শিশির_ভেজা_শিউলি #পর্ব_৩৮ #ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

0
698

#শিশির_ভেজা_শিউলি
#পর্ব_৩৮
#ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না।কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫)

সুখনীড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজমান। সুখনীড় থমকে গেছে যেনো। হঠাৎ এমন থমথমে পরিস্থিতির কারন বোধগম্য হলো না মিসবাহর। আজ হসপিটালে তিনটে সার্জারি থাকায় রাত হয়েছে ফিরতে। কেউ যে এখনো খায়নি ঢেড় জানা আছে তার। মিসবাহ সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই চক্ষুগোচর হয় মাহমুদ সিকদারের থমথমে মুখ। তিনি সোফায় বসে চা খাচ্ছেন। এতো রাতে চা কে খাই আজব। তার বাবার পক্ষেই সম্ভব। মিসবাহ বেশি মাথা ঘামালো না। ক্লান্ত লাগছে তার। সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের রুমের দিকে গেল। ঘরে গিয়ে সূরাকে দেখতে না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে গেল মিসবাহর। স্বামী বাড়ি এসেছে কোথায় মহারানী স্বামীর হাতে হাতে সব এগিয়ে দিবে তা না তাকে অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মিসবাহ ডেসিন টেবিলের কাছে গিয়ে হাতে থাকা ঘড়িটা খুলে রাখলো। আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলো বিছানায় তার কাপড় রাখা আছে। মিসবাহ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো কাপড় গুলোর দিকে। মুচকি হাসলো সে। বিয়ের পর থেকে সূরার সবচেয়ে প্রিয় কাজ হয়ে উঠেছে মিসবাহর হাতে হাতে সব এগিয়ে দেওয়া। কিন্তু মহারানী কি জানে বাড়ি ফিরলে তার ওই স্নিগ্ধ মুখোস্রি না দেখলে মিসবাহর ক্লান্তি দূর হয় না? দিনশেষে ক্লান্ত হয়ে ফিরলে সুরজানের মুখের হাসি না দেখলে মনে প্রশান্তি আসে না। মিসবাহর রাগ হলো। সে তো অনেক আগেই এসেছে। কোথায় একটু স্বামীর কাছে আসবে তা না কাজ নিয়ে ব্যস্ত সে। কালকেই দুইটা কাজের লোক ঠিক করবে সে। বউ তার আশেপাশে ঘুরঘুর করবে তা না করে বউ ঘুরঘুর করছে রান্নাঘরের আশেপাশে। এটা কি মেনে নেওয়া যায়? একদমই না। মিসবাহ ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। বেডের উপর রাখা জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। মিনিট পনের পরে একটা টাওজার আর কালো টিশার্ট পরে চুল মুছতে মুছতে বের হয়। চোখজোড়া সূরাকে খুঁজে কিন্তু সে নেই। এমন তো হয়না। মিসবাহ বাড়ি ফেরার পরে সে কখনো রান্নাঘরে বা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকে না। আজ হঠাৎ কি হলো? মিসবাহ টাওয়েল ছুড়ে ফেলে সোফায়। হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। নিচে নেমে দেখে ডাইনিং টেবিলে সিহাব, মাহমুদ সিকদার আর মেহের বসে আছে। হয়তো তার জন্যই বসে অপেক্ষা করছে তারা। কিন্তু সবার এমন থমথমে মুখে বসে থাকা দেখে মিসবাহর ভ্রু কুঁচকে গেল। মিসবাহ সিহাবের পাশের চেয়ার টেনে বসতে বসতে গম্ভীর স্বরে বলল

“কি হয়েছে? থম মেরে বসে আছো কেন সবাই? সুখনীড়ে কি ডাকাত পড়েছে?”

সিহাব সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে “তার চেয়েও বড়ো কিছু পড়েছে ভাই। এটোম বম।”

মিসবাহর কুঁচকানো ভ্রু আরো কুঁচকে গেল। বলল “মানে?”

“মানে আমি বলছি।”

সিহাব কে কিছু বলতে না দিয়ে মাহমুদ সিকদার গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো। মিসবাহ বাবার দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে তাকিয়ে আছে। মুনতাহা সিকদার আর সূরা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে। সূরা খাবার বেরে দিতে চাইলে মুনতাহা সিকদার বাধা দিয়ে বলেন

“তুই খেয়ে নে আমি দিচ্ছি।”

মিসবাহ শান্ত চোখে তাকালো সূরার দিকে। মাহমুদ সিকদার নড়েচড়ে বসল। গম্ভীর স্বরে ছেলের উদ্দেশ্যে বলেন

“সমস্যা কি সেটা তো তুমি বলবে।”

“মানে! কি বলতে চাইছো?”

