#শিশির_ভেজা_শিউলি
#পর্ব_৪
#ইবনাত_ইমরোজ_নোহা
(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না।কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫)
রজনীর দ্বিতীয় প্রহর। স্নিগ্ধ অনিলে ভেসে আসছে নাম না জানা ফুলের ঘ্রাণ। ছাদের একপাশে হাতে জলন্ত সিগারেট নিয়ে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চন্দ্র বিলাস করতে ব্যস্ত এক সুদর্শন যুবক। জোৎস্নার আলোয় যেনো তার চোখে মুখের মায়া উপচে পড়ছে। এই মায়াকারা সুদর্শন যুবককে দেখে যেকোনো রমনী ঘায়েল হতে বাধ্য। যে রমনী সুদর্শন পুরুষটির মায়াময় মুখোস্রি, সুগভীর চোখ, নজরকাড়া ঠোঁটের হাসি উপেক্ষা করে, সে রমনী নিঃসন্দেহে নিষ্ঠুর। প্রকৃতিও যেনো ঘোর বিরোধিতা করে সে রমনীর। প্রকৃতি রাগান্বিত স্বরে বলে ওঠে ” ওহে রমনী তুমি নিষ্ঠুর কন্যা।পাষানী তুমি। এ তুমি কাকে উপেক্ষা করছো। তুমি কি দেখোনা প্রকৃতিও তার প্রেমে পড়েছে। বারবার বারংবার প্রেমের সুর তোলে শুধু সুদর্শন পুরুষটির জন্য। তুমি হৃদয়স্পর্শী রাজকন্যা তার। সে যে তোমাতে মুগ্ধ। তুমি নির্বোধ রাজকন্যা।” মিসবাহ তার পুরুষালী ঠোঁটের ভাজে জলন্ত আগুনের বস্তুটি নিয়ে সুখটান দেয়। চাঁদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে নাক মুখ দিয়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছাড়ে। তার বুকের বাম পাশেও একটা নিষ্পাপ চন্দ্র আছে। যে তাকে বড্ড পীড়া দেয়। বড্ড পুড়ায়। তার নিজস্ব আকাশের শশীকন্যা সে।
“রাত কি হয়নি? এতো রাত জাগা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। আর সিগারেট খাওয়া তো আরো ক্ষতিকর।”
মিসবাহ হয়তো জানতো তার বন্ধুর মতো বাবা আসবে তাই স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষীণ স্বরে বলল
“এতোই যখন জানো তখন এটা জানোনা ছেলের হাত থেকে সিগারেট নিয়ে খাওয়াও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। নাকি এই কথাটা শুধু আমার জন্য প্রযোজ্য।”
মাহমুদ সিকদার মিসবাহর থেকে সিগারেট নিয়ে টান দিতেই কথাটি বলে উঠলো মিসবাহ। তিনি ভ্রু কুটি করে বলেন
“সেতো আমি তোমাকে সঙ্গ দিতে এলাম।”
“মা কি জানে তার প্রাণপ্রিয় স্বামী তার ছেলেকে সঙ্গ দিতে সুখটান দিচ্ছে?”
“তোমার মা রাগ করে এইমাত্র ঘুমিয়েছে। বড্ড বেশি টেনশনে ফেলছো আজকাল আমাদের। ঘুমের ওষুধ খেয়েছে সে। কাল সকালের আগে উঠবে না। এতো রাত হলো কেন?”
মিসবাহর সরল স্বীকারোক্তি “তোমার বউমার বাসার নিচে দাড়িয়ে ছিলাম। কখন এতো রাত হয়েছে বুঝিনি বাবা।”
মাহমুদ সিকদার ছেলের কাধে হাত রাখলেন। নরম কন্ঠে বললেন
“তুমি বললে সূরা মামনির বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যায় আমরা। আর কতোদিন এভাবে চলবে। বছর তো পেরিয়ে গেলো।”
“না বাবা। আমি চাই সে আমাকে ভালোবেসে গ্ৰহন করে নিক।”
“এখনো আমাদেরকে সূরা মামনিকে দেখালে না। তোমার মা বোন তাকে দেখতে চাই।”
“অপেক্ষা করো। সময় হলে ঠিক দেখা পাবে তার। ঘোর অমাবস্যার তিথিতে তার দেখা পাওয়া দুষ্কর বাবা। সে যে শশীকন্যা। অমাবস্যায় কি দেখা মিলবে তার?”
