নে উত্তর দিয়ে বলে,
_আমার ইউনিভার্সিটিতে পিঠা উৎসব চলতেছে। চাইলে আমরা সেখানেই যেতে পারি।
ইশা বোকার মতো প্রশ্ন করলো,
_কিন্তু আমার তো পিঠা পছন্দ না,তুমি তো জানোই।
_আরে বলদি, যাবো ঘুরবো ফিরবো মজা করবো। পিঠা খেতেই হবে তা তো নয়।
_তাও ঠিক বলেছো।
_আর ওখান থেকে বেড়িয়ে রেস্টুরেন্ট এ যাবো। ওখানে ডিনার করে তারপর ফিরবো।
_তাহলে মোহনা কেও নিয়ে যাই?
_হ্যা অবশ্যই।
_আচ্ছা শোনো, তুমি শাড়ি পরবে তো?
_আমি? তুই পরবি তাহলে আমিও পড়তাম।
_আমার এখন শাড়ি পরার মুড নেই গো। কিন্তু তুমি পরো না প্লিজ। কতদিন তোমাকে শাড়ি পড়তে দেখিনা।
_যদি হাটতে গিয়ে পড়ে যাই তখন?
_আরেএএএ,আমি থাকতে তোমায় পড়তেই দেবোনা।
ফাইজা সামান্য হেসে ইশার গাল টেনে দিয়ে বলল,
_আচ্ছা ঠিক আছে বাবা পড়বো। মোহনাকে ফোন করে জানিয়ে দে। আর আমায় শাড়ি পড়িয়ে দিতে হবে কিন্তু।
_হ্যা হ্যা চলো চলো।
ইশাকে এমন হাসিখুশি দেখে ফাইজাও অনেক খুশি হলো। মেয়েটার সাথে মুড অফ করে থাকাটা একদম ই মানায় না।
___
আদৃত অফিসে বসে কিছু ফাইল চেক করছিল তখনই তার ফোনে সায়ান এর কল আসে। আদৃত ফোনটা রিসিভ করতেই সায়ান বলে ওঠে,
_কোথায় তুই?
_অফিসে,কেন?
_যেখানেই থাকিস না কেন। এক্ষুনি বেড়িয়ে ভার্সিটিতে আসবি,কতদিন বন্ধুরা একসাথে আড্ডা দেওয়া হয়না বলতো!
_তো তোরা যা না, আমার কাজ আছে কিছু।
_কোন দিন তোর কাজ থাকেনা বলতো? কোনো কথা নয়, আসতে বলছি যখন আসবি ব্যাস।
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো সায়ান। আদৃতের এখন বন্ধুমহলে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। এমনিতেই এই কদিন ধরে ইশার কোনো দেখাই পায়নি। কখনো বা ঐ আশ্রমের আশেপাশে গিয়ে ঘুরেছে আবার কখনো ছাঁদে গিয়ে দুরবিন দিয়ে ইশার বাড়ির ছাঁদের দিকে নজর রেখেছে,তবে কোনো লাভ ই হয়নি। আদৃত বুঝতেই পারছেনা ও এমন পাগলামি কেন করছে।
মাথা চেপে ধরে কিছুক্ষন বসে রইলো আদৃত। অত:পর বাইকের চাবিটা হাতে নিয়ে উঠে দাড়ালো, ভাবলো হয়তো বন্ধুদের সাথে থাকলে ওর মনটাও কিছুটা শান্ত হবে।
পূর্ণও নিজের কাজ নিয়ে বিজি, কদিন ধরেই একটা কিডন্যাপিং কেস এর ইনভেস্টিগেশন নিয়ে খুব ব্যাস্ত সময় কাটছে তার। অবশেষে সেই কেস সলভ করতেও সক্ষম হয়েছে সে। তবে পূর্নর কাজটা সবসময় গোপন ভাবেই সম্পন্ন হয়, এমনকি নিজের পরিচয় ও তাকে গোপন রাখতে হয়। নিজের ব্যাক্তিগত জীবনে যাই ঘটে যাকনা কেন, কাজের ক্ষেত্রে তার প্রভাব কখনোই পড়তে দেয়নি পূর্ন আর দেবেও না।
সায়ান পূর্ণকে ফোন করেও ভার্সিটিতে যেতে বলেছে, পূর্ণ আর আপত্তি করেনি। এমনিতেও দেশে ফেরার পর পুড়নো বন্ধুদের সাথে দেখা করা হয়নি, একটা গেটটুগেদার হলে খারাপ হয়না।
___
_ইশা হয়েছে তোর?