মুনতাহা সিকদার সবার প্লেটে খাবার বেরে দিতে দিতে বলল “দেখো মিসবাহ আমরা তোমাকে আমাদের মেয়ে দিয়েছি যেনো তাকে তুমি সুখে রাখো। আমাদের মেয়ের কোনো হেলাফেলা হলে আমরা মেনে নিব না। মেয়েটাকে তুমি কি বলেছো?”

মিসবাহ সূরার দিকে তাকালো। সূরা মাথা নিচু করে বসে আছে। মিসবাহ কন্ঠে গাম্ভীর্য বজায় রেখে বললো “সুর?”

সূরা কিছু বলেনা। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। কোনো দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে চলে গেল সিঁড়ি বেয়ে ওপরে। মিসবাহ সূরার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে পাশে সিহাবের দিকে তাকালো। সিহাব মিসবাহর চোখের চাহনি দেখে থতমত খেয়ে গেল। মাহমুদ সিকদার কিছু বলবে তার আগেই মিসবাহ গম্ভীর পুরুষালী ভরাট কন্ঠে বলে

“তোমাদের মেয়ে আমার স্ত্রী বাবা ভুলে যেও না। তার কিছু হলে সবার আগে আমি ক্ষতবিক্ষত হয়।”

মাহমুদ সিকদার আর কিছু বললেন না। মুনতাহা সিকদার একটা প্লেটে বেশি করে ভাত, সবজি, ভাজি আর মাংস তুলে রাখেন পাশে। মিসবাহ কে বলেন “এগুলো রুমে নিয়ে যাও। মেয়েটাকে খায়িয়ে নিজেও খেয়ে নিও।”

মিসবাহ এখনো সিহাবের দিকে তাকিয়ে আছে। সিহাব কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে “আমার হয়েছে যতো জ্বালা। এমন করে তাকাস ক্যান ভাই? তোর সুরজান তোর উপরেই রাগ করে আছে।”

মিসবাহ কপালে ভাঁজ ফেলে বলল “আমি কি করেছি? ও তো তোদের সাথেই ছিল।”

“আজ আমরা ফুচকা খেতে গিয়েছিলাম ভাই।”

মিসবাহ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। তার বোঝা হয়ে গেছে সব। হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যায়। নিজের রুমে ঢুকে থমকে যায় মিসবাহ। বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকায় বিছানায় এলোমেলো হয়ে শুয়ে থাকা সূরার দিকে। মিসবাহ খাবারের প্লেট টি টেবিলের উপর রেখে ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে যায় সূরার দিকে। সূরা গুমরে গুমরে কাঁদছে। মিসবাহ গাল ফুলিয়ে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। বেডে বসে সূরাকে এক হাত টেনে তুলে বসালো। হঠাৎ এমন হওয়ায় সূরা ছলছল চোখে গোল গোল করে তাকালো মিসবাহর দিকে। নাহ্ এই মেয়ের জন্য মিসবাহর আরো ধৈর্য্যশীল হতে হবে। মিসবাহ শান্ত স্বরে বলে

“ফ্রেস হয়ে খেয়ে নাও।”

সূরা নাক টেনে বলে “খাবো না। খিদে নেই আমার।”

মিসবাহ গম্ভীর স্বরে বলে “আমি অনেক ক্লান্ত সুর। এখনি ওয়াশরুমে যাও আর খেয়ে নাও। গো নাও।”

সূরা হিচকি তুলে বলে “বললাম তো খাবো না।”

মিসবাহ আবার ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। আল্লাহ তাকে আরো ধৈর্য্য দিক। এই মেয়েকে মাঝে মাঝে মনে হয় চড়িয়ে গাল লাল করে দিতে। একটু বেশি বোঝা এর কাজ। কিন্তু ওই যে মিসবাহর রাগে এক বালতি পানি ঢেলে দেয় এই মেয়ের মায়াময় মুখোস্রি। এই মুখের দিকে তাকালে আর রাগ করে থাকে যায় না। আর একে কষ্ট দিলে শতগুণ কষ্ট তার কাছে ফেরত আসবে‌। মিসবাহ কন্ঠে গাম্ভীর্য বজায় রেখেই বললো

“আমিও সারাদিন কিছু খায়নি সুর। আমার খিদে পেয়েছে। ফ্রেস হয়ে এসো।”

