শিশির_ভেজা_শিউলি #পর্ব_১৮ #ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

0
579

#শিশির_ভেজা_শিউলি
#পর্ব_১৮
#ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না।কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫)

চন্দ্রের জ্যোৎস্নায় আলোকিত মেদিনী। চাঁদ আজ বুঝি খিলখিলিয়ে হাসছে। জ্যোৎস্নার রশ্মি যখন নিকষকৃষ্ণ দিঘীর জলে পড়ে তখন চিকচিক করে উঠে সেই জল। হয়তো সেও চন্দ্রের হাসির সাথে তাল মিলিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। চন্দ্রের জ্যোৎস্নায় ঢাকা পরে যায় চন্দ্রের শত কলঙ্ক। ওই শশীর আজ এতো খুশির কারন জানা নেই সূরার। চলন্ত গাড়ির ভেতর থেকে সে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে চন্দ্রের হাসির দিকে। ছোটবেলায় ভাবতো সে যেদিকে যায় চন্দ্র সূর্য বুঝি তার পিছু পিছু যায়। তখন কতো বকে দিতো চন্দ্র সূর্য কে তার পিছু পিছু যাওয়ার জন্য। একবার তো নুহাশকে নালিশ করে বলেছিল “ভাইজান তুমি এই বাজে সূর্য কে বকে দিও তো।সে কেন আমার পিছু পিছু যায়। তুমি তো জানো আমার একদম গরম ভালো লাগে না। বকে দিবে তো?” ছোট সূরার বোকা বোকা কথায় তখন নুহাশ সায় জানিয়ে বলেছিল “বকে দিবো সূর্য কে। তার সাহস কি করে হয় আমার পুতুলকে বিরক্ত করার।”ছোট সূরা তখন খিলখিলিয়ে হেসেছিল। শৈশবের কথা ভেবে অজান্তেই হেসে উঠলো সূরা। শৈশবের কতো সুখময় স্মৃতি। তখন মনে হতো কবে বড় হবে কিন্তু এখন মনে হয় তাকে যদি কেউ বলতো শৈশবে ফিরে যেতে চাই কিনা তাহলে সে এক সেকেন্ডও অপেক্ষা না করে ফিরে যেত। ফিরে আর কখনো বড় হতে চাইতো না সে।কখনো না।

“কিরে বিদ্যার রানী? আছিস নাকি মঙ্গল গ্রহে চাষাবাদ করতে গেছিস?”

জিহাদ পেছনের সিট থেকে সূরার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল। লহমায় হকচকিয়ে গেল সূরা। কটমট করে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়। তার তাকানো দেখে জিহাদ ক্যাবলামার্কা হাসি দেয়। মনে হচ্ছে টুথপেস্টের এ্যাডের শুটিং চলছে জিহাদের। বত্রিশ টা দাঁত দেখানো চাই-ই চাই। সূরা দাঁতে দাঁত চেপে বলল

“একদম জ্বালাতন করবিনা আমাকে। শয়তানের নানা সবগুলা। বেশি জ্বালাতন করবি তো দুই গালে দুই থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিবো।”

সূরার কথায় পঞ্চপান্ডবের চারজন আর রায়হান ঠোঁট উল্টে একে অপরের দিকে তাকায়। এরপর সবার দৃষ্টি গেল ডাইভিং সিটে বসে অভিজ্ঞ হাতে ডাইভ করা মিসবাহর দিকে। মিসবাহ কে দেখে মনে হচ্ছে এখন এই মুহূর্তে গাড়ি ডাইভ না করতে পারলে আর কখনও গাড়ি চোখে দেখতে পাবে কিনা সন্দেহ। এখন তার ধ্যান জ্ঞান ডাইভিং আর ডাইভিং।ফোস করে শ্বাস ফেললো পাঁচজন। এই দুই কপোত কপোতীর মধ্যে বেচারা পঞ্চপান্ডব ফেঁসে গেছে। তাদের কি দোষ। আজ পরীক্ষা শেষ হওয়ায় আজ কেই তারা ঠিক করে গ্ৰামে যাবে। ঢাকা থেকে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে তারা রওনা দেয় প্রায় আধাঘন্টা হবে‌। মিসবাহ, রায়হান, সিহাব, রাফি আর জিহাদ সুখনীড় থেকে রওনা দেয় দিয়া আর সূরাকে নেওয়ার জন্য। ওদের নিয়ে তারা যাবে তাদের গন্তব্যে। কিন্তু রাস্তায় মিসবাহর মধুর কন্ঠে বলা মধুবানী শুনে গলা শুকিয়ে যায় চারজনের। মিসবাহ বলে

“ফ্রন্ট সিটে আমি সূরাকে দেখতে চাই। ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চাদের মধ্যে একজনও যদি ফ্রন্ট সিটে বসেছিস তাহলে সবগুলোকে মাঝরাস্তায় চলন্ত গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো। পরে আবার বলতে পারবিনা আমি সাবধান করিনি তোদের।”

