শিশির_ভেজা_শিউলি #পর্ব_২৫ #ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

0
635

#শিশির_ভেজা_শিউলি
#পর্ব_২৫
#ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না।কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫)

নিস্তব্ধতা বিরাজমান। প্রকৃতি কি থমকে গেছে নাকি সময় থমকে গেছে? বোধগম্য হয়না রমনীর। সে কি অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে? নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে কি তার অস্তিত্ব? মরুভূমির মতো বুকটা খাঁ খাঁ কেন করছে? চারিদিকে অমানিশা। ঘোর অমানিশায় তলিয়ে যাচ্ছে সে। গুমোট পরিস্থিতি। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। তাকে জড়িয়ে ধরে থাকা কন্দনরত মেয়েটিকে দেখলো সূরা। চোখের অবাধ্য অশ্রু আজ বাঁধনহারা। একটু আগে সূরা সুস্থবোধ করলে গাড়ি থেকে নামে বিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য। মিসবাহ পাশেই ছিল। লহমায় কোথাও থেকে দৌড়ে এসে কেউ তাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠে। আকস্মিক ঘটনায় হকচকিয়ে যায় সূরা। নিজের থেকে আগন্তুক কে সরিয়ে দিতেই ডুকরে কেঁদে উঠে সূরা। তার ছোটবেলার খেলার সাথী, তার প্রিয় বান্ধবীকে এতোদিন পরে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। প্রিয়া জড়িয়ে ধরে সূরাকে। এই মেয়েটা তার কতো যে আপন সে বলে বোঝাতে পারবেনা। কতো চেষ্টা করেছে একবার কথা বলার জন্য কিন্তু এই অভিমানী তার থেকে দূরে সরে গিয়েছিল এই কয়েক বছর। সূরা হঠাৎ কি হলো কে জানে। প্রিয়ার থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বলল

“পিয়ু তুই এখানে তার মানে ওরাও,,,,

হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে সূরা। কিছুক্ষণ নিজের মতো বিরবির করে। মিসবাহ এগিয়ে যায় সূরার কাছে। মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে স্বরে বলে

“কি হয়েছে সুরজান? এমন করছো কেন? ও তোমার বন্ধু?

প্রিয়ার দিকে ইশারা করে বলে মিসবাহ। সূরা ছলছল চোখে তাকায় মিসবাহর দিকে তারপর প্রিয়ার দিকে তাকায় সে। প্রিয়া সূরার গালে হাত রেখে আদুরে গলায় বলে

“আমায় ভুলে গেছিস সুর? আমি কতো চেষ্টা করেছি তোর সাথে একবার কথা বলার। পারিনি।”

“আমার ভয় করছে পিয়ু। খুব ভয় করছে। আমি যাবো না ভেতরে। ওরা আমাকে,,,

“সূরা তুই এখানে?”

মেয়েলি কন্ঠস্বরে সামনে দৃষ্টিপাত করে তিনজনে। বিয়ের অর্ধেক সাজে সুন্দরী একজন রমনী দাঁড়িয়ে আছে। রিতু কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয় পায় সূরা। রিতু এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে সূরাকে। হাসি মুখে বলে

“তুই এখানে সত্যি এসেছিস সূরা? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তুই এসেছিস। আমি ভাবতে পারছিনা আমার বিয়েতে তুই এসেছিস।”

“তোমার বিয়ে?”

প্রিয়া বলে “হুঁ রিতু আপুর বিয়ে।”

সূরা ছলছল চোখে হাসে। বলে “অন্ত ভাইয়ের সাথে আপু?”

রিতু সূরার গালে হাত রেখে আদুরে গলায় বলে “হুঁ তোর অন্ত ভাইয়ের সাথে। ভেতরে চল। অন্ত তোকে দেখলে খুব খুশি হবে।”

একটু থেমে রিতু আবার বলে “আমাকে সাজানোর সময় জানালা দিয়ে পিয়ু তোকে দেখে দৌড়ে আসে। শুধু বলে আমার সুর এসেছে। আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি। বাইরে এসে দেখি সত্যিই তুই এসেছিস। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না সূরা।”

সূরা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ওর মাথা কাজ করছে না। এখান থেকে যেতে চাই সে। কিন্তু কিভাবে? সূরা মিসবাহর দিকে তাকায়। মিসবাহ সূরার দিকেই কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সূরা কিছু বলবে তার আগেই রিতু সূরার হাত ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যায়। মিসবাহ ওদের পেছন পেছন যায়। সূরাকে কি এখানে আনা ঠিক হলো তার?

