শিশির_ভেজা_শিউলি #পর্ব_৩৩ #ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

0
657

#শিশির_ভেজা_শিউলি
#পর্ব_৩৩
#ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না।কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫)

অন্ধকারকে পরাজিত করে বিজয়ী বেশে আলো আসবেই। শত কষ্টের পরে আসবে সুখ। আমাদের জীবনে প্রত্যেকটা জিনিস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের জীবনে দুঃখ-কষ্ট আসে বলেই আমরা সুখ অনুভব করতে পারি। মহান রাব্বুল আলামীন বলেছেন “নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি” (সূরা ইনশিরাহ্)। বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট আসে বলেই আমরা সুখের মর্ম বুঝি। আর কষ্ট কখনো চিরস্থায়ী না। তাই কখনো ভেঙ্গে পড়া উচিত না। আমাদের সবসময় আমাদের সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস, ভরসা রাখা উচিত। সবসময় মনে রাখা উচিত যিনি এই দুর্বিষহ, অসহনীয় যন্ত্রণা দিয়েছেন তিনিই এর থেকে আমাদের মুক্ত করবেন। আমরা যদি পার্থিব জীবনের এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারি তাহলে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ উপহার। জান্নাত। তাই আমাদের ভেঙ্গে না পড়ে ভরসা রাখতে হবে একদিন আলোর মুখ আমরাও দেখবো। তাহলে কোনো মায়ের বুক খালি হবে না। কোনো বাবাকে তার সন্তানের লাশ কাঁধে নিতে হবে না। যে মা মরন যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে তাঁর সন্তানকে পৃথিবীর মুখ দেখায় আমরা কি একবারও তার কথা ভাবি? না ভাবিনা। ভাবলে স্বার্থপরের মতো আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারতাম না। সামান্য মুক্তির আশায় যারা এই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় তারা কি আদৌ মুক্তি পাই? উহু! পায়না। জীবনের কষ্টকে বড় করে না দেখে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। তবেই না আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ উপহার পাবো। তাই আমাদের ভেঙ্গে না পড়ে ভরসা রাখতে হবে। অন্ধকারের অবসান ঘটিয়ে নতুন ভোর আসবেই। সিকদার বাড়িতে আজ যেনো খুশির পসরা বসেছে। জমিদার বাড়ির গিন্নিরা সকাল সকাল কোমড়ে আঁচল গুজে কাজে লেগে পড়েছেন। বিয়ে বাড়ি বলে কথা। বাড়ির দুই ছেলে মেয়ের বিয়ে তো আর যেই সেই ভাবে দেওয়া যায় না। মুনতাহা সিকদার চুলোয় মাংস রান্না করতে করতে মিসবাহকে বকাবকি করছেন। করবেনই তো। কাল রাতে মিসবাহ সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে বাদ আছর তার আর সূরার আকদ। সবাই রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কোনো ছেলে কি নিজের বিয়ের ঢাক ঢোল এভাবে পেটায়‌? সূরার মধ্যে কোনো হেলদোল নেই। সে হয়তো এমন কিছুর জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। মিসবাহর থেকে লজ্জার “ল” ও আশা করা বোকামি। সে তো আর বোকা না। মোজাম্মেল সিকদার কিছু দিন সময় চাইলে মিসবাহ শান্ত স্বরে বলে

“যেখানে বিয়ে করবো আমি সেখানে তোমার সময়ের প্রয়োজনের কোনো কারন তো দেখছি না বড় জমিদার সাহেব। অনেক কষ্টে বউকে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছি। তোমাকে সময় দিতে গিয়ে দেখা গেল বউ আমার হিরোইন থেকে আবার ভিলেন হয়ে গেল।”

মাহমুদ সিকদার ছেলের উদ্দেশ্যে বলেন “লজ্জা করো একটু। বাড়ির সবার সামনে নিজের বিয়ের কথা বলতে লজ্জা করছে না? এতো নির্লজ্জ কিভাবে হলে? আমার তো রীতিমতো সন্দেহ জাগে তুমি আমার ছেলে কিনা।”

মিসবাহ সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ব্যঙ্গাত্মক স্বরে বলে “তোমাকে আগেও বলেছি আজও বলছি লজ্জা নারীর ভূষণ। ওই সব লজ্জা আমি পেলে তোমাদের বংশ নির্বংশ হতে বেশি টাইম লাগবে না। আর বাই এনি চান্স তুমি কি আমার মা কে সন্দেহ করছো? এই দিনও দেখার ছিল? আমার তো তোমাকে সন্দেহ হয় তুমি আমার বাবা তো?”