সূরা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো “আমি কি বলেছি আপনাকে না খেয়ে থাকতে? আর সারাদিন খাওয়ার কি দরকার? ফুচকা খেয়েই তো পেট ভরে যাবে।”

মিসবাহ ঠোঁট চেপে হাসে। উঠে দাঁড়িয়ে চোখের পলকে সূরাকে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াসরুমের দিকে যায়। সূরা মিসবাহর বুকে কিল মারতে মারতে বলে

“অসভ্য লোক। নামান আমাকে। নামান বলছি। খাবো না আমি।”

মিসবাহ আপাতত পাগলের কথায় কান দেয়না। পাগলের কথায় কান না দেওয়ায় উত্তম। ওয়াসরুমে ঢুকে সূরাকে নামিয়ে দিয়ে বেসিন থেকে পানি নিয়ে সূরার চোখে মুখে দেয়। মুখ টাওয়েল দিয়ে মুছিয়ে সূরাকে কোলে নিয়েই বেরিয়ে আসে। সূরা এখনো ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। এই মেয়ে কবে থেকে এতো ছিঁচকাদুনে হলো বুঝতে পারেনা মিসবাহ। মিসবাহ সূরাকে কোলে নিয়েই বসে পড়ে সোফায়। হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে ভাত মাখিয়ে সূরার মুখের সামনে ধরল। সূরা বিড়াল ছানার মতো লেপ্টে আছে মিসবাহর বুকে। এর নাকি রাগ হয়েছে? কিন্তু এখন ঠিকই লেপ্টে আছে তার বুকে। একটু ভালোবাসা পেলে এই মেয়ে আরো আল্লাদি হয়ে পড়ে। মনে মনে হাসলো মিসবাহ। শান্ত স্বরে বলে

“হা করো সুরজান। সারাদিন খাওনি কেন?”

সূরা ডুকরে উঠে‌। মিসবাহর বুকে লেপ্টে থাকে। বলে ” খাবোনা আমি। আপনি আপনার টিনা বেবিকে খাওয়ান গিয়ে।”

মিসবাহ গম্ভীর স্বরে বলে “এখন যদি না খাও আমি কিন্তু তোমার মুখের কথায় সত্যি করে দেখাবো। বেশি ঘাটিয়ো না আমাকে মেয়ে।”

সূরা কিছু বলেনা। সূরা মুখ হা করলে মিসবাহ খায়িয়ে দেয় সূরাকে। সূরা নাক টানছে আর খাচ্ছে। মিসবাহ সূরার সাথে সাথে নিজেও খেয়ে নেই। খাওয়া শেষে সূরাকে কোল থেকে নামাতে চাইলে সে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মিসবাহ কে‌। মিসবাহ ঠোঁট চেপে হেসে বলল

“প্লেট রেখে আসি‌। তারপরে সারারাত কোলে চড়ে বসে থেকো মেয়ে।”

সূরা শুরশুর করে নেমে যায় কোল থেকে। মিসবাহর দিকে না তাকিয়ে সোজা চলে যায় বারান্দায়। মিসবাহ প্লেট হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তার বোঝা হয়ে গেছে আজ এই মেয়ের রাগ ভাঙাতে তাকে অনেক ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। প্লেট রেখে মিসবাহ বারান্দায় সূরার কাছে গিয়ে পেছন থেকে সূরার কোমড় জড়িয়ে ধরে। গলায় মুখ গুজে মিসবাহ কিছু বলবে তার আগেই সূরা শান্ত স্বরে বলে উঠলো

“আমার কিছু ভালো লাগছে না ডাক্তার। ওই রমনীকে খুন করলেও শান্তি পাবোনা আমি। এখন কি আমার উপর পুরুষত্ব ফোলাবেন?”

মিসবাহর হাত আলগা হয়ে আসে। শেষের বাক্যে হতভম্ব হতবাক সে। সূরাকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। হতবিহ্বল চাহনিতে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নিষ্ঠুর রমনীর দিকে। সে কি কখনো মিসবাহ কে বুঝেছে নাকি বুঝতে চেয়েছে? সূরা মিসবাহর দিকে ঘুরে তাকালো। বলল

“আমি কখনো আপনার আশেপাশে টিনা কেন জান্নাতের হুর কেউ সহ্য করতে পারবো না ডাক্তার। সেখানে সামান্য এক রমনী আপনার পাশে মেনে নেওয়া কষ্টসাধ্য। তাকে খুন করতেও আমি দুইবার ভাববো না। পিয়াস ভাইয়ের সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে অনন্যাকে দেখে ঘৃনা জেগে ছিল মনে। কিন্তু আপনার পাশে টিনাকে দেখে তাকে খুন করার ইচ্ছা জাগছে। এটা মনে হচ্ছে আমার ডাক্তার শুধুই আমার। পরিচিত কারো সাথে কথা বলতেই পারেন তবুও মন কেন মানছে না এই সামান্য কথাটা? আমি বুঝতে পারছি না কেন টিনার সাথে আপনার হাসিমাখা মুখোস্রি আমাকে কাঁদতে বাধ্য করছে?”