★★★★★★

বিয়ে বাড়ির জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে এখন পিনপতন নীরবতা। বিয়ে বাড়ির মূল আকর্ষণ বিয়ের কনে হলেও এখানে সবার মূল আকর্ষণ সূরা। সবাই ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। রিতুর দাদা মারা গেছেন বছর খানেক। একমাত্র বাবার বন্ধু মোজাম্মেল সিকদারকে রিতুর বাবা মনিরুল আলম অনেক সম্মান করে চলেন। তাই একমাত্র মেয়ের বিয়েতে নিমন্ত্রণ করতে ভোলেননি বাবা সমতুল্য মোজাম্মেল সিকদারকে। এতোদিন তিনি স্ত্রী কে নিয়ে দেশের বাইরে ছিলেন বছর পাঁচেক। মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে দেশে ফিরে আসেন। রিতু একমাত্র মেয়ে হলেও যেতে চাইনি নিজের জন্মভূমি ছেড়ে। আর তাছাড়া দেশের বাইরে গেলে অন্তের সাথে যে দুরত্ব সৃষ্টি হতো সেটা কিভাবে হতে দিতো রিতু। প্রিয়া তার খালাতো বোন। প্রিয়াদের বাড়িতেই থেকেছে সে এতোদিন। বাবা মা দেশে ফিরে আসায় আজ তার ভালোবাসার মানুষটার সাথে বিয়ে। তখন সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই সূরা মুখোমুখি হয় আনজুমান বেগমের। তিনি প্রথমে সূরাকে দেখে চমকে গেলেও পরে মুখোভঙ্গি পাল্টে যায় তার। সূরার হাত শক্ত করে ধরে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সূরার গালে থাপ্পর বসিয়ে দেন তিনি। সূরা পড়ে যেতে নিলে মিসবাহ দ্রুত এসে আগলে নেই। মিসবাহর চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে। রাগান্বিত চোখে তাকায় সে আনজুমান বেগমের দিকে। হিংস্রতা তার চোখে মুখে। দিয়া আর মীরা গিয়ে সূরাকে আগলে দাঁড়ায়। লোকসমাগমে ভর্তি ড্রয়িং রুম। আকস্মিক ঘটনায় সকলে হতভম্ব। প্রিয়া আর রিতু আনজুমান বেগমের দিকে তাকালো। প্রিয়া ছুটে বেরিয়ে যায় একজন কে ডাকতে। আপাতত ওই ব্যক্তি ছাড়া কেউ পারবেনা এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে। মিসবাহ চোয়াল শক্ত করে আনজুমান বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে

“আপনার সাহস কি করে হলো ওর গায়ে হাত তোলার? আজ যদি আপনি একজন নারী আর মায়ের বয়সী না হতেন তাহলে আমি আপনার ওই হাত ভেঙে দিতে দুইবার ভাবতাম না।”

আনজুমান বেগমের মুখে কুটির হাসি ফুটে উঠল। তিনি সূরাকে তাচ্ছিল্যের স্বরে বলেন

“একজনে হয়নি আরেকজন জুটিয়ে ফেলেছিস? তোর এলেম আছে বলতে হবে।”

নুহাশ চেঁচিয়ে বলে উঠলো “আমার বোনের সম্পর্কে আর একটা বাজে কথা বললে আমি তোর জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবো বেয়াদব মহিলা।”

নুহাশ তেড়ে আসে আনজুমান বেগমের দিকে। জিহাদ আর সিহাব গিয়ে ধরে নুহাশ কে। রাগের বশে কোনো অঘটন না ঘটিয়ে ফেলে সে।

“তোমার বোন দুধে ধোয়া তুলসি পাতা না নুহাশ ভাই। বড় আম্মুর মুখ বন্ধ করতে পারলেই কি সবার মুখ বন্ধ করতে পারবে?”

সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসতে আসতে উক্ত কথাটি বলে উঠলো এক রমনী। সূরা তাকায় তার দিকে। পরক্ষনে তাচ্ছিল্য হাসে সূরা। ঘৃনায় মন বিষিয়ে যাচ্ছে তার। অনন্যা সূরার ঘৃনাভরা দৃষ্টি উপেক্ষা করে সূরার উদ্দেশ্যে বলে

“কি রে সূরা? নতুন কাউকে পেয়েছিস নাকি? বেচারা পিয়াস ভাই। বেচারার ভাগ্যটাই খারাপ। যার জন্য দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়ায় সে এখন নতুন একজনকে জুটিয়ে ঠিকই ফুর্তি করছে। তা ইনি তোর নতুন কাস্টমার নাকি?