সবাই ঠোঁট চেপে হাসে। মাহমুদ সিকদার ছেলের কথায় বিরক্ত হলেন বটে। মুনতাহা সিকদার হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকেন ছেলের দিকে। এবার তো তারও সন্দেহ হচ্ছে এই নির্লজ্জ মানব তার ছেলে কিনা। তিনি মাহমুদ সিকদারের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বোঝান “বেশ হয়েছে। আরো লাগতে যাও ছেলের পেছনে।” মাহমুদ সিকদার দুই পাশে অনবরত মাথা নাড়ালেন। এই ছেলে কোনো দিনও ভালো হবেনা। মোজাম্মেল সিকদারের বোঝা হয়ে গেছে কালকেই বিয়ের আয়োজন করতে হবে। মিসবাহ মিজানুর সিকদারের কাছে গিয়ে সোফায় বসে। মিজানুর সিকদার মিসবাহর দিকে তাকালো। মিসবাহ মিজানুর সিকদারের এক হাত তার দুই হাতের মুঠোয় পুরে বলে

“তোমার রাজকন্যাকে আমায় দিবে চাচ্চু? তোমার রাজকন্যাকে আমি আমার একান্ত ব্যক্তিগত রাজ্যের রাজরানী করে রাখবো। বিষাদের বিষাক্ত ছায়া আমাকে ছুঁলেও তোমার রাজকন্যাকে ছুঁতে দিবো না। তোমার রাজকন্যাকে আমাকে দাও না চাচ্চু?”

মিজানুর সিকদার হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। মেয়েটা সুখের মুখ দেখবে ভেবেই বাবার মন আনন্দে কেঁদে ওঠে। সূরা ফুঁপিয়ে উঠে। মিজানুর সিকদার মিসবাহর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন

“আমার রাজকন্যার হাত কখনো ছাড়বিনা আব্বা। সবসময় মনে রাখবি তোর চাচ্চু তার সবচেয়ে মূল্যবান কহিনূর তোর হাতে তুলে দিয়েছে।”

মিসবাহ অমায়িক হাসি মুখে ফুটিয়ে বলে “তোমার কহিনূরকে আমি আমৃত্যু বুকে আগলে রাখবো চাচ্চু।”

মিসবাহ সূরার দিকে তাকালো। সূরা তার দিকেই ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। মিসবাহ অমায়িক হাসে। সে পেয়ে গেছে তার সুরজান কে‌। সূরার মুখেও হাসি ফুটে উঠল। মিসবাহ আর বসে না থেকে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায় বাদ আছর সে সূরাকে বিয়ে করবে। কোনো আত্মীয় স্বজনের প্রয়োজন নেই। যারা দুঃখের দিনে পাশে থাকে না তাদের আনন্দের দিনে পাশে রাখা বোকামি। মিসবাহ সেই বোকামি করতে চায়না। মুনতাহা সিকদার ছেলের উপর বড্ড বিরক্ত। বাড়ির ছেলে মেয়ের বিয়ে হবে অনেক বড় আয়োজন করে তানা ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হচ্ছে। ফোঁস করে তপ্ত শ্বাস ফেলে রান্নায় মন দেন তিনি। ছেলেরা সবাই গোসলের জন্য পুকুরে গেছে। গোসল শেষে মসজিদে যাবে নামাজ পড়তে। মেয়েরা এখন সূরার ঘরে। আজ সকালে প্রিয়া এসেছে। সূরা প্রিয়াকে দেখে প্রথমে অবাক হলেও পরে প্রিয়ার পেছনে মিসবাহকে দেখে বুঝতে পারে মিসবাহ প্রিয়াকে নিয়ে এসেছে। প্রিয়া এখন সূরার পাশে বসে হাজার রকমের কথার ঝুড়ি নিয়ে বসেছে। দিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রিয়ার দিকে। এই মেয়েটাকে তার সহ্য হচ্ছে না। একমাত্র বেস্টফ্রেন্ডের পাশে অন্য কোনো মেয়েকে ফ্রেন্ড হিসেবে মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর। আর বেস্টফ্রেন্ড মানেই সে একান্তই আমার বেস্টফ্রেন্ড। সূরা আড়চোখে দিয়ার দিকে তাকায়। মেয়েটা বড্ড হিংসুটে। দুই বেস্টফ্রেন্ডের মাঝে সূরা পড়েছে বিপদে। দিয়া বিয়ের শাড়ি, কসমেটিকস ব্যাগ থেকে বের করে বিছানায় রাখে। মন খারাপ করে ক্ষীন স্বরে বলে