মিসবাহ এখনো হতবিহ্বল চাহনিতে তাকিয়ে আছে। এই কোন সুরজান? সামান্য একটা বিষয়ে এতো পজেসিভ সে। মিসবাহ কিছু না বলে রুমে যায়। কয়েক সেকেন্ড পর হাতে একটা কার্ড নিয়ে ফিরে আসে। সূরার হাতে কার্ডটা দিয়ে বলে

“টিনার বিয়ের কার্ড। বাড়িতে হয়তো কার্ড পাঠাবে কিন্তু স্পেশালি তোমাকে আর আমাকে যেতে বলেছে সে।”

সূরা হাতে থাকা কার্ডের দিকে তাকালো। মিসবাহ কিছু না বলে রুমে চলে আসে। সূরা ছলছল চোখে তাকালো মিসবাহর যাওয়ার দিকে। একটু বেশিই কি করে ফেললো না সে? এতো ন্যাকা কবে থেকে হলো? কই আগে তো এমন ন্যাকামো করতো না। তাহলে কি মিসবাহর আল্লাদে আল্লাদি হয়ে বেশি ন্যাকা হয়ে গেছে সে? মনের ভেতর থেকে কেউ বলে উঠলো না সে ন্যাকামি করেনি। একদম ঠিক করেছে। নিজের স্বামীকে নিয়ে পজেসিভ হওয়ার মাঝে খারাপ কিছু নেই। কিন্তু ছিঁচকাদুনে হলো কবে থেকে? আজ সারাদিন অযথায় চোখের পানি ফেললো সে। সূরা ঘরে যায়। মিসবাহ ডিমলাইট জ্বালিয়ে টানটান হয়ে চোখের উপর এক হাত দিয়ে শুয়ে পড়েছে। সূরা গুটিগুটি পায়ে বেডের দিকে যায়। পা ভাঁজ করে উঠে বসে। মিসবাহর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মিসবাহ গম্ভীর স্বরে বলে

“মুখের দিকে তাকিয়ে না থেকে শুয়ে পড়ো।”

সূরা মিসবাহর চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে মিসবাহর বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ে‌। মিসবাহ কিছু বলেনা। চোখ বন্ধ করে আছে। সূরা ভেজা কন্ঠে বলে

“সরি। আমি বুঝতে পারিনি। আপনার সাথে টিনাকে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে রাগ হয়েছিল আমার।”

মিসবাহ ক্ষীন স্বরে বলে “তুমি অবুঝ না সুর। স্বামী স্ত্রীর মাঝে মান-অভিমান হবে আবার ঠিক হয়েও যাবে। স্বামীর স্ত্রীর মাঝে যায় হোক না কেন কখনো বাড়ির কাউকে বলতে নেই। তারা আমাদের মা বাবা। আমাদের জন্য তাদের চিন্তা হয়। সামান্য বিষয়ে কি তাদের চিন্তায় ফেলা ঠিক? হ্যাঁ মানছি তুমি কিছু বলোনি কিন্তু তারা বুঝতে পারে সুর। তোমার জন্য চিন্তা হয় সবার। তাদের সবার কাছে আগে তুমি। তোমার কি উচিত না তাদের কে চিন্তা মুক্ত রাখা?”

মিসবাহ ক্ষীন হেসে আবার বলে “টিনাকে আমার সাথে দেখে খারাপ লেগেছে তোমার। এটা স্বাভাবিক। আমরা আমাদের ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারোর সাথে সহ্য করবো না এটাই স্বাভাবিক। বরং আমি খুশি তোমার আমার জন্য এতো উৎকণ্ঠা দেখে‌। কিন্তু সামান্য এক বিষয়ে এতো বড় অপবাদ কিভাবে দিতে পারো সুর? আমি কি অন্য পুরুষের মতো তোমার উপরে জোর করে পুরুষত্ব ফোলায়? নাকি কখনো তোমার ইচ্ছে ব্যতিত তোমাকে ছুঁয়েছি সুর? একটাই আফসোস কি জানো তো আমার শখের নারী কখনো আমাকে বুঝলোই না। আর না বোঝার চেষ্টা করলো।”