ছেলের কথা শুনে মাহমুদ সিকদার ক্ষীণ হাসলো। ছেলে তার কষ্টে আছে বুঝতে বাকি নেই তার। একমাত্র ছেলে তার। ছেলের ভার মুখ দেখে তার কষ্ট হয়। বাবা হিসেবে ব্যর্থ মনে হয় নিজেকে। কি হলো ছেলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে যদি না সে ছেলের কষ্ট লাঘব করতে পারেন। ছোট থেকে ছেলে তার মনের সব কথা আগে তাকে বলে। এখনো ছোট বড় সবকিছু তাঁর কাছে বলা চাই। সূরাকে না দেখলেও এই বাড়ির প্রত্যেকে জানে সূরা নামক মেয়েটিকে তার ছেলে ভালোবাসে। কিন্তু সব জেনেও তাদের কিছু করার নেই। নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। ছেলের কষ্ট কম করার প্রয়াসে ব্যঙ্গাত্মক স্বরে বললেন
“তুমি কি আমার ছেলে? আমার ছেলে হলে মেয়ে পটানোর কৌশল এতো স্লো কেন?এতো লেট লতিফ হলে তো দাদা ডাক আর শোনা হবে না আমার। দাদা ডাক না শুনেই কি পৃথিবী ছাড়তে বলছো।”
মিসবাহ ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললো “আমি তোমার ছেলে কিনা সেটা তো তুমি বলতে পারবে। মায়ের প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস। তোমাকে ভরসা নেই। সত্যি করে বলো তো, আই প্রমিস মা কে কিছু বলব না।”
মাহমুদ সিকদার চোখ ছোট ছোট করে বলে “অসভ্য ছেলে বাবা কে অবিশ্বাস করছো। এতো নির্লজ্জ কিভাবে হলে?”
মিসবাহ ঠোঁটে বাঁকা হাসি বজায় রেখেই বললো “লজ্জা নারীর ভূষণ। পুরুষ হয়ে লজ্জা পেলে না আমার বাবা ডাক শোনা লাগবে আর না তোমার দাদা ডাক।”
মাহমুদ চৌধুরী ছেলের কথায় বিরক্ত হলেন। তার ছেলে এতো ঠোঁটে কাটা কেন? এবার আরো বেশি সন্দেহ হচ্ছে। এই ছেলে ওনার কিনা। তিনি কিছু না বলেই দ্রুত গতিতে চলে গেলেন। এখানে আর থাকা যাবে না। বাবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মিসবাহ মুচকি হাসলো। সে জানে তার বাবা মা কতটা ভালোবাসে তাকে। সূরা কে তার বাবা এই বাড়িতে পুত্রবধূ করে স্বসম্মানে বরণ করতে চাই। কিন্তু মেয়েটা বড্ড অবুঝ।বার বার তাকে উপেক্ষা করে। ভালোবাসা তে এতো ভয় কিসের তার মিসবাহ বুঝেনা। দীর্ঘশ্বাস ফেলল মিসবাহ্। নাহ্ এবার সূরার সাথে সামনাসামনি কথা বলতে হবে।
★★★★★★
মেডিকেল কলেজের বড়ো কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে আছে পঞ্চপাণ্ডব। নামটা অবশ্য ক্লাসমেটরা দিয়েছে। যেখানেই যায় পাঁচ মাথা নাকি তারা একসাথে দেখতে পাই। তাই এই নামকরন তাদের। অবশ্য মিথ্যা বলেনা তারা। এরা আসলেই পঞ্চপাণ্ডব। পরপর তিনটি ক্লাস করে ক্লান্ত সবাই। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে। ক্লাস টা ড.