কাঁদো কাঁদো মুখ করে বসেছিল তিন বন্ধু।রায়হান তো মিটিমিটি হাসছে বন্ধুর পাগলামি দেখে। জিহাদ ভাবলো ওই রাক্ষস রানী কটকটি আজ খেয়ে ফেলবে তাদের যদি ওকে ফ্রন্ট সিটে বসতে বলে তারা। এতো ডাঙায় বাঘ জলে কুমির। সূরাদের বাসার নিচে গাড়ি থামতেই রাফি আর রায়হান নেমে গিয়ে পেছনে বসে।মাঝের তিন সিটে জিহাদ, সিহাব বসে পড়ে। মিসবাহ ঠোঁট চেপে হাসে এদের কান্ড দেখে।সূরা আর দিয়া নেমে আসতেই দিয়া গিয়ে হুড়মুড়িয়ে সিহাবের পাশে বসে পড়ে।সূরা জিহাদ কে বলে ফ্রন্ট সিটে বসতে। কিন্তু জিহাদ জানায় তার বমি পায় নাকি।রাফি আর সিহাবকেও বসতে বললে তাদেরও কথার শেষ নেই। অগত্যা সূরা ফ্রন্ট সিটে বসে।এর আগেও অনেকবার বসেছে মিসবাহর পাশে কিন্তু আজ রাগে অভিমানে সে বসতে চাইনি মিসবাহর পাশে। বজ্জাত লোকটা সকালে সকলের সামনে অপমান করেছে তাদের। কি ভেবেছে সূরা ভুলে গেছে।কখনো না। বজ্জাত লোক একটা। কিন্তু পরক্ষণে এটা ভাবলো কাল রাতে কি ব্যবহার করেছিল সে। কি করে ঐ সব তিক্ত কথা বলতে পারলো সে মিসবাহ কে। লজ্জা, অস্বস্তি হচ্ছে তার। কিন্তু লোকটা বরাবরের মতোই শান্ত স্থির। কাল রাতে তুমুল জ্বর, মনের মধ্যে উঠা তান্ডব, তিক্ততায় পরিপূর্ণ অতীত সব মিলিয়ে সে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে। সরি বলা প্রয়োজন কিন্তু কেউ বুঝি গলা চেপে ধরেছে। কন্ঠরোধ হয়ে আসছে তার। এদিকে জিহাদ, সিহাব, আর রাফি ঠোঁট উল্টে বসে আছে।সেই যে গাড়িতে উঠেছে সূরা আর কথা বলেনি তাদের সাথে। দিয়া তাকালো সূরার দিকে। মেয়েটার মুখটা শুকনো লাগছে। দিয়া শান্ত স্বরে বলে

“সুর তোর কি শরীর খারাপ লাগছে? কতোবার বললাম কিছু খেয়ে নিতে।খেলি না কেন তুই?”

মিসবাহ ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে বসে থাকা রমনীর দিকে তাকালো। সঙ্গে সঙ্গে ভ্রু কুঁচকে গেল তার। এই মেয়ে সবার আল্লাদে একদম আল্লাদি বিড়াল ছানার মতো। নিজের যত্ন নিতে এর বুঝি কষ্ট হয়। দীর্ঘশ্বাস গোপনে ফেলে ডাইভিং এ মন দিল মিসবাহ। রায়হান হয়তো বুঝতে পারলো প্রেমিক পুরুষটার বিচলিত হৃদয়ের ছটফটানি।নরম স্বরে রায়হান বলল

“মিষ্টি পরী খাওনি কেন?”

“আমি ঠিক আছি ভাইয়া। খেয়ে গাড়িতে উঠলে আমার শরীর আরো খারাপ করতো। আপনাদের এই বড়োলোকি গাড়িতে আমার সমস্যা হয়।”

“তাই বলে না খেয়ে থাকবে। বাবার বাড়ির আবদার পেয়েছো। এখন না খেয়ে অসুস্থ হলে সেই তো আমাকেই তোমার ট্রিটমেন্ট করতে হবে। মাঝ রাতে তোমাকে দেখার ওতো সময় নেই আমার। এখনো অনেক দূর যাওয়া বাকি।”

গম্ভীর গলায় বলে উঠলো মিসবাহ। এই নিষ্ঠুর রমনী তাকে বিরক্ত করতে বারন করেছে, সে বিরক্ত করবেনা। কিন্তু তাই বলে নিজের প্রতি এই মেয়ের এতো অবহেলা সহ্য হয়না মিসবাহর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেছন থেকে রায়হান বলে উঠলো

” সমস্যা নেই মিষ্টিপরী। মিসবাহকে পাঠিয়ে দিয়ে আমরা তোমার ট্রিটমেন্ট করবো।কি বলো জিহাদ।”

জিহাদ বলল “একদম ঠিক কথা ভাইয়া। কিন্তু আমার মনে হয় না স্যার সূরাকে ফেলে এক পাও কোথাও যেতে পারবে।”

সূরার চোখ ছলছল করে উঠে। মিসবাহ এভাবে বলতে পারলো তাকে। আজ সকাল থেকে তার সাথে রূঢ় ব্যবহার মিসবাহর। হঠাৎ এমন করার কারন যে কাল রাতের বলা তার তিক্ত কথা বুঝতে বাকি নেই সূরার। করুক আরো রূঢ় ব্যবহার সে সেটারই যোগ্য। অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে সে এই কঠিন মানবকে। কিন্তু সে তো চাই মিসবাহ দুরে থাকুক তার থেকে।তাহলে বুকের মাঝে এই অসহনীয় ব্যাথা কিসের? তবুও অভিমানের পাল্লা বুঝি আরো ভাড়ি হলো সূরার । হঠাৎ এক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল সূরা। অন্য হাত রাখলো মিসবাহর হাতের উপর। সূরার স্পর্শে শরীর বুঝি শিরশির করে উঠলো মিসবাহর। কম্পন সৃষ্টি হলো মনে।পাশে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকাতেই থমকে গেল সে। গাড়ি ব্রেক করলো দ্রুত। গাড়ি থামতেই সূরা হুড়মুড়িয়ে নেমে যায়।কি হলো কারো বোধগম্য হলো না।

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here