সূরা মিসবাহর বুকে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। সে কি তার ডাক্তার কে কষ্ট দিয়ে ফেললো? হ্যাঁ কষ্টই তো দিয়েছে সে। কিভাবে বলতে পারলো তিক্ত কথা গুলো? বুক কেন কেঁপে উঠলো না তার । কই তার ডাক্তার তো কখনো তার অনুমতি ছাড়া কাছে আসেনি। তাহলে কিভাবে বলতে পারলো? মিসবাহ চোখ বন্ধ করে নিষ্প্রভ কন্ঠে বলে

“কেঁদো না সুর । তোমার কান্নায় আমার বুকে রক্তক্ষরণ হয়। তোমার বলা কথাগুলো সহ্য করতে পারলেও তোমার কান্না মিশ্রিত মুখোস্রি আমাকে বড্ড পোড়ায়। একটা কথা মনে রাখবে কথা আর তীর কখনো ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। দুটোই কিন্তু বুকে ছিদ্র করে নিঃশেষ করে দেয় অপর মানুষটাকে।”

সূরা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মিসবাহকে। হেঁচকি উঠে গেছে তার। ভেজা কন্ঠে বলে

“এমন করে বলবেন না ডাক্তার। আমি ওই ভাবে বলতে চাইনি। আমি জানিনা আমার কি হয়েছিল? আমার তিক্ত অতীত আমি না চাইলেও আমার জীবনে হানা দেয় ডাক্তার‌। ও ডাক্তার! আপনি এভাবে বললে যে আপনার সুরজানের কষ্ট হয়।”

“ঘুমিয়ে পরো সুর রাত হয়েছে।”

সূরা নাক টেনে বলে “না আদর করেন আমায়।”

মিসবাহ কপালে ভাঁজ ফেলে। এই মেয়ে কি পন করেছে তাকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে আবার জীবন্ত করবে তারপরে আবার পড়াবে। এই আল্লাদির আল্লাদিপোনায় মিসবাহ হিমসিম খায় একে সামলাতে। কতো সহজে বলে দিল সে পুরুষত্ব ফোলায়। তাহলে এখন যখন মিসবাহ দূরে সরে যাচ্ছে তখন তার কষ্ট কেন হচ্ছে? নিষ্ঠুর রমনী নিষ্ঠুর রয়ে গেল আজীবন। মিসবাহ ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। গম্ভীর স্বরে বলে

“ঘুমাও সুর। আমাকে আর কতো পোড়াবে।”

সূরা মাথা উঁচু করে মিসবাহর বুকে পরপর কয়েকবার ওষ্ঠধর ছোঁয়ায়। বলে ” বুকের ব্যথা কমেছে।”

“ঘুমাও মেয়ে।”

সূরা ছলছল চোখে মিসবাহর দিকে তাকালো। মিসবাহ শান্ত চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। দুজনের ওষ্ঠধর ছুঁই ছুঁই। সূরা ডুকরে কেঁদে উঠলো। বলে

“আমাকে আপনি কেন এতো ভালোবাসেন ডাক্তার? আপনার এতো ভালোবাসার যোগ্য আমি না। কখনো আপনাকে কষ্ট-যন্ত্রনা ছাড়া কিছুই দিতে পারলাম না।”

মিসবাহ সূরাকে বালিশে শুয়ে দেয়।আধশোয়া হয়ে সূরার মুখের দিকে তাকিয়ে কন্ঠে খাদ নামিয়ে বলে

“ভুল বললে মেয়ে। তোমাতে মুগ্ধ আমি। এক নারীতে আসক্ত পুরুষ আমি। তোমার ওই কান্না মাখা মুখোস্রি দেখে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। তোমার ওই লজ্জারাঙ্গা মুখোস্রি আমার হৃদয়ে শিহরণ জাগায়।”

সূরা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মিসবাহকে। ভেজা কন্ঠে বলে

“আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি ডাক্তার।”

“আমিও আমার চন্দ্রকান্তাকে খুব ভালোবাসি। ঘুমাও সোনা। সারাদিন ছিঁচকাদুনের মতো অনেক কেঁদেছো। লোকে বলবে আমি আমার বউ কে খেতে দিইনা। মারধোর করি।”

সূরা ফিক করে হেসে উঠে বলে “ঘুমাবোনা। আদর চাই আমার।”

“তুমি বড্ড বেশি জ্বালাতন করো সুরজান।”

সূরা ছলছল চোখে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। মিসবাহও হাসে। এই মেয়েটা তার বড্ড আপন।