মাকহুল সিকদার মিসবাহর। সূরাদের থেকে একটু দূরে দুটো কপোত কপোতী নিজেদের মধ্যে প্রনয় বিনিময় করতে ব্যস্ত। ছেলেটি সুন্দর করে মেয়েটির চুল কানে গুজে দিচ্ছে। মেয়েটিও মিষ্টি হাসি উপহার দিচ্ছে। এসব দেখে হাসলো সূরা। ভালোবাসা সুন্দর যদি অপর মানুষটি নিঃস্বার্থ, মানুষের মতো মানুষ হয়। আর ঐ ভালোবাসায় বিষাক্ত, প্রাণঘাতী হয় যখন অপর মানুষ টি অমানুষ হয়। সূরার কাছে ভালোবাসা বিষাক্ত। যা তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। এর থেকে মুক্তির উপায় জানা নেই সূরার। আজ অদ্ভুত কিছু কারনে সূরার মন মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। আজ কলেজে ঢুকতেই কোথায় থেকে তার পায়ের কাছে তিনটি ছেলে হুড়মুড়িয়ে পরে।প্রথমে সূরা হকচকিয়ে যায়। তারপর ভালোভাবে খেয়াল করলে বুঝতে পারে এরা কালকের ছেলেগুলো। কিন্তু এদের এই অবস্থা দেখে সূরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তিনজনেরই একটা করে হাত ভাঙ্গা। মাথায় ব্যান্ডেজ। বেশ নির্মমভাবে মেরেছে কেউ এদের বুঝতে বাকি নেই সূরার। ছেলে তিনটা বারবার করে ক্ষমা চাচ্ছে সূরার কাছে। তাদের একটাই কথা”মা মাফ করে দিন”। সূরা প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় ।মা কেন বলছে এরা। কাল সূরা মায়ের বয়সী বলেছিল নিজেকে তাই কী? একটু ধাতস্থ হয়ে যখন বললো কে মেরেছে তাদের। তখন ওদের কথা শুনে অজ্ঞান হওয়ার জোগাড় সূরার। শুঁটকি মাছের মতো হ্যাংলা পাতলা ছেলেটি বলল “বাবা মেরেছে মা কে বিরক্ত করার জন্য।”এটা কোনো কথা হলো। তখন থেকে সূরা একটাই কথা ভাবছে এই কাজ মিসবাহর ছাড়া কারো হতে পারে না। সূরা মিসবাহ কে খুব ভালো ভাবে চেনে। এই কলেজে মিসবাহর শিক্ষকতা করছে প্রায় আড়াই বছর হবে। প্রথমে মনে হতো কেউ তাকে নজরে নজরে রাখছে। প্রথম প্রথম কিছু না বুঝতে পারলেও পরে বুঝতে পারে সূরা। প্রায় দুই বছর ধরে সে মিসবাহ কে প্রত্যাখ্যান করছে। কিন্তু মানুষটার এতে কোনো হেলদোল নেই। বারবার এভাবে মানুষটাকে ফিরিয়ে দিতে কষ্ট হয় সূরার। মানুষ টা কেন বুঝে না?কেন?
“কীরে বিদ্যার রানী কোন জগতে হারিয়ে গেছস? নাকি এখানে বসেই নতুন কোনো সূত্র আবিষ্কার করছিস?”
জিহাদের কথায় সূরার ভাবনারছেদ ঘটলো। সূরা কটমট করে জিহাদের দিকে তাকিয়ে বলল
“কী সমস্যা?”
“আমার একটাই সমস্যা সা**লা আমি সিঙ্গেল। তোরা চার জন মিঙ্গেল সা**লা আমি সিঙ্গেল।”
হতাশায় ডুবে কথাটি বলতেই সিহাব দুম করে কিল বসাল জিহাদের পিঠে। তারপর বলল
“মানছি আমি আর দিয়া একে অপরকে ভালবাসি। এটাও মানছি রাফি প্রথম বর্ষের একটা মেয়ের পেছনে লাট্টুর মতো ঘুরছে। কিন্তু সা**লা সূরা কে তোর কোন দিক থেকে মিঙ্গেল মনে হলো?”
জিহাদ একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল “আমি কি গা**ধা? নাকি আমার পেছনে গা**ধা লেখা আছে? মিসবাহ স্যার কে চেনোস ? তোর প্রান প্রিয় খালামনির একমাত্র ছেলে। তোর প্রান প্রিয় সম্মানিয় বড়ভাই। আমাদের হাড় জ্বালানো শিক্ষক। তিনি আমাদের কলিজার টুকরা বান্ধবীকে ভালোবাসেন। এখন তুই বল এই যে বিদ্যার রানী ইনি কি সিঙ্গেল?”