“এগুলো সব স্যার দিয়েছে সূরার জন্য। বের করে রাখলাম। ওকে সাজিয়ে দাও কেউ।”

মীরা বলে “সে কি! সাজিয়ে দেব মানে? তুমি কোথায় যাচ্ছো?”

দিয়া সূরার দিকে আড়চোখে তাকায়। পরক্ষনে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলল “রুমে। এখানে তো আমার কোনো প্রয়োজন নেই।”

সূরা মুচকি হাসে। বিছানা থেকে নেমে দিয়ার গলা জড়িয়ে ধরে বলে

“কে বলেছে প্রয়োজন নেই। আমি আমার দুই বেস্টফ্রেন্ডের কাছেই সাজবো। তাছাড়া আর কারো কাছে সাজবো না। পরে সাজগোজের অভাবে আমার আর বিয়ে করা হবে না। তখন তোর প্রানপ্রিয় নির্লজ্জ স্যার বলবে আমি আবার ভিলেনের ক্যারেকটারে ফিরে গেছি।”

দিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সে তো সাজাতে চাই সূরা কে কিন্তু প্রিয়ার জন্য কিছু করতেই ইচ্ছা করছে না তার। প্রিয়া বিছানা থেকে উঠে এসে দিয়াকে অপর পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলল

“বেস্টফ্রেন্ড বরাবরই দুইজন হতে হবে কে বলেছে। তিনজন কি হতে পারে না?”

দিয়ার খারাপ লাগলো। এতোক্ষণ শুধু শুধু এই ভালো মেয়েটাকে হিংসা করছিল সে। দিয়া একগাল হেসে জড়িয়ে ধরে সূরা আর প্রিয়াকে। মেহের, মীরা হাসে এদের কান্ড দেখে। মেহের পরক্ষনে চোখ ছোট ছোট করে বলে

“এই তোমরা কি চাইছো বলো তো বিয়ে করার অভাবে ভাইয়ার দুর্ভিক্ষ দেখা দিক? তারাতাড়ি সাজাও তো। কতো কাজ ঐ দিকে পড়ে আছে। সে দিকে খেয়াল আছে তোমাদের।”

সূরা মেকি রাগ দেখিয়ে বলে “তবে রে পাকা মেয়ে।”

সবাই হেসে উঠল। সূরাও মুচকি হাসে। আজ তার শখের পুরুষকে সে তার একান্ত ব্যক্তিগত পুরুষ হিসেবে পাবে।

★★★★★★★

“ও প্রিয়া, ও প্রিয়া তুমি কোথায়”

আকস্মিক পুরুষালী বেসুরো কন্ঠে নিজের নামে গাওয়া গান শুনে হকচকিয়ে গেল প্রিয়া। সে এসেছিল জমিদার বাড়ির বাগানে গোলাম ফুল নিতে। সূরার খোঁপায় গুঁজে দেওয়ার জন্য। কিন্তু হঠাৎ বেসুরো কন্ঠে গান শুনে মনটা বিতৃষ্ণায় ভরে গেল প্রিয়ার। প্রিয়া পেছনে ফিরে তাকালো। জিহাদ দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে প্রিয়ার ভ্রু কুঁচকে গেল। এই ছেলেকে তার একদম পছন্দ না। বজ্জাত ছেলে সেদিন তাকে ফেলে দিয়েছিল। প্রিয়া শক্ত কন্ঠে বলে

“একদম আমার নাম নিয়ে আপনার হেড়ে গলায় হাম্বা হাম্বা করবেন না বলে দিলাম। ইশ! ছিঃ! কি জঘন্য গলা। আর একটু হলেই আমার হার্ট এ্যাটাক হতো।”

জিহাদ বাঁকা হেসে প্রিয়ার সামনে দাঁড়ালো। প্রিয়ার দিকে একটু ঝুঁকে আসলে প্রিয়া পিছিয়ে যায়। জিহাদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল

“একি তোমার নাম প্রিয়া নাকি? আমি তো আমার প্রিয়াকে খুঁজছিলাম। সে আবার আমার মধুর কন্ঠের গান শুনলেই ছুটে ছুটে আসে।”

প্রিয়ার মুখে বিরক্তি ঝরে ঝরে পড়ছে। প্রিয়া মুখে বিরক্তি নিয়েই বললো “একদম মিথ্যা বলবেন না। এখানে আমি ছাড়া আর কোনো প্রিয়া আছে বলে আমার মনে হয় না।”

“তুমি দেখছি চোখে কম দেখো। নাকি এতো সুদর্শন পুরুষকে তোমার এতো কাছে দেখে চোখে আমাকে ছাড়া কিছুই দেখছো না কোনটা?”

প্রিয়া কটমট করে তাকালো। এই লোকটাকে তার অসহ্য লাগছে। গোলাপের কাটাযুক্ত গাছে ছুড়ে মারতে ইচ্ছা করছে। প্রিয়াকে রাগিয়ে দিতে পেরে মনে মনে হাসে জিহাদ। এই মেয়েটা প্রথম সাক্ষাতে তার হৃদয়হরণ করেছে। সে প্রনয়ের মিষ্টি অনুভূতি সহ্য করতে পারলে তার প্রেয়সী কেনো পারবে না। তাকে তো জিহাদ প্রনয়ের অনুভূতির দহনে দগ্ধ না করে ছাড়ছে না। প্রিয়া চলে যেতে চাইলে জিহাদ আবারও হেড়ে গলায় গেয়ে উঠে

“নিঃশ্বাস আমার তুমি জানের দুনিয়া
প্রিয়া আমার প্রিয়া
কিভাবে তোমায় ছাড়া আমি বাঁচি
যেয়োনা দূরে, থাকো কাছাকাছি
তুমি দূরে গেলে প্রানটা যাবে উড়িয়া”

প্রিয়া কটমট করে তাকালো জিহাদের দিকে। জিহাদ ক্যাবলামার্কা হাসি দিয়ে আবার গেয়ে উঠলো

“ও প্রিয়া, ও প্রিয়া তুমি কোথায়”

প্রিয়া আঙ্গুল তুলে জিহাদ কে কিছু বলার জন্য মুখ হা করতেই কোথায় থেকে “ম্যাও” বলে ডেকে ওঠে একটি বিড়াল। দিয়া নিচে তাকিয়ে দেখে জিহাদের পায়ের কাছে একটা সাদা বিড়াল ছানা ম্যাও ম্যাও করছে। প্রিয়া জিহাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালে জিহাদ দাঁত কেলিয়ে বিড়াল ছানা কোলে তুলে নেয়। বিড়ালের গায়ে হাত বুলিয়ে বলে

“তুই কোথায় গিয়েছিলি প্রিয়া? আমি তোকে খুঁজছিলাম জানিস। তুই জানিস না তোকে ছাড়া আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। ভারি দুষ্টু তুই প্রিয়া।”

প্রিয়া রীতিমতো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তার এতো সুন্দর নামের পিন্ডি চটকে দিল এই বজ্জাত লোকটা। প্রিয়া বিড়াল ছানার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলে

“এই আমাকে গাধা মনে হয় আপনার? সূরার পুষিকে আপনি আমার নাম ধরে ডাকবেন আর আমি মেনে নিবো। বজ্জাত হাড় জ্বালানো ছেলে একটা।”

জিহাদ বিড়াল ছানার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল “আরে তুমি রেগে যাচ্ছো কেন? ও পুষি সবার কাছে। আর আমার কাছে ও আমার প্রিয়া। তুমি দেখলে না আমি আদর করে ওকে প্রিয়া বলে ডাকলাম আর ও চলে আসলো।”

“অসহ্য লোক।”

প্রিয়া আর দাঁড়ায় না। অসহ্য লাগছে তার। জিহাদ নামক বজ্জাত লোকটাকে নর্দমার নোংরা পানিতে চুবিয়ে আসতে পারলেও শান্তি পেত না সে। জিহাদ শব্দ করে হেসে উঠে প্রিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে। বলে উঠলো

“নিঃশ্বাস তুমি আমার জানের দুনিয়া
প্রিয়া আমার প্রিয়া”