_চুপ করে দাড়াও তো আপু,ঠিক করে পড়াতে দাও শাড়িটা।
_দেখিস ভাই, আমি কিন্তু সেই কবে লাস্ট শাড়ি পরেছি নিজের ও মনে নেই। উষ্টা খেয়ে পড়ে গেলে কিন্তু মান ইজ্জর সব শেষ।
ইশা শাড়ির কুচিটা ঠিক করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
_আরে এত ভয় পাও কেনো বলো তো, আমিতো শাড়ি পড়ে দৌড়াতেও পারি।
_তোর তো অভ্যাস আছে আমার নেই।
_কিচ্ছু হবে না, মোহনা মেবি দাঁড়িয়ে আছে নিচে এসে। চলো যাই..
ফাইজা শাড়ির কুচি ধরে সাবধানে পা বাড়িয়ে নিচে এলো। রুকসানার থেকে বিদায় নিয়ে ইশা,ফাইজা,মোহনা তিনজন বেড়িয়ে পরলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
___
পূর্ন,সায়ান,আদৃত সহ তাদের আরো পাঁচ থেকে ছয়জন বন্ধু একসঙ্গে মাঠে বসে আছে। একটা কথা একদম সত্যি, লাইফে যতই ঝামেলা থাকুক না কেন বন্ধুরা একসঙ্গে থাকলে সবকিছু গায়েব হয়ে যায়। তাদের মধ্য থেকে অনিক নামের একটি ছেলে বলে উঠলো,
_প্রেম করায় ভীষণ প্যারা ভাই, ভাবতেছি এবার বিয়েটা করেই ফেলবো।
সায়ান বলল,
_তোরা বিয়ার চিন্তা করতাছোস,আর আমি কিনা একটা প্রেমও করতে…
হঠাৎ সামনের দিকে সায়ানের চোখ পড়তেই থেমে যায় সে। মোহনাকে দেখতে পেয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,
_প্রে…ম, এবার একটা প্রেম তো আমি করবোই। ঐ তোরা থাক, আমি আসতেছি একটু পর।
পূর্ণ ভ্রু কুঁচকে বলল,
_তোর আবার হঠাৎ হলো টা কি?
কে শোনে কার কথা,সায়ান সেখান থেকে উঠে মোহনার দিকে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়।
গাড়ি থেকে নেমে মোহনা একটু আগেই ভিতরে ঢুকেছিল, আর ফাইজা তার শাড়ি সামলে ইশাকে নিয়ে কিছুটা পড়ে ভিতরে আসে, ক্যাম্পাস অনেক বড় হওয়ায় মাঝে অনেক জায়গা রয়েছে,চারপাশে সব স্টল।
ইশা ভিতরে ঢুকেই দেখতে পেলো মোহনা একটা স্টল এর দিকে যাচ্ছে আর সায়ান তার দিকেই এগিয়ে আসছে। এটা দেখে ইশা ফাইজাকে বলল,
_আপু তুমি ধীরে ধীরে আসো হ্যা।
কথাটা বলেই ইশা ছুটে গিয়ে সায়ান এর সামনে দাঁড়িয়ে মেকি হেসে বলল,
_আরে আপনি এখানে ভাইয়া? ভালো আছেন তো?
হঠাৎ ইশা সামনে এসে পড়ায় সায়ান ও কিছুটা চমকে যায়, তবে সেও মুচকি হেসে জবাব দেয়,
_হ্যা তুমি ভালো আছো তো?
_আমিতো ভালোই থাকি, কারোর কাছে যাচ্ছিলেন বুঝি?