সূরা দ্রুত গতিতে গিয়ে অনন্যার গালে পরপর দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। ঠোঁট কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে অনন্যার। সূরা অনন্যার গাল চেপে ধরে শক্ত কন্ঠে বলে

“ভুলেও আমাকে আর কলঙ্ক দেওয়ার চেষ্টা করবিনা। আমি সেই দুর্বল সূরা না যে তোদের সব কলঙ্ক গায়ে লেপ্টে নিব। আমার দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বললে আমি তোর হাত টাই কেটে নিবো।”

সবাই সূরাকে দেখছে। মিজানুর সিকদার নিজের মেয়ের জন্য গর্ববোধ করছেন। তার মেয়ে আর দুর্বল নেই। এই সূরাকেই তো দেখতে চেয়েছিল মিসবাহ। তার সুরজান হবে অগ্নিশিখা । যারা তার দিকে হাত বাড়াবে তাদের কে দগ্ধ করতে দুইবার ভাববে না সে। সূরা অনন্যার গাল শক্ত করে চেপে ধরায় ব্যথায় ককিয়ে ওঠে অনন্যা। আনজুমান বেগম সূরার থেকে অনন্যাকে সরিয়ে থাপ্পড় দিতে গেলে মিসবাহ তার হাত ধরে। হিংস্র চোখে তাকায় অনন্যা আর আনজুমান বেগমের দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে চোয়াল শক্ত করে বলে

“একবার বলেছি। দ্বিতীয়বার বলবো না। ওর গায়ে আর একবারও হাত তুললে আপনার এই হাত আমি ভেঙে দিব। আর মাকহুল সিকদার মিসবাহ্ কখনো ফাঁকা হুমকি দেয় না কাজে করে দেখায়।”

নুহাশ চেঁচিয়ে বলে “বেয়াদব মহিলা আর একবার শুধু আমার বোনের গায়ে হাত তুলে দেখ আমি তোর হাত কেটে নিবো। এই ছাড় তোরা আমাকে।”

জিহাদ আর সিহাবের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলে নুহাশ। ওরা নুহাশকে এখনও শক্ত করে ধরে আছে। নুহাশ আগে থেকেই বদমেজাজি, রাগি প্রকৃতির। রাগের মাথায় কাউকে মেরে ফেলতেও ভাববেনা সে। মিজানুর সিকদার আনজুমান বেগমের উদ্দেশ্যে গম্ভীর গলায় বলেন

“ভাববেন না আমার মেয়েটা এখনো একা। ওর পাশে এখন ওর পরিবারের সবাই আছে। আমার মেয়েটাকে একা পেয়ে কম কষ্ট দেননি আপনারা। জমিদার বংশের মেয়ে সে। আমার মেয়েকে আবার ছোঁয়ার চেষ্টা করলে আপনার হাত ছোঁয়ার অবস্থায় রাখবো না আমি।”

মোজাম্মেল সিকদার গম্ভীর কণ্ঠে বলেন
“সিকদার বংশের মেয়ে সূরা। আমার দুই মিনিটও লাগবেনা তোমার মতো তুচ্ছ নারীকে শেষ করে দিতে। এই মোজাম্মেল সিকদার কি জিনিস তা নিশ্চয় তোমাদেরকে মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না আমার।”

আনজুমান বেগমের গলা শুকিয়ে আসে। গ্ৰাম থেকে লকালয় পর্যন্ত এক নামে চিনে সবাই মোজাম্মেল সিকদার কে। একসময় তার ভয়ে সবাই যেমন কেঁপে উঠতো তেমন সম্মানও করতো। এখনো গ্ৰামে গঞ্জে বেশ নাম ডাক তার। লহমায় অনন্যার বলা কথায় সবার পায়ের নিচের মাটি বুঝি সরে গেল। মিসবাহ নিষ্প্রান চোখে তাকায় সূরার দিকে। সে কি ঠিক শুনলো? মিসবাহর নিঃশ্বাস যেনো থমকে গেছে। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছে কেন তার? সূরা অনুভূতিহীন চোখে তাকিয়ে আছে মিসবাহর দিকে। অনন্যা বলল,,,,,

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here