★★★★★★

প্রিয় মানুষটাকে নিজের করে পাওয়ার খুশিতে আজ সূরা আত্মহারা। মেরুন রঙের বেনারসীতে সোনালী সুতোর কারুকাজ, গা ভর্তি সোনার গহনা, মুখে হালকা মেকআপেও যেন সূরাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। প্রিয়া বড় করে ওরনার ঘোমটা দিয়ে দিল সূরাকে। একহাত ঘোমটায় সূরার মুখের দেখা পাওয়া দুষ্কর। প্রিয়া বলল

“বিয়ের আগে আজ আর ভাইয়াকে তার সুরজানকে দেখতে দিচ্ছি না।”

দিয়া বলে “ঠিক বলেছিস। আজ স্যারের মুখ দেখার মতো হবে যখন দেখবে তার সুরজানের মুখের সামনে এক হাত ঘোমটা দেওয়া।”

মীর বলে “বেচারা ভাইয়া আজ নির্ঘাত কেঁদেই দিবে।”

তিনজনে শব্দ করে হেসে উঠে। মেহের ঠোঁট উল্টে বলে “এটা কি ঠিক ভাবি? এতো দিন সূরা আপু ভাইয়াকে জ্বালিয়েছে আর আজ তোমরা শুরু করলে। আমার ভাইয়া আজ কতো আশা নিয়ে আছে বিয়ের সাজে বউকে দেখার জন্য। আর তোমরা তার আশায় এক বালতি পানি ঢেলে দিচ্ছো। আপুর জন্য ভাইয়া সবকিছু নিজে পছন্দ করে কিনেছে আর তোমরা এতো বড় নাফরমানি করবে।”

সূরা ঘোমটা মাথার উপরে তুলে রাখে। চোখ ছোট ছোট করে বলে “এই আমি কখন জ্বালাতন করলাম তোর ভাইকে? বজ্জাত লোক তো অলটাইম আমাকে জ্বালাতন করে।”

দিয়া ভেংচি কেটে বলে “তুই চুপ থাক। সেই তো স্যারের প্রেমেই হাবুডুবু খেলি তাহলে এতোদিন ন্যাকামো করলি কেন? বেচারা স্যার তোর চিন্তায় শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।”

সূরা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো সবার দিকে। সবাই মিটিমিটি হাসছে। প্রিয়া বলে “তবে ভাইয়ার পছন্দ আছে বলতে হবে। কি সুন্দর দেখাচ্ছে সুরকে! একদম ভাইয়ার মনের রাজরানীর মতো।”

মেহের লাফিয়ে লাফিয়ে সূরার পাশে গিয়ে বসে। কন্ঠে একরাশ আফসোস নিয়ে বলে “সূরা আপুর বিয়ে হয়ে গেল ভাইয়ার সাথে। দিয়া আপু আর সিহাব ভাইয়েরও বিয়ে হবে। বাকি থাকলাম আমি। আমার কষ্ট কি বোঝার মতো কেউ নাই?”

সূরা মেহেরের কান আলতো করে মলে দিয়ে বলে “তবে রে পাকা মেয়ে। এই বিয়ে করার বয়স হয়েছে তোর?”

“সূরা আপু এটা তুমি কোনো কথা বললে। ঠিক সময় বিয়ে হলে তিন বাচ্চার জননী হতাম আমি।”

সবাই শব্দ করে হেসে উঠলো মেহেরের কথায়। মীরা সূরার কাছে গিয়ে সূরার মুখ দুই হাতের আঁজলায় নিয়ে আদুরে স্বরে বলে

“তোকে খুব সুন্দর লাগছে সুরপাখি। পৃথিবীর সব সুখ তোর হোক।”

সূরা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে “পৃথিবীর সব সুখ চাইনা ভাবিজান শুধু ডাক্তার নামক সুখ আমার হোক।”

সবার মুখে হাসি ফুটে উঠল। সূরা আজ তার শখের পুরুষের নামে নিজেকে লিখে দিবে‌। এর চেয়ে সুখের অনুভুতি আর কি হতে পারে‍?

#চলবে……

(নিমন্ত্রণ রইলো। কাল বাদ আছর এসো নতুন কপোত কপোতীর বিয়েতে। কব্জি ডুবিয়ে খেয়ে যায়ো কিন্তু। তোমাদের মিসবাহর তার সুরজানের সাথে বিয়ে বলে কথা। আসতে হবে কিন্তু।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here