এতক্ষনে ইশার গলার আওয়াজ শুনে মোহনাও সেখানে উপস্থিত হয়। সায়ান কে দেখে বেশ ভালোই বুঝতে পারে যে সে তার দিকেই আসছিল আর ইশা মাঝখানেই তাকে আটকে দিয়েছে।
সায়ান কিছু না বলায় ইশা আবারো বলে,
_শুধু মেহুকে গিফট দিলে চলে বলুন তো? ওর বেস্টফ্রেন্ড কেও মাঝে মাঝে কিছু গিফট দিতে পারেন তো নাকি।
মোহনা ইশার কানে কানে গিয়ে বলল,
_কিসব বলছিস ইশা,চুপ কর।
ইশা এবার হেসে বলে,
_আরে তুই থাম তো। আর ভাইয়া আপনাকে বলছি,এত নার্ভাস হলে চলে? থাক আমি আবার কারোর মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হতে চাইনা। যেদিকে যাচ্ছিলেন যান।
ইশার কথায় মোহনা কিছুটা লজ্জা পায়। ইশা সেখান থেকে সরে যাওয়ায় সায়ান ও খুশি হয়ে মোহনার সাথে কথা বলতে চলে যায়।
ফাইজা একটু দূড়ে দাঁড়িয়েই ওদের কার্যকলাপ দেখছিল। ইশা তার কাছে আসতেই জিজ্ঞেস করে,
_কিরে? কেসটা কি বল তো,আমাকে তো আগে বলিসনি কিছু।
ইশা হাসতে হাসতে বলে,
_আরে বলবো বলবো, আমিতো একটু মজা নিতে গেছিলাম আরকি। ওরা থাকুক তো, আমরা ঐদিকে যাই চলো।
_ওকে চল।
এদিকে আদৃত,পূর্ণদের গ্রুপের একটা ছেলে ফাইজা কে দেখতে পেয়ে বলে,
_এই, ঐ মেয়েটা আমাদের জুনিয়র ছিল না? নামটা যেন কি?
ছেলেটার নজর লক্ষ্য করে সেদিকে তাকাতেই আদৃত আর পূর্ন দুজনেই অবাক হয়ে যায়। পূর্ণ ফাইজাকে শাড়ি পরা অবস্থায় এর আগে কখনো দেখেনি, আর আদৃত যে এখানে ইশাকে পেয়ে যাবে সেটা তো সে কল্পনাও করেনি।
_আরে মনে নেই তোর! ওটা তো ফাইজা,পূর্ণর পিছনে ঘুড়ে বেড়াতো যে।
ছেলেটার কথা শুনে সেখানের সবাই ই হাসতে লাগলো।আদৃত ওদের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
_এখানে হাসার কি হলো?
একজন পূর্ণর দিকে তাকিয়ে বলল,
_হাসা নাহয় থামালাম। কিন্তু পূর্ণ, তুই ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? প্রেমে ট্রেমে পড়লি নাকি?
পূর্ণর ধ্যান ভাঙে এবার। ফাইজার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলে,
_এই টপিক বাদ দে। ও এই ভার্সিটিতেই পড়ে, আমরা যেমন এসেছি তেমনি ও এসেছে। এ নিয়ে আর কোনো কথা শুনতে চাইছিনা আমি।
বাকিরাও আর কিছু বললোনা এই নিয়ে। তবে আদৃত এর নজর অন্যদিকে, সে তাকিয়ে দেখছে প্রাণোচ্ছল ইশাকে। তার এই কদিনের সকল অস্থিরতা যেন নিমিষেই কেটে গেলো এই প্রাণোচ্ছল ইশাকে দেখে। ভাগ্যেস সায়ানের কথায় এখানে এসেছিল,নাহলে তো ইশার দেখাই পেতোনা। আর দেখতেও পেতোনা তার হাস্যজ্জল মুখখানা।
#চলবে
[বোরিং লাগছে গল্পটা? তাহলে বলতে পারেন।
আগেই বলেছি আমি লেখালেখির জগতে অনেকটাই নতুন, তাই আপনারা আমার যেকোনো ভুল ধরিয়ে দিলে খুশি হবো। আপনাদের মতামত আমার লেখার উৎসাহ কয়েক গুণ বারিয়ে দেয়।
হ্যাপি রিডিং।]