★★★★★★★

তপ্ত দুপুর। ঘেমেনেয়ে একাকার কিশোরী। বিলাসবহুল কেবিনের দরজা সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে। ভেতরে ঢোকার সাহস পাচ্ছে না। রায়হান বারবার করে বলেছে সে যেন পড়াশোনায় মন দেয়। কিন্তু তার কি দোষ পড়াশোনায় মন না বসলে। বজ্জাত মন ওই বজ্জাত লোকটার কথায় ভেবে চলেছে। আর এক বছর পরেই এইচএসসি পরীক্ষা তার। এই পরীক্ষা দিয়েই সে বাবাকে বলবে তার আর রায়হানের বিয়ে দিয়ে দিতে। এসব পড়াশোনা তার দ্বারা হবে না। মেহের কেবিনের দরজা হালকা খুলে ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে উঁকি দেয়। চোখ তার ছানাবড়া। দ্রুত মাথা সরিয়ে নিল সে‌। পালানোর জন্য দৌড় দেওয়ার প্রস্তুতি নিতেই ভেতর থেকে গম্ভীর স্বরে থমকে যায় তার পা। গম্ভীর পুরুষালী ভরাট কন্ঠে কেউ বলে উঠলো

“ভেতরে আয়।”

মেহের ঠোঁট উল্টালো। তার আগেই বোঝা উচিত ছিল এমন ধূর্ত মানবের চোখ ফাঁকি দেওয়া তার কর্ম না। মেহের মাথা নিচু করে দরজা ঠেলে ভেতরে যায়। আড়চোখে সোফায় বসা নিজের যম নামক বড়ো ভাইকে দেখে নেয়। মিসবাহ তার দিকেই তাকিয়ে আছে শিকারির নজরে। আজ আর প্রানে বেঁচে যেতে পারবে না সে। সঙ্গে সঙ্গে মাথা নিচু করে নিল মেহের। পরক্ষনে আবার আড়চোখে তাকালো চেয়ারে বসে থাকা রায়হানের দিকে। সেও তার দিকে তাকিয়ে আছে একরাশ বিরক্তি নিয়ে। আবার মাথা নিচু করে নিল মেহের। সূরা কাতর চোখে তাকিয়ে আছে মেহেরের দিকে। মিসবাহ সোফা ছেড়ে উঠে এসে মেহেরের মুখোমুখি দাঁড়ালো। মেহেরের হাঁটু কাঁপছে। কাঁপারই তো কথা। কিশোরী প্রেম করে প্রথম ধরা খেয়েছে শুধু হাঁটু কেন বুক পর্যন্ত কাঁপছে তার। মিসবাহ গম্ভীর স্বরে বলে

“সোফায় গিয়ে বস।”

মেহের মাথা নিচু করেই দুরুদুরু মন নিয়ে বাধ্য মেয়ের মতো সোফায় গিয়ে বসে। সূরা মেহেরের কাছে গিয়ে বসে। মেহের ছলছল চোখে সূরার দিকে তাকালো। সূরার মায়া হয় মেয়েটাকে দেখে । মিসবাহ রায়হান কে ইশারায় সোফায় বসতে বললে সেও উঠে দাঁড়ালো চেয়ার ছেড়ে। এই মেয়ে ঠিক তার ভয়টা সত্যি করেই ছাড়লো। বন্ধু হারানোর ভয়েই তো এতোদিন নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রেখেছিল সে। রায়হান তপ্ত শ্বাস ফেলে মেহেরের সামনের সোফায় বসে। মিসবাহ গিয়ে মেহেরের পাশে বসলে রায়হান নড়েচড়ে উঠলো। মিনমিন করে বলে

“আসলে মিসবাহ আমি তোকে,,,

“এখন আমি বলবো তোরা দুইজন শুনবি। কথার মাঝে কথা বলা আমার পছন্দ না রায়হান।”

মিসবাহর রাশ ভারি কন্ঠে কেঁপে উঠলো মেহের। রায়হান অপরাধি চোখে তাকালো। আজ কি প্রানপ্রিয় বন্ধুকে হারাতে হবে তার? মিসবাহ গম্ভীর স্বরে বলে

“তোরা কি ভেবেছিস মাকহুল সিকদার মিসবাহ্ ঘাসে মুখ দিয়ে চলে‌? যেখানে সামান্য থেকে সামান্য বিষয়েও সে অবগত, সর্বদা সজাগ সেখানে বন্ধু আর বোন তার নাকের ডগায় প্রেম করবে আর সে কিছুই বুঝতে পারবেনা?”

মেহেরের ভয়ে চোখ ছলছল করে উঠলো। সে মাথা নিচু করেই ভেজা কন্ঠে বলে “আমি রায়হান ভাই কে ভালোবাসি ভাইয়া।”

“আমি তোকে কিছু কি জিজ্ঞাসা করেছি মেহু?”

সূরা বলে “আমাদের আগে ওদের কথা টা শোনা উচিত।”

মিসবাহ রায়হান কে উদ্দেশ্য করে বলল “হ্যাঁ! এখন তুই বল আমাকে ঠকনোর জন্য কি শাস্তি পাপ্য তোর? বন্ধু ঠকালে সেই বন্ধুত্ব রাখা কি উচিত হবে?”

তিনজোরা চোখ চকিতে তাকায় মিসবাহর দিকে। সবার মুখে বিষ্ময়। রায়হান কাতর স্বরে বলে

“পাগল হয়েছিস? আমি তোকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারিনা মিসবাহ।”

মিসবাহ ব্যঙ্গাত্মক স্বরে বলে “কেন? আমি কি তোর বউ লাগি যে তুই আমাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারিস না?”

সবাই প্রায় কনফিউজড। সূরা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। এই লোকের কি ভীমরতি ধরে মাঝে মাঝে? এইরকম সিরিয়াস মুহূর্তেও কেউ এমন কথা বলতে পারে? মেহের ঠোঁট উল্টে কেঁদেই দেয়। বেচারির ছোট মাথায় বেশি চাপ পড়ছে। মিসবাহ গম্ভীর স্বরে বলে

“আচ্ছা একটা কথা বল রায়হান। বন্ধু আর প্রেমিকার মধ্যে কাকে বেছে নিবি তুই?”

রায়হান ক্ষীন হেসে বলল “বন্ধু আমার নিঃশ্বাস হলে প্রেমিকা আমার হৃদস্পন্দন। দুটোই বন্ধ হয়ে গেলে মরন হবে একমাত্র সম্বল।”

মিসবাহ বাঁকা হাসে। না সূরার আর সহ্য হয় না। এই লোক কি শুরু করেছে কি‌? নিজের বেলায় ষোল আনা আর অন্যের বেলায় আনাগুনা। সূরার মুখে বিরক্তি ঝরে ঝরে পড়ছে। মিসবাহ মেহেরের দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বলে

“ভালোবাসিস?”

মেহেরের ছোট প্রতিত্তর “হু।”

মিসবাহ রায়হানের দিকে তাকালো। বললো “তুই?”

রায়হানের সরল স্বীকারোক্তি “ভালোবাসি। তোর বোনকে খুব ভালোবাসি। আমার হৃদয়ের রানী করে রাখবো তাকে। দিবি আমায়?”

মিসবাহ সোফায় গা এলিয়ে বললো “ওর আঠারো হলে ভেবে দেখবো। আপাতত দূরে থাক।”

“আমি দূরেই থাকি তোর বোনকে বল যা বলার।”

মেহের ভ্রু কুঁচকে বলে “রায়হান ভাই এটা কেমন কথা? আপনি জানেন না ভালোবাসলে বেঁধে রাখা লাগে ছেলেদের। নয়তো তারা বাইরে ছুঁক ছুঁক বেশি করে।”

“তুই এর জন্য আমাকে শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে দিস না মেহু? সিরিয়াসলি!”

সূরা শব্দ করে হেসে উঠে মেহেরের কথায়। বলে “আমাদের মেহু ছোট হলে কি হবে একদম ঠিক বলেছে? ছেলেদের বাইরে ছুকছুকানি বেশি থাকে।”

মিসবাহ ভ্রু কুঁচকে বলে “ও ছোট মানুষ। কি বলতে কি বলেছে? তুমি দাঁত কেলিয়ে হাসছো কেন?”

সূরা কটমট করে তাকালো। মিসবাহর ডোন্ট কেয়ার ভাব। সে নির্বিকার ভাবে সোফায় আয়েসি ভঙ্গিতে বসে আছে। রায়হান বলে

“মিষ্টি পরী তুমি একদম এই পাকা মেয়েকে লায় দিবে না। এটা বয়সের তুলনায় একটু বেশিই পেকে গেছে।”

মেহের ভেংচি কাটে। সূরা মিসবাহর দিকে তাকিয়ে আছে। এই লোককে বোঝা তার কর্ম না। সম্পর্ক টা আদৌ মেনে নিল নাকি রিজেক্ট করলো কিছুই তো বুঝলো না। ধূর্ত লোক একটা।

★★★★★★★

পার্টি অফিসে বসে আছে পিয়াস। নিজেকে ব্যস্ত রাখার মধ্যেই এখন সর্বসুখ। জারিফের সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে সে। হঠাৎ কেবিনের ফেরত হন্তদন্ত হয়ে কাশেম কে ছুটে ঢুকতে দেখে জারিফ ভ্রু কুঁচকায়। পিয়াস নির্বিকার। গা এলিয়ে দিল চেয়ারে। কাশেম হাঁপাতে হাঁপাতে বললো

“ভাই শুনেছিস কে যেন তাহিলকে খুন করে ক্লাব ঘরে রেখে গেছে। কি নির্মম ভাবে মেরেছে। সা*লা কে পেলে আমি,,,

“কি করবি?”

পিয়াসের শান্ত স্বরে দুজনে ওর দিকে তাকালো। কাশেম আমতা আমতা করে বলল “মানে?”

“মানে বললাম, যে মেরেছে তাকে পেলে কি করবি? সামনেই আছি যা করার করতে পারিস।”

পিয়াস শান্ত স্বরে কথাটা বললেও বজ্রপাতের মতো শোনাল যেন কাশেম আর জারিফের কাছে। চকিতে তাকায় তারা। জারিফ ভয়ার্ত কন্ঠে বলল

“কি বলছিস কি?”

“যা সত্যি তাই বলছি।”

কাশেম দরজা লক করে একটা চেয়ার টেনে বসে। ফিসফিসিয়ে বললো “ওরে মারলি ক্যান ভাই?”

পিয়াসের সরল স্বীকারোক্তি “জানিস না শত্রুর শেষ রাখতে নেই।”

জারিফ বলে “তাহিল তোর শত্রু। ও তো আমাদের বন্ধু পিয়াস।”

পিয়াস তাচ্ছিল্য হাসে। চোয়াল শক্ত করে বলে “যে নিজের বন্ধুর ভালো চাইনা সে কেমন বন্ধু? অনুকে সেইদিন রাতে আমার সাথে কাটানোর জন্য ওই তো শিখিয়েছিল। আমাকে নেশার ওষুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে সবকিছু ওর প্লান মাফিক হয়েছে। আমার সুরকে কষ্ট দিতে চেয়েছিল ওই জা**বাচ্চা। অনুর অনুভূতিকে ব্যবহার করে আমাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। তাই শত্রুর শেষ রাখিনি আমি। আমি আবার ওতোটাও মহান না।”

জারিফ ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কাশেম বলে “সূরা কে ভুলে যা পিয়াস। সে তো দিব্যি আছে তার সংসার নিয়ে।”

পিয়াস চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিল। তাচ্ছিল্য হাসে। বলে “পিয়াসরা ভুলতে জানেনা। তারা ভালোবাসতে জানে। তুই বুঝবি না। একপাক্ষিক ভালোবাসায় যে সুখ আছে সেই সুখ সবাই পায়না। আমি সেইদিক থেকে ভাগ্যবান বল।”

জারিফ শক্ত কন্ঠে বলে “দেবদাস হতে চাস সা**লা?”

পিয়াস শব্দ করে হেসে উঠলো। বলল “ভুল বললি। দেবদাস পারুর জন্য জীবন দিয়েছিল কিন্তু আমি দেবদাস না। পিয়াস তার সুরের জন্য জীবন দিবে না। পিয়াস তার সুরের সুখ নিজে চোখে দেখে শূন্যতার মাঝেও পরিপূর্ণ হবে।”

জারিফ আর কাশেম অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে পিয়াসের দিকে। তাদেরও তো কম দোষ না। সেদিন পিয়াসকে যেতে না দিলে আজ হয়তো বন্ধুর এই অসহনীয় যন্ত্রণার সাক্ষী তাদের হতে হতো না। পিয়াস শব্দ করে হাসে। চোখ বেয়ে অবাধ্য অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। ভেজা কন্ঠে বলে

“তোর কোথাও আমি নেই সুর! কোথাও আমি নেই! কিন্তু দেখ আমার পুরোটাই তুইময়। এই শহরে পিয়াসরা একা। এই শহরের অলিতে গলিতে পিয়াসদের আত্ম চিৎকার বলে দেয় তারা তার শখের নারীকে খুব ভালোবাসে। পথহারা পথিক আমি শহরের অলিতে গলিতে তোকে খুঁজি। কোথায় তুই। ছুঁতে গেলেই ধোঁয়াসায় মিলিয়ে যাস।”

#চলবে ……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here