এতোক্ষণ জিহাদ এর কথা সবাই শুনেছিল। এমনি সকালের ঘটনার জন্য সূরার রাগ হচ্ছে মিসবাহর ওপর। আর এখন জিহাদের আবুল মার্কা কথা আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করল। সূরা এবার রেগে জিহাদের হাত খামচে ধরল। তারপর চুল ধরে মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলল
“একদম বজ্জাতের হাড্ডির নামের সাথে আমাকে জরাবি না। আমি কি একবারও বলেছি আমি ওনাকে ভালোবাসি। মিথ্যে অপবাদ কেন দিবি? বল আর বলবি? বল?আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।”
দিয়া তড়িঘড়ি করে সূরাকে টেনে নিয়ে আসলো জিহাদের থেকে। জিহাদের অবস্থা সোচনীয়। বেচারার আধা ঘন্টা ধরে সেট করা চুলের করুন মৃত্যু নিজে চোখে দেখে সে বাকরুদ্ধ, মর্মাহত। এতো দিন একসাথে আছে সূরাকে কেউ এতো হাইপার হতে দেখেনি। হঠাৎ সূরার কি হলো এটাই ভাবছে সবাই। রাফি সূরার দিকে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের মেয়েটা রাগে ক্ষোভে লাল হয়ে গেছে। ঠোঁট দুটো রাগে বার বার কেঁপে উঠছে। একবার দেখে যে কেউ মায়াবতী বলবে এই মেয়েকে। মায়াবী চোখ সবচেয়ে আকর্ষণীয়। কিন্তু এখন এই চোখ যেন অগ্নিকুন্ড। সামনের সবকিছু ধ্বংস করতে এই চোখই যথেষ্ট। রাফি শুকনো ঢোক গিলে পানির বোতল দিল সূরার হাতে। বিনা বাক্যব্যয়ে সূরা পানি খেয়ে নিল। একটু পর হঠাৎ জোরে জোরে হাসতে শুরু করলো। এবার তো সিহাব ,রাফি ও দিয়ার জান যাই যাই অবস্থা। ভয় ভয় চোখে সবাই সূরা কে দেখছে। আর জিহাদ তো পারেনা বোতলের পানিতে ডুবে মরতে। সবাই কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসি চেপে সূরা বলল
“কি রে এভাবে ভূত দেখার মতো করে তাকিয়ে আছিস যে। আমি কি ভূত?”
“শ্যাওরা গাছের পেত্নী”
বলেই সাথে সাথে জিভ কাটল জিহাদ।দেখল তিনজন নিহত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এদের এভাবে তাকানোর অর্থ “আজ তোর শেষ দিন জিহাদ। জীবনে আর বাসরও হবেনা বাবা ডাক শোনাও হবেনা। রাক্ষসী রানী সূরা তোকে আজ লবন ছাড়ায় গিলে খাবে”। জিহাদ একটা আবুল মার্কা হাসি দিয়ে আমতা আমতা করে বলল
“ইয়ে মানে রাক্ষস রানী,,না মানে বিদ্যার রানী ,,ধুর বা** । সূরা সোনা আমার। আমি না তোর কলিজার টুকরা বন্ধু। আমাকে খাসনা বোন। আমি পারলে তোকে পেট পুরে বিরিয়ানি খাওয়াবো। আমায় মাফ দে বোন। আর এ জনমে ওই হাড় জ্বালানো স্যারের নাম মুখে আনবোনা। মাফ দে।”
“ঠিক আছে মাফ করতেই পারি যদি সত্যি সত্যি বিরিয়ানি খাওয়াস তোহ্। বল রাজি।”
জিহাদ একে একে সবার দিকে তাকালো। দেখলো সব গুলা শয়তান ওর দিকে দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে। জিহাদ অতিকষ্টে বলল
“আমি জানি আজ আমার কষ্টের দিন। এই দিন আন্তর্জাতিক শোক দিবস পালিত হক। ক্লাস করে সবগুলো কু** আমার লগে যাস।গিলার আমন্ত্রণ জানানো হলো।”
জিহাদ এর কথা শুনে সবাই হাসলো। হঠাৎ দিয়া সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে উঠলো
“সূরা তুই কি সত্যি স্যার কে ভালোবাসিস না? স্যার তোকে সত্যি অনেক ভালোবাসে। তোর এতো অপমান, উপেক্ষা, প্রত্যাখ্যান সহ্য করে তোকে নিজের করে চায়। একবার কি ভাবা যায় না?”
সিহাব বলল ” ভাই তোর জন্য পাগল সূরা। খালামনি খালুজান তোকে দেখতে চাই। আমাকে বলেছে তোকে একবার নিয়ে যেতে। তুই কি যাবি?”
সূরার কাটকাট প্রতিওর “আমি কেন যাবো? আমি কি তাদের ছেলের বউ নাকি গার্লফ্রেন্ড?”
সূরার কাটকাট জবাবে ঈষৎ রাগ হলো বন্ধুমহলের সবার। সিহাব শান্ত স্বরে বলল
“ভাই চাইলে মেয়েদের লাইন পরে যাবে তার পেছনে সেটা আমরা সবাই জানি। তবুও তুই কেন ফিরিয়ে দিস বলবি? দুই বছর ধরে একটা ছেলে তোর পেছনে পরে আছে। এটা কি মজা মনে হয় তোর কাছে?”
শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো সূরা “আমাকে তোরা এভাবে কেন বলছিস সিহাব? আমি ভালবাসি না তাকে।”
“কেন ভালবাসোনা না সুর?”
হঠাৎ পেছন থেকে মিসবাহর কথা শুনে ঘাবড়ে গেল পঞ্চপাণ্ডব। শুধু সূরা নিজের জায়গায় সোজা হয়ে বসে আছে। ভাব এমন যে পেছনে কেন সামনে, ডানে বামে যেদিকেই হোক পৃথিবীতে চতুর্থ বিশ্ব যুদ্ধ লেগে গেলেও সে নড়বেনা।
মিসবাহ এবার সূরার সামনে এসে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিল
“বলো সুর?কেন ভালোবাসা যাবেনা আমাকে?”
সূরার ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল।সে হাসি মিসবাহর বোধগম্য হলো না। সূরা কাটকাট শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো
“ভালোবাসা বিষাক্ত। শরীরের শিরায় শিরায় বিষ ছড়িয়ে পড়ে। সে কি মরন যন্ত্রনা ডাক্তার। ওহ্ ডাক্তার! আমি যে বড্ডো ভীতু। মরনকে ভয় পায় আমি। কিভাবে নিজের প্রানঘাতিনী হয় আমি ডাক্তার?”
সূরার কথা শুনে মিসবাহ কি বলবে বুঝতে পারছেনা। সে কি ঠিক শুনল। এ কেমন যন্ত্রণা তার প্রেয়সীর। কিন্তু মেয়েটার মুখে অনেক দিন পরে ডাক্তার সম্বোধন শুনে সুখ সুখ লাগছে তার। অজানা শিহরণ খেলে গেল বক্ষপিঞ্জরে। চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে বুকের বাম পাশের স্পন্দিত মাংসপিণ্ডটায়।এই ব্যথাতেও সুখ সুখ লাগছে মিসবাহর। বরাবরই সূরা মিসবাহ কে স্যার বলে। যখন আবেগ, অনুভূতি মিশ্রিত কণ্ঠে বলে তখনই সূরা ডাক্তার সম্বোধন করে মিসবাহ কে। সিহাব কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে আসছিল মিসবাহ তখনি তার কানে আসে সূরার কথা। বুকে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে তার।এ কি যন্ত্রণা দিচ্ছে তার শ্যামলতা। সূরা কথা গুলো বলেই আর বসলো না। গেটের দিকে হাঁটতে শুরু করল। হঠাৎ করেই তার কাঁদতে ইচ্ছা করছে। আর কতদিন সে ওই মানুষটাকে প্রত্যাখ্যান করবে? নিজেকে দুর্বল মনে হচ্ছে সূরার। এখনি কী মাটিতে লুটিয়ে পড়বে সে। যেতে হবে তাকে মিসবাহর থেকে দূর, বহুদূর। তার পিছু পিছু দিয়া ছুটলো। সূরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মিসবাহ বিরবির করলো
“এ তোমার কোন রুপ মায়াবিনী। এ তুমি কোন দহনে দগ্ধ করছো আমাকে। পাষানী মায়া করো একটু। তোমাকে দেখার তৃষ্ণা মেটাতে সাহায্য করো।”
